মাহেশের ঐতিহ্যমন্ডিত রথযাত্রা
২০ জুন রথযাত্রা উৎসব। আর ওইদিন রথের রশি স্পর্শ করবার তীব্র আকুতি প্রকাশ পাবে সবার মধ্যে।মাহেশের ঐতিহ্যমন্ডিত রথযাত্রার কথা তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু কিভাবে প্রচলিত হয়েছিল ? আজ থেকে প্রায় ৬২৭ বছর আগে মাহেশে ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী বসবাস করতেন। তিনি পবিত্র গঙ্গার তীরে সাধনায় রত হয়েছিলেন। তারপরে হঠাৎ করেই ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী নীলাচলে, অর্থাৎ শ্রীক্ষেত্রে গিয়ে হাজির হলেন। তাঁর মনের একটা সুপ্ত বাসনা ছিল যে, নিজ হাতে ভোগ রান্না করে তিনি জগন্নাথ দেবকে খাওয়াবেন । যেমন ভাবনা, তেমন কাজ! কিন্তু ধ্রুবানন্দ তা করতে গেলে সেখানকার সেবায়েতরা রীতিমতো অপমান করে তাঁকে তাড়িয়ে দেয়। বিমর্ষ হয়ে পড়লেন ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী। একটি বটবৃক্ষের নীচে বসে তিনি ভাবতে লাগলেন যে, প্রভু জগন্নাথ দেবকে নিজ হাতে যখন আর খাওয়ানো হল না, তখন এ জীবন রেখে আর কি লাভ ! কিন্তু স্বয়ং জগন্নাথ দেব তো অন্তর্যামী! তিনি তাঁর ভক্তের মনের অবস্থা বুঝতে পারলেন। ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী কে জগন্নাথ দেব স্বপ্নাদেশ দিলেন ” এখন থেকে আমি মাহেশেও অবস্থান করবো। আর তুমিও নিজ হাতে ভোগ রান্না করে আমাকে নিবেদন করতে পারবে। তুমি মাহেশে ফিরে যাও । সেখানে ভাগীরথীর পশ্চিম দিকে থেকে একটা নিমকাঠ ভেসে আসবে, তা দিয়ে তুমি আমার মূর্তি নির্মাণ করবে …!” আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলেন ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী। মাহেশে ফিরে এসে সেই সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী পুনরায় ভাগীরথীর তীরে গভীর সাধনায় রত হলেন। ভরা বর্ষায় কোনো এক ঝড়জলের রাতে প্রবল দুর্যোগ। ভাগীরথীও উথাল পাথাল ! দিব্যকর্ণে তিনি যেন শুনতে পেলেন ” ওঠো ধ্রুবানন্দ, ওই দেখো তোমার কাঙ্ক্ষিত নিম কাঠ ভেসে আসছে !”
কোমর সমান জলে নেমে তিন ভক্তিভরে সেই নিম কাঠ তুলে নিলেন। কিন্তু মূর্তি নির্মাণ করবে কে ? সহসা সেখানে এক সূত্রধর হাজির হলেন। তিনিই মূর্তি নির্মাণ করবেন। রুদ্ধদ্বার কক্ষে শুরু হল মূর্তি নির্মাণ। নির্দিষ্ট সময়ে মূর্তি নির্মাণ সম্পন্ন হল । কিন্তু দরজা খুলতেই দেখা গেল সূত্রধর নেই । অবাক কান্ড ! অনেকে বলেন সেই সূত্রধর হলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা। ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী একটি পর্ণকুটির স্থাপন করে সেখানে শালগ্রাম শিলার ওপরে রত্নবেদী স্থাপন করে সেখানে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা কে স্থাপন করলেন। প্রসঙ্গত, এখানে জগন্নাথ দেব আয়তলোচন । ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারীর মৃত্যুর পর জগন্নাথ দেবের পুজোর দায়িত্ব নেন কমলাকর ঠাকুর। যদিও গঙ্গার ভাঙনে সেই মন্দিরটি ক্রমশই নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু কলকাতার পাথুরিয়াঘাটার জনৈক নয়ন চাঁদ মল্লিক সেখানে রাজপথের পশ্চিম দিকে একটি মন্দির নির্মাণ করে দেন । তাৎপর্যের বিষয় হল জগন্নাথ দেবের সেই প্রাচীন মূর্তি আজও পূজিত হচ্ছে। আর মাহেশের ঐতিহ্যমন্ডিত রথযাত্রা যখন পরিক্রমা করে, তখন সেখানে প্রচুর ভক্তসমাগম হয় ।।