মেঘে মেঘে বেলা কম হয়নি, অত্যন্ত অভিমানী
আর্কিডেরা মুষড়ে পড়েছে। নিষাদের
তীরের ফলায় বিদ্ধ ষাটটি হরিণ গোধূলিতে
পা ছুঁড়ে, কাঁপিয়ে দশদিক
আর্তনাদ করে; হৃদয়ের তলদেশ
থেকে বাণী জেগে ওঠে-ভালোবাসা ছাড়া আমি বাঁচতে চাই না।
আমাকে জাগিয়ে রাখো তুমি, শুনি ঝিঁ ঝিঁ
পোকাদের ডাক, মাঝরাতে
জানালার পাশে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছি বড় একা
এবং আমার ভালোবাসা ফাটা শার্সি ধরে ঝুঁকে
ফেলছে চোখের পানি নীরবে অঝোরে;
জানতেও পারো না কখনো। প্রৌঢ়ত্বের সাহারায়
বয় না সুস্নিগ্ধ হাওয়া, বালুকণা চোখে
লেগে রয়। অঙ্গারের বিছানায় পুড়ে পুড়ে ছাই
হয়ে যাই সারারাত। তোমার শরীরে
অদৃশ্য চন্দন-প্রলেপের
সুবাস জড়ানো তুমি নিশ্চিন্ত ঘুমাও।
আমার দু’চোখে কাঁটা বিঁধে থাকে, পলক পড়ে না।
আমরা কি কিছুদিন থাকতে পারি না
একসঙ্গে কোথাও, যেখানে
আমাদের কোনো পরিচয় থাকবে না, কোনো পাখি
কৌতূহলে ক্ষিপ্ত হয়ে দেবে না ঠোকর
বারবার আমাদের সান্নিধ্যকে? নির্মেঘ আকাশ
সাজবে আকর্ষণীয় সাজে, দূর থেকে
আসবে ভেসে গান সামুদ্রিক ঝকঝকে
বিছানায় যখন থাকবো শুয়ে পরস্পর মদির জড়ানো
নাকে নাক ঘষবো, যেমন পাখি পাখিনীর
চঞ্চু নিয়ে খেলা করে, আর
তোমার কপালে নেমে-আসা চুল দেবো
আলতো সরিয়ে, কালো দু’চোখ তোমার
আকাশে উড্ডীন পাখি যেন সন্ধ্যেবেলা, জাল থেকে
বহুদূর পলায়নপর, নিরাপদ
নীড়ের সন্ধানে দিশেহারা; আমার আত্মাকে চিরে
কেউ স্বরহীনতায় উঠবে ডেকে হুহু,
তখন তোমাকে আরো জোরে আলিঙ্গনে
বাঁধবো নির্জনতায়। আমাদের যুগ্মতাকে ছুঁয়ে
যাবে চুপিসারে
ঝাউয়ের মর্মর, আদিগন্ত তোমার ভালোবাসায়
কেমন রঙিন হয়ে উঠবে প্রহরগুলি, নিমেষে যযাতি
হবে পুরূরবা; হায়, কখনো কি আসবে সেদিন?
ডুবুক তোমার মধ্যে আমার সকল স্বপ্নতরী,
তোমার তাচ্ছিল্যে বাসনার রক্ত গোলাপকে দখল করুক
কীটরাশি, আমার কবিতাগুলি সমাহিত হোক
হৃদয়ে তোমার। যদি ছুঁতে পাই, যৌবনের ওষ্ঠ থেকে চুষে
নিতে পারি চুম্বনের স্বাদ মাঝে মাঝে ধুনরির
মতো যদি তীব্র ধুনে নিতে পারি তোমার শরীর
তাহলে কি বলা যাবে পেয়েছি তোমার
ভালোবাসা? এসে গেছে আমার মুঠোয় অমরতা?
বলো, কেন এমন হয় না,
কোনোদিন আসবে না বিদায়ের প্রহর, আমার
হৃদয়ের চোখ
ফেটে নামবে না অশ্রুধারা, যেতে-যেতে
অকস্মাৎ তুমি ফিরে আসবে আবার, মিলনের মুদ্রা তৈরি
করে দ্রুত লুকিয়ে আমার বুকে মুখ
বলবে, ‘যাবো না;’ এই ধ্বংসাবশেষকে
বানিয়ে তুলবে অলৌকিক অট্রালিকা।
ভালোবাসা ছাড়া আমি বাঁচতে পারি না,
পারবো না কস্মিনকালেও।