সাফল্যের সোপান
ভারী মিষ্টি ছোট্ট মেয়েটি। বাইরে থেকে দেখলে কিছুই বোঝা যায় না॥কথা বলতে চায় না কিছুতেই,, কথা বলতে গেলেই হোচট খায়, তোতলায় ! মা নামী আবৃত্তি শিল্পী ! বাবা অধ্যাপক, তাঁদের মেয়ে তোতলা? এটা যেন মেয়েটির ই অপরাধ!সব সময় গুটিয়ে থাকে, একমাত্র ছোট্ট ভাইটার সাথে কথা বলে, ভীষণ ভালোবাসে দুজন দুজনকে॥ ভাই বোঝে দিদির কষ্ট টা! বলে, ”দিভাই, মুখে সুপুরি টা রাখ,তাহলেই কথা বলতে পারবি!চেষ্টা কর !” চেষ্টা করে চলে মেযেটা, অনলস চেষ্টা। মনে মনে একটা জেদ তৈরী হয় ! স্কুলে বন্ধুরা খেপায়,,বাড়ি তে মায়ের অবজ্ঞ।। ভীষণ কষ্টে একদিন প্রিয়মিস, বাংলারমিস কে কাঁদতে কাঁদতে সব কথা বলে বসে!ওইমিস খুবই সংবেদনশীল । উনি ছোট্টমনের বেদনাটা অন্তর দিয়ে উপলব্ধি কর তে পারেন।সবার অলক্ষ্যে উনি রুচিরা কে স্পিচ থেরাপিস্টের কাছে নিয়ে যান॥ স্পিচ থেরাপিস্ট ”আবৃত্তি” করতে বলেন। ও কবিতা খুব ভালোবাসে! বাড়ি তে কবিতা জোরে জোরে পড় লেই ওর ”শিল্পী মা” বিরক্ত হন,”রুচি,তোমাকে বলেছি না,আবৃত্তি করবে না।যে যেটা পারে তার সেটাই করা উচিত॥এটা তোমার ক্ষমতার বাইরে, বৃথা চেষ্টা করো না, ”।কুঁকড়ে যায় মেয়েটা॥ কি ন্তু মিস যে বলেছেন,, ও লুকিয়ে লুকিয়ে নিজের চেষ্টা চালিয়ে যায়, প্রথম প্রথম সবার ব্যঙ্গ,”তোতলার আবার আবৃত্তির শখ, কুঁজো চায় চিত হয়ে শুতে, ” সঙ্গে হাসি, বিদ্রুপ, ফোর, ফাইভ,,সিক্স, ।তিন তিনটে বছর রুচিরার চেষ্টাও বিফলতার সাধনায় গেছে॥ এখন আর ও কথা বলতে ভয় পায় না। তোতলামিও প্রায় সেরে গেছে! তবে মেয়েটা খুব কম কথা বলে॥ ওর ”শিল্পীমা” জানেন ই না ॥
ইনটার স্কুল আবৃত্তি প্রতিযোগিতার মঞ্চ । বিচারক দুজন, মধুরিমা সেন, বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী ! ডঃ সুমতি বসু, শিক্ষাবিদ ও শিশুমনরোগ বিশেষজ্ঞ !
ছোটদের গ্রুপের পাঁচ জনের একজন, রুচিরা সেন॥ লিস্ট দেখতে দেখ তে ডঃ বসু মধুরিমা কে বলেন, ”এই যে মেয়ে টিকে দেখছেন, রুচিরা সেন, এ এক জ্বলন্ত উদাহরণ কি ভাবে বিফলতাকে সোপান করে সফল হ তে হয় !” চমকে ওঠে মধুরিমা।উনি বলে চলেছেন, ” ওর স্কুলের শিক্ষিকা আমার মেয়ে!মেয়েটি তোতলা ছিলো ! ঠিকমতো কথাও বলতে পারত না॥আমার মেয়ের খুব প্রিয়ছাত্রী ও ! ও রুচিকে সাহস যোগায় ! আর ওর নিরলস চেষ্টার ফল ও আজ এইমঞ্চে,”হতবাক মধুরিমার কানে ভেসে আস ছে রুচিরার মিষ্টি কণ্ঠে র আবৃত্তি,,”আজি এ প্রভাতে রবিরকর
কেমনে পশিল প্রাণের পর,
কেমনে পশিল গুহার আঁধারে,প্রভাত পাখীর গান, ”॥