Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ঘুনসি তে বাঁধা থাকে ভাঙা মনের পুরাণ-টুসু || Manisha Palmal

ঘুনসি তে বাঁধা থাকে ভাঙা মনের পুরাণ-টুসু || Manisha Palmal

মিঠেল শীতে টুসুর স্মৃতি
কুয়াশার ওই মায়াতে,
জাগিয়ে তোলে মনের কোণে
পৌষালী এই প্রভাতে!
অঘ্রাণ সংক্রান্তি কিংবা পয়লা পৌষ টুসু স্থাপনের মঙ্গল ক্ষণ। জঙ্গলমহল—- প্রান্তিক শিখর ভূমের প্রাণের উৎসব— টুসু পরবের প্রারম্ভ!

এইদিন কুমারী মেয়েরা নতুন মাটির সরার পিটুলি মাখিয়ে তাতে তুষ দিয়ে পূর্ণ করে। ওই সরাতে হলুদ সিঁদুর চন্দনের ফোঁঁটা সাজিয়ে , তুষের ওপর কাডুলি বাছুরের গোবরের মন্ড, ধান আতপ চাল আকন্দ, বাসক ,কাচফুল গাঁদা ফুলের মালা দিয়ে পাত্রটিকে পিডি বা কুলুঙ্গি র উপর স্থাপন করা হয়। এই সরাটি প্রতিদিন সন্ধ্যার পর টুসু দেবী হিসাবে পূজিতা হন। পৌষালী সাঁঝে দলবদ্ধ কুমারী মেয়েদের গানের সুরে মেতে ওঠে জঙ্গলমহলের আকাশ বাতাস। টুসু দেবীর কাছে তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক অভিজ্ঞতা সুরে সুরে নিবেদন করেন। দেবীর ভোগ হিসেবে চিঁডে গুড় বাতাসা মুড়ি ছোলা ইত্যাদি সাধারনত ব্যবহার করা খাদ্য নিবেদন করা হয়। বড় আন্তরিক এই লোক উৎসব। সীমান্ত বাংলার প্রান্তিক কৃষিজীবী সমাজের বড় আপনার জন এই টুসু। ঘরের মেয়ে আর দেবী এখানে একাকার। কৃষি লক্ষ্মী এখানে টুসুর প্রতীক। টুসুর উৎসবের শেষ চার দিন চাঁওড়ি- বাউডী -মকর- আখান নামে পরিচিত!
চাঁওড়ি দিনে মেয়েরা ঘরদোর গোবর মাটি দিয়ে নিকিয়ে চালের গুঁড়ি তৈরি করেন।
বাউডী দিনে তৈরি করা হয় পুর পিঠে ,পুলি পিঠে যা গডগড্যা পিঠে নামে পরিচিত। এইদিন জঙ্গলমহলের মানুষেরা “গুঁড়িহাত” রীতি পালন করেন। অর্থাৎ নতুন চালের গুঁড়ো দিয়ে পিঠে তৈরি করে। বাউডী দিনে হয়” টুসুর জাগরণ।” মেয়েরা জাগরনের ঘর পরিষ্কার করে ফুলমালা আলো দিয়ে সাজায়! সারারাত ধরে মেয়েরা টুসু গান এ অংশগ্রহণ করে! এদিন কুমারী ছাড়াও গৃহবধূ ও বয়স্করা গানে অংশ নেয়! জাগরনের রাতে টুসুর ভোগ হিসেবে বিভিন্ন মিষ্টান্ন ছোলা ভাজা মটর ভাজা মুড়ি মুড়কি জিলিপি নিবেদন করা হয়।
পৌষ সংক্রান্তি বা মকর দিনের ভোরলবেলায় মেয়েরা দলবদ্ধভাবে গান গাইতে গাইতে টুসু দেবীকে বাঁশ , কাঠ রঙিন কাগজে সজ্জিত চৌদল বা চতুর্দোলায় বসিয়ে নদী বা পুকুরের ঘাটে নিয়ে যান। সেখানে বিভিন্ন টুসু দলের মধ্যে হয় গানের প্রতিযোগিতা। এরপর টুসু বিসর্জন করে নদীতে বা পুকুরে স্নান করে নতুন কাপড় পরেন।
ছেলেরা পাটকাঠি খড় দিয়ে তৈরি করেন “মেডা ঘর”! এই ঘরে আগুন দিয়ে পালন করেন টুসু পরবের শেষ রীতির।
টুসুর চৌদলের রামধনু রঙে শিখর ভূমের কাঁসাই শিলাই কেলেঘাই সুবর্ণরেখার ঘাট গুলি ঝলমল করতে থাকে। টুসু গানের মায়াবী সুর ভেসে বেড়ায় লিলুয়া বাতাসে—-
” উপরে পাটানিচে পাটা
তার ভিতরে দারোগা
ও দারোগা পথ ছাড়ে দাও
টুসু যাবেন কলকেতা।
টুসু যাবেন কলকেতা
খিদে পেলে খাবেন কি?
আনগো টুসুর নতুন গামছা
জিলিপি ছাঁদা বাঁধে দি।”
মকরের অপরিহার্য অঙ্গ টুসু গান! মানুষের চিরন্তন আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ এই গানে! মানভূমের ভাষা আন্দোলনের উত্তাল তরঙ্গের দিনে মানুষকে সচেতন করার কাজে টুসু গানের এক বিরাট ভূমিকা ছিল! প্রকৃত অর্থেই টুসু মহামিলনের পরব!
আখান বা আইখ্যান দিন প্রান্তিক মানুষজনের শিকার যাত্রার দিন।
জঙ্গলমহল জুড়ে সারাবছরই চলে উৎসবের বাতাবরণ। হৃদয়ের টানে সকলে মেতে ওঠে এই উৎসব গুলিতে। পুরুষানুক্রমিক ভাবে এই উৎসব চলে আসছে শিখর ভূমে– এটাই শাশ্বত লোক সংস্কৃতির পরিচয়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *