Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মহাভারতঃ আদিপর্ব || Sukumar Ray

মহাভারতঃ আদিপর্ব || Sukumar Ray

কুরুকুলে পিতামহ ভীষ্মমহাশয়
ভুবন বিজয়ী বীর, শুন পরিচয়-
শান্তনু রাজার পুত্র নাম সত্যব্রত
জগতে সার্থক নাম সত্যে অনুরত।
স্বয়ং জননী গঙ্গা বর দিলা তাঁরে-
নিজ ইচ্ছা বিনা বীর না মরে সংসারে।
বুদ্বিভ্রংশ ঘটে হায় শান্তনু রাজার,
বিবাহের লাগি বুড়া করে আবদার।
মৎস্যরাজকন্যা আছে নামে সত্যবতী,
তারে দেখি শান্তনুর লুপ্ত হল মতি।
মৎস্যরাজ কহে, ‘রাজা, কর অবধান,
কিসের আশায় কহ করি কন্যাদান?
সত্যব্রত জ্যেষ্ঠ সেই রাজ্য অধিকারী,
আমার নাতিরা হবে তার আজ্ঞাচারি,
রাজমাতা কভু নাহি হবে সত্যবতী,
তেঁই এ বিবাহ- কথা অনুচিত অতি।’
ভগ্ন মনে হস্তিনায় ফিরিল শান্তনু
অনাহারে অনিদ্রয় জীর্ন তার তনু।
মন্ত্রী মুখে সত্যব্রত শুনি সব কথা
মৎস্যরাজপুরে গিয়া কহিল বারতা-
রাজ্যে মম সাধ নাহি, করি অঙ্গীকার
জন্মিলে তোমার নাতি রাজ্য হবে তার।’
রাজা কহে, ‘সাধুতুমি, সত্য তব বাণী,
তোমার সন্তান হতে তবু ভয় মানি।
কে জানে ভবিষ্যকথা, দৈবগতিধারা-
প্রতিবাদী হয় যদি রাজ্যলাভে তারা?’
সত্যব্রত কহে, ‘শুন প্রতিজ্ঞা আমার,
বংশ না রহিবে মম পৃথিবী মাঝার।
সাক্ষী রহ চন্দ্র সূর্য লোকে লোকান্তরে
এই জন্মে সত্যব্রত বিবাহ না করে।’
শুনিয়া অদ্ভুত বাণী ধন্য কহে লোকে,
স্বর্গ হতে পুষ্পধারা ঝরিল পলকে।
সেই হতে সত্যব্রত খ্যাত চরাচরে
ভীষণ প্রতিজ্ঞাবলে ভীষ্ম নাম ধরে।
ঘুচিল সকল বাধা, আনন্দিত চিতে
সত্যবতী রাণী হয় হস্তিনাপুরীতে।
ক্রমে হলে বর্ষ গত শান্তনুর ঘরে
জন্ম নিল নব শিশু, সবে সমাদরে।
রাখিল বিচিত্রবীর্য নামটি তাহার
শান্তনু মরিল তারে দিয়া রাজ্যভার।
অকালে বিচিত্রবীর্য মুদিলেন আঁখি
পাণ্ডু আর ধৃতরাষ্ট্র দুই পুত্র রাখি।।
হস্তিরায় চন্দ্রবংশ কুরুরাজকুল
রাজত্ব করেন সুখে বিক্রমে অতুল।
সেই কুলে জন্মি তবু দৈববশে হায়
অন্ধ বলি ধৃতরাস্ট্র রাজ্য নাহি পায়।
কনিষ্ঠ তাহার পাণ্ডু, রাজত্ব সে করে,
পাঁচটি সন্তান তার দেবতার বরে।
জ্যেষ্ঠপুত্র যুধিষ্ঠির ধীর শান্ত মন
‘সাক্ষাৎ ধর্মের পুত্র’ কহে সর্বজন।
দ্বিতীয় সে মহাবলী ভীম নাম ধরে,
পবন সমান তেজ পবনের বরে।
তৃতীয় অর্জুন বীর, ইন্দ্রের কৃপায়
রুপেগুণে শৌর্যেবীর্যে অতুল ধরায়।
এই তিন সহোদর কুন্তীর কুমার,
বিমাতা আছেন মাদ্রী দুই পুত্র তাঁর-
নকুল ও সহদেব সুজন সুশীল
এক সাথে পাঁচজনে বাড়ে তিল তিল।
অন্ধরাজ ধৃতরাষ্ট্র শতপুত্র তার,
অভিমানী দুর্যোধন জ্যেষ্ঠ সবাকার।
পাণ্ডবেরা পাঁচ ভাই নষ্ট হয় কিসে,
এই চিন্তা করে দুষ্ট জ্বলি হিংসাবিষে।
হেনকালে সর্বজনে ভাসাইয়া শোকে
মাদ্রীসহ পান্ডরাজা যায় পরলোকে।
‘পান্ডু গেল’, মনে মনে ভাবে দুর্যোধন,
এই বারে যুধিষ্ঠির পাবে সিংহাসন!
