শিল্পাঞ্চলে বিশ্বকর্মা
বুম্বার জন্ম সোদপুরে। প্রায় ১৯৭১সাল। সে সময় কংগ্রেসের শাসন পার হয়ে ছেলেবেলায় বামপন্থী শাসন শুরু।। হুগলি নদীর নাব্যতা, সুলভ শ্রমিক, কাঁচামালের প্রাচুর্যের জন্য এই নদীর ধারে প্রচুর কলকারখানা গড়ে উঠেছিল। বিটি রোড ধরে যত এগোনো যাবে সারিবদ্ধ কারখানা ।তারপর ভেতরে আরও কিছু থাকতো। আগে আমাদের বাড়িতে ঘড়ি ছিল না। কারখানায় প্রতিটা সময় ভোঁ পড়তো। অনেক মানুষ ওইগুলো চিনে রেখেছিল কোনটা কোন সময়ে। সেই ভাবে স্কুল কলেজ বা যেকোনো কাজে যাওয়া। কুসুম টেক্সম্যাকো, তন্তুজ হিন্দুস্তান ,বঙ্গশ্রী বঙ্গোদয়, টিটাগড় জুটমিল, টোবাকো পেপার মিল এরকম বহু বড় বড় এবং ছোট কারখানা গড়ে উঠেছিল প্রিয়া বিস্কুট। সকাল হলে রাস্তা দিয়ে অজস্র সাইকেলে করে মানুষ কারখানায় যেত। কারখানাগুলোতে প্রচুর মেহনতী মানুষ কাজ করত। দুটো ভাগে কাজ হত। সবাই দেখত। বিটি রোডের দু’ধারে প্রতিবছর বিশ্বকর্মা পুজো হত কারখানাগুলোতে।। বিশ্বকর্মা পূজা হলে একসঙ্গে মিলে সমস্ত কারখানায় যেত। বড় বড় জলসা হত কারখানাগুলোতে । গেট খুলে দিত ।চারিদিকে আলোঝলমলে ।বিখ্যাত সব গানের আর্টিস্ট বসে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাইতোন আর মুগ্ধ হয়ে দর্শকাসনে সবাই বসে থাকতো। এখন সেসব আনন্দ ফিকে হয়ে গেছে। সব কারখানা ভেঙে তৈরি হয়েছে ফ্ল্যাট। সিনেমা হলগুলো ভেঙে তৈরি হচ্ছে মল, রেস্তোরাঁ। এইভাবে হারিয়ে ফেলছি। নতুন জীবন গ্রাস করে ফেলছে পুরাতন ঐতিহ্যকে। আমরা সুন্দরের পিয়াসি ।তাই পুরোনোকে আর মনে রাখেনা কত মানুষ বেকার হয়েছে। ওই সময় একটার পর একটা কারখানায় গেটে নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছে যারা একটু ভালো পোস্টে ছিলেন হয়তো কিছু টাকা পেয়েছে। বাকিরা অসহায় তারা না খেয়ে দিন কাটাছে ।আর কোনদিন এই শিল্পাঞ্চল নিজের প্রাণশক্তি ফিরে পাবে কিনা জানিনা তবে এখন ঝাঁ-চকচকে রেস্টুরেন্ট ফ্ল্যাটে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
পুরনো মানুষের স্মৃতিতে এখনো সেই শিল্পাঞ্চল জ্বলজ্বল করে।