অপরাজিতা
একটা চাপা গোঙানীর শব্দে অনিতার ঘুম ভেঙ্গে যায়। তখনও পুবের আকাশের রঙ ধরেনি।
চোখ বন্ধ করেই বিছানা হাতড়ে বিমলকে পায় না। বুকটা ছ্যাৎ করে ওঠে।
একবছর আগে আজকের দিনেই সমস্ত আর্থিক যশ/বৈভবে ঠোকর দিয়ে, বিমলের ভালোবাসায় ভেসেছিল। বস্তুত বিমল এখনও বেকার! অনিতা দারিদ্র মেনে নিলেও, বিমল মরমে মরে যায়। এ’সব অনিতার জানা। কিন্তু, গেল’ কোথায়?
দরজাটা হাট ক’রে খোলা। মাটির বারান্দায় পা ঝুলিয়ে বসে বিমলই ফোঁপাচ্ছে। অনিতা এতক্ষণে কারণটা বুঝতে পারে। খুব কাছে গিয়ে কানে কানে বলে, “পুরুষামানুষের এমন ক’রে কাঁদতে নেই। দেখো, আমি কেমন মানিয়ে নিয়েছি। আমার মুখের দিকে তাকাও দেখি।”
“আমি তোমাকে কোন নরকে এনে ফেললাম! তুমি এতো বড় ঘরের মেয়ে; সব অসুবিধাকে মানিয়ে নিয়েছ আমার দিকে তাকিয়ে! তুমি বড়ি ফিরে যাও অনিতা! “
“বিমল! কি বলছো পাগলের মতো!
শান্ত হও, সকালে কথা হবে, এখন ঘুমোবে চলো।”
অনিতা বুদ্ধিমতি, সকালে বিমলকে বলল,
“আমি খাবার বানাতে জানি। আমরা বড় রাস্তার ধারে একটা দোকান শুরু করতে পারি। তুমি চা বানাবে, আমি চায়ের সাথে নানারকম খাবার বানিয়ে বিক্রি করবো। পথ চলতি গাড়িগুলোও দাঁড়াবে চা জলখাবারের জন্য। তুমি দেখো আমরা ঠিক সফল হবো।”
বিমল কিছু টাকা ধার নিয়ে শুরু করল ওদের নতুন দোকান-
“দাঁড়াও পথিকবর”।
দেখতে দেখতে দোকানের আয় বাড়তে লাগলো।
অনিতা বাড়ির অমতে বিয়ে করায় বাবা আজও মেনে নেয়নি। একদিন অনিতার বাবার গাড়ি ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। অজান্তেই দাড়ালো দোকানের সামনে। দোকানে মেয়েকে দেখে প্রথমে খুব রেগে গেলেন। কিন্তু অনিতার এই হার না মানা মনভাবে খুশি হলেন। দোকানটা ভালোই চলছে!
“অনিতা! বাবা ক্ষমা চাইছে। বিমল তুমি আর রাগ করে থেকো না। যোগ্যতা থাকলে যে কোনো পরিস্থিতিকে জয় করা যায় তোমরা বুঝিয়ে দিয়েছ। আমাকে শাস্তি দিয়ো না। বড়ি চলো।”
“বাবা আমাদের ক্ষমা করবেন; আশীর্বাদ করুন আমরা যেন আরো উন্নতি করতে পারি। প্রয়োজনে আমাদের ঠিক পাশে পাবেন। কিন্তু এই দোকান ছেড়ে যেতে বলবেন না। “
“বেশ, আশীর্বাদ করি ভালো থেকো।”
কালো গাড়িটা ধুলো উড়িয়ে এগিয়ে গেলো।