Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সম্পর্ক || Samarpita Raha

সম্পর্ক || Samarpita Raha

বাবুল আর আমি সেই নার্সারি থেকে বন্ধু।যেদিন স্কুলে অভিভাবকদের ডাকা হত, আমি দেখতাম বাবুল ওর মার সঙ্গে এসেছে । কোনোদিন ওর বাবাকে আসতে দেখি নি।তবে বড়ো হয়ে বুঝেছি ওর মা’তো সিঁদুর লাগান না,হয়তো বাবা ছোটো থেকে নেই। আমিও তো বাবার সঙ্গে যেতাম,মা’তো জন্মের ছয়মাস পরে তারাদের দেশে চলে গেছিলেন ।

সময় সময় বাবা আমাকে কাছে ডেকে বলতেন,যা ওই তারাটা কে বলে দে তুই পরীক্ষায় কেমন ভালো ফল করেছিস। আমি হেসে বলতাম অত রাগ করছ কেন বাবুজি।মা’তো এমনি এমনি চলে যায় নি। ভগবান নিয়ে গেছেন।বাবা বলতেন না রে মাম ,তোর মা খুব পচা । তাইতো আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আমি বাবার ঘাড়ে ওঠে পিঠে দুম দুম কিল দিতাম।আর বলতাম ও বাবুজি তুমি আমার মা’কে একদম পচা বলবে না।আসলে বাবা আর আমি দুজনেই ভালো বন্ধু ছিলাম। মারপিট, খুনসুটি এইসব চলত। বাবুজি হঠাৎ ঘরে ঢুকে আমার চুলের ঝুঁটিটা নেড়ে দিয়ে পালাত।তারপর দুজনের ছোটাছুটি শুরু হতো। এইভাবে আমি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে গেলাম। আমার আর বাবুল এর বন্ধুত্ব দেখে অনেকেই কুমন্তব্য শুরু করে। কিন্তু আমরা ছিলাম ভালো বন্ধু।এই সমাজতো বন্ধুত্বের সংজ্ঞা বোঝে না।ওই ছেলে আর মেয়ে, তাইতো নানান পচা ইয়ার্কি বন্ধুরা করত। তারপর থেকে আমরা ঘটা করে ভাইফোঁটা দেওয়া শুরু করি। এবার দুজনে বি -টেক পড়তে শিলিগুড়ি যায়।বাবুলের মা শিলিগুড়িতে চাকরির বদলী নিয়ে যান।

ভালো হলো আমি বাবুল আর কাকিমা একটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকি। আমার বাবুজি খুব নিশ্চিন্তে কোলকাতায় চাকরি করছেন। আমার খাওয়া ও থাকার নিরাপত্তা দেখে।বাবা ছুটি পেলে শিলিগুড়ি আসেন। কাকিমা ও বাবার ইদানিং বেশ ভাব হয়েছে। দুই অভিভাবক নিজেদের সন্তানদের নিয়ে নানান কথা বলেন। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সবাই জানে আমি আর বাবুল ভাই ও বোন।

সে মাসতুতো,মামাতো, পিসতুতো সে যা ভাবুক।আসলে ভাই বোন যে রক্তের সম্পর্ক হবে,তা বর্তমান সমাজ বোঝে না। এইভাবে বাবুল ও আমার খুনসুটিতে সময় এগিয়ে গিয়ে একেবারে বি -টেক ফাইনাল ইয়ার। কাকিমা ও বাবার মধ্যে কত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। একদিন জানলাম বাবুল কুমারী মায়ের সন্তান। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে জন্ম। আমি ও ছ মাসের মধ্যে মাকে হারায়। আমি ও বাবুল দুজনে এক চূড়ান্ত ভাবনা ভেবে বসলাম।হয়তো সবাই ভাববে সীমাহীন আশকারা। দুজনে আসলে কেউ মা, কেউ বাবা ছাড়া বড়ো হয়েছি, তাইতো ওনারা আমাদের অনেক আশকারা দিতেন।যখন যা বলতাম হয়তো সেই সময় দিতেন না, পরমুহূর্তেই আমার বা বাবুলের চোখ ছলছলে দেখে সেই আশকারা দিয়ে আদর করে জিনিসটা কিনে দিতেন।

কিন্তু আমার ও বাবুলের যেই ওই গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা ভাবা ,সেই ভাবনা কিভাবে বাস্তবায়িত করব দুজনার মধ্যে জল্পনা কল্পনা চলতে থাকে। একদিন এক মন্দিরে গিয়ে সব কথা বলে আসি। ঠাকুর মশাই ভেবেছিলেন আমরা বিয়ে করব। কিন্তু উনি সব শুনে আমাদের আশীর্বাদ করলেন। এরকম ভাবনা এখনকার ছেলেমেয়েরা ভাবতে পারে। আমরা ঠাকুর মশাইকে বলি মা ও বাবাকে কিছুতো বলেনি।

আপনি সাহায্য করবেন ঠাকুর মামা। ঠাকুর মামা শুনে ওনার কি হাসি। উনি নির্দিষ্ট দিনে শিলিগুড়ির ফ্ল্যাটে আসেন। কেননা বাবা দিন দুয়েক আগে শিলিগুড়ি এসেছিলেন। ঠাকুরমামা ধানাই পানাই করে মা ও বাবাকে কথাটা বলেন। আমি আর বাবুল লুকিয়ে আড়াল থেকে শুনছিলাম। এবার তাজা চকলেট বোম ফাঁটবে।ঘরে কোনো আওয়াজ নেই। থমথমে পরিবেশ। বাবা আমাকে চিৎকার করে ডাকেন,মাম! এক্ষুণি এখানে এসো। আমি চুপচাপ এগিয়ে যায়।ভয়ে জোরে জোরে কাঁদছি। ওদিকে কাকিমা ও ডাকেন বাবুল,একটু এসো এখানে।বাবুল দেখি, গরমের মধ্যে গায়ে কম্বল লাগিয়ে ঢুকছে।ও মা আর মেরো না।পিঠে খুব লাগবে। তারপর ঠাকুর মামা বললেন , আমি মন্দিরে ফিরে যাচ্ছি। তোমরা পরে দেখা করো।ঘরের মধ্যে নিশ্চয় বোমা ফাটবে। হয়তো এক্ষুণি কর্কশ ধ্বনি শুনতে পাব,সীমাহীন আশকারায় তোমাদের অধঃপতন হয়েছে।

বাবুলের মা বললেন বাবুল ,সোমার বাবা তোমার আসল বাবা। আমাদের এক মন্দিরে বিয়ে হয়েছিল।তারপর উনি বাড়ি গিয়ে বাবা – মায়ের চাপে পুনরায় বিয়ে করেন।তারপর থেকে কোনোদিন আমার দিকে ফিরে চাননি। ওনার স্ত্রী বিয়োগের পরে আমরা অভিমানে এক হয়নি।বাবুল সব শুনে বলে , ও মা কম্বল ফেলে দিলাম।আর মারবে না নিশ্চয়!

আমি আর বাবুল সত্যি সত্যি ভাই বোন। দুজনের বাবা এক শুধু মা আলাদা। মা ,বাবা বাবুল ও আমি সবাই একসাথে এক বাড়িতে খুব ভালো আছি। অবশ্য সব ক্ষণিকের। বাবুল ও আমি তারপর দু প্রান্তে চাকরি সূত্রে চলে যায়। বর্তমানে আমি স্বামী ও পুত্র নিয়ে নিজের সাজানো ঘর আলোকিত করছি। বাবুল ও তার চাকরির জগতে ব্যস্ত।তবে মা ও বাবা তাঁদের সুখের স্বর্গে আছেন। আমি সময় পেলে বাপের বাড়ি যায়। বিশেষ করে আমার বর, জামাই ষষ্ঠীতে শাশুড়ির হাতে মন্ডা , নানান পদ খাবার আগ্রহে বসে থাকে। বাবুল যেখানে থাকুক ভাইফোঁটা নিতে আমার বাড়ি আসবেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *