প্রশ্নের উত্তর
মা বাবার মনোনিত পাত্রীকে সুরঞ্জন বিবাহ করে খুব খুশিতেই আছে।, বিয়ের দশদিনের মাথায় হানিমুনে যায় গোয়া।
গোয়া থেকে এসে বাবা ও মাকে সুরঞ্জন বলে মৌসুমীর সঙ্গে ঘর করা অসম্ভব। বৌয়ের চরিত্র নাকি ভালো নয়!!!
সুরঞ্জন বাবা – মাকে বলে আমি এর সাথে ঘর করতে পারব না।
মৌসুমীকে শ্বশুর- শাশুড়ি নানান ঝাঁঝালো কথা বলে।
মৌসুমী অবাক হয়ে ওনাদের কথা শোনে। চরিত্র খারাপের কথা বললে মৌসুমী ফোঁস করে ওঠে। আমার কি চরিত্র খারাপ দেখলেন বলুন??
রাত্রে বর অফিস থেকে আসলে শ্বশুর – শাশুড়ির নামে অভিযোগ জানাই।বর হঠাৎ রেগে গিয়ে বলে তোমার এত বড় সাহস আমার বাবা – মার নামে অভিযোগ করো। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাও এক্ষুণি। তুমিই বলো আমার চরিত্র খারাপ ওনারা বুঝলেন কি করে!!!
তাছাড়া তুমিতো গোয়াতে হানিমুনে যাওনি ।ধর্ষণ করতে গেছিলে। আমার চরিত্র খারাপ নয় তুমিই ধর্ষক।
চড় থাপ্পর সব উপহার জোটে । মৌসুমীর #বিনিদ্র রাত কাটে। ভোর বেলায় সব গয়না , আলমারির
মূল্যবান সব জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে বাবার বাড়ি না গিয়ে বন্ধু অলকার বাড়ি
যায়। ওখান থেকেই দুদিন বাদে নিজের মামার বাড়ি পাটনা এরোপ্লেনে চেপে চলে যায়। সৎমার চেনাশুনা ছেলের সাথে বিবাহ হয়েছিল।এরমধ্যে শ্বশুরবাড়িতে রটনা রটিয়ে দেয় বৌ পালিয়েছে।
সেই থেকে মৌসুমী মামার বাড়িতে।বাবার সঙ্গে মামার সম্পর্ক ভালো ছিল না। মৌসুমী যখন দশ বছর বয়স তখন শেষ মামার বাড়ি এসেছিল।তারপর মা সুইসাইড করেছিলেন ।
সৎমা আসে মৌসুমীদের বাড়িতে।মার সঙ্গে মামার বাড়ি এরোপ্লেনে কখনো আসেনি।এই প্রথম প্লেন চড়ে মামার বাড়ি যাওয়া। পুরানো ফোন নম্বরটা ভাগ্য ভালো পাল্টিয়ে যায় নি।
মামা মামী সব শুনে আর যেতে দেন না মৌসুমীকে। কিছুদিন যেতেই মৌসুমী বুঝতে পারে ও সন্তান সম্ভবা। মৌসুমী স্কুলে চাকরি ও করে পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। কিন্তু একটা প্রশ্নের উত্তর পায় না মৌসুমী।তার কি দোষ ছিল!!!
সেই উত্তর খুঁজতে বিনিদ্র রাত কাটায়। গোয়ায়
বরতো ভালোবাসার কথা বলে নি। সাতদিন
দিন- রাত পৌরুষত্ব দেখিয়ে গেছিল। ভেবেছিলাম এই ভাবে হয়তো বিবাহিত জীবন হয়।
তারপর প্রতিদানে জোটে চরিত্র হীনা,পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিতা, পলাতক জীবন।এক পুত্রসন্তানের জননী। ছেলের কাছে শুনতে হয়
মা —
” বাবা কি তারা হয়ে গেছে” ??
ছেলের প্রশ্নের উত্তরের হাত থেকে বাঁচতে সিঁদুরটা আর লাগাত না মৌসুমী।
মামী যেহেতু নিঃসন্তান ছিলেন তাই মৌসুমীর ছেলেকে চোখে হারাতেন। আজ ডক্টর কুনাল দাস কোলকাতায় পোস্টিং। মৌসুমীর ছেলের সাথে যাওয়া অসম্ভব। স্কুলের চাকরিটা ছেড়ে যায় কি করে!!
এখনো আট বছর চাকরি বাকি আছে। অগত্যা মামা মামী যান। কুনাল
দাদু – দিদার চোখের মনি। মাঝে মাঝে মৌসুমী অজানা আশঙ্কায় ভোগে.. কেননা কুনাল হুবহু সুরঞ্জনের মতো দেখতে।
মামা এর মধ্যে মৌসুমীর বাবার সাথে চুপচাপ দেখা করে।এক পাড়ায় যে কুনালের ফ্ল্যাট। কুনালকে মামার ছেলেই ভেবেছেন।
একদিন মাঝরাতে তলব পরে ডক্টরের। কুনাল গিয়ে দেখে এক বৃদ্ধা অসুস্হা।তার ছেলে ও হাত জোড় করে বলছেন মাকে বাঁচান। সারা রাত ডক্টর জেগে চিকিৎসা করেন।ভোর বেলায় ডক্টর বেসিনে হাত ধুতে গিয়ে চোখে পড়ে দেওয়ালে টাঙানো এক নবদম্পতির ছবি। কুনাল এক দৃষ্টিতে ছবিটা দেখতে থাকে। মাঝবয়সী ভদ্রলোক বলেন আমার ছবি। কুনাল গম্ভীর ভাবে বলে পাশের জনের জন্য আপনার কাছে আমার ডাক্তারির মূল্য নেব না।
সুরঞ্জন জিজ্ঞেস করে তোমার মা কেমন আছেন??
হুবহু তুমি আমার মতো দেখতে।
কুনাল বাড়ি গিয়ে সেদিন আর হাসপাতালে যায় না।বড় হয়ে কুনাল প্রতিদিন মার ডায়েরী লুকিয়ে পড়ত।তাই কুনালের জানা মার বাবার প্রতি ক্ষোভ ছিল না। শুধু মনে একটা প্রশ্ন ছিল মার কি দেখেছিল যে মাকে চরিত্রহীণা মনে হয়েছিল!!
আমার প্রশ্নের ভয়ে মা সিঁদুর ও পরতেন না।
কুনাল সারাদিন ভাবে
বাবা – মার মধ্যে কি হয়েছিল যে বাবা – মা হানিমুনের পর ছাড়াছাড়ি হয়েছিল। কুনাল ও ভাবে যেমন করে হোক আজ ঠাকুমাকে দেখতে যাবে। সেদিন বাবা বাড়িতে না থাকায় ঠাকুমার সাথে অনেক গল্প করে। ঠাকুমাকে কথায় কথায় জানিয়ে দেয় মৌসুমীর কথা।বাবা পিছনে কখন এসে দাঁড়িয়েছে। কুনালকে বলে নিয়ে যাবি আমায় তোর মা’র কাছে ?
ঠাকুমা – বাবা আজ যাচ্ছে মার কাছে। এরমধ্যে মৌসুমীর মামা – মামী ফিরে গেছেন পাটনা।
অভিমানী মা দিনের পর দিন বিনিদ্র রাত কাটিয়ে তার গায়ে চরিত্রহীনা র তকমা কেন লেগে ছিল তার উত্তর মনে মনে খুঁজে বেড়াতেন।
আজ মা সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন।
মৌসুমী চরিত্রহীনতার তকমা পেয়ে ঝর্ণা যেমন নদী হয়ে গেলে সমস্ত উচ্ছলতা হারিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে তেমনি বিবাহিত জীবনের উচ্ছলতা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। কামনা বাসনা সব ঠান্ডা হয়ে যায়। শুধু একটা প্রশ্ন মনে নিয়ে বেড়ায় আজীবন।তার উত্তর আজকে আসছে ছেলের সঙ্গে করে। কিন্তু মৌসুমী যে দম নিতে পারছে না।
বাবার থেকে উত্তর না নিয়ে মা হারিয়ে গেল দূর গগনের ওই তারাদের দেশে। ওই যেন ছোটবেলার ঘুমপাড়ানি গান ভেসে আসছে
“হাজার তারা আলোয় ভরা
চোখের তারা তুই—
স্বপ্ন দিয়ে সাজাই তোরে কান্না দিয়ে ছুঁই”।
কুনাল দেখে ডায়েরির শেষ পাতাতে লেখা উত্তর চাই…!!