আলোয় ফেরা-1
দমবন্ধ করা একটা কষ্ট, হাড় পাঁজর দোমড়ানো একটা শূন্যতা গিলে খাচ্ছিল কিশোরকে। সময়টা সমূহ শোকের। কিশোর ভাবলো, না এখানে থাকা চলবে না । কিন্তু, কোথায় থাকা যায়?যেখানে ই হোক এখানে থাকা চলবে না। সংগে সংগে উত্তর পেয়ে গেল । কথাটা ক’দিন ধরেই মনে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিল। মনে প্রশ্ন উত্তরের খেলা চলছে। পালাতে হলে টাকা চাই। তা আছে । হাজার দশেক তোলা হয়েছিল, চিকিৎসার জন্য । বেশি টাই রয়ে গেছে। কারণ তাঁর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে । পকেটে টাকা গুলো করকর করছে । নিমতলা থেকে বেড়িয়ে সোজা হাওড়া গামী বাস এ চেপে বসল কিশোর। দশ মিনিটে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে গেল। স্টেশন চত্বরের জনস্রোতে গা ভাসিয়ে দিলো। এমন আগে ও হয়েছে । মন হালকা করার এর থেকে ভালো জায়গা নেই । ট্রেন টা যেন একটা ছোট্ট পৃথিবী।নানা দেশের, নানা মানুষ চলেছে। নানা কাজে। প্রতি মানুষের সুখ দুঃখ, আশা আনন্দ সব আলাদা। এক একটা মানুষের জীবন যাপনের ঢং যেন, এক একটা ছোট্ট দ্বীপ । আজ অবশ্য এসব ভাবার অবকাশ নেই কিশোরের । তাঁর সবচেয়ে বড়ো আপন জন আজ চলে গেল । তাঁরই শেষকৃত্য হলো নিমতলায়।বেঁচে থাকা অবধি যা করা জরুরি ছিল তা করেছে কিশোর। মৃত্যুর পর লোক দেখানো কাজে বিশ্বাসী নয় কিশোর ।পরের লোক দেখানো কাজটুকু নির্মলাই করতে পারবে। দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন টা নড়ে উঠতে দেখেই লাফিয়ে উঠে পড়লো ট্রেন এ । এক লাফে গাড়ির হাতল ধরে ফেললো কিশোর । বেশ জোরেই চলতে শুরু করলো ট্রেন ।তখনই মগজে ঝাঁকুনি লাগল । —-এ আমি কি করলাম! এটা তো রাজধানী এক্সপ্রেস। টিকিট, আর রিজার্ভেশন ছাড়াই এই গাড়িতে উঠে পড়লাম ? তাছাড়া এই গাড়ির ভাড়া ও তো মোটা রকমেরই হবে । পকেটে র ওজনটা অনুমান করে এগিয়ে গেল ভেতরের দিকে । ভাবলো,কড়িডরের দিকে না বসাই ভালো। মাঝখানে কোন রকমে ব্যবস্থা হয়ে যাবে । জানালার ধারেই একটা খালি সীট্ দেখে বসে পড়লো সেখানে। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কামরার শীতলতা মস্তিষ্কে বিলি কেটে হিমের পরশ দিচ্ছে। আর তাতেই কিশোরের চিন্তাটা সুবিন্যস্ত হচ্ছে একটু একটু করে । এতক্ষণে সামনের আসনের এক দম্পতির দিকে নজর গেল কিশোরের ।এবার নজর হোঁচট খেল সামনের সীট্ এর হকদারের একজোড়া কাজল কালো চোখে । আবার নজর ফিরল, তাঁরই পাশের দুজনের দিকে । হয়তো ঐ মেয়ের বাবা ও মা । এতক্ষণ তাঁরা কিশোরকে জরিপ করছিল তা বোঝা গেলো। পঁয়তাল্লিশ এর ভারিক্কি পুরুষ তার স্ত্রী ও কন্যা কে নিয়ে চলেছেন ভ্রমণে । আবার ও কিশোরের নজর ফিরল সেই কাজল কালো চোখে ।এবার আর হোঁচট খেল না সেই চোখে। বরং একটা তীর ছোঁড়ার চেষ্টা করলো সেই দৃষ্টিতে । সেই মেয়ে কি বুঝলো কে জানে!তবে সে তার মুখের সামনে মেলে ধরা পেপার খানা দিয়ে নিজেকে পুরোপুরি আড়াল করে নিলো। তা দেখে কিশোরের মুখে এক চিলতে হাসি এসে ও মিলিয়ে গেল । মনে ধরার মতোই এই মেয়ের চেহারা পত্র । তাই বার বার কিশোরের চোখ বসে যাচ্ছে সেই মেয়ের মুখে। আর সেটা বুঝেই সেই মেয়ে শরীর সামাল দিচ্ছে শাড়ির আঁচল টেনে। কিশোর তেমন ছেলে নয়। থোরাই কেয়ার করে এসব রং ঢং করা মেয়েদের। এখন কিশোরের চোখে রাজ্যের ঘুম ।কতোদিন যে ঘুমায়নি । সিনেমার ছবির মতো একের পর এক ছবি ভেসে উঠছে চোখে । আবার মিলিয়ে যাচ্ছে । যতো বার ঝিমুনি আসছে ততোবার সেই যন্ত্রণা ময় ছবি ভেসে উঠছে চোখে । দাদার অসুখ টা জানার পরই মাথায় ছাঁদ ভেঙে পড়েছিলো । দাদা কিশোরকে পিতৃস্নেহে লালন করেছেন, যাকে জড়িয়ে না শুলে এক রাতের জন্য ও ঘুম হতো না কিশোরের ।দাদার ও একই হাল। ———তোকে বুকের মাঝে জাপটে না ধরলে ঘুমই আসে না । দাদার ঐ কথা শোনার পরই কিশোর দাদার লাগ ছাড়া হয়নি ।সেই অভ্যস্ত জীবন নয় ছয় হয়ে গেল দাদার ক্যান্সার ধরা পড়ার পরই।অবশ্য নবীন রোগের কথা অনেক দিন জানতে দেয়নি ।শুধু কি কিশোর?না।আরো একজন ছিল । হঠাৎই কামরার বাতাবরণ পাল্টে গেল। যাত্রীদের কথা বার্তা থেমে গেল। যেন ক্লাস টিচার ক্লাস এ এলেন ।মস্তিষ্কে তরিৎ খেলে গেল ।ক্লাস টিচার? চোখ খুললো ।ক্লাস টিচার ই বটে ।কালো পোশাকে ব্যাজ ধারী কন্ডাক্টর এগিয়ে আসছেন।তিনি চেকিং এ ব্যস্ত। হিম বয়ে গেল কিশোরের শিরদাঁড়ায় ।ভাবলো ভয় পাওয়ার কি আছে?পকেট ভারী ।দশ হাজার আছে ।টাকা পেলে ঐ কালো কোট ধারি রা কি না করতে পারে?যা করে করুক ।আবার চোখ বুজলো কিশোর । সবই কানে আসছে ।কন্ডাক্টর সামনের ভদ্রলোকের টিকিট দেখতে চাইলেন।তারপরই কিশোরের উদ্দেশ্যে বললেন—–টিকট নিকালিয়ে। গায়ে হাত লাগতে কিশোর চোখ খুললো ।সামনে তিন জনের নজর কিশোরের মুখে এঁটে বসেছে । ———টিকট নহি হ্যায় ।আপ কর দিজিয়ে । বলেই টাকার গোছা পকেট থেকে বার করলো কিশোর। কন্ডাক্টর গার্ড তাজ্জব বনে গেছেন। একে বিনা টিকিট, তায় আবার রাজধানী এক্সপ্রেস । পাগল নাকি?ভাব খানা এমন । এটা যেন একটা মামুলি ব্যাপার!!চোর ছ্যাচোর তো মনে হয় না । মুখ দেখে ভদ্রলোক মনে হচ্ছে । ———কাঁহা যায়েঙ্গে? —–‘কঁহি ভি দিজিয়ে । কিশোরের চোখে একবার নজর বুলিয়ে নিলেন কন্ডাক্টর সাহেব। নিপাট ভালো মানুষের মুখ। কড়া হতে গিয়ে ও পারলেন না ।চাকরি জীবনের শেষ দিন প্রায় আগত। নাই বা ঝামেলায় ফেললেন ছেলে টাকে ।এক কালে অনেক অন্যায় করেছেন ।রেলগাড়ি তে চড়ে ই মনে করতেন, “আই অ্যাম দা মনার্ক অব অল আই সার্ভে “।এখন আর তা ভাবেন না ।তাছাড়া ঐ ছেলের চোখে সর্ব ত্যাগী চাউনি ।ডানা কাটা পাখির মতো আহত দৃষ্টি ।একেবারে ঘোলাটে সে নজর ।যেন ইচ্ছা মৃত্যু বরণ করতে চলেছে । ———কাঁহা জায়েঙ্গে? ———কঁহি ভি হো। ——–আচ্ছা পাগলের পাল্লায় পড়লাম ।ঘর ছোর কে ভাগ রহে হো? সামনের ভদ্রলোক বললেন—–টাকা তো আছে, একটা বেনারসের টিকিট দিন না! কন্ডাক্টর দুজনের মুখের দিকে নজর ফেলে বুঝতে চেষ্টা করলেন ।তাঁর মুখ ভঙ্গি পালটে গেল । ভাবখানা এমন যে–যা করবি কর গে যা। কন্ডাক্টর ফাইন সমেত টিকিট ও তার রসীদ কেটে দিলেন । নড়ে চড়ে বসলো কিশোর ।এতক্ষণে হালকা লাগছে । সিট্ টা নিজের বলেই বুঝি হালকা লাগছে । ঐ মেয়ের মুখোমুখি, একেবারে জানলা ঘেঁষে বসেছে কিশোর।ওদের ই পেপার খানা তুলে নিলো কিশোর । মুখের সামনে মেলে ধরলো, যাতে ঐ মেয়েকে ভালো করে দেখা যায় । চোখের আরাম হলে মন টানে ।কিন্তু সে টানে গভীরতা বোধ করে না কিশোর।কারণ নির্মলাকে দেখেই এই সব সুন্দরীদের বুঝে নিয়েছে । এঁরা সার্থে সব কিছু করতে পারে । নির্মলার কথা মনে হতে মনটা বিতৃষ্ণায় ভরে গেল । দাদার ধ্যান, জ্ঞানের মূল কেন্দ্র ছিল যে ঐ মেয়ে তা বুঝেছে কিশোর তার চোদ্দ বছর বয়সে । তখন দাদাকে জিজ্ঞাসা করতে সাহস হয় নি ।আরও বেশ কয়েক বছর পর দাদাকে জিজ্ঞাসা করেছে ।কারণ ঐ মেয়ের ছবি দাদার ঘরে ।দাদার সোজাসাপ্টা উত্তর ।—–তোর বৌদি । কিশোর হেসে বলেছে—–বৌদি কে ঘরে নিয়ে এসো। বছর ঘুরেছে।বৌদি আসে নি ।কিশোরের টনক নড়েছে দাদার ভাবগতিক দেখে ।চৌকশ,আমুদে নবীন, কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়েছে । হয়তো তখন ই নবীন জানতে পেরেছিল। সেদিন রাত প্রায় দশটা ।নবীন ঘরে ফেরেনি।অত রাতে দাদা ঘরে না ফেরায় কিশোরের পায়চারি বেড়ে গেছে ।ভয়, কি জানি দাদার কিছু হয়নি তো! দরজায় ধাক্কা পড়তে ,পায়চারি থামলো ।দরজা খুলে দেখলো দাদার টলমল এ পদক্ষেপ ।ঘরে ঢুকতে ই মদের গন্ধে ঘর ভরে গেল । ———কি রে, খাস নি এখনো? ——না। ——–কিউঁ নহি খায়া? ———তোমাকে ছেড়ে কখনো খাই? ———অব আদত বানাও।অকেলে খানেকা।আমি খেয়ে এসেছি। কিশোর মনে মনে ঐ নির্মলা কে ই দায়ী করেছে।রাতে চুপ করে গেলে ও সকালে চা খাওয়ার পর কাল রাতের ঐ কথা টা তুলেছে। ———কাল কি হয়েছিল বলো তো?কি জন্য ঐ ছাইপাঁশ গুলো তোমায় গিলতে হলো?নিশ্চয়ই ঐ নির্মলা তোমায় ঠকিয়েছে। ——–মুখ সামলে কথা বলবি।যা জানিস না,তা নিয়ে কথা বলবি না । আগে, দাদা এমন কথা বললে কিশোর চুপ করে থাকতো ।কিন্তু এখন সে মেডিকেল এর তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ।তাই সাহস বেড়েছে ।তাই বললো, —— —বিয়ে করছো না কেন ? ভাব আমি কিছু ই বুঝি না,।তাই না?ছাড়বো না ওকে ।এই তোমাকে বলে দিলাম । ——–,-কি করবি তুই? ————এক মাসের মধ্যে যদি ঐ মেয়ে কে বিয়ে করে ঘরে না আনো তবে আমি পালিয়ে যাব। বলতে বলতে হাউ হাউ করে কেঁদেছিল কিশোর । কিশোরের কান্না কি দেখতে পারে নবীন? দিন কুড়ির মধ্যে ই নির্মলা কে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে নবীন ।এসেই বাড়ি মাথায় করে হাঁক ডাক শুরু করেছিল। ———–কিশোর দ্যাখ্ কাকে এনেছি।তোর বৌদি কে বিয়ে করে আনলাম ।কোর্ট এই রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হলো । কিশোর শান্তি পেয়েছিল সেই দিন থেকে ই ।দু,ভাইএর সংসারে তৃতীয় ব্যক্তির আগমন খারাপ লাগেনি।বিশেষ করে স্ত্রী জাতীয় ।মাকে মনে ই পড়ে না। দু,ভাইয়ের সংসার বলতে টালিগঞ্জ এর দশ বাই দশের দুখানা ঘর।আর একখানা ছয় বাই দশ বাড়ান্দা।তার ই এক কোনে রান্নার সরঞ্জাম । দাদা বৌদি যাতে নিরিবিলি থাকতে পারে তা ভেবে ই কিশোর হরিদ্বার যাবে ঠিক করল । ব্যাগ গোছাতে দেখে হৈ হৈ করে উঠলো নবীন । ———কোথায় যাচ্ছিস? ——— হরিদ্বার ।অতীন ওরা টিকিট কেটে রেখেছে । ——-বলিস নি তো আগে? —-কি করে বলবো?কাল ই তো ঠিক হলো ।রাতে তুমি যে অবস্থায় ছিলে!ঘুড়ে আসি কি বলো? তোমায় তো একা রেখে যাচ্ছি না । —–ভালো লাগবে?আমায় ছেড়ে তোর তো কোথাও ভালো লাগে না । —–দাদা, এমন বলছো, যেন একা ফেলে যাচ্ছি । বৌদি তো আছে । একাই এসেছে ।এই প্রথম দাদা কে মিথ্যা বলা আর দাদা ছাড়া কোথাও যাওয়া।পৌঁছে ই ভোলাগিরি আশ্রমে রাত্রি বাস।ধারে কাছে খেয়ে নেওয়া ।ভোরে গংগা স্নান ।তবে মন পড়ে আছে দাদার কাছে ।তবে হাসি ও পাচ্ছে ।এখন আর কিশোর কে জড়ানোর দরকার নেই ,জড়ানোর অন্য একজন এসে গেছে । কন্ খল থেকে ফিরে এসে ই চিঠিটা পেল।প্রেরকের নাম–নির্মলা আগরওয়াল ।আগরওয়াল দেখে গায়ে জ্বালা ধরে গেল ।নারী বাদীরা আজকাল স্বামীর পদবি ব্যবহার করেন না ।তাই ভাবীজি ও দাদার ঝুনঝুনওয়ালা পদবি ব্যবহার করতে চান না ।তাই আগরওয়াল পদবি লেখা । চিঠি টা খুলে ফেলে কিশোর ।দু ছত্রের চিঠি।জরুরি তলব ।”ইউ আর নীডেড হিয়ার” ।কিশোর কে দরকার ?মাথায় চিন্তা ঢুকে গেল । কেন দরকার?দাদার কি কিছু হয়েছে? সারারাত এপাশ ওপাশ করে কাটলো কিশোরের। ভোরের ট্রেন ধরলো কিশোর । ——চায়ে—-হকারদের চিৎকারে বাস্তবে ফিরে এলো কিশোর এই ট্রেন সেই ট্রেন না।তখন দাদার সদ্য বিয়ে হয়েছে ।ওদের আনন্দে কাটাবার জন্য ঘর ছেড়ে হরিদ্বার গিয়েছিল কিশোর । এই ট্রেন এ কথার জ্বাল বুনে চলেছেন মিসেস খৈতান ।কখনো স্বামী কে কখনো মেয়েকে বলে চলেছেন ।কিশোর চোখ খোলার পর কিশোর কে প্রশ্ন করছেন ।মেয়ে তার মায়ের কথা না শোনার ভান করছে ।স্ত্রীর কথায় স্বামী হুঁ হাঁ করছেন । কিশোরের ভালো ই লাগছে ভদ্র মহিলাকে। ——বেটা,তুমহারা ঘর মে কৌন কৌন হ্যায়? ——-কেউ নেই । ——–তোমার মা,বাবা? ——-না ।নেই। মেয়ে ও তার বাবার নজরের সাথে নজর মিললো কিশোরের ।ওদের নজরে আহা গোছের ভংগী । বাবা ও মায়ের নজরে করুনা টা খারাপ না লাগলেও,ঐ মেয়ের করুনা টা ভালো লাগেনি কিশোরের।তাই ওকে জব্দ করতেই কিশোর নিজের নজরের রূপ বদল করেছে ।কিশোরের চোখে বাসনা মাখা নজর চোখে পড়তেই থমকেছে সেই মেয়ে । তার পর ই তপ তপে চোখে ছাল ছাড়িয়েছে কিশোরের ।হাসি পেল কিশোরের।আচ্ছা জব্দ হয়েছে ।করুনা দেখাচ্ছে !কিশোর কে? রাতের খাওয়া মিসেস খৈতান এর দৌলতে ভালো ই হলো ।জোর করে ই কিশোর কে খাওয়ালেন তিনি । অনেক দিন ধরে অরুচি হয়ে গেছে ।খাওয়া তো নয় দাঁতে কাটা ।আজ তবু স্বাদ পাওয়া গেল । খৈতান বেশি কথা না বললেও কথায় কথায় জেনে নিয়েছেন কিশোরের ডাক্তারি পড়ার কথা ।তাতেই খাতিরের বহর বেড়েছে আরও।গলায় বেশ চিনি ঢেলে ই কথা বলেন খৈতান ।স্ত্রীর রকম সকম ও তেমনি ।মেয়ের গুনের কথা ও শুনতে হয়েছে কিশোর কে ।পাত্রী হিসাবে মন্দ নয় মুন্নী ।একে সুন্দরী, তায় সবে কলেজে পা দিয়েছে ।তবে এ সব সুন্দরীদের প্রতি আস্থা নেই কিশোরের । তাই তেতো লাগে এদের কথা শুনতে । নির্মলা কে দেখেই শিক্ষা হয়ে গেছে ।নইলে নবীন কে ফেলে রেখে বাপের বাড়ি চলে যায় নির্মলা! হরিদ্বার থেকে ঘরে ফিরে দাদাকে দেখে বুকটা মুচরে উঠেছিল ।দাদার কাছে প্রকাশ করে নি সে কথা । দাদার চেহারা ছবি ই বলে দিয়েছিল দাদার রোগের গুরুত্ব টা।”আনন্দে রাখুন ওকে “ডাক্তার বলেছে । রোগ টা ক্যানসার শুনে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে কিশোরের।সব সময় দাদার মাথার কাছে বসে থেকেছে। —–‘———কি রে,পড়াশুনা কি ছেড়ে দিলি?সব সময় আমার কাছে না বসে একটু ঘুরে আয় । দাদার স্নেহের সুরে কান্নায় গলা বুজে গেছে কিশোরের।সহজ হবার চেষ্টায় বলেছে অন্য কথা । ————-যা দারুণ লাগল হরিদ্বার ।তুমি ভালো হয়ে ওঠো।আমরা হরকিপৌড়ির ঘাটে স্নান করবো । ———সে আর হবে না রে কিশোর ।তুই গেছিস তাতেই আমার পুণ্য হয়েছে ।ভগবানের পায়ে ঠাঁই নেবার সময় হয়ে এসেছে । দাদার কথায় কান্না এসে গেলেও গিলে ফেলেছে । জোর দিয়ে বলেছে,——বাজে কথা বলবে না । এক মাসেই ভালো হয়ে যাবে । ছোট বেলার মতো ই নির্মলা চলে যাওয়ার পর দাদার বিছানায় ঠাঁই হলো কিশোরের।,রাতের বেলায় দাদা জড়িয়ে ধরেছে ।হাড় পাঁজরের মধ্যে থাকার অনুভূতি টা কেমন, তা জেনেছে তখন । টালিগঞ্জ এর বাড়িতে না থাকলেও বৌদি দাদাকে দেখতে এসেছে ।শেষ দিকে বৌদি বলেছে, —— কিশোর একা কতো করবে?আমি ক’দিন থাকি এখানে? রাগ হয়েছে কিশোরের।স্বামী কে ফেলে যে যেতে পারে, তাঁর হাতে দাদাকে ছেড়ে দেবে?না। তাই বলেছে——–আমার কোন কষ্ট নেই । মুখ দেখতে ইচ্ছে হয়নি নির্মলা র।ভেংগে দেব মুখ । ———এ কী,বইটা আমার গায়ে ছুড়ে মারলেন কেন? ভারি অসভ্য তো আপনি!! ছিঃছিঃ ।ট্রেন এ শুয়ে নির্মলা র কথা ভাবছিল? নিচের বার্থ এ ছুঁড়ে মেরেছে বইটা? শোবার জায়গা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে সেই মেয়ে । চাঁপা ঝাঁঝযুক্ত গলার স্বর ।বাবা মা না জানুক সেটা ই ওর ইচ্ছে । আর একজন কে মারতে চেয়েছিলাম ।তোমার গায়ে পড়লো ।তুমি ও সেই রকম আর একজন কিনা তাই। মুখেবললো—–সরি ।ইস্।লাগেনি তো?আমার এক বদ স্বভাব রাতে র বেলায় বই পড়া আর ছুঁড়ে ফেলা ।——–যে বই ছুড়ে ফেলতে হয় তা পড়েন কেন? মুন্নি র মা ঘুমের মধ্যে বললেন—–মুন্নি, কি হলো? ——-কিশোর জি কি কিতাব গির গয়ি । —–উঠা দে। বলে পরম নিশ্চিন্তে পাশফিরে শুলেন । বই দিয়ে একঝলক তপতপে চোখের বাণ মেরে মুন্নী নিজের সিট্ এ শুয়ে পড়লো । ,বইখানা হাতে নিয়ে কিশোর ভাবলো,আর পড়া ঠিক হবেনা ।বইখানা আবার ছুড়লে মুন্নি হৈচৈ বাঁধিয়ে দেবে । দাদাকে খুশি করতে কিশোর জোর করে হৈচৈ করতো ।যেন কিছু ই হয় নি দাদার।অত দুঃখের মাঝে কিশোর জোর করে হাসতো। একদিন দাদাকে বলেছিল—- তুমি অসুস্থ আর বৌদি বাপের বাড়ি চলে গেল? ———আরে,আমি ই ওকে পাঠালাম ।তোর সেবা পেতে ইচ্ছে হলো ।কিরে, করবি না? ——–কি যে বলো দাদা,তোমার জন্য আমি প্রাণটা ও দিতে পারি । হাত ধরে দাদা টেনে নিয়েছে।দাদার চোখে জল, কিশোরের চোখে রাজ্যের কান্না ।সেদিন থেকে নির্মলা অর্থাৎ বৌদির কথা আর বলে নি দাদার সামনে ।ঐ মেয়ের প্রতি বেড়েছে ঘেন্না । দাদার ঘর ছেড়ে নির্মলার রূপের চটক আরও বেড়েছে ।কিশোরের গাত্রদাহ টা অনেক বেড়েছে তাতে ।কিশোর এর রাগের পারাটা বাড়ার কারণ নির্মলা র সাথে এ বাড়িতে ,তার বস্ এর আগমন ।সে সময় টা নির্মলার রূপের বহর টা চোখে পড়ার মতো ।সাথে, চোখে জলের আভাস ।নির্মলা র চোখে জল দেখে ছলাকলা ছাড়া অন্য কিছু ই মনে হয় নি কিশোরের।এমন ঢং যেন, দাদার দুঃখে মরে যাচ্ছে নির্মলা । কিন্তু দাদার চোখে তখন ও প্রেমের ঝলক দেখে বুকটা মুচরে উঠেছে কিশোরের ।কিশোরের নজর গেছে নির্মলা র চোখে ।সে চোখে হতাশ দৃষ্টি দেখে আশ্চর্য হয়েছে।দাদার গলায় ভাঙা সুর। ————আমি চললাম, নির্মলা । সেদিন নির্মলা কে কাঁদতে দেখে খুশি হয়েছে কিশোর ।এই জন্য যে, নবীন অন্তত জেনে যাক্ নির্মলা নবীন কে ভালোবাসে। ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল কিশোর তা জানতে ও পারে নি।জাগলো যখন তখন বুঝলো সে ট্রেন এ শুয়ে আছে ।খৈতান বোধহয় এতক্ষণ কিশোরের জাগার অপেক্ষায় ছিল । —‘—–ঘুম হলো?রাতে আপনার পড়াশুনা র অভ্যাস ।খুব ভালো । সংগে সংগে কিশোরের নজর ফিরল সেই কাজল কালো জোড়া চোখে ।সে চোখে বিদ্রূপ মাখা । যেন বলতে চাইছে, “কেমন পড়াশুনা করে তা।আমার জানা ।” কিশোর সে কথায় উত্তর না দিয়েই প্রাত্যহিকের জরুরি জিনিসপত্র নিয়ে টয়লেট এ চলে গেল । মাথায় যেন দশমনই ওজন ।স্নান সেরে নিলে ভালো লাগবে ।টয়লেট এর তাক এ একটা পোর্ট ওয়াইন এর বোতল রয়েছে ।হাসি পেল ।এসব নেশা ধরলে হয়তো কষ্টের থেকে রেহাই পাওয়া যেত ।কোন নেশাই কিশোরের নেই । । হয়তো দাদার কাছে মানুষ হয়েছে বলে ই ।সেই দাদা ও সেদিন মদের নেশায় কষ্ট ভুলতে চেয়েছিল।কি কষ্ট!তখন বোঝেনি।দাদা জানতে পেরেছিল তাঁর মারণ রোগ টার কথা । দাদার হাতের মুঠোর ভেতরে কিশোরের হাত ।ঠিক শিশু কালের মতো ই।পৃথিবীতে নবীনের মোহ বলতে ছিল একমাত্র কিশোরের হাত খানা।পরে নির্মলার স্থান । শেষদিকে মাঝে মাঝে ই সে মুঠো আলগা হয়ে যেত । ঢিলে হলেও হাত তো নয় যেন লৌহ পিঞ্জর।সেই মাস্ লধারী নবীনের হাত এই অবস্থায় কে বলবে! ছোটবেলায় দাদা লিকলিকে কিশোর কে বলতো, —–এই দ্যাখ, এমন হাতের মাসল তৈরি করতে হবে । বুঝলি? মনে পড়ে গেল সেদিনের কথা, দরজায় বেল্ বাজতে কিশোর আস্তে আস্তে নিজের হাত দাদার হাতের মুঠোর থেকে আলগা করে নিল ।অমনি দাদার বুকটা নড়ে উঠল ।এখন এমনই হয়।নিশ্বাস প্রশ্বাস বোঝা যায় না ।শুধু ই একটু নড়ে ওঠে বুকটা । দরজা খুলে দিতে দাদার নজর দরজা য় ।এ সময় টা দাদা কার অপেক্ষায় তা জানা কিশোরের ।এরপর কি হবে তা জানে কিশোর ।তাই ঘরে না থেকে আঙিনায় গিয়ে দাঁড়ায় ।সেখান থেকে সব দেখা যায় ।নির্মলা কে দেখে দাদার ফ্যাঁস ফ্যাঁসে গলার স্বর।বৌদি, থুড়ি নির্মলার সাথে চার জন অফিস কলিগ এসেছে ।এঁরা দাদারও কলিগ ছিল ।কিশোর কে ডাকলো ওরা । কিশোর জানে এইবার শুরু হবে নানা রকম উপদেশ ।শকুনের মতো ওরা ঘিরে ধরলো দাদা কে। ——–ডোন্ট ওয়ারি মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা ।ইউ উইল বি পারফেক্টলি অলরাইট ।ভালো হয়ে উঠুন ।আপনার ডেস্ক আপনার জন্য আরও ডেকরেট করা হয়েছে। নির্মলা র বস্ এর হাত নির্মলা র কাঁধে ।ন্যাকামি আর ভালো লাগে না কিশোরের । ——–মাথাটা উত্তর দিকে না দেওয়া ই ভালো । ——-ঠিক বলেছেন ।চলুন আমরা দিক টা পাল্টে ওকে ঠিক মতো শুইয়ে দেই। চার জন পুরুষ দাদাকে তোলার চেষ্টা করছেন ।কিন্তু মাজার কাছে হাত দিয়ে থমকেে গেছে তাঁরা। কেন থেমে গেছে তা জানে কিশোর ।দাদার শিরদাঁড়া ছাড়া মাংস বলে কোন ও বস্তু নেই ,যা ধরে তোলা যায়।সেই শিরদাঁড়া একটা কাঠের বাটাম এর মতো । মৃত্যু মুখি মানুষ কে ওরা ও কষ্ট দিতে চায় নি। হয়তো বা বুঝেছে, এখন উত্তর আর দক্ষিণে কোন ও প্রভাব ফেলতে পারবে না নবীনের ওপর । দাদাও বুঝেছে, দাদার বুক ফাটা কান্না সেই প্রথম শুনেছে কিশোর । ———-আমি আর বাঁচবো না,নির্মলা । কিশোর রান্না ঘরের দেয়াল ধরে হাল্কা হতে চেয়েছে। তখন ই অনুভব করেছে একখানা সহানুভূতি মাখা হাত তার পিঠে ।পেছন ফিরে দেখেছে নির্মলা দাঁড়িয়ে ।তার চোখে ও জল। কিশোর কারও সহানুভূতি চায় না।ঐ হাতের স্পর্শে শক্ত করে নিয়েছে নিজেকে ।শক্ত ই হতে চায়। শক্ত হবে কি করে?পুরোনো ভাবনা ওকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে ।তবে ট্রেন এর এদের ও ব্যবহার ভালো ।খারাপ লাগছে না এদের কে।পুরোনো সব ভুলতে চায়। অমন একখানা রূপবতীর সাথে যাওয়া!বিশেষ করে কাল রাতের ঐ মেয়ের তপ তপে চোখের ,ছাল ছাড়ানো চাউনি মনে পড়ে গেল ।তেজ আছে বলেই ভালো লাগছে । টয়লেট থেকে বেড়িয়ে দেখলো মুন্নির মা প্রাতঃরাশ সাজানোয় ব্যাস্ত ।মুন্নি তার মা কে এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে ।কিশোরের আপত্তি সত্তেও খেতে হলো ওদের সাথে । খৈতান খেতে খেতে বললেন,—–কিশোর জী,তুমি জানো,এই পাটনা র ভয়ে বেনারস যাওয়া হয় নি । ——-কেন? ——আরে ওখানে অনেক সময় ঝামেলা হয়। ভালোয় ভালোয় পাটনা পার হলে হয়।পাটনা আসছে আমার ভয় হচ্ছে । এবার খৈতান পত্নী একটা মিষ্টি ধমক লাগালেন । ——আরে বাবা যব হোগা তব দেখা যায়গা ।কিশোর আছে না?চিন্তা কিস্ বাত্ কা। মিস্টার খৈতান মেয়ে কে বললেন—-এ মুন্নী, জলদি যা টয়লেট পে। মুন্নি টয়লেট এ চলে গেল ।কিসের এতো ভয়,তা বোঝা গেল কিছু ক্ষন পরে । পাটনা স্টেশন এ গাড়ি দাঁড়াতে বোঝা গেল কিসের ভয়ের কথা বলছিল ওরা !জনা দশেক তিলক ধারী এয়ার কন্ডিশন কামড়ায় পর্দা সরিয়ে ঢুকে পড়লো। রসাত্মক অংগভঙ্গি তে অভ্যস্ত তারা ।একরকম কিশোর দের উৎখাৎ করে জায়গার দখল নিল তাও খৈতান এর স্ত্রী র গা ঘেঁষে ।খৈতান তার স্ত্রীকে তাঁর ই পাশে উঠে আসতে বলেছেন।ওরা মহিলা কে টান মেরে ওদের কোলে বসিয়ে দেয় ।কিশোর এই প্রথম এমন একটা ঘটনা দেখছে ।তখুনি খৈতান কিশোর কে তাঁর মেয়ে র কাছে চলে যেতে ঈষাড়ায় বলেন । কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে কিশোর মেয়ে কে রক্ষা করা শ্রেয় বলে মনে করে।অনিচ্ছা সত্বে ও টয়লেট এর দিকে চলে যায় । যাবার সময় মিসেস খৈতান এর চরম অপমানকর অবস্থা। দেখে মিস্টার খৈতান কে কয়েক জন মার ধোর করছে ।অসহায় চোখের তারা সেই মহিলার।খৈতান এর চোখে র ঈষাড়ায় কিশোর ছুটে গেল টয়লেটের দিকে । মুন্নির সাথে মুখোমুখি হতে একটানে মুন্নি কে পাশের কামরায় নিয়ে গেল ।ঝাঁঝিয়ে ওঠে মুন্নি ।—— —-কি করছেন?ছাড়ুন। মুন্নি র কথায় কান না দিয়ে পাশের কামরায় ঢুকে পড়ে । কন্ডাক্টর চেঁচিয়ে বলে—–কি হচ্ছে? ——–দেখুন না আমাকে জোর করে নিয়ে এসেছে । ——-জানেন, আপনাকে রেল পুলিশ এ দিতে পারি? ———–তার আগে পাশের কামরায় আর. পি এফ পাঠান ।একদল ছেলে এর মাকে অশালীন মন্তব্য করছে ।এখন কেমন আছেন কে জানে?এদের অ্যরেস্ট করুন । —–ওরে বাবা!তা সম্ভব নয় ।বড়ো গাছের গুড়িতে ওদের ঠাঁই ।ওদের কেউ কিছু করতে পারবে না । প্রায় হচ্ছে ।কিছু দিন আগে এক মিলিটারি অফিসারের স্ত্রী কে ওরা ট্রেন থেকে নামিয়ে নেয় । ——–সব জেনে ও চুপ করে থাকেন? ———হায়ার অথরিটি কিছু করতে পারে না ।আমরা তো চুনোপুঁটি । —–ও আপনারা চুনোপুঁটি ধরার জন্য বসে থাকেন । যেমন একটু আগে আমাকে আর পি এফ এর কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন । ——মরার সাধ হলে ওদের সাথে লড়াই করুন ।যাইয়ে হমে কোই ইতরাজ নহি । ——ওখান থেকেই তো এলাম ।ওদের মেয়ে কে বাঁচাতে । কন্ডাক্টর এবার অনুতপ্ত হয়ে বললো ।——-কি করবো বলুন ।একজন প্রতিবাদ করেছিল ।তাঁকে কুপিয়ে টয়লেট এ ঢুকিয়ে দিয়েছিল ।এঁরা রাজনীতির রং মেখে থাকে ।তাই ধরা ছোঁয়ার বাইরে । মুন্নি কেঁদে চলেছে ।সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা নেই কিশোরের ।ঐ কামরায় কি হচ্ছে কে জানে? কন্ডাক্টর এর কথা শুনে তো কোন আশা দেখা যাচ্ছে না।মুন্নির পিঠে হাত রাখলো কিশোর । ফেটে পড়লো মুন্নি । ——আপনি কেন আমায় নিয়ে এলেন? চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো কিশোরের ।আচ্ছা বেইমান মেয়ে তো,মনে ভাবলে ও মুখে তা বললো না ।বললো—-না এলে ঐ বারোজন কে একসাথে সামাল দিতে পারতে তো? কথা টা বলে ই ঐ মেয়ের শরীরে দৃষ্টির ছোবল মেরেছে কিশোর ।থমকে গেল সেই মেয়ে ।অমনি কিশোরের সোনা মুখ হয়ে গেল । —— স্টেশন আসতে ই হৈচৈ পড়ে গেল ।স্টেশন চত্বরে এ লোকে লোকারন্য ।রেল পুলিশ এ ছেয়ে আছে চত্বর। ওদের কামরায় ঢোকার পথ বন্ধ ।কিশোর বুঝতে পেরেছে একটা গন্ডগোল নিশ্চয়ই হয়েছে ।লোকের মুখে শোনা গেল খুন হয়ে গেছে ।পুলিশ ঢুকতে দেয়নি ধারে কাছে । মুন্নি থরথর করে কাঁপছে ।যা বোঝার বুঝে নিয়েছে। এরপর কি কর্তব্য?কিশোর কি মুন্নি কে এভাবে ফেলে রেখে যেতে পারে?না।এখন ওদের দুজনের ই এক অবস্থা ।কিশোরের ও ঘরে কেউ নেই ।মুন্নি র ও ঘরে কেউ নেই । সম্বিত ফিরল আপনা থেকেই ।রেলওয়ে প্রটেকসন ফোর্স, সি আর পি,ডাক্তার, রিপোর্টার এ ছেয়ে গেছে ।দেশ চালায় যারা তারা এসব পশুদের আশ্রয় দেয় কেন?কাদের এসব লোকের দরকার হয় দেশ চালাতে?এ সব লোক ছাড়া কি দেশ চলে না?এ কেমন চলা,যাতে নিরপরাধ লোকের প্রাণ যায় । স্টেশন চত্বরে পর পর দু,খানা ‘বডি ‘ বার হলো । মুন্নি কে কাছে যেতে দেওয়া হচ্ছে না ।কিশোরের সাথে আরো দু একজন ধরে রেখেছে মুন্নি কে। মৃত দেহের পোস্ট মর্টেম না হওয়া অবধি ওদের অপেক্ষা করতে হবে । পুলিশ এর ব্যারিকেড ভেংগে মুন্নি তার বাবা মায়ের কাছে যায় তার কি সাধ্য ।অথচ যাঁরা ঐ দুজনকে খুন করলো তাদের পাত্তা নেই । হাসি পায় কিশোরের।ডেড্ বডির রক্ষনাবেক্ষন দেখে ।যেখানে ট্রেন এ চলাকালীন মহিলাদের নিরাপত্তার অভাব ।সেখানে ই মরার পর বিশাল বাহিনী মৃত দেহের নিরাপত্তা দিচ্ছে!কার সার্থে? দেহ সৎকার অবধি কিশোরকে থাকতেই হলো মুন্নির সাথে ।রেল থেকেই ওদের থাকার ব্যবস্থা করে দিলো।