Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হারাধন || Saswati Das

হারাধন || Saswati Das

হারাধন

হারাধন রিক্সা চালিয়ে সংসার চালায়।
ঘরে বউ সহ তিন ছেলে মেয়ে।খুবই অভাবের সংসার। তার মধ্যে ছোট মেয়েটার আবার হার্টে ফুটো ধরা পড়েছে। ডাক্তার বলেছে একটা অপারেশন করালে ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু অপারেশনের অনেক খরচ। সামান্য রিক্সা টেনে কি আর এতো টাকা খরচ বহন করতে পারে? অনেক ক্লাবে বলেছে কিছু টাকা তুলে দেয়ার জন্য। একটা দুটো ক্লাব এগিয়েও এসেছে তা সত্বেও পুরো টাকা এখনও যোগাড় করে উঠতে পারেনি।অথচ মেয়েটার রুগ্ন করুণ মুখটা দেখলে হারাধনের বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। একদিন হারাধন রিক্সা নিয়ে স্ট্যান্ডে বসে আছে, একজন এসে বলল- ‘রিক্সা চলো ব্যাঙ্কে যাবো।’

তিনি ব্যাঙ্কের সামনে নেমে বললেন- ‘একটু দাঁড়াও আমি ব্যাঙ্কের কাজটা সেরে আবার ফিরে যাবো।তুমি এখানেই দাঁড়াও। আমার তাড়া আছে, ফেরার সময় যদি রিক্সা না পাই। তোমাকে এক্সট্রা ভাড়া দিয়ে দেবো।’ হারাধন ভাবে এই লকডাউনের বাজারে যদি প্যাসেঞ্জার ছেড়ে দিই তাহলে আর ভাড়া পাবো কি না ঠিক নেই। উনি যখন বলছেন এক্সট্রা ভাড়া দিয়ে দেবেন তাহলে বসেই থাকি।

কিছুক্ষণ পর তিনি ফিরে এসে বললেন- ‘চলো।’

ওনাকে নামিয়ে দিয়ে হারাধন ভাবলো অনেক বেলা হলো এখন বাড়ি গিয়ে স্নান খাওয়া সেরে তার পর আবার বেরোবে।
বাড়ি ফিরে রিক্সা সাইড করে রাখতে গিয়ে হারাধনের নজরে পড়েছে একটা মানি ব্যাগ রিক্সার পাদানিতে পড়ে আছে। হারাধন ব্যাগটা খুলে দেখে মধ্যে অনেকগুলো দু হাজার টাকার নোট। ওর সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থ মেয়েটার চিকিৎসার জন্য টাকার কথা মনে পড়ে গেল। মনে পড়ে গেল এখনও অনেকগুলো টাকা যোগাড় করতে হবে। একবারের জন্য হারাধনের মনে হলো ভগবান বুঝি মুখ তুলে চেয়েছেন। তাই এতগুলো টাকা ওর হাতে এলো।ও তো কারও টাকা চুরি করেনি।কারো টাকা ছিনিয়েও
নেয়নি, এ টাকা তাকে ভগবানই যুগিয়ে দিয়েছেন।

এই ভেবে ব্যাগটা নিয়ে হারাধন ঘরে ঢুকলো। তার পর ব্যাগটা সাবধানে লুকিয়ে রেখে গামছাটা কাঁধে ফেলে স্নান করতে গেলো। কলপাড়ে গিয়ে বালতিতে জল ভরতে ভরতে ভাবতে লাগলো টাকাটা নিয়ে কি ঠিক করলাম। ঐলোকটাতো তার নিজের প্রয়োজনে টাকাটা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে ছিল। তাহলে ওর তো খুবই অসুবিধা হবে।আমি টাকাটা চুরি করিনি ঠিক,কিন্তু আমি তো পেয়ে তাকে দিয়েও দিতে পারতাম।আমি তো অসৎ কাজ করলাম এটা রেখে দিয়ে। হারাধন এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কোনোরকম স্নান সেরে দুটো মুখে দিয়ে ব্যাগটা সঙ্গে করে রিক্সা নিয়ে স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ালো। বাড়িতে কাউকেই এ বিষয়ে কিছু জানালো না। ও ভাবছিল স্ট্যান্ডে লোকটা যদি ওর খোঁজ করতে আসে তাহলে ব্যাগটা দিয়ে দেবে।না হলে ও তো লোকটাকে চেনে না।ব্যাগ ফেরত দেবে কি ভাবে? তখন না হয় বুঝবে ভগবান টাকাটা তাকে পাইয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণ বসার পর হারাধন দেখে সেই লোকটা হন্ত দন্ত হয়ে এদিকেই আসছে।হারাধন বুঝলো লোকটা তার খোঁজেই আসছে। লোকটা কাছে এসে হারাধন কে জিজ্ঞেস করল- ‘আজ তোমার রিক্সায় চেপে আমি ব্যাঙ্কে গিয়েছিলাম না?’
‘হ্যাঁ বাবু আপনি আমার রিক্সাতেই গিয়েছিলেন’
‘আচ্ছা তুমি কি একটা মানি ব্যাগ পেয়েছো? দেখো আমার মেয়ে খুব অসুস্থ।হাসপাতালে ভর্তি ওর অপারেশনের জন্য টাকাটা লাগবে বলে আমি ব্যাঙ্ক থেকে তুলেছি।বাড়ি ফিরে দেখি ব্যাগটা নেই। তাই তোমাকে জিজ্ঞেস করছি, যদি তুমি পেয়ে থাকো আমাকে ফেরত দিয়ে দাও, আমার মেয়ের জীবনটা বেঁচে যাবে।’
‘হ্যাঁ বাবু আমি পেয়েছি আমার রিক্সার পাদানিতে পড়ে ছিল।আমি বাড়ি গিয়ে খুলে দেখেছি ওতে অনেকগুলো টাকা আছে। তাইতো আমি তাড়াতাড়ি স্ট্যান্ডে চলে এলাম যদি আপনি আমার খোঁজ করতে আসেন। বাবু আমি গরিব হতে পারি অসৎ নয়। আমার মেয়ের হার্টে ফুটো চিকিৎসা করবো সে পয়সা নেই তবু আমি ঐ টাকা ছুতে পারিনি। এই নিন বাবু আপনার ব্যাগ। কতো টাকা ছিলো জানি না তবু আপনি টাকাটা গুনে দেখে নিন।’

‘শোনো আমি মানুষ চিনি। যে আমাকে ব্যাগটা ফিরিয়ে দিতে এসেছে সে যে ব্যাগ থেকে একটা টাকাও নেয়নি তা আমি জানি।গুনতে হবে না। তোমার মতো সৎ মানুষ আছে বলেই পৃথিবীটা আজও সুন্দর।’

হারাধন ব্যাগটা দিয়ে একটা শান্তির নিশ্বাস ফেলে বাড়ি চলে এলো। ওই দিন আর রিক্সা চালাতে ভালো লাগলো না। কেবলই মনে হতে লাগলো বাবা হয়ে কারো মেয়ের প্রাণ তো বাঁচাতে পারলাম।

রাত্রি বেলা ক্লাবের কয়েকজন ছেলে এসে বলল হারাধনদা তোমার মেয়ের অপারেশনের টাকা যোগাড় হয়ে গেছে। এবার তুমি কালই ওকে নিয়ে হসপিটাল চলে যাও দেখবে ও ভালো হয়ে যাবে। হারাধনের দু চোখ দিয়ে আনন্দাশ্রু গড়িয়ে আসতে লাগলো। কেবলই মনে হচ্ছে ঈশ্বর দয়াময়।সৎপথে থাকলে তিনি সব সময় সঙ্গে থাকেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *