জন্মদিন
শ্রাবণের অঝোর ধারা প্রকৃতিকে যেন জল চুডি ওড়নায় ঢেকে ফেলেছে। ভিজে বাতাসে ভেসে আসছে বুনো ফুলের সুবাস। স্কুলবাড়ি থেকে ওর ঘরের দূরত্ব মাত্র কয়েক শ ফুটের। স্কুল কম্পাউন্ডের মধ্যেই ওর ছোট্ট বাড়িতে। সঠিক বললে ওর বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে স্কুলটা। ওর পরিচয় টাই দেওয়া হয়নি— ও শিলাদিত্য রায় চৌধুরী শিল্পপতি অনাদি রায়চৌধুরীর একমাত্র- উত্তরাধিকারী! এই জঙ্গল পাহাড়ের নেশা ওর কলেজ লাইফ থেকে। এক বিশেষ রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়ায় পুলিশ ওর পেছনে লাগে। তখন ওর বাবা এই প্রান্তিক জায়গায় এই বাড়িটা তৈরি করে ওকে নির্বাসনে পাঠায়। ভেবেছিলেন এই নির্বাসনে ওর মাথা থেকে রাজনীতির ভূতটা নামবে—- বাস্তবে হল এর উল্টোটাই! আরো বেশি করে জড়িয়ে পড়ল রাজনীতি র সঙ্গে। এই অনুন্নত জায়গাটার আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভালো-মন্দের সাথে জড়িয়ে পড়ল ওতপ্রোতভাবে। নিজের ঘরে আদিবাসী ছেলেমেয়েগুলোকে স্বাক্ষর করার চেষ্টায় শুরু করেছিল একটা ছোট্ট পাঠশালা– অরুণোদয়, 5 টি ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে! দেখতে দেখতে প্রায় 18 বছর হয়ে গেল! আজ ওর সেই ছোট্ট পাঠশালা এক নিম্ন বুনিয়াদী বিদ্যালয় যেখানে 150 জন ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনো করে! সরকারি অনুদান থেকেই এই স্কুলবিল্ডিং তৈরি হয়েছে। শিলাদিত্যের মনে পড়ে যায় সেই প্রথম দিকের সংঘর্ষের কথা ,বিরোধিতার কথা এবং সঙ্গে সঙ্গে আদিবাসীদের প্রাণ ভরা ভালোবাসার কথাও। আজ পয়লা শ্রাবণ এই দিনেই 18 বছর আগে পথ চলা শুরু করেছিল “অরুণোদয় পাঠশালা”!যা আজ “অরুণোদয় নিম্ন বুনিয়াদী বিদ্যালয় “রূপে পরিচিত।
বাচ্চাগুলোর কলরবের চমক ভাঙ্গে শিলাদিত্যর। সব ছাত্র-ছাত্রীরা আজ স্কুলের প্রতিষ্ঠা দিবসের আনন্দে মাতোয়ারা। স্কুলের জন্মদিন যে। আজ তার স্বপ্ন সন্তান সাবালক হলো। এবার শিলাদিত্য ছুটি নিতে পারে। সে মনে মনে স্থির করে এবার অবসর চাই। ওর কানে ভেসে আসে বাচ্চাদের সমবেত সংগীতের সুর—-
” আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে
এ জীবন পূর্ণ করো দহন দানে।”