ভালবাসা যেন শুধুই
আচ্ছা মা তোমাদের কাছে একটা প্রশ্ন আছে । মা কটমট রেগে বলে সারাক্ষণ তোমার ভীষণ প্রশ্ন! লেখাপড়াতে মন দাও। মুনিয়া চিৎকার করে বলে যা বাবা। তোমরা’তো সোম থেকে শনি বাড়িতে থাকো না। আমি’তো একা একা পড়ি। মা বলে আমরা দু’জনে চাকরি করি। আনন্দ করতে যায় না। মুনিয়া বলে আমি কোথায় বললাম তোমরা আনন্দ করতেযাও! বাবা বলে বসলেন মুনিয়া তুমি যত বড় হচ্ছ মায়ের মুখে তর্ক করছ। মুনিয়া মুখটা কাঁচুমাচু করে নিজের ঘরের দিকে যেতে যায়। তখন মা বলে কি বলবি বলে যা।নাহলে তোর পড়াতে মন বসবে না। মুনিয়া বলে বসে আমি যেটা বলব সেটা ভালো লাগবে না। শুনে মুনিয়ার বাবা বললেন তাহলে সেটা বলো না।
মুনিয়া বলে বাবা না বলতে পারলে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। মুনিয়ার মা বলে ঠিক আছে বলে যা। সারাদিন’তো বকতে’ই থাকিস।ওই এক কান দিয়ে শুনব আরেক কান দিয়ে বার করব। মুনিয়া গজগজ করে রাগ করে বৃদ্ধাশ্রমে ফোন করে ঠাম্মার সাথে গল্প করে মনটা ঠান্ডা করে। ঠাম্মা মুনিয়ার জন্য তিলের নাড়ু রেখেছে। বাবার সাথে গিয়ে নিয়ে আসতে বলেছে।
ঠাম্মা কত কি বানাতে পারে!!
আর দিদা কিছু পারে না।পারে শুধু মাকে নালিশ করতে। অফিস থেকে আসতেই নালিশ।আরে মুনিয়া ফাস্ট ইয়ারে পড়ে।ফোন করলেই দিদা বলবে কি’রে ছেলে বন্ধুদের পাল্লায় পড়লি।এই নিয়ে মুনিয়া আর দিদা’র বচসা শুরু হয়ে যায়।
একদিন মুনিয়া কলেজের বন্ধু শান্তনুকে নিয়ে ঠাম্মার কাছে দেখা করে আসে।ক’দিন ধরে মন খারাপ করছিল।হাত খরচের টাকা বাচিয়ে ঠাম্মাকে অনেক খাবার কিনে দিয়ে আসে। ঠাম্মার কান্নাভেজা গলাটা পড়তে বসে মনে পড়তেই মুনিয়া কেঁদে ফেলে। খাবার টেবিলে মুনিয়া বলে কতদিন ঠাম্মাকে দেখতে যাও নি বাবা??
মা বলে বসে সোম থেকে শনি ব্যাঙ্কে কত কাজ থাকে বল। বাবা সময় পায় কোথায়! তাই’তো আশ্রমে অনলাইনে টাকা পাঠানো হয়েছে। ঠিক আছে আমি কাল ছুটি নিয়েছি। দেখে আসব। বিকেলে দিদাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাব। মুনিয়া বলে ওঠে ও দিদার জন্য ছুটি নিয়েছ।কখনো’তো ঠাম্মার জন্য ছুটি নিতে পারো!! মুনিয়া’কে মুনিয়ার মা বলে,তোকে কি তোর ঠাম্মা এই সব বুদ্ধি দেয়।
মুনিয়া বলে ওঠে একমাস দিদা আরেক মাস ঠাম্মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখলে হয় না। সবাই চুপ। মুনিয়া বড় হয়ে গেছে। ভয়ংকর কথা বলতে শিখে গেছে। মুনিয়ার মা ঠান্ডা মাথায় বলে , এই বাড়িতে যে থাকি,এটা তোর দিদার বাড়ি। মুনিয়া বলে ওঠে ব্যাঙ্কে কাজ করো দু’জনে।একটা বাড়ি বানাতে পারো নি বাবা!! তাই তোমার মাকে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হয়!!! মা’র মা’ টা মা হয়। বাবা’র মা’ টা মা হয় না! বাবা তোমার কষ্ট হয় না। মুনিয়ার বাবা খাবার না খেয়ে উঠে যায়। মুনিয়ার মা বলে সারাদিন পর তোর বাবা খেতে বসল,তোর সহ্য হলো না।
বাবা একদিন না খেলে কিছু হবে না। কিন্তু ওই বুড়িটা রোজ চোখের জল ফেলে তাতে তোমার স্বামীর অকল্যাণ হচ্ছে। তুমি বুঝতে পারবে,যখন তোমার মুনিয়া বিদেশে পড়তে যাবে।
সারা বাড়ি নিশ্চুপ।মুনিয়ার দিদা বলে ওঠে মুনিয়া বড্ড বাচাল হয়েছিস। মুনিয়া বলে তা তো বলবে দিদা,পরের ছেলেকে জামাই করে ছেলে বানিয়েছ।মেয়ে দিয়ে একটা ছেলে ও একটা মেয়ে পেয়েছ।আর তোমার বেয়ান কি পেয়েছে বলতে পারো! আসলে সমাজটা স্বার্থপর। সবাই নিজ স্বার্থ দেখে । হঠাৎ টেলিফোন আসে মুনিয়ার ঠাম্মা মারা গেছে। তৎক্ষণাৎ সবাই ওখানে যায়। মুনিয়া চিৎকার করে ঠাম্মাকে জড়িয়ে বলে ঠিক আছে ঠাম্মা। তুমি চলে গিয়ে শান্তি পেয়েছ।রোজ তিলে তিলে মৃত্যুর চেয়ে একেবারেই দাদুর কাছে চলে গিয়ে ভালো করেছ।