Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

বিষাণ

স্যার, আমি অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। ডিসিপ্লিন ব্যাপারটা আমার ধাতেই নেই। কিছুদিন দিব্যি রুটিন ফলো করতে পারি। সকালে ওঠা, দাঁত মাজা, দাড়ি কামানো, স্নান, বাটার টেস্ট আর ডিম দিয়ে ব্রেকফাস্ট, পোশাক পরে তৈরি হয়ে ব্রিফকেস নিয়ে বউকে একটা আলতো চুমু খেয়ে অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়া–এসব মাসখানেক দিব্যি পারি। তারপরই আমার অস্থিরতা আসে। সাংঘাতিক অস্থিরতা। মনে হয়। এইসব রুটিন আমার গলা কেটে ফেলছে, হাত-পায়ে দড়ি পরাচ্ছে, একটা নিরেট দেয়ালে ঠেসে ধরছে আমাকে। আমার তখন ভীষণ কষ্ট হয়। পাগল পাগল। লাগে। আর তখনই আমি আমার কয়েকজন মার্কামারা পুরনো বন্ধুকে খবর পাঠাই। তারা ভাল লোক নয় ঠিকই, তবে বন্ধু হিসেবে খুব, খুব বিশ্বস্ত। খবর পেলেই তারা এসে হাজির হয়ে যায়। আর আমি তাদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ি। উধাও হয়ে যাই। কাঁহা কাঁহা মুল্লুক চলে যাই। বেশিরভাগই হয় আদিবাসী ভিলেজ, নয়তো কোনও খনি এলাকা, ডক অঞ্চল। অর্থাৎ যেখানে ভদ্রলোকরা থাকে না। চোলাই খাই, জুয়া খেলি, ভাড়াটে মেয়েদের সঙ্গে শুই। হয়তো এসব খুব খারাপ কাজ স্যার, কিন্তু ওইরকম বেপরোয়া বেহিসেবি পাগলাটে মর‍্যালিটিহীন কিছুটা সময় কাটালেই আমার অস্থিরতাটা চলে যায়।

তখন কি ফিরে আসেন?

হ্যাঁ স্যার। হয়তো এক সপ্তাহ কিংবা দিন দশ-পনেরো ওইরকম বাঁধনছাড়া জীবন কাটাতে না পারলে আমাকে সুইসাইড করতে হত।

আমাদের কাছে যা খবর আছে তাতে আপনার পাঁচজন বন্ধুর মধ্যে রাজু শেঠ আর নিমু। কর্মকার ডেঞ্জারাস ক্রিমিনাল। তা কি জানেন?

ওরা আমার আজকের বন্ধু নয় স্যার। ছেলেবেলা থেকে আমরা প্ৰায় একসঙ্গে বড় হয়েছি। ওদের সব জানি স্যার। রাজু খুব অ্যাগ্রেসিভ টাইপের। নিমু একটু চুপচাপ কিন্তু একরোখা। হ্যাঁ স্যার, আপনার ইনফর্মেশনে কোনও ভুল নেই।

প্রবাল, শতরূপ আর নন্দনও খুব ভাল লোক নয়।

স্যার, আমরা কেউ ভাল লোক বলে দাবি করছি না। আর ওই বন্ধুদের সঙ্গে বছরে দু’–তিনবারই আমার দেখা হয়। যখন আমরা উইকেন্ড অ্যাডভেঞ্চারে যাই। নইলে কে কী করে তা নিয়ে আর কেউ তেমন মাথা ঘামায় না।

আপনার এইসব অ্যাডভেঞ্চার আপনার স্ত্রী কী চোখে দেখতেন?

সে কি আর বলতে হবে স্যার? উনি আমাকে আপাদমস্তক ঘেন্না করতেন। যখন ফিরে আসতাম। তখন ওঁর চোখ যেন আমার সর্বাঙ্গে ছ্যাক দিত। নিজেকে বড় অপরাধী মনে হত তখন।

রিকনসিলিয়েশন কীভাবে হত?

সময় লাগত স্যার। উনি আমাকে খুব অপমান করতেন, গালাগাল দিতেন।

ডিভোর্সের ভয় দেখাননি?

বহুবার। যতদূর জানি, ইদানীং ল-ইয়ারের সঙ্গে যোগাযোগও করেছিলেন।

বিয়ে কতদিনের?

সাত বছর।

প্ৰেম করে, না নেগোশিয়েটেড?

আপনি কি আমার ব্যাকগ্রাউন্ড জানেন স্যার?

জানি। তবু আপনি বলুন।

আমি প্ৰসাদ ফুড প্রোডাক্টের মালিকের ছেলে। সুতরাং আমাকে বড়লোকের ছেলে বলাই যায়। আমরা তিন ভাই, আমি মেজো এবং ফ্যামিলির ব্ল্যাক শিপ। আমার মিসঅ্যাডভেঞ্চারের জন্য আমি বাবার চক্ষুশূল। তিনি হয়তো আমাকে ত্যাজ্যপুত্ৰই করতেন। কিন্তু একটা কারণেই করেননি। তিন ভাইয়ের মধ্যে আমিই একমাত্র ফুড টেকনোলজি নিয়ে পড়েছি এবং পাশ করেছি। আমার আর দুই ভাই ম্যানেজমেন্ট পাশ করেছে এবং ব্যাবসাও বোঝে।। কিন্তু আমি প্রোডাকশনটা বুঝি। আপনি জানেন না যে আমি কিছু ইনোভেশন করার ফলে আমাদের প্রোডাক্টের কোয়ালিটি অনেক ভাল হয়েছে এবং বিদেশেও মার্কেট পাচ্ছে। শুধু এই কারণেই বাবা আমাকে তাড়িয়ে দেননি। যাতে আমি শুধরে যাই সেইজন্যই শিবাঙ্গীর মতো সুন্দরী মেয়ে খুঁজে আমার বিয়ে দেন। ইট ওয়াজ অ্যান অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ স্যার।

বুঝলাম। আপনার স্ত্রী যে সুন্দরী তা আমরা জানি। কিন্তু শিবাঙ্গীও আপনাকে শোধরাতে পারেনি, তাই তো?

হ্যাঁ স্যার।

বেলঘরিয়ায় আপনাদের বিশাল বাড়ি থাকতেও আপনি এই সাউথ ক্যালকাটায় ফ্ল্যাট কিনে বাস করছেন কেন? বিশেষ কারণ আছে কি?

আইডিয়া আমার বাবার। কেন তা বলতে পারব না। বাবা অত্যন্ত বুদ্ধিমান মানুষ। যা করেন ভেবেচিন্তেই করেন। আমার মা আপত্তি করেছিলেন বটে, কিন্তু বাবা বলেছিলেন, শিবাঙ্গীর সঙ্গে আলাদা থাকলেই নাকি আমার ভাল হবে। এই ফ্ল্যাট বাবাই কিনে দিয়েছেন।

কিন্তু এই ব্যবস্থায় আপনার ভাল হয়েছে কি?

না স্যার। আমি ইনকরিজিবল।।

স্ত্রীর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কীরকম?

লুকওয়ার্ম। অলমোস্ট কোন্ড।

তার জন্য আপনি কাকে দায়ী করতে চান?

আমাকে। শিবাঙ্গী ভাল মেলে।

আপনার ওই মার্কামারা পাঁচজন বন্ধুকে কি আপনার স্ত্রী চেনেন?

ওরা আমার বাড়িতে বড় একটা আসে না। আমাদের বন্ধুত্বটা বাইরে। তবে শিবাঙ্গী ওদের দু-চারবার দেখেছে। বিয়ের সময়ে ওরা ইনভাইটেড ছিল। দু-তিনবার বিভিন্ন অকেশনে এসেছে। শিবাঙ্গী ওদের খুব ফর্ম্যালি চেনে। ঘনিষ্ঠভাবে নয়। সত্যি কথা বলতে কী, ওদের সঙ্গে আমারও বিশেষ যোগাযোগ থাকে না। যখন আমার ঘাড়ে অস্থিরতার ভূতটা চাপে তখনই ওদের ফোন করি, আর ওরা চলে আসে।

সবাই একসঙ্গেই চলে আসে?

না স্যার। তা কি হয়! সকলেই নানা ধান্ধায় ব্যস্ত। কখনও দু’জন বা তিনজন জুটে যায়। আজকাল পাঁচজন জোটে খুব কম।

এই বন্ধুরা কি সবাই ওয়েল অফ?

হ্যাঁ স্যার। কারও মানিটারি কোনও প্রবলেম নেই। কিন্তু স্যার, আপনি আমার বন্ধুদের সম্পর্কে জানতে চাইছেন কেন?

এ ম্যান ইজ নোন। বাই দি কম্পপ্যানি হি কিপস।

সে তো ঠিকই। আমরা সবাই ক্যালকাটা বয়েজ-এ পড়তাম। অ্যাকাডেমিক রেকর্ড কারওরই খুব খারাপ নয়। তবে হ্যাঁ, আমাদের সবাই বদমাশ বলে জানত। অ্যান্ড দ্যাটস प्र6।।

এবার বলুন, জুন মাসের পাঁচ তারিখে আপনি এবং আপনার বন্ধুরা রাত বারোটার সময় কোথায় ছিলেন?

বন্ধুরা বলতে সবাই নয়। আমি, রাজু আর শতরূপ জুনের এক তারিখে গাড়ি নিয়ে বেরেই।

গাড়িটা কার?

রাজুর। রাজুর গাড়িরই ব্যাবসা। অন্তত তিনটে বড় বড় কোম্পানিকে ও বছরওয়ারি চুক্তিতে গাড়ি দেয়। সব কোয়ালিটি কার। তাই আমরা যখনই বাইরে যাই তখনই রাজুর কাছ থেকে গাড়ি নিই।

বুঝলাম। এবার বলুন, কোথায় গিয়েছিলেন?

লোধাশুলি।

সেখানে কেন?

শতরূপের ওখানে একটা ফাৰ্মহাউস মতো আছে। হাঁস, মুরগি, শুয়োরের খামার। সেইখানে।

তারপর?

পাঁচ তারিখ রাতেও আমরা শতরূপের ফার্ম হাউসেই ছিলাম স্যার।

ফার্ম হাউসের কর্মচারীরা সাক্ষী দেবে তো?

কেন দেবে না স্যার? তবে রাজু ছিল না। ওর জরুরি কাজ থাকায় দুই তারিখেই ফিরে এসেছিল। আমরা ফিরি ছয় তারিখের সকালে। ফার্ম হাউসের ডেলিভারি ভ্যান-এ।

কলকাতায় কখন পৌছন?

ভোর সাড়ে পাঁচটায়।

তারপর?

শত আমাকে এসপ্ল্যানেডে গ্র্যান্ডের সামনে নামিয়ে দেয়। আমি ট্যাক্সি ধরে বাড়ি চলে আসি। এসব কথা আমি লোকাল পুলিশকে বলেছি স্যার। একাধিকবার বলতে হয়েছে।

জানি। হয়তো আরও কয়েকবার বলতে হবে।

ঠিক আছে। যতবার বলতে বলবেন, বলব। বাড়িতে ফিরে আমি বেল দিই। কেউ দরজা খুলল না। হঠাৎ মনে হল, দরজাটা লক করা নেই, শুধু আধভেজানো আছে। আমি দরজা খুলে ঢুকি। সামনের হলঘরেই নন্দিনী উপুড় হয়ে পড়ে ছিল। লট অফ ব্লাড। ক্লট হয়ে ছিল।

আপনার ফাস্ট রি-অ্যাকশন?

খুব নার্ভাস হয়ে, হাত-পা কেঁপে মেঝেতেই বসে পড়ি। কাউকে ডাকাডাকি করার মতো অবস্থা ছিল না। বোধহয় আরও আধঘণ্টা পর আমি শিবাঙ্গীকে ডাকতে ডাকতে হামাগুড়ি দিয়ে বেডরুমে যাই। অ্যান্ড শি। ওয়াজ লায়িং…

শিবাঙ্গীর সঙ্গে আপনি বাইরে গেলে ফোনে কথাটথা বলতেন না?

না স্যার। আমার হোয়ার আবাউটস সম্পর্কে ওর কোনও ইন্টারেস্ট ছিল না।

আপনার কোনও গার্লফ্রেন্ড আছে?

না স্যার।

কখনও ছিল?

না। আমার অনেক দোষ আছে, কিন্তু উওম্যানাইজার নই।

নারী-পুরুষের আকর্ষণ কোনও দোষের ব্যাপার কি?

আমি তা জানি না স্যার। আমি মরালিস্ট নই। কিন্তু আমার কোনও মেয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল না।

নন্দিনী এ বাড়িতে কী করত? হাউস মেইড? মানে কাজের লোক?

ঠিক তা নয়। নন্দিনীকে এ বাড়িতে এনেছিল শিবাঙ্গী। এ বাড়িতে অনেক কাজের লোক আছে। কুক, ডাস্টিং-এর লোক, ডোমেস্টিক হেল্প মিলিয়ে অন্তত জনা চার-পাঁচ তো হবেই। নন্দিনী হাউসমাদারের মতো ছিল। ওভার অল সুপারভিশন করত। কিন্তু ওর আসল কাজ ছিল শিবাঙ্গীকে সঙ্গ দেওয়া। শিবাঙ্গীর একটা ছোট ব্যাবসা আছে। বিদেশ থেকে নানারকমের সুগন্ধের কনসেনট্ৰেট আনিয়ে তা দিয়ে পারফিউম তৈরি করা। ওর একটা ল্যাবও আছে। লার্জ স্কেলে করত না। লিমিটেড কিছু ক্লায়েন্টের জন্য করত। কিন্তু ব্যাবসাটা খুব ভালই চলত। নন্দিনী ওকে ব্যাবসার কাজেও হেল্প করত।

নন্দিনীকে কি স্যালারি দেওয়া হত?

হ্যাঁ স্যার। আমার ধারণা, মোর দ্যান ফিফটিন থাউস্যান্ড।

নন্দিনীর বয়স পাঁচিশ-ছাবিবশের বেশি ছিল না, কোয়াইট গুড লুকিং। ম্যারেড?

জানি না স্যার। নন্দিনীর সঙ্গে আমার বিশেষ কথাবার্তা হত না। শি ওয়াজ এ প্রাইভেট পারসন, ফোর্থ বেডরুমটায় থাকত। আমার সঙ্গে বিশেষ দেখাও হত না।

তার মানে আপনার সঙ্গে নন্দিনীর কোনও অ্যাফেয়ার ছিল না?

না স্যার। কী বলছেন? নন্দিনীর সঙ্গে অ্যাফেয়ার? আমার তো মনে হয় নন্দিনী আমাকে শিবাঙ্গীর মতোই ঘেন্না করত। আর সেটাই তো স্বাভাবিক।

কী করে বুঝতেন যে নন্দিনী আপনাকে ঘেন্না করত?

আমার তেমন সূক্ষ্ম অনুভূতি নেই। তবু দেখা হলে নন্দিনীর মুখে-চোখে রিপালশনের ভাব লক্ষ করেছি।

রেকর্ডে দেখছি আপনি এক সময়ে খেলাধুলো করতেন।

হ্যাঁ স্যার। আই ওয়াজ এ গুড অ্যাথলিট। স্প্রিন্টার ছিলাম। পরে আই টুক আপ টেনিস।

নেশাভা কবে থেকে শুরু করেন?

পাটিফাটিতে যেতে হত। সেই থেকেই শুরু।

আর বোহেমিয়্যানিজম?

ওটা আগে থেকেই ছিল। স্কুলে পড়ার সময় দু’বার পালিয়ে দেরাদুন আর লাদাখ চলে গিয়েছিলাম। তারপর থেকে মাঝে মাঝে কেমন যেন পাগলাটে ইচ্ছে হয় পালানোর।

আপনি একজন বিচিত্র মানুষ।

হ্যাঁ স্যার। অনেকে বলে, আমি পাগল।

আপনার স্ত্রীকে সেদিন সকালে আপনি কী অবস্থায় দেখেছিলেন?

বিছানায় উপুড় হয়ে শোওয়া। হাফ নেকেড। মাথা থেকে রক্ত পড়ে বিছানা ভেসে যাচ্ছিল। ঘ্যাস্টলি সিন। ভেবেছিলাম মরে গেছে।

আপনার কাজের লোকেরা কোথায় ছিল?

ওরা ফ্ল্যাটের ভিতরে থাকে না। সারভেন্টস কোয়ার্টারে থাকে। কুক। আর একজন সবসময়ের লোক। বাকিরা ঠিকে। অত সকালে কেউ তো আসে না। আটটার আগে কারও আসবার হুকুম নেই।

তখন ক’টা বাজে?

হার্ডলি ছটা বা সোয়া ছ’টা।

কী করলেন?

প্ৰথমে সিকিউরিটিকে ডাকি। তারপর অ্যাম্বুলেন্স আর পুলিশ। কিন্তু সবটাই করেছি একটা ঘোরের মধ্যে। এরকম সাংঘাতিক ঘটনা তো কখনও দেখিনি।

আপনার কাউকে সন্দেহ হয়?

না স্যার। তবে শুনছি, পুলিশ আমাকেই সন্দেহ করছে। এখনও কেন অ্যারেস্ট করেনি জানি না।

তার কারণ আপনার অ্যালিবাই। ঘটনাটা ঘটে পাঁচ তারিখে রাত বারোটার কাছাকাছি।

হ্যাঁ স্যার জানি। কিন্তু পুলিশের সন্দেহ আমি সুপার কিলার লাগিয়ে কাণ্ডটা করেছি।

সেটা খুবই সম্ভব।

হ্যাঁ স্যার, এরকম ঘটনা আকছার ঘটছে। আর আমার তো মোটিভও আছে, কী বলেন?

হ্যাঁ। তা হলে কি আপনি স্বীকার করছেন যে কাণ্ডটা আপনারই?

না স্যার। আমি শিবাঙ্গী বা নন্দিনীকে খুন করার কথা কখনও ভাবিনি। কারণ, খুন করার পিছনে কোনও একটা উদ্দেশ্য তো থাকবে! আমার তো কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। শিবাঙ্গীর জ্ঞান ফিরলে এবং কথা বলার মতো অবস্থা হলে ওর কাছ থেকেই জানতে পারবেন। যে, আমি স্বামী হিসেবে অযোগ্য হলেও ভিনডিাকটিভ নই। আমাকে ও কিছুদিন আগে মিউচুয়াল ডিভোর্সের কথা বলেছিল। আমি খুব অপরাধবোধের সঙ্গেই বলেছিলাম, আমি তো অপদার্থ, আমার সঙ্গে কোনও মহিলারই বসবাস করা সম্ভব নয়।

ডিভোর্সে আপনার মত ছিল?

ছিল। না থাকলেও ডিভোর্স ও পেয়ে যেত। দেড় কোটি টাকার একটা সেটলমেন্টের কথাও হয়েছিল।

বাঃ! এটাই তো মোটিভ! শিবাঙ্গী মারা গেলে আপনার দেড় কোটি টাকা বেঁচে যেত। তাই না?

হ্যাঁ স্যার। আমি তো বলেইছি আমার মোটিভের অভাব নেই। পুলিশ আমাকে অনায়াসে ঝুলিয়ে দিতে পারে। কিন্তু নন্দিনীকে খুন করার পিছনে আমার কী মোটিভ থাকতে পারে তা আমি ভেবে পাচ্ছি না।

মোটিভ আছে বিষাণবাবু।

আছে তা হলে তো হয়েই গেল। কিন্তু নন্দিনীর সঙ্গে আমার তো সম্পর্কই ছিল না স্যার।

আপনি কখনও নন্দিনীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চেক করেছেন কি?

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট! না স্যার, ফেসবুকের কথা লোকের মুখে শুনি বটে, কিন্তু আমি কখনও ফেসবুক চেক করি না। কখনও ইন্টারেস্টই হয়নি। কেন স্যার, ফেসবুকে কি নন্দিনী আমার সম্পর্কে কিছু বলেছে?

ক্যাটেগরিক্যালি নয়, তবে কিছু হিন্ট আছে। নন্দিনী একজন রহস্যময় পুরুষের কথা লিখেছে। তার পুরো নাম বা ছবি লোড করেনি। শুধু ইনিশিয়াল দেওয়া আছে, আর ইনিশিয়াল হল বি পি। আপনার নামের আদ্যক্ষর। আপনি কি জানেন নন্দিনী ছবি আঁকতে জানত কিনা?

না। স্যার, নন্দিনী সম্পর্কে আমি বেশি কিছুই জানি না। শুধু জানি সে ছিল শিবাঙ্গীর ডান হাত। তাকে ছাড়া শিবাজীর এক মুহূর্তও চলত না। দু’জনের খুব ভাব ছিল, বন্ধুর মতো। এমপ্লয়ার-এমপ্লয়ির মতো নয়।

এতে কি আপনি বিরক্ত হতেন?

না। স্যার, বিরক্ত হব কেন? বরং শিবাঙ্গী যে মনের মতো একজন সঙ্গিনী পেয়েছে তাতে আমি খুশিই হতাম।

নন্দিনী কখনও আপনাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ইন্টারফিয়ার করত?

না স্যার। কারণ শিবাঙ্গীর সঙ্গে আমার ঝগড়া হত না। বরং দু’জনের মধ্যে একটা নীরবতাই ছিল। কোলান্ড ডিসট্যান্স। তবে কখনও সখনও শিবাঙ্গী গায়ের ঝাল। ঝাড়ত। একতরফা। আমি কখনও জবাব দিতাম না। কারণ আমি সর্বদাই পাপবোধে ভুগতম। আমি যে অন্যায় করছি তা তো আমি জানি।

সেয়ানা পাপী?

হ্যাঁ স্যার, আমাকে ওটা বলাই যায়। কিন্তু নন্দিনীর ছবি আঁকা নিয়ে আপনি কিছু জানতে চাইছিলেন।

হ্যাঁ। তার কারণ, নন্দিনীর মোবাইলে আমরা আপনার কয়েকটা ছবি পেয়েছি।

মাই গড! আমার ছবি। নন্দিনীর মোবাইলে? অসভ্য ছবি নয় তো স্যার?

কেন, সেরকম সম্ভাবনা আছে নাকি?

আজকাল মডার্ন টেকনোলজি দিয়ে কত কী করা যায়।

না, অসভ্য ছবি নয়। আর ছবিগুলো কোনও অ্যালবাম থেকে তোলা হয়েছে বলেই মনে হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, নন্দিনীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আপনার ছবি থেকে করা একটা স্কেচ আপলোড করা আছে। পাশে লেখা ‘মিস্টিরিয়াস বি পি ইজ মিরাজ টু মি’।

তার মানে কী স্যার?

আমার ডিডাকশন হল, নন্দিনী আপনার প্রেমে পড়েছিল।

এতে কি আমার খুশি হওয়া উচিত? কিন্তু স্যার, আমার তো শুনে কোনও খুশি হচ্ছে না।

খুশি না হওয়াই ভাল। কারণ এই মেসেজটা আপনাকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে।

ও গড!

নন্দিনীর দিক থেকে আপনি কখনও কোনও ইশারা-ইঙ্গিত পাননি? কখনও না? ভাল করে ভেবে দেখুন।

ইশারা-ইঙ্গিত! বিশ্বাস করুন স্যার, নন্দিনী ওয়াজ এ ভেরি সিরিয়াস টাইপ অফ উওম্যান। সবসময়ে গভীর, সবসময়ে এনগেজড ইন সাম ওয়ার্ক। ওর গলার স্বরও আমি বিশেষ শুনতে পেতাম না। আর আমি বাড়িতে থাকতামই বা কতক্ষণ বলুন। সকালে ব্রেকফাস্ট খেয়ে ন’টার মধ্যে বেরিয়ে যেতাম। ফিরতে রাত। বেশিরভাগ সময়েই ডিনার বাইরে খেয়ে আসতাম। আর শিবাঙ্গী বা নন্দিনীও তো বাড়িতে বসে থাকার লোক নয়। শিবাঙ্গীর ব্যাবসা ছাড়াও নানা সোশ্যাল এনগেজমেন্ট আছে। সুতরাং, নন্দিনী কী করে ইশারা-ইঙ্গিত করতে পারে? বরং আমার মনে হয় শি হেটেড মি।

আমি আপনাকে আর একটু কনসেনট্রেট করতে বলছি। আর একটু ভাবুন। কোনওদিন কোনও ছোটখাটো ইনসিগনিফিক্যান্ট কিছু মনে পড়ে কি?

স্যার, শিবাঙ্গী আমাকে ঘেন্না করে ঠিকই, কিন্তু কোনও মহিলা আমার প্রতি ইন্টারেস্টেড হলে শি। উইল নো ইট ইমিডিয়েটলি। এবং সে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয়।

আর ইউ শিয়োর?

হ্যাঁ স্যার। আমাদের বিয়ের পরই ওর এক বান্ধবী আমার সঙ্গে একটু ঢলাঢলি করার চেষ্টা করেছিল। শিবাঙ্গী তাকে এমন অপমান করে যে সে আর কখনও মুখ দেখায়নি।

শুনুন মশাই, নন্দিনী সম্পর্কে আপনার ধারণা খুব নির্ভরযোগ্য নয়। আপনার ই-মেলের পাসওয়ার্ড নন্দিনী কী করে জানল?

আমার পাসওয়ার্ড! ইম্পসিবল।

নন্দিনীর ঘরের ডেস্কের ড্রয়ারের মধ্যে পুলিশ অন্তত ছয়-সাতটা ই-মেল-এর প্রিন্ট আউট পেয়েছে যেগুলো আপনার অ্যাড্রেসে এসেছিল।

মাই গড। এটা কীভাবে সম্ভব?

আপনি খুব ভাল অভিনেতা নন বিষাণবাবু।

না। স্যার, আমি অ্যাকটিংটা পারি না। নেভার ইন মাই লাইফ। এখনও অ্যাকটিং করছি না। আমি সত্যিই বিস্মিত।

যদি প্ৰমাণ হয় যে নন্দিনীর সঙ্গে আপনার একটা গোপন সম্পর্ক ছিল তা হলে কিন্তু আপনি অগাধ জলে পড়বেন।

বুঝতে পারছি স্যার। আমার ভবিষ্যৎ খুব ভাল দিকে টার্ন করছে না। ই-মেল-এ কি কিছু ক্লু পাওয়া গেছে স্যার?

অবশ্যই।

দেন আই অ্যাম ডুমড্‌।

আপনি কি রেগুলার আপনার ই-মেল চেক করেন?

না। স্যার, আমার ই-মেলের যোগাযোগ বেশি মানুষের সঙ্গে নেই। মাঝে মাঝে খুলে দেখি। জাঙ্ক মেল-ই বেশি থাকে। আমাকে কম্পিউটারে অনেক কাজ করতে হয় বটে, কিন্তু ই-মেল বড় একটা দেখা হয় না। কী আছে স্যার আমার ই-মেল-এ?

একটা মেসেজ ছিল, ডু ইউ নো হু ওয়াজ হোল্ডিং ইয়োর হেড হোয়েন ইউ ওয়্যার ভমিটিং লাস্ট নাইট? ডিড ইউ হিয়ার মাইহাট বিট হোয়েন আই ওয়াজ হোল্ডিং ইউ ক্লোজ টু মাই ব্রেস্ট? ইউ পুয়োর রেচেড ম্যান!

এই মেসেজের মাথামুণ্ডু আমি কিছুই বুঝতে পারছি না স্যার।

আপনি বাড়িতে মাতাল অবস্থায় ফিরলে কেউ কি আপনাকে অ্যাটেন্ড করে রেগুলার?

আগে মাঝে মাঝে শিবাঙ্গী এসে ধরত। বমিটমি করলে সব পরিষ্কার করত। সিমপ্যাথি ছিল স্যার। কিন্তু সেটা আমিই নষ্ট করে দিয়েছি।

মনে করে দেখুন, ইদানীং–

স্যার, মাতাল অবস্থায় যা ঘটে তা পরে আর মনে পড়ে না। তবে হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন। আবছা মনে পড়ছে, কিছুদিন আগে মাতাল অবস্থায় আমাকে কেউ দু-চারবার অ্যাটেন্ড করেছে। আমি ভেবেছিলাম, কাজের লোকজনই হয়তো হবে।

মহিলা না পুরুষ?

মনে হয় মহিলা।

ভাল করে ভেবে দেখুন, মহিলাটি নন্দিনী কিনা।

হলেও হতে পারে স্যার। মাতালের অবজার্ভেশন খুব একটা নির্ভরযোগ্য তো নয়। কিন্তু ব্যাপারটা একটা ধাঁধার মতো। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

আপনার ল্যাপটপ আছে?

আছে।

নিয়ে আসুন।

এক মিনিট স্যার।

বলে বিষাণ উঠে তার স্টাডি থেকে ল্যাপটপটা নিয়ে এল। তারপর ল্যাপটপ খুলে মন দিয়ে তার ই-মেল খুলে ভাল করে পরীক্ষা করে বলল, দেখুন স্যার, ওরকম কোনও মেল আমার অ্যাকাউন্টে নেই।

এখন নেই, কিন্তু ছিল। কোনও কারণে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে তা ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা করার আগে নন্দিনী একটি প্রিন্ট আউট বের করে নিয়েছে। মোট চারটি মেল। এবং মেলগুলো বেশ প্যাশনেট অ্যান্ড রোম্যান্টিক। ব্যাপারটা খুলে বললে ভাল হয় না?

জানা থাকলে বলতাম স্যার। কিন্তু রোম্যান্টিক সম্পর্কই যদি হবে তা হলে নন্দিনীকে খুন করব কেন সেটাই তো বুঝতে পারছি না।

হ্যাঁ, সেটা একটা চিন্তার বিষয়।

স্যার, শুধু নন্দিনী কেন, আমার মতো একজন রুইনড ম্যানের সঙ্গে দুনিয়ার কোনও মেয়েই কি রিলেশন তৈরি করতে চাইবে?

দুনিয়াটা বড় অদ্ভুত জায়গা, কত কী যে হয় বা হতে পারে তার কোনও লজিক বা মাথামুডু নেই।

স্যার, আমি আইনকানুন জানি না। আমাকেই কি খুনি বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে?

না, এখনও নয়। আমরা শিবাঙ্গীর ওপর নির্ভর করছি। উনি এখনও কোমায়। ডাক্তাররা কোনও ভরসার কথা বলছেন না। তবে এখুনি ফ্যাটাল কিছু হয়তো হবে না। উনি চেতনায় ফিরলে ভাইটিাল উইটনেস হয়ে দাড়াবেন। এখন আপনার ভাগ্য।

আমার ভাগ্য ভাল নয় স্যার। আমাদের বাড়িতে প্রচুর জ্যোতিষীর চর্চা হয়। আমার মা আর বাবা দু’জনেই খুব জ্যোতিষে বিশ্বাস করেন। আমাদের বাড়িতে বড় বড় জ্যোতিষীর যাতায়াত আছে। তারাই বলেছে, আমার কুষ্ঠিতে নাকি অনেক খারাপ ব্যাপার আছে।

কীরকম?

তা আমি জানি না। স্যার, আমার মা জানে। এক সময়ে আমাকে মায়ের চাপাচাপিতে অনেক আংটি আর তাবিচ-কবজ পরতে হয়েছিল। বড় হয়ে সেগুলো ত্যাগ করেছি।

আপনি জ্যোতিষে বিশ্বাস করেন?

না স্যার। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে জ্যোতিষীরা আমার ভাগ্য নিয়ে মিথ্যে হয়তো বলেনি।

আপনার কি মনে হয়। শিবাঙ্গী আপনার ফেবারে সাক্ষী দেবে?

না স্যার। তা কী করে সম্ভব? পুলিশ বলছে খুন করতে এসেছিল ভাড়াটে খুনিরা।

শিবাঙ্গী বড়জোর বলবে আততায়ীদের সে চেনে না। সেক্ষেত্রে তো আমার রেহাই পাওয়ার কথা নয়।

একজ্যাক্টলি। শিবাঙ্গীর সংজ্ঞা ফিরলেও আপনার লাভ নেই।

না স্যার। গত পাঁচদিন ধরে আমিও নানা অ্যাঙ্গেল থেকে ভেবেছি। মনে হচ্ছে আমার রেহাই পাওয়ার কোনও রাস্তা নেই।

বাই দি বাই, আমি শুনলাম, আপনি গত সাতদিন একফোঁটাও মদ্যপান করেননি। সত্যি নাকি?

সত্যি স্যার। ইন ফ্যাক্ট আমার মদ খাওয়ার কথা মনেই হয়নি। এতটা শকড যে, আমার ইচ্ছে-অনিচ্ছেগুলো সব হাওয়া হয়ে গেছে। সেই জায়গায় আমার মনের মধ্যে গুহার মতো একটা ভয়।

ভয় জিনিসটা কি গুহার মতো?

আমার যেন ওরকমই মনে হল।

গত পাঁচদিন কি আপনি বাড়িতেই বসে আছেন?

হ্যাঁ স্যার। প্রথম তিন-চারদিন তো সারাদিন ধরে পুলিশের জেরা চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই থানায় টেনে নিয়ে গেছে। স্নান-খাওয়ার সময়ও পাইনি। আমি এত টায়ার্ড যে মনে হচ্ছে, বুড়ো হয়ে গেছি। স্যার, আমি তো পুলিশকে বলেছি যে, আমি ফেঁসে গেছি। আমার আর বেশি কিছু বলার নেই।

বলার অনেক কিছু আছে। আপনি ঠিকমতো চেষ্টা করলে হয়তো ভাইটালি কোনও কু পাওয়া যেত। বিশেষ করে নন্দিনী সম্পর্কে।

নন্দিনী সম্পর্কে আমি তো প্ৰায় কিছুই জানি না স্যার। যেটুকু জানা ছিল বলেছি।

আপনার পাসওয়ার্ড কি আপনি কাউকে জানিয়েছেন, বা কোথাও লিখে রেখেছিলেন?

না স্যার। আমি সজ্ঞানে অন্তত করিনি।

কিন্তু পাসওয়ার্ড নন্দিনী জানত। সেটা কীভাবে সম্ভব?

আমার কথা যে কেউ বিশ্বাস করছে না তা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার তো কিছুই করার নেই।

আপনার বেডরুম আর শিবাঙ্গীর বেডরুম কি আলাদা?

হ্যাঁ স্যার। পাশাপাশি।

বরাবর কি এরকমই বন্দোবস্ত ছিল? দু’জন দুই ঘরে?

না। আগে আমরা একই বেডরুম আর বেড শেয়ার করতাম। পরে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকায় এই সিস্টেম চালু হয়।

দুই ঘরের মধ্যে একটা লিংকিং দরজা আছে। সেটা কি বন্ধ থাকত?

হ্যাঁ স্যার। শিবাঙ্গীর দিক থেকে বন্ধ থাকত।

আর হলঘরের দিকের দরজাটা?

শিবাঙ্গীর কথা জানি না। তবে আমার বেডরুমের হলঘরের দরজাটা লক করা থাকত না। কারণ, আমার ঘরে তেমন কোনও ভ্যালুয়েবলস নেই। আমার হাতঘড়িটা বেশ দামি, আর মোবাইল ফোনটাও। আর হ্যাঁ, ল্যাপটপ। এগুলোর জন্য দরজা লক করার দরকার ছিল না। বাইরে সিকিউরিটি আছে, ফ্ল্যাটের দরজাও রাতে বন্ধ থাকে।

আমি চুরির কথা ভাবছি না। একটা সেনসিটিভ প্রশ্ন করছি। জবাবটা এড়িয়ে যাবেন না।

আমার লুকোনোর কিছু নেই।

শিবাঙ্গীর সঙ্গে আপনার সেক্সয়াল রিলেশন কি একদম ছিল না?

সেই অর্থে ছিল না বললেই হয়।

তার মানে কখনও সখনও আপনারা মিলিত হতেন কি?

সত্যি কথা বলতে কী, আমার দিক থেকে কোনও উদ্যোগ ছিল না। আপনাকে তো আগেই বলেছি, আমি শিবাঙ্গীকে খুব ভয় পেতাম। ওর সামনে খুব পাপবোধে ভুগতাম। নিজেকে ছোট মনে হত। কিন্তু শিবাঙ্গী কখনও সখনও চলে আসত গভীর রাতে। অ্যান্ড দ্যাট ওয়াজ দ্যাট।

কিন্তু আপনি তো রোজই মদ্যপান করে ঘুমোতেন?

কম বা বেশি এবং প্রায় রোজই। কিন্তু কখনও সখনও বাদও গেছে। আমার দাদুগত বছর অনেক বয়সে মারা যান। হি ওয়াজ মাইমেন্টর। দাদুর মৃত্যুর পর আমি দিন পনেরো এক ফোঁটাও মদ খাইনি। আমি খুব একটা রিলিজিয়াস লোক নই, তবু পুজোটুজোর দিনে আমি মদ খাই না।

আপনার কাজের লোকেরা অবশ্য তাই বলেছে। কিন্তু এবার আমি আপনাকে একটা অস্বস্তিকর প্রশ্ন করতে চাই।

করুন স্যার।

শিবাঙ্গীর সঙ্গে লাস্ট কবে আপনার ফিজিক্যাল রিলেশন হয়েছে?

একটু ভেবে বলতে হবে স্যার। দু’মিনিট।

ভাবুন।

মে মাসের শেষ দিকে বোধহয় চব্বিশ বা পঁচিশ তারিখে।

ভেবে বলছেন তো!

খুব অ্যাকুরেট না হলেও দুটোর মধ্যে যে কোনও একটা দিন। আর তার আগে, মে মাসের ষোলো তারিখে।

শিয়োর?

মোটামুটি শিয়োর।

আপনি কি ড্রাংকেন অবস্থায় এনগেজড হয়েছিলেন?

অন্তত খুব একটা সচেতনও ছিলাম না।

আপনি আপনার স্ত্রীর হোয়ার অ্যাবাউটস সম্পর্কে কতটা খবর রাখেন?

খুব একটা নয়। উই লেড সেপারেট লাইভস।

উনি কি এসে আপনাকে ডেকে ঘুম থেকে তুলতেন?

না। কখন আসত আমি টের পেতাম না। এমব্রেস করত, চুমু খেত। অ্যান্ড…

বুঝেছি। আপনার কখনও সন্দেহ হয়নি যে মহিলাটি শিবাজী নাও হতে পারে?

কী বলছেন স্যার? ইমপসিবল! শিবাঙ্গী ছাড়া অন্য কেউ হতেই পারে না।

উত্তেজিত হবেন না বিষাণবাবু। এই ফ্ল্যাটে আপনি, শিবাঙ্গী আর নন্দিনী ছাড়া আর কেউ কি রাত্রিবাস করে?

জাহ্নবী। ও মেয়েটা শিবাঙ্গীর খুব ন্যাওটা। অল্পবয়স থেকে আছে। শুনছিলাম, শিবাঙ্গী তার বিয়ের ব্যবস্থা করছে। কিন্তু এসবই তো পুলিশ জানে স্যার।

হ্যাঁ। তবু জানার তো শেষ নেই বিষাণবাবু। ফর ইয়োর ইনফর্মেশন মে মাসের চব্বিশ আর পঁচিশ তারিখে শিবাঙ্গী কলকাতায় ছিল না। ব্যাঙ্গালোর গিয়েছিল।

Pages: 1 2 3 4
Pages ( 1 of 4 ): 1 234পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *