Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কর্পোরেট || Saswati Das

কর্পোরেট || Saswati Das

কর্পোরেট

অফিসে গিয়েই, সুদেব চিঠিটা হাতে পেল।
পদোন্নতির আনন্দে চিঠিটা খোলার দরকারও মনে করেনি।
সরকার’দা বললেন, “চিঠিটা আগে খুলে দেখ।”
সুদেব ততক্ষণে সুখবরটা দেওয়ার জন্য তন্বীকে ফোন করেছে।

চিঠিটা খুলতেই সুদেবের পা থেকে মাটি সরে গেল। একটা “সাসপেন্সান্ লেটার্!” তলায় বিভাগীয় প্রধান, মিস্ মধুবন সেনগুপ্তের স্বাক্ষর।
ওদিকে তন্বী ফোনে – “হ্যালো… হ্যালো… সুদেব কথা বলো।কী হলো..
হ্যালো..
সুদেব তন্বীকে বলল “একটু বাদে ফোন করছি মিটিং এ আছি।”
নতুন জয়েন করা মিস্ সেনগুপ্তের সাথে সুদেবের সম্পর্ক খুব একটা ভালো না। কারণে অকারণে উনি সুদেবকে অপমান করার চেষ্টা করেন। হয়তো ওঁর সাথে কোনো রাশিগত বৈষম্য আছে!নয়তো মিষ্ট স্বভাবের সুদেবকে অফিসে যেখানে সবাই পছন্দ করে মিস্ সেনগুপ্ত কেন ওকে সহ্য করতে পারেন না! অবশ্য অফিসে সুদেবের সত্রুপক্ষ যে একেবারে নেই তা নয়; ওর ক্রমাগত উত্থান অনেকেরই চক্ষুশূল,কিন্তু তা’বলে…! সরকারদা বললেন- “এটা পরিষ্কার, তোর বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে, চক্রান্তের গোড়াটা খুঁজতে হবে।”
সুদেব কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ও ভাবতেও পারেনা ওর বিরুদ্ধে কে এই জঘন্য চক্রান্ত করতে পারে!
সুদেবের হঠাৎ মনে পড়ল কিছুদিন আগে বোস’বাবু একটা ফাইল এনে খুব তাড়াতাড়ি সই করিয়ে নিয়ে গেলেন। ভালো করে পড়েও দেখা হয়নি। ওই ফাইলেই এমন কিছু ছিল না তো! কথাটা সরকার’দা’কে জানাতেই উনি বললেন- “তাহলে ওই ফাইলেই সব কারসাজি আছে। এখন ওই ফাইল কি ভাবে পাওয়া যাবে সেটাই ভাবতে হবে।” সুদেব চিঠিটা নিয়ে মিস্ সেনগুপ্তর কেবিনে এলো- “ম্যাডাম, এই চিঠি! আমি কি কোনো অপরাধ করেছি?”
“আপনি জানেন না কি করেছেন?
ন..না! আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না!”
“এই ফাইলটা দেখুন! আগরওয়াল’রা ব্ল্যাকলিস্টেড হওয়া সত্বেও ওদের অর্ডারটা পাইয়ে দিয়েছেন টাকার বিনিময়ে?”
সুদেব দেখলো সেই ফাইলটা,যেটা বোস’বাবু কিছুদিন আগে ওকে দিয়ে সই করিয়ে ছিলো। যেহেতু ওর সই আছে, এখন কোনো যুক্তিই খাটবে না। তবু সুদেব একটু বোঝানোর চেষ্টা করল,কিন্তু একেই ম্যাডাম সুদেবকে সহ্য করতে পারে না, তায় জালিয়াতি ধরা পড়েছে। নাই বা হলো সেই জালিয়াতি ওর করা কিন্তু সইটা যে ওর অস্বীকার করার উপায় নেই। বোস’বাবু এইভাবে আমাকে ফাঁসালো!সুদেব মুখ নিচু করে ম্যাডামের কেবিন থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো। পায়ের তলার জমি সরে যাচ্ছে। ফ্ল্যাটের লোন, গাড়ির লোন, কিভাবে মেটাবে! না! এই মিথ্যে অপবাদ মাথায় নিয়ে কোন ভাবেই ওর পক্ষে বাঁচা সম্ভব না! উদভ্রান্তের মতো রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে সুদেব। বুক-পকেটে মোবাইলটা ভাইব্রেট করছে। তন্বীর ফোন। রিসিভ করবে কি না ভাবতে ভাবতে কলটা কেটে গেল। আবার রিং হচ্ছে। না এখন আমি তন্বীকে কোনো ভাবেই ফেস করতে পারবো না। আবার রিং। এবার বাধ্য হয়ে কলটা রিসিভ করলো। খুব ক্লান্ত কণ্ঠে বলল-
হ্যাঁ, বলো..
” কি গো! তুমি সেই’যে বললে একটু পর কল করছি আর তো ফোন করলে না? তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? গলাটা এমন শোনাচ্ছে কেন?”
“ন..না, না কিছু না।”
“সুদেব তুমি কি লুকচ্ছ খুলে বলো আমাকে! তুমি এখন কোথায়? ঠিক করে বলো কি হয়েছে তোমার? আমি সরকার’দাকে ফোন করে জানলাম তুমি অফিসে নেই। “
তন্বীর ব্যাকুল কণ্ঠে সুদেব ঝড়ে ভাঙা গাছের মতো ভেঙে পড়লো-
” তন্বী, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি একজন হেরে যাওয়া মানুষ। আমি আর পারছি না, আমাকে তুমি ক্ষমা কোরো…”
“সুদেব! লক্ষীটি শোনো! তুমি কোথায় আছো বল? আমি এখুনি আসছি।”

তন্বী দেখে সুদেব বাসস্টপে একটা সিটে বসে আছে সব হারানো মানুষের মতো।
” কি হয়েছে তোমার? এখানে এভাবে বসেআছো কেন?”
“আমার চকরিটা চলে গেছ তন্বী!”
“কী বলছ কী!”
“হ্যাঁ, একটা মিথ্যে জালিয়াতি কেসে আমাকে বিশ্রীভাবে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।”
” কিন্তু যে অন্যায় তুমি করোনি তার দায় কেন তুমি নেবে? আমি ম্যাডামের সাথে কথা বলবো। “
“না না, তুমি এর মধ্যে ঢুকো না..”
” তুমি চুপ করো। চলো আমার সাথে।”
ওরা প্রথমেই গেলো একজন ভালো লইয়ারের কাছে। সেই লইয়ারের তৎপরতায় খুব তাড়াতাড়িই সত্য উদ্ঘাটন হয়। সইটা সুদেবের ছিলো বলে ওর কিছু টাকা জরিমানা হলেও চাকরিটা ফিরে পায়।
আজ ওদের ‘ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি’ সুদেব খুব রিলাক্সড। সবটাই হয়েছে তন্বীর জন্য। ও তন্বীকে সারপ্রাইজ দেবে বলে একটা ‘ডায়মন্ড রিং’ কিনে এনেছে। ওরা ঠিক করে রাতে ক্যান্ডেললাইট ডিনারে যাবে। হঠাৎ সুদেবের মোবাইলে মিস্ মধুবন সেনগুপ্তর কল।
সুদেবের বুকটা ছ্যাৎ করে ওঠে। আবার কি কোনো দুঃসংবাদ! ফোনটা রিসিভ করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল- “হ্যা..হ্যালো”
“হ্যাপি অ্যানিভার্সারি মি: রয়, এন্ড কংগ্রাচুলেশনস! আপনার একটা প্রমোশন হয়েছে। কাল অফিসে আসুন, প্রমোশন লেটারটা অফিসিয়ালি পেয়ে যাবেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress