Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বিয়ে বাড়ির গল্প || Manisha Palmal

বিয়ে বাড়ির গল্প || Manisha Palmal

বিয়ে বাড়ির গল্প

আজ থেকে তিন দশক আগের কথা! আমার শ্বশুরবাড়ি জঙ্গলমহলের যে অঞ্চলে সেখানকার লোকাচার ও সংস্কৃতি নগর সংস্কৃতি থেকে বেশ কিছুটা আলাদা! সদ্য বিয়ে হয়ে এসেছি এখানে! সব নিয়মকানুন তেমন জানি না! বিরাট একান্নবর্তী পরিবার! তেমনি বিভিন্ন নিয়ম কানুন! এই সময় আমার এক সম্পর্কিত ননদের বিয়ে ঠিক হয় ওড়িশা লাগোয়া সীমান্ত বাংলার এক গ্রামে! ওদের কথায় উড়িয়া টান আমরা ঠিক বুঝতে পারতাম না! এই বিয়ে বাড়ির গল্পই বলবো। শীতকাল সদ্য নবান্ন উৎসব শেষ হয়েছে। বিয়ের প্যান্ডেল করা হয়েছে পুকুরের লাগোয়া খামারে। জেনারেটর চালিয়ে আলোকসজ্জা চারপাশের অন্ধকারের মাঝে আলোর ঝলকানি বিয়েবাড়ির চৌহদ্দিতে। সন্ধ্যে থেকেই নিমন্ত্রিত রা এসে গেছেন। বরযাত্রী আর বর আর আসে না। সবাই খুবই চিন্তিত যারা বর আনতে গেছে তাদেরও কোনো খবর নেই। দেখতে দেখতে রাত গডিয়ে চলেছে। গ্রামের লোকজন খাওয়া-দাওয়া সেরে ফিরে গেছে। সবাই চিন্তায় আছে— এখনো কেন বর এলো না! তখন তো আর মোবাইলের যুগ নয় যে তৎক্ষণাৎ খবর পাওয়া যাবে— চিন্তায় চিন্তায় আরো ঘন্টাখানেক কাটলো! হঠাৎ জঙ্গল রাস্তায় গাড়ির হেডলাইটের আলো— দেখতে দেখতে পাঁচ টি জিপের কনভয় এসে দাঁড়ালো— প্রতিটি জিপে দুজন করে বন্দুকধারী পাহারাদার। প্রথম জিপ থেকে বর বাবাজি নামলো। প্রতিটি জিপের পাহারাদারা নেমে বন্দুক আকাশের দিকে তুলে ব্ল্যাংক ফায়ার করল। আমরা হতভম্ব। বর কর্তা বললেন—– আমাদের এলাকা খুবই ডাকাতি প্রবন তাই পাহারাদার নিয়ে নিয়ে আসতে হয়! আমি জীবনে এমন বরযাত্রী আসা দেখিনি! যাইহোক বিয়েতো সম্পন্ন হল! পরদিন সকালে বর কনে বিদায়ের সময় ওনারা বললেন যে বৌভাতের অনুষ্ঠানে দুপুরে হবে । পাকস্পর্শ ইওদের আসল অনুষ্ঠান। তাই দুপুরে আমাদের যেতে হবে। শুনলাম জঙ্গলের ভেতরে গ্রাম বাস রাস্তা নেই তাই বাইকে যেতে হবে। আমরা 25 টি বাইক স্কুটার নিয়ে যাত্রা শুরু করলাম। প্রতি বাহনে দুজন করে আরোহী। বাইকের মিছিল জঙ্গল রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি তো যাচ্ছি। জঙ্গল ঘন থেকে ঘনতর। লোক বসতি বিরল ।যা ভয় লাগছে কি বলবো। একটা সরু সোঁতা পেরিয়ে গিয়ে দেখলাম বেশ কয়েকজন আদিবাসী। আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন কোথায় যাব— জামাইয়ের নাম বলতেই দুজন এসে আমাদের রাস্তা দেখিয়ে গ্রামের সীমানা পর্যন্ত এগিয়ে দিল– আমরা রাস্তা ভুল করেছিলাম! জঙ্গলের মাঝে এমন সুন্দর গ্রাম আছে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না! সুন্দর দু’তলা বাড়ি !দুতলা সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি!
এবার শুরু হলো লোকাচার—- হলুদ জলে পা ধুয়ে দিয়ে বরণ করা। প্রথমে শরবত পান সুপারি দিয়ে আবাহন। শুনলাম ঐ পানসুপারী দেওয়া মানে সম্মান জানানো। ছেলেদের সম্পর্কে গুরুজনদের প্রণাম উপহার এবং ছোটদের সম্মান দক্ষিণা। আমি বড় বৌদি হিসেবে একটি তসরের শাড়ি ও 101টাকা প্রণামী পেলাম । বর-কনে জোড়ে এসে ওই প্রণামী দিলেন। এবার পাক স্পর্শের অনুষ্ঠান শুরু হল। বিরাট রান্নার প্যান্ডেল— সেখানে কাঠের উনুনে পিতলের হাড়িতে পায়েস রান্না হচ্ছে! দুজন বয়স্ক মহিলা ননদের শাশুড়ির সম্পরকিত ও একজন রাঁধুনির তত্ত্বাবধানে কনে নিজের হাতে তা রাঁধলেন। এবার ওই পায়েস দুবাড়ির গুরুজনদের নিজের হাতে পরিবেশন করলেন। আর একটা সুন্দর নিয়ম— সব গুরুজনেরা রান্না খেয়ে খুশি হয়ে নতুন বউকে পার্বণী দিলেন! এই লোকাচার টি আমি আর কোথাও দেখিনি! এই মন ছোঁয়া লোকাচার টি আমার মনের মণিকোঠায় আতর মাখা স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে। বিয়ে বাড়ি র স্মৃতি বললেই এই সুখ স্মৃতি মনে জাগে। ভুলি কেমনে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *