বিবেকবধের পালা
রিপদ মনমরা হয়ে বেড়াচ্ছে দেখে সদাশিববাবু জিগ্যেস করলেন,-কী হে হরিপদ? অসুখবিসুখ নাকি?
হরিপদ ম্লান হেসে বলল, আজ্ঞে না।
–তাহলে অমন ব্যাজার কেন?
এ প্রশ্ন হরিপদকে সবাই করেছে। কারণ, হরিপদ খুব আমুদে হুল্লোড়বাজ মানুষ। তাকে কেউ কখনও গোমড়ামুখে বেড়াতে দেখেনি। তাছাড়া তার আরও সুনাম গানের জন্য। ভারি চমৎকার গান গাইতে পারে সে। যাত্রাদলে বিবেকের ভূমিকা তার বাঁধা। আজকাল নানা জায়গা থেকে যাত্রার আসরে বিবেক সাজার জন্য তার ডাক আসে। টাকাকড়িও ভালো পায়।
সদাশিববাবু প্রশ্ন শুনে হরিপদ একটু ইতস্তত করে বলল, আমার বড় বিপদ, সদাশিবখুড়ো।
–বিপদ! কী বিপদ? কীসের বিপদ?
–বললে কি বিশ্বাস করবেন খুড়োমশাই?
আলবাত করব। কেন করব না? সদাশিববাবু বললেন, আজ পর্যন্ত তোমায় তো কেউ অবিশ্বাস করেনি। কারণ তুমি অবিশ্বাসের কাজ করোনি। তুমি সত্যবাদী। –ভালোমানুষ। বলল, বলো! কী বিপদ তোমার! আমরা সবাই তোমায় সাহায্য করব!
সদাশিববাবু গাঁয়ের বারোয়ারি বটতলায় সারাক্ষণ বসে আড্ডা দেন। বড় বেশি বকবক করেন। হরিপদ মনে-মনে বিরক্ত হলেও মুখে বলল,–এ বিপদে কারুর সাহায্যে কাজ হবে বলে মনে হয় না খুড়োমশাই।
–আহা, খুলে বলোই না বাবু। তারপর বুঝব, কাজ হবে কি না।
অগত্যা হরিপদ ওঁর পাশে বসল। তারপর চাপা গলায় বলল,–আগের রাতে ময়নাডাঙায় এক আসরে বিবেক গাইতে গিয়েছিলাম। বন্ধুবাহন-অর্জুন পালা, খুব জমেছিল। তিনখানা গান গেয়ে সাজঘরে বসে আছি। পরের গান দুটো এই দৃশ্যের পরের দৃশ্যে। তো বসে থাকতে থাকতে ঢুলুনি চেপেছিল। হঠাৎ একসময়ে ঘুম ভেঙে গেল, সঙ্গে-সঙ্গে উঠে পড়লাম। বাইরে বেরিয়ে গিয়ে আসরের দিকে তাকিয়ে দেখি, শেষ দৃশ্য হচ্ছে। বভ্রুবাহন প্রাণ ফিরে পেয়ে পিতা অর্জুনের পায়ের ধুলো নিচ্ছে। আমি তো ভারি লজ্জায় পড়ে গেলাম। আরও চারখানা গান ছিল বাকি। নিশ্চয় আমাকে ওঠানোর চেষ্টা করছিল। ঘুম ভাঙেনি আমার। তখন গান বাদ দিয়েই পালা শেষ করেছে!
–তা এতে বিপদটা কী? টাকাকড়ি দেয়নি বুঝি?
হরিপদ জোরে মাথা নেড়ে বলল, নানা। সেটাই তো গোলমেলে ব্যাপার। পালা শেষ হলে অধিকারীমশাই এসে আমার পিঠে চাপড়ে বললেন, হরিপদ। আজ মাত করে দিয়েছ ভাই! কারে তুই বধিস ওরে ও যে তোর আপনজন এই গানখানা যখন গাইলে, আসরের কারুর চোখ শুকনো ছিল না। অধিকারীর কথা শুনে আমি তো অবাক।
–কেন? অবাক হলে কেন?
–ও গানটাই তো আমি গাইনি। ওটা চতুর্থ অঙ্কের তৃতীয় দৃশ্যের গান। আমি যখন সাজঘরে গিয়ে ঢুলছি, তখন সবে দ্বিতীয় অঙ্কের দ্বিতীয় দৃশ্য চলছে।
সদাশিববাবু অবাক হয়ে বললেন,-বলো কী! তাহলে বাকি গানগুলো কে গাইল?
হরিপদ কাঁদকঁদ মুখে বলল, সেটাই তো গোলমেলে ব্যাপার। সবাই দেখেছে, পালার শেষপর্যন্ত সবগুলো গান আমি গেয়েছি। অথচ আমি তো জানি, আমি মোটে খান তিনেকের বেশি গান গাইনি। তাহলে বাকি গানগুলো গাইল কে?
–ওরা বলল যে তুমি, অবিকল তুমি, একই গলা, একই ভাবভঙ্গিতে গেয়েছ?
–হ্যাঁ খুডোমশাই।
সদাশিববাবু শিউরে উঠে বললেন,–হরিপদ, শীগগির একটা ব্যবস্থা করা। তোমার পেছনে ইয়ে লেগেছে মনে হচ্ছে।
হরিপদ ভয়েভয়ে বলল,–ইয়ে মানে? সে কে খড়োমশাই? –
–বুঝতে পারছ না? এ নিশ্চয় কোনও অপদেবতার কাণ্ড।
–সর্বনাশ! তাহলে কী হবে খুডোমশাই? সব আসরেই যদি এমন ব্যাপার হয়।
সদাশিববাবু একটু ভেবে নিয়ে বললেন,–ওঝা বা সাধুসন্ন্যাসীদের কাছে একটা কবচের ব্যবস্থা করো। আর শোনো, আসর চলার সময় ঘুমিয়ে পড়ো না। তাহলেই সে তোমার রূপ ধরে আসরে ঢোকার সুযোগ পাবে না।
পরামর্শটা হরিপদর ভালোই লাগল। সে সিংহবাহিনীর মন্দিরে গিয়ে এক সাধুর কবচ নিয়ে এল। মন্দিরে সাধুরা প্রায়ই আসেন। কদিন থেকে চলে যান।
তারপর সে পাশের গায়ের কেতু-ওঝার কাছ থেকেও একটা মাদুলি আনল। মাদুলিটা সে বাহুতে এবং সাধুর কবচ গলায় পরল কালো সুতো বেঁধে।
কদিন পরে এ গায়ের যাত্রাদল শ্রীদুর্গা পালা গাইবে। হরিপদ বোজ রিহার্সালে গিয়ে গানগুলো রপ্ত করে নিল। আসরের দিন সে সবার আগেই সাজঘরে ঢুকে বসে রইল যাতে সেই অপদেবতা তার রূপ ধরে সাজতে না বসে।
বিবেকের সাজ বলতে গায়ে একটা গেরুয়া বেনিয়ান আর নামাবলী। আর কপালে তিলক। ওই যথেষ্ট। বেনিয়ান আর নামাবলীটা দখল করে রাখল হরিপদ।
পালা শুরু হতে সেই রাত দশটা বেজে গেল। কাঁপাসডাঙার এ দলের খুব নাম আছে। তাই লোকের ভিড় হল প্রচণ্ড। গোলমাল থামানো যায় না। দলের ম্যানেজার উমাপদ মজুমদার গতিক দেখে বললেন, ওহে হরিপদ! তুমি বরং প্রথম দিকেই একখানা বাড়তি গান গেয়ে এসো। সেই যে শ্যামাসঙ্গীতখানা…আমার মায়ের রূপ দেখে যা…
হরিপদ বলল–ঠিক আছে। তাই হবে।
তার একটা অভ্যাস আছে বরাবর। আসরে ঢোকার আগে সাজঘরের পেছনে নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে একবার গুনগুন করে গানটা আওড়ে নেয়। সুর ঠিক করে নেয় আর কী! কথাও ঝালিয়ে নেয়, পাছে আসরে গাইতে-গাইতে গণ্ডগোল না করে ফেলে।
হরিপদ যখন সাজঘরে পেছনদিকে গুনগুন করে শ্যামাসঙ্গীতটা রপ্ত করতে গেল তখন আসরে নাচ চলছে।
সর্বনাশ! হঠাৎ গলা ধরে গেল কেন? সে তো অনেকক্ষণ জলটল খায়নি! অনেক সময় গরমের মধ্যে জল খেলে গলা ধরে যায়। তাহলে? হরিপদ দম নিয়ে ফের গানটা আওড়াতে চেষ্টা করল। ফাঁসফেঁসে আওয়াজ বেরুল।
সে কাশল। গলা তুলে কাকৈও এমনি-এমনি ডাকার চেষ্টা করল। কিন্তু আওয়াজ বেরুল না। যদি বা বেরুল তা হেঁপো রুগির মতো। ফাঁসফেঁসে একটা স্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ মাত্র।
ওদিকে প্রথম সিন শুরু হয়েছে। সাজঘরের দিকে কে ডাকাডাকি করছে, হরিপদ! হরিপদ কোথায় গেল! ও হরিপদ!
হরিপদর তখন শোচনীয় অবস্থা। এ কী সর্বনাশ হল তার।
সেই সময় আচমকা আসরে কেউ গান গেয়ে উঠেছে–আমার মায়ের রূপ দেখে যা–এবং সঙ্গে সঙ্গে আসর চুপ। টুঁ শব্দটি আর নেই।
হরিপদ ঘুরে দেখে শিউরে উঠল,–হ্যাঁ, আসরে অবিকল আরেক হরিপদ তিড়িং করে নেচে গান ধরেছে তারই গলায়। হুবহু এক চেহারা, পোশাক, গলার স্বর এক। এতটুকু তফাত নেই। দেখতে-দেখতে প্রথম মুহূর্তের ভয়টা কেটে গেল হরিপদর। রাগ হল। রাগটা বাড়তে থাকল। দাঁতে দাঁতে চেপে হরিপদ আসরের নকল হরিপদর দিকে হিংস্র চোখে তাকাল।
তারপর সে এক লাফে নির্জন অন্ধকার জায়গাটা থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসরে ঢোকার পথে গিয়ে পড়ল এবং চেঁচিয়ে বলার চেষ্টা করল আমি না আমি না।
গলার স্বর বেরুল না। তাকে লোকেরা ধাক্কা মেরে ফেলে দিল। তার দিকেওদের চোখ থাকার কথা না। সবার চোখ এখন আসরে। এ কোন ব্যাটা পাগল ছাগল আসার পণ্ড করতে চাইছে রে বাবা!
হরিপদ আছাড় খেয়েছিল। উঠে দাঁড়িয়ে হঠাৎ দেখল শেষ দিকটায় একটা বাড়ির বারান্দায় বসে সদাশিববাবু যাত্রা শুনছেন। মরিয়া হয়ে দৌড়ে গেল হরিপদ।
খুডোমশাই বলে যে ডাকবে, তার উপায় তো নেই। সে সটান হুমড়ি খেয়ে পাশে বসে ওঁকে খুঁচিয়ে দিল। সদাশিববাবুর মন এখন আসরে। বিরক্ত হয়ে কনুইয়ে গুঁতো মারলেন। হরিপদ তাতে দমল না। ফের হামাগুড়ি দিয়ে ওঁর সামনে যাবার চেষ্টা করল। সদাশিববাবু এবার পাশ থেকে ছড়িটা তুলে চাপা গলায় বললেন, কে র্যা? খালি ভেড়ার মতো গুতোচ্ছে? দেব পেটটা ফাঁসিয়ে।
হতাশ হয়ে হরিপদ লোকের পেছন ঘুরে সাজঘরের কাছে গেল, নকল হরিপদর গান শেষ। ফিরে আসছে। হরিপদ তাকে ধরে ফেলবে বলে ওৎ পেতে রইল। ভূত হোক, আর যাই হোক হাতাহাতি করে একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে।
নকল হরিপদ আসর থেকে এসেই লোকের পেছন দিকে নিরিবিলি অন্ধকার জায়গাটায় চলে গেল। তারপর বেনিয়ানের পকেট থেকে বিড়ি বের করে দেশলাই জ্বেলে ধরাল। টানতে থাকল।
হরিপদ পা টিপে টিপে তার কাছে গেল। তারপর পেছন থেকে দুহাতে জাপটে ধরল। ফ্যাঁসফেঁসে গলায় অতি কষ্টে বলল-তবে রে ব্যাটা ঘুঘু।
নকল হরিপদ বলল–আঃ! হচ্ছেটা কী? এ কি ইয়ার্কির সময়?
এদিকে হরিপদ ওকে জাপটে ধরেই টের পেয়েছে, নকল হরিপদর গা বরফের চেয়ে হিম। সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিয়েছে। দুহাত জমে গেছে ঠান্ডায়। দাঁত ঠকঠক করে কাঁপছে।
নকল হরিপদ হাসতে-হাসতে সাজঘরের দিকে চলে গেল। আসল হরিপদ দেখল, কাপুনি থামছে না। কী শীত কী শীত। অগত্যা সে বাড়ির দিকে দৌড়ল, এক্ষুনি লেপ ঢাকা দিয়ে শুয়ে পড়া দরকার।
গাঁয়ের শেষ দিকটায় হরিপদর বাড়ি। পিসিমার হাতে মানুষ হয়েছে সে। বাড়িতে বলতে লোক ওই দুজন। বেলা অব্দি হরিপদ সেদিন শুয়ে আছে লেপ মুড়ি দিয়ে। পিসিমা ওঠাতে গিয়ে দেখলেন, জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। তাই ডাক্তার ডাকতে গেছেন।
কিছুক্ষণ পরে পিসিমার মুখে শুনেই যাত্রাদলের লোকেরা ব্যস্ত হয়ে গেল। ম্যানেজার উমাপদবাবু এলেন। সদাশিবখুড়োও এলেন।
উমাপদবাবু বললেন,–জুর যে হবে, তা আসরে চোখ দুটো দেখেই সন্দেহ হয়েছিল, কেমন লাল দেখাচ্ছিল। তবে এ আসরে যা গান গেয়েছে হরিপদ, এবার না কলকাতা থেকে ডাক আসে।
সদাশিব ডাকলেন,–ও হরিপদ! কেমন বোধ করছ?
হরিপদ দাঁত মুখ খিঁচিয়ে ফ্যাঁসফেঁসে গলায় বলল, যান। আর দয়া দেখাতে হবে না। খুব চিনে ফেলেছি সবাইকে।
সদাশিববাবু অবাক। উমাপদ বললেন, সৰ্ব্বনাশ! তোমার গলা ধরে গেছে দেখছি। পরশু এক আসর বায়না আছে কনকপুরে, কী হবে?
হরিপদ তেমনি ফাঁসফেঁসে গলায় বলল, কেন? গত রাতে যে আসর চালিয়েছে, সেই চালাবে, আপনার ভাবনা কী ম্যানেজারবাবু?
উমাপদ কী বলতে যাচ্ছিলেন, সদাশিববাবু চোখ ইশারা করলেন। তারপর বললেন,–ও হরিপদ, তাহলে কাল রাতের আসরে তুমি কখানা গান গেয়েছিলে?
হরিপদ বুড়ো-আঙুল দেখিয়ে বলল,–একখানাও না। ও-ব্যাটা সবগুলো গেয়েছে। দেখছেন না, আমার গলার অবস্থা।
সদাশিববাবু চিন্তিত মুখে বললেন, তাহলে তো ভাবনার কথা। তোমার সত্যি বড় বিপদ।
উমাপদ হতভম্ব। বললেন, ব্যাপারটা কী?