ইচ্ছা হয় এই দণ্ডে গিয়া তারে মারি-
ভীমের ভয়েতে কিছু করিতে না পারি।
আমার কৌশলে পাকে ভীম যদি মরে
অনায়াসে যুধিষ্ঠিরে মারি তারপরে।’
কুচক্র করিয়া তবে দুষ্ট দুর্যোধন
নদীতীরে উৎসবের করে আয়োজন-
একশত পাঁচ ভাই মিলি একসাথে
আমোদ আহ্লাদে ভোজে মহানন্দে মাতে।
হেন ফাঁকে দুর্যোধন পরম যতনে
বিষের মিষ্টান্ন দেয় ভীমের বদনে।
অচেতন হল ভীম বিষের নেশায়,
সুযোগ বুঝিয়া দুষ্ট ধরিল তাহায়,
গোপনে নদীর জলে দিল ভাসাইয়া,
কেহ না জানিল কিছু উৎসবে মাতিয়া।।
এদিকে নদীর জলে ডুবিয়া অতল তলে
ভীমের অবশ দেহে ,কেমনে জানে না কেহ,
কোথায় ঠেকিল শেষে বাসুকী নাগের দেশে।
ভীমের বিশাল চাপে নাগের বসতি কাঁপে
দেহ ভারে কত মরে, কত পলাইল ডরে ,
কত নাগ দলে বলে ভীমেরে মারিতে চলে
দংশিয়া ভীমের গায় মহাবিষ ঢালে তায়।
অদ্ভুত ঘটিল তাহে ভীম চক্ষু মেলি চাহে ,
বিষে হয় বিষক্ষয় মুহুর্তে চেতনা হয়,
দেখে ভীম চারিপাশে নাগেরা ঘেরিয়া আসে
দেখিয়া ভীষণ রাগে ধরি শত শত নাগে
চূর্ণ করে বাহুবলে, মহাভয়ে নাগে দলে
ছুটে যায় হাহাকরে বাসুকী রাজার দ্বারে।
বাসুকী কহেন, ‘শোন আর ভয় নাহি কোন,
তুষি তারে সুবচনে আন হেথা সযতনে।’
রাজার আদেশে তবে আবার ফিরিয়া সবে
করে গিয়া নিবেদন বাসুকীর নিমন্ত্রণ !
শুনি ভীম কুতুহলে রাজার পুরীতে চলে ,
সেথায় ভরিয়া প্রাণ ,করিয়া অমৃত পান
বিষের যাতনা আর কিছু না রহিল তার ,
মহাঘুমে ভরপুর সব ক্লান্তি হল দুর
তখন বাসুকী তারে স্নেহভরে বারে বারে
আশিস করিয়া তায় পাঠাইল হস্তিনায় ।
সেথা ভাই চারিজনে আছে শোকাকুল মনে
কুন্তীর নয়নজল ঝরে সেথা অবিরল ,
মগন গভীর দুখে ফিরে সবে ম্লান মুখে ।
হেন কালে হারানিধি সহসা মিলালো বিধি
বিষাদ হইল দুর জাগিল হস্তিনাপুর ,
উলসিত কলরবে আনন্দে মাতিল সবে।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress