Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ভুতুড়ে কামরা || Narayan Gangopadhyay

ভুতুড়ে কামরা || Narayan Gangopadhyay

ওদের বাড়ির নিমগাছটার তলায় বসে কান চুলকোতে চুলকোতে বলটুদা আমায় জিজ্ঞেস করলে, আচ্ছা প্যালা, ভূত সম্বন্ধে তোর আইডিয়া কী?

আমি বললুম, কোনও আইডিয়া নেই।

শুনে বলটুদা ভীষণ ব্যাজার হল। এত ব্যাজার হল যে খচ করে কানে একটা খোঁচাই খেয়ে গেল। শেষে মুখটাকে এক ভাঁড় রাবড়ির মতো করে বললে, কেন? আইডিয়া নেই কেন?

আমি বললুম, কী করে থাকবে? কখনও দেখিনি তো।

–শুনে-টুনেও কিছু মনে হয় না?

–একদম না। লোকে নানা রকম ডেসক্রিপশন দেয়। কেউ বলে, খামকা একটা কাটামুণ্ডু ঘ্যাঁচাৎ করে কামড়াতে এল, কেউ বলে সাদা কাপড় পরে রাত দুপুরে হাতের ওপর হেঁটে যাচ্ছে, কেউ বলে আমগাছে এক পা আর জামগাছে আর এক পা দিয়ে–

বলটুদা বললে, বাজে বকিসনি। ধর, এই নিমগাছটায় একটা ভূত আছে–

এই দিন-দুপুরেই দারুণ চমকে আমি একবার নিমগাছটার দিকে চেয়ে দেখলুম। না, ভূত-টুত কিছু নেই, কেবল ঠিক আমার মাথার ওপরেই একটা কাক বসে রয়েছে। কাককে আদৌ বিশ্বাস নেই, একটু সরে বসলুম তক্ষুনি।

বলটুদাকে বললুম, তোমার নিমগাছের ভূতকে খামকা আমি ধরতে যাব কেন? কী দরকার আমার? ভূত ধরা-টা আমি আদৌ পছন্দ করি না–তোমাকে সাফ বলে দিচ্ছি।

কিন্তু মনে কর, ভূত যদি তোকেই ধরে? মানে, তোকেই ধরতে পছন্দ করে যদি?

আমি দস্তুরমতো ঘাবড়ে গিয়ে বললুম, বলটুদা, এবার আমি বাড়ি চলে যাব। বলটুদা খপ করে আমার হাত চেপে ধরে টেনে বসালে। বললে, আহা, যাচ্ছিস কেন? বললুম বলেই কি সত্যি সত্যিই ভূতে ধরছে নাকি তোকে? মানে, আমি সেদিন ভূতের পাল্লায় পড়েছিলুম কিনা–সেই ব্যাপারটাই তোকে বলব।

আমি বললুম, তুমি আবার কবে থেকে আমাদের টেনিদার মতো গল্পবাগীশ হলে বলটুদা?

টেনিদার নাম শুনেই বলটুদা জ্বলে গেল। বললে, টেনি। তার কথা আর বলিসনি। তোদের দলের ওই সদারটা এক নম্বরের গুলবাজ–খালি বানিয়ে বানিয়ে যা তা গল্প বলে। সেদিন আবার আমাকে দিব্যি ভুজুং-ভাজুং দিয়ে দি গ্রেট আবার খাবো রেস্তোরাঁয় আড়াই টাকা খেয়ে গেল।-নাকটাকে কী রকম যেন তেলে ভাজা সিঙাড়ার মতো করে বলটুদা বললে, ছোঃ ছোঃ! যাবার আগে আমার পিঠ চাপড়ে কী সব মেফিস্টোফিলিস-টিসিস বলেও গেল–কিছু বুঝতে পারলুম না। রামো—রামো–টেনি আবার একটা মানুষ।

বুঝতে পারলুম, টেনিদা বলটুদার প্রাণে দারুণ দাগা দিয়ে গেছে, আড়াই টাকার শোক আর বলটুদা ভুলতে পারছে না। আমি সান্ত্বনা দিয়ে বললুম, টেনিদার কথা ছেড়ে দাও, ও ওই রকম। তোমার ভূতের গল্পটাই বলল।

–গল্প? আমি বানিয়ে বলার মধ্যে নেই। যা বলব, একদম সত্য ঘটনা।

–আচ্ছা, বলতে থাকো।

তখন বলটুদা আর একবার বেশ করে কান চুলকে নিলে, তারপর বলতে থাকল।–

আমার বড়দির বড় মেয়ে–দিল্লিতে জমেছে বলে যার নাম রাজধানী, ছোটবেলায় যাকে আমি ভুল করে ‘দাদখানি’ বলে ডাকতুম, আর বড়দি যাকে বলত ‘ধানী লঙ্কা’, তার বিয়ে হয়েছে এক কোলিয়ারির ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে। এবার পুজোর ছুটিতে আমি দেখানে বেড়াতে গিয়েছিলুম।

দিন দশেক বেশ আরামে থেকে, খুব খেয়ে দেয়ে, ওদের মটর গাড়িতে অনেক বেড়িয়ে-টেড়িয়ে কলকাতায় ফিরে আসছিলুম। সন্ধের পরে গাড়ি বদলাতে হল ছোট একটা জংশন স্টেশনে। ট্রেনে বেজায় ভিড়, শেষে দেখি, পেছন দিকের একটা ছোট সেকেন্ড ক্লাস কামরা থেকে সব যাত্রী হুড়মুড় করে নেমে যাচ্ছে। দেখে খুব মজা লাগল, আমি ফাঁকা গাড়িটায় টুপ করে উঠে বসলুম। সতরঞ্চি-জড়ানো ছোট বিছানাটা পেতে, মাথার কাছে সুটকেসটা রেখে বেশ নিশ্চিন্ত হয়ে বসে পড়া গেল।

ট্রেন আরও প্রায় কুড়ি মিনিট এখানে থাকবে, আমি বসে বসে দেখতে লাগলুম। অন্য সব গাড়িতে লোক উঠছে-নামছে, এদিকে কেউ আর আসছে না। বোধহয় পেছন দিকের গাড়ি বলেই এটার ওপর কারও নজর নেই। আমার ভীষণ ভালো লাগছিল। একটা রেলের কামরায় একলা যেতে ভারি মজা লাগে নিজেকে বেশ লাট-বেলাটের মতো মনে হয়।

এর মধ্যে জন দুই মাড়োয়ারী যাত্রী অনেক লাটবহর নিয়ে আমার গাড়ির দিকেই তাক করে আসছে বলে বোধ হল। ভাবলুম–এই রে, এসে ঢুকল বুঝি! হঠাৎ একজন লোক তাদের কী যেন বললে, অমনি তারা সঙ্গে সঙ্গে উলটো দিকে ছুটল। আমার স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ল বটে, কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলুম না। তারপরেই মনে হল, ওদের বোধ হয় থার্ড ক্লাসের টিকিট ছিল, ওই লোকটা বলে দিয়েছে এটা সেকেন্ড ক্লাস, সেই জন্যেই সরে পড়ল।

যাই হোক, বেশি ভেবেচিন্তে লাভ নেই। গাড়ি ছাড়তে আরও কিছু দেরি আছে, কিন্তু আমি আর বসতে পারছিলুম না। একে তো আসবার আগে রাজধানী বিস্তর খাইয়েছে, বলেছে, ‘ছোট মামা, রেলে খালি পেটে যেতে নেই, শরীর খারাপ করে।’ আমিও তাই শুনে লচিমাংস-মিষ্টিতে গলা পর্যন্ত ঠেসে নিয়েছি, তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেল, পেটে এখনও দেড় মন ভার। তায় রাত প্রায় সাড়ে দশটা বাজে, দারুণ ঘুম পাচ্ছিল। গাড়িতে যে ওঠে উঠুক, আমি তো আপাতত লম্বা হই।

যা ভাবা তাই করা। আমি শুয়ে পড়লুম। গাড়ি ছাড়তে বোধহয় মিনিট দশেক দেরি ছিল তখনও, কিন্তু আমার ঘুমিয়ে পড়তে তিন মিনিটও লাগল না। আর সেই ঘুমের ভেতরেই টের পেলুম ট্রেনের হুইসেল বাজছে, কামরাটা নড়তে আরম্ভ করেছে। প্রাণপণে চেষ্টায় আধখানা চোখ খুলে দেখলুম অন্য যাত্রী আর কেউ ওঠেনি। নিশ্চিন্তে ঘুমানো যাক তবে।

নিশ্চিন্তেই আমি ঘুমোলুম।

রাত তখন কত হয়েছে জানি না, হঠাৎ আমার চটকা ভাঙল। ভীষণ মশা কামড়াচ্ছে আর কী রকম একটা অদ্ভুত গন্ধ নাকে লাগছে। চমকে চেয়ে দেখি, গাড়িটা দাঁড়িয়ে রয়েছে। কামরায় নিতল অন্ধকার–গোটা চারেক আলো জ্বলছিল, পাখা ঘুরছিল, কিন্তু এখন আলো নেই, পাখাও চলছে না।

ব্যাপারটা কী? বাইরে তাকালুম-কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না, শুধু কালো পাঁচিলের মতো থমথমে অন্ধকার। সে-অন্ধকারে একটাও তারা নেই, জোনাকি নেই, কিছু নেই। জানলার অন্য দিকে তাকালুম, ঠিক এক দৃশ্য। যেন রাতারাতি গাড়িটাকে কেউ একটা আলকাতরার সমুদ্রের ভেতর তলিয়ে দিয়েছে। তারপর মনে হল, কেবল আলকাতরা নয়, ধোঁয়ার মতো কী যেন কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে তার ভেতর–নিশ্চয় কুয়াশা।

ব্যাপারটা কী?

রাত যে কখনও এত অন্ধকার হয়, সে আমি স্বপ্নেও জানতুম না। আকাশে যদি ঘন কালো মেঘ দেখা দেয়, তার ভেতরেও অন্তত আবছা একটা আলোর আভাস থাকে, মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকায়। তাও যদি না হয়, লাইনের ধারে ঝোপে-জঙ্গলে অন্তত দুটো একটা জোনাকির ফুলকি জ্বলে। এমন কাণ্ড তো কখনও দেখিনি।

ট্রেন কি কোনও স্টেশনে থেমে আছে? তা হলে আলো কই? স্টেশনের বাইরে লাইন-ক্লিয়ার না পেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে? তা হলে সিগন্যালের বাতিও তো দেখা যাবে। কোথায় সেসব?

এদিকে একটা অদ্ভুত গন্ধ পাক খাচ্ছে আমাকে ঘিরে ঘিরে। আর কী নিদারুণভাবে যে মশা কামড়াচ্ছে–সে আর তোকে কী বলব প্যালা! তার ওপর দুর্দান্ত গরম! আমি বসে বসে ঘামতে লাগলুম।

বেঞ্চির ওপর পা ছড়িয়ে বসেছিলুম, মশাদের যত নজর দেখছি পায়ের ওপরেই। শেষে জেরবার হয়ে যেই একটা চাঁটি হাঁকড়েছি-তোকে কী বলব প্যালা–সেটা আমার পায়ে লাগল না!

খরখরে লোমওলা নরম কী একটা জিনিসের ওপর ঘপাৎ করে গিয়ে চড়টা পড়ল। ঘুৎ করে কী একটা বিটকেল আওয়াজ হল, কালো মতন কে যেন শুন্যে লাফিয়ে উঠল, আমার চোখের সামনে দুটো সবুজ আগুন দপদপ করে উঠল, তারপরেই কী যেন ধপাৎ করে বাইরে পড়ে গেল।

আমি বুঝতে পারলুম, কামরার দরজাটা খোলা!

উঠে বন্ধ করব কি, হাত-পা আমার আতঙ্কে ঠাণ্ডা হয়ে এল! কে এই কালো জীব–কী সে? ট্রেনের ভেতরে সে আমার পায়ের কাছে কোত্থেকে এল, কেনই বা চড় খেয়ে খুঁৎ করে লাফিয়ে উঠল, আর লাফিয়েই বা গেল কোথায়? অমন অস্বাভাবিক দুটো সবুজ চোখই বা কেন–আর সে চোখে কোন্ হিংস্র প্রতিহিংসা লুকিয়ে ছিল?

তবে কি এ সব ভৌতিক ব্যাপার?

ব্যস, মনে করতেই আমার মাথার চুল খাড়া হয়ে গেল। এইবার বুঝতে পারলুম, গাড়ির এই কামরটা নিশ্চয় ভুতুড়ে। তাই জংশন স্টেশনে লোকগুলো সব হুড়মুড়িয়ে এই গাড়ি থেকে নেমে পালিয়েছে, তাই মাড়োয়ারী দুজন এ-গাড়িতে উঠতে এসেও অমন ঊর্ধ্বশ্বাসে উলটো দিকে দৌড় দিয়েছে।

আর আমি এমন নিরেট গর্দভ যে এসব দেখেও কিছু বুঝতে পারিনি! এই মারাত্মক ভুতুড়ে কম্পার্টমেন্টে উঠে নিশ্চিন্তে ঘুম লাগিয়েছি!

কী করব এখন? নেমে পড়ব গাড়ি থেকে? তারপর যেদিকে চোখ যায়, টেনে দৌড় লাগাব?

কিন্তু এই অন্ধকারে চোখ আর কোন্ দিকে যাবে? দিগবিদিক দূরে যাক, নিজের হাত