Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

গন্ডি

তারপর, রাবণতো সীতাকে হরন করে লঙ্কায় নিয়ে এসেছে। এদিকে রামচন্দ্র আশ্রমে ফিরে সীতাকে দেখতে না পেয়ে ভাই লক্ষণকে জিজ্ঞেস করলেন; লক্ষণ বললেন আমিতো বেরোবার আগে গন্ডি কেটে দিয়ে বলেছিলাম, গন্ডির বাইরে না বেরোতে । উনি নিশ্চয় গন্ডি পেরিয়েছিলেন। আচ্ছা দাদু,গন্ডি কি?
দাদুভাই, গন্ডি হল দাগ টেনে দেওয়া। কিন্তু সেই দাগের এমন ক্ষমতা, যে দাগের ভীতরে থাকবে, তাকে কেউ কোথাও নিয়ে যেতে পারবেনা। ও আচ্ছা; তাহলে আমি যদি তোমার ঘরে একটা গন্ডি কেটে দিই তাহলে মা আর তোমাকে বাড়িথেকে তাড়াতে পারবেনা? তাই নাকি দাদুভাই? মা আমাকে তাড়িয়ে দেবে বলেছে? হ্যাঁতো, মাতো রোজ রাতে পাপাকে বলে, বুড়োটাকে তাড়াতে পারলে ওই ঘরটাকে বসার ঘর করতে পারতাম। জানো দাদু, মা বলেছে, তুমি চলে গেলে, এই ঘরটাতে একটা রকিং চেয়ার এনে দেবে। আমি তাতে বসে দোল খাবো। মা’তো বাবাকে বলেছে একটা ‘সোফাকামবেড’ কিনবে,এইঘরে রাখার জন্য। দাদু তুমি চলে যাবে? তাহলে আমাকে রামচন্দ্রের গল্প কে শোনাবে? তুমিতো আমাকে কতো গল্প বলো, তখন কে বলবে? রোহন দাদুর গলা জড়িয়ে ধরে বলে, ও দাদু, তুমি যাবেনা বলো। আমার রকিং চেয়ার চাইনা। তুমি এখানেই থাকবে।
দাদুভাই, তোমার মা’র যদি অসুবিধা হয়, আমি এখানে থাকি কি করে বলো দেখি?সত্যিইতো, এই বাড়িতে কোনো বসার ঘর তো নেই। আমি চলেগেলে তোমাদের একটা বসার ঘর হবে। আর গল্প? সে সব’তো এখন ওইযে তোমাদের মোবাইলে ইন্টারনেট না কি আছেনা? তাতেই সব গল্প পেয়ে যাবে। তার জন্য আমার একটা ঘর আটকে রাখা কি মানায় বলো দেখি? দাদুর অভিমান, নাতিকে বুঝতে না দিয়ে বললেন, আমার একটু ঘুম পাচ্ছে দাদুভাই, তুমি পরে এসো।
রোহন চলে যাওয়ার পর অজিতবাবু ভাবলেন, খোকা হয়তো লজ্জায় কথাটা আমাকে এখোনও বলতে পারেনি। পরদিন অজিতবাবু ছেলেকে বললেন, আমার একজন বন্ধু আর তার স্ত্রী দেওঘরে থাকে। আমাকে ওরা ওখানে যাওয়ার জন্য খুব বলে, কিন্তু কখনও যাওয়া হয়নি। ভাবছি এবার যাবো। তোর মা চলেযাওয়ার পর আমিও খুব নিঃসঙ্গ, ওখানে গেলে ভালোই লাগবে। বাবার মুখে কথাটা শুনে ছেলের মনে হলো হাতে স্বর্গ পেলো; ও সঙ্গে সঙ্গে বলল কবে যেতে চাও বলো, আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। অজিতবাবু বললেন যেতেই যখন হবে, কাল সকালেই আমার যাওয়ার ব্যবস্থা কর। ছেলের কানে বাবার শেষ কথাটা বড় করুণ শোনালো। কিন্তু গিন্নির ভয়ে কোনো কথা বলতে পারলো না। বাবা যখন স্বেচ্ছায় যেতেই চাইছে তখন যাক। পরদিন সকালে গাড়ি এসেগেছে, অজিতবাবুর স্যুটকেস গোছানোই ছিলো। স্ত্রীর ছবিখানা বুকে নিয়ে গাড়িতে বসলেন, গাড়ি রওনা দিলো। পেছনে রোহনের কান্না শুনতে পেলেন, দাদু কেন চলে গেলো? আমিতো গন্ডি কেটেছিলাম! তবু দাদু কেনো চলে গলো… রোহনের আওয়াজটা ক্রমে ক্ষীণ হয়ে আসছে। অজিতবাবু চোখ বুজলেন, কোণ বেয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে এলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress