কী ভয়াবহ কান্ড
সনৎ চলেছে শ্বশুরবাড়ি সেই বেহেরামপুরে।
যখন সনৎ এর ষোল আর রীমার বয়স দশ তখন ওদের বিবাহ হয়—রীমার বাবা তখন কলকাতায় চাকরি করতেন—-রীমা আর সনতের বাবা রেলে একই জায়গায় চাকরি করতেন।
ওদের বিয়ের পর রীমার বাবা বেহেরামপুর উড়িষ্যায় বদলি হন—দুবাড়ির কথা ছিল—-রীমা বড় হলে অর্থাৎ কুমারী থেকে নারী হবে—তারপর শ্বশুরবাড়ি
আসবে।
আগে পত্র মারফৎ কুশল সংবাদ দেওয়া নেওয়া চলত— মাসে একটা পত্র আসত—এই করে সাড়ে তিন বছর পর জানতে পারে মেয়ে বড় হয়েছে—-রুমার সাড়ে তের আর সনতের কুড়ি ।
সনৎ রেলে চাকরি পেয়েছে—-শ্বশুর ও বাবা রেলে চাকরি করে যখন—জামাই বা ছেলের চাকরিতে অসুবিধা নেই—আগে পরিবারের কেউ রেলে কাজ করলে অনায়াসে কাজে ঢুকতে পারত।
মেয়ের বাড়িতে জানিয়েছিলেন পূজার পর মেয়ে পাঠাবেন।জামাই যেন পূজার সময় আসে বেহেরামপুরে।
সনৎ হাওড়া থেকে ট্রেনে উঠেছে।ব্যাগটা বেশ ভারি।শ্বশুরবাড়িতে প্রথম যাচ্ছে,তাই বাবা সবার জন্য জামাকাপড় কিনে পাঠিয়েছেন।
সনৎ চলেছে শ্বশুরবাড়ি—ট্রেনে ওঠে দেখে একজন বুড়ো লোক ও একজন বুড়ি মহিলা চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আছেন—- কিন্তু মুখ দেখা যাচ্ছে না——ওর দেখার ইচ্ছাও নেই–
ব্যাগ সামলে বসেছে—-মাঝ রাতে ঘুম ভাঙতেই দেখে —-ঐ বুড়ো আর বুড়ি শুধু বসে আর কোনো প্যাসেঞ্জার নেয়।
ট্য়লেট পাচ্ছে,যেতে ও পারছে না।
বুড়োটা বলেন বাবা কোথায় নামবে??
সনৎ বলে বেহেরামপুরে।
বুড়ো বলেন তোমার ঘুম পেলে ঘুমাও,আমি ডেকে দেব।বুড়ো মানুষ রাতে আমার ঘুম আসেনা।
সনৎ বলে আপনারা শুনেছেন ওখানে একটা দুর্ঘটনায় একজন বুড়ো আর বুড়ি মারা গেছেন দুপুরের ট্রেনে। সনৎ বলে ঐ ট্রেনেই তো আমার যাবার কথা ছিল। ধরতে পারেনি তাই বিকালের ট্রেন ধরলাম।
বুড়ো বলে তা জানব নি।
সনৎ জিজ্ঞাসা করে—তা আপনি জানলেন কি করে??
উনি বললেন–টিকিট ঘরে শুনলাম । সনৎ জিনিসপত্র রেখে টয়লেট করে আসে।ও দেখে ওনাদের হাতে ধুতি ও শাড়ি।ব্যাগ খুলে নিল কি করে??
তাহলে ওনাদেরই কেনা হয়ত।ব্যাগের চাবি তো ওর কাছে।
তারপর একটু তন্দ্রা লেগেছে—বুড়ো বলে নেমে পরো।
সনৎ ওনাদের ধন্যবাদ জানিয়ে স্টেশনে নেমে পড়ে—নেমে দেখে ঘুটঘুটে অন্ধকার— আরে এটা তো বেহেরামপুর নয়??
স্টেশন মাস্টরের ঘরে গিয়ে জানতে পারে দুটো স্টেশন পরে বেহেরামপুর।
কি আর করে —বুড়োটা এত পাঁজি।কিছুক্ষণ পর স্টেশন মাষ্টার বলেন —আরে আপনার ভাগ্য ভাল আপনি ভুল করে নেবে গেছেন—-জানেন বেহেরামপুর ঢোকার আগে দুটো ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে বেশীরভাগ যাত্রী মারা গেছে।
সনৎ শুনে অবাক! যা বাবা কি শুনছে ও।
পরদিন সকালে সাইকেল ভ্যান করে শ্বশুরবাড়ি যায়।দেখে দুটো মরা পরপর শুয়ে—পোসমর্টম করে এসেছে,
—-গতকাল ট্রেনে কাটা পরেছে —তার সঙ্গে জামাই মারা গেছে বলে কাঁদছে সবাই।
জামাইকে লাশ ঘরে চিনতেও পারে নি।
জামাই বলে সে জামাই।কি আর করে একটা বুড়ো আর বুড়ি ভুল স্টেশনে নামিয়ে সনতের প্রান বাঁচিয়েছেন— সেই গল্পটা শোনাতে গিয়ে চোখে পড়ে বুড়ো আর বুড়ির মুখ—যাঁরা মাটিতে শুয়ে আছেন।
শ্মশানের কাজ হয়ে গেলে সবাইকে জামাকাপড় দিতে গিয়ে দেখে একটা ধুতি ,পাঞ্জাবিও একটা শাড়ি কম ।
সনৎ এর মনে পড়ে —সনৎ টয়লেট করেএসে ধুতি পাঞ্জাবি ও শাড়ি ওনাদের হাতে দেখেছে।নিজেদের প্রনামী টা বার করে নিয়েছেন।
কি ভৌতিক কান্ড রে??
আত্মা এসে তাকে বাঁচিয়ে গেল আবার নিজেদের প্রনামীটা নিয়ে ও গেল।
সনৎ সবার কাছে জানতে পারে ,তুমি আসবে বলে—ওনারা দুজনা য় কাল দুপুর থেকে স্টশনে ছিলেন।
দুজনায় চোখে কম দেখতেন–তাই এই বিপত্তি—মরে গিয়েও নাতজামাই এর ভবিতব্য বিপদ দেখে— আগেই স্টশনে নামিয়ে নাতনিকে বৈধব্যের হাত থেকে রক্ষা করেন।
যাক পূজায় তো বউকে নিয়ে আনন্দ করা যাবে না—তাই দাদু ও ঠাম্মার কাজ তিনদিনে শেষ করে—কলকাতায় বউ নিয়ে ফিরে আসে।
সনৎ আজ ও তার ড্রয়িংরুমে দাদু ও ঠাম্মার ছবি ঝুলিয়ে রেখেছে —- এই দাদু না বাঁচালে সনৎ আজ নিজেয় ছবি হয়ে ঝুলত।