বাইরে এসো। বলছি। বলে সদাশিববাবু উপাপদকে ডেকে নিয়ে গেলেন।
সামান্য ঠান্ডা লাগা জ্বর। দুদিনেই ছেড়ে গেল। ওষুধ খেয়ে গলা ছাড়ল। সেদিনই কনকপুরে আসর! হরিপদকে যেতেই হল। সে খানতিনেক গান কোনওরকমে গাইবে। বাকি গান বাদ।
আসর যথাসময়ে শুরু হয়েছে। উমাপদ তক্কেতক্কে আছেন। দলের লোকও তাঁর কথামতো তৈরি আছে।
পরপর তিনখানা গান হরিপদ গেয়ে এল। তারপর তৃতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্য থেকে বিবেকের গান বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কথাটা গোপন রাখা হয়েছে নায়েকমশাই অর্থাৎ কনকপুরে যারা বায়না দিয়েছেন, তাঁদের কাছে। হরিপদ গানের পর সাজঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।
সেও তক্কেতক্কে আছে তৃতীয় অঙ্কে যদি নকল হরিপদ বিবেক সেজে গাইতে ঢোকে, উমাপদ এবং তার লোকজনের সঙ্গে সেও ধুন্ধুমার বাধাবে। অর্থাৎ নকল হরিপদকে সবাই মিলে রামধোলাই দেবে। কথায় বলে, মারের চোটে ভূত পালায়। কাজেই এই ব্যবস্থা।
সেই সিনটা এসে গেল। কুচক্রী সেনাপতি ঘাতককে আদেশ দিচ্ছেন, বধ করো বধ করা এই উদ্ধত বালককে! ঘাতক খ তুলেছে। এই সময় বিবেকের গান ছিল : মেরো না মেরো না, ও যে শিশু অসহায়…।
গানটা বাদ। তার বদলে ঘাতক বলবে, সেনাপতিমশাই। এই বালককে আমি বরং গহন অরণ্যে নিয়ে গিয়ে গোপনে বধ করি। সেনাপতি বলবেন, তাই হোক তবে।
ঘাতক খ তুলতেই হরিপদ চঞ্চল হল। বহু বছরের অভ্যাস। গলাটা ভালোই ছেড়েছে। অসুবিধে হয়নি। খামোকা গান বাদ দেওয়া কেন?
আশেপাশে নকল হরিপদ অর্থাৎ সেই বদমাশ ভূতটাকে দেখা যাচ্ছে না। সুতরাং…
হরিপদ দৌড়ে আসরে ঢুকে গেয়ে উঠল–মেরো না, মেরো না…
সঙ্গে সঙ্গে উমাপদ ম্যানেজার ছড়ি তুলে চ্যাঁচিলেন–ঢুকেছে! ঢুকেছে! মার মার। আসরের এদিক-ওদিক থেকে কারা দৌড়ে এল। তারপর হরিপদর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল সবাই মিলে।
হরিপদ ভাঙা গলায় পেঁচিয়ে উঠল,–আমি! আমি! আমি আসল হরিপদ!
কে শোনে কার কথা! কনকপুরের নায়েবমশাইরা কিংবা শ্রোতারা তো কিচ্ছু জানে না। এভাবে বেমক্কা আসর পণ্ড হচ্ছে দেখে তারা হইহই করে উঠল। আসরে ঢুকে লোকগুলোকে ধাক্কা মেরে হটাল। হরিপদ বেগতিক দেখে উঁচু তক্তাপোশের আসর থেকে গড়িয়ে ক্লারিওনেটওয়ালার কোলে পড়েছিল। সেখান থেকে একেবারে তাপোশের তলায়।
বুদ্ধি করে এখানে ঢুকেছিল বলেই তেমন হাড়গোড় ভাঙেনি।
তবে সেই শেষ। হরিপদ বিবেকগিরি নাক কান মলে ছেড়েছে। সবাই জানে, আর হরিপদ বিবেক গায় না। কাজেই নকল হরিপদেরও আবির্ভাব ঘটে না কোনও আসরে। সুযোগ পায় না ঢোকার। তার চেয়ে বড় কথা, খবরটা সবাই জেনে গেছে। লোভের বশে নকল সেজে আসরে ঢুকলে কী অবস্থা হবে, টের পেয়ে গেছে সেই অপদেবতা।
কিন্তু এই নকল হরিপদটা কে? ভূত তো বটেই। কিন্তু কার আত্মা?
সদাশিববাবু অনেক ভেবে-চিন্তে বললেন, মনে হচ্ছে, এ ব্যাটা সেই বাঁকা বাউরি। বুঝলে হে হরিপদ! আমাদের ছেলেবেলায় সেই বিবেক গাইত। রোগে ভুগে মারা পড়েছিল। কিন্তু অভ্যেস যাবে কোথায়? তুমি নিরীহ সরল মানুষ দেখে তোমাকে অমনি করে ঠকাত। বুঝলে তো?
হরিপদ বলল, আর বুঝিনি? সেইজন্যেই তো বিবেক হচ্ছি না। এবার থেকে আমি বরং ঘাতকের পার্টটাই করব।