জয় একদিন কথায় কথায় জিজ্ঞেস বা স্বগতোক্তি করেছিল
‘দিন শেষে দেখি ছাই হল সব হুতাশে’, একথা
কেন লিখলেন রবীন্দ্রনাথ?
এত পেয়েছেন তিনি, এত সার্থকতা, যখন যা ইচ্ছে করেছে
লিখেছেন–
আমি আলটপকা বলতে গেলাম, তবু অতৃপ্তি আর হাহাকার,
সবসময় অসম্পূর্ণতার বোধ না থাকলে তো লেখা হয় না
কবিতা…
না, এত সাধারণ, এত মামুলি উত্তর দেওয়া যায় না বরং
তেরোশো চার সালে কোনও নিকটতমা ভাসমান তরীর মতন
সরে যাচ্ছে নদীর অন্য পারে, তাই এই সাময়িক দুঃখবিলাস
কেন না, সেদিনই একটু পরে আবার লিখেছিলেন,
‘ভালোবেসে সখী, নিভৃত যতনে… আমার আকুল জীবন মরণ টুটিয়া-লুটিয়া
নিয়ো…’
না, এই উত্তরও ঠিক নয়, এই তথ্যে কোনও সারবস্তু নেই
আমার বলা উচিত ছিল, এটা তুমি সরাসরি রবীন্দ্রনাথকেই
জিজ্ঞেস
করো না কেন, জয়? তিনি তো প্রায়ই তোমার রানাঘাটের
বাড়ির
লেখার টেবিলের পাশে এসে চুপ করে দাঁড়ান
সম্রাটের মতন এবং রামকিঙ্করের গড়া মূর্তির মতন অবশ্যই
এবং প্রত্যেক মহান কবির মতনই তিনি বৈপরীত্যের বরপুত্র,
আঙুলে কলমে কালি ভরা দ্বিধা
তিনি খুব ব্যগ্র হয়ে দেখছেন তোমার নিভৃত মুহূর্তগুলির
বিমূর্ত নির্মাণ, বাইরে ঝড় বাদলের রাতের পাগলামি
শেষ ট্রেন চলে গেছে, তোমার আর কোনও বন্ধু আসবে না
দরজাটা খানিকটা খোলা, টেবিলে জ্বলছে লোডশেডিং-এর
মোম
তোমার ভাই ঘুমিয়ে পড়েছে, নিস্তব্ধতায় পাথর হয়ে গেছে
তোমার
না-ছোঁওয়া ভাত। কপালে একটু একটু জ্বর, তুমি মুখ
ফেরালে, দেখলে
এবার জিজ্ঞেস করো! পারবে? সত্যি পারবে? তোমার ভয়
করবে না?
যেদিন ওই লাইনটি লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, আজ তুমিও যে
সেই একই বয়েসি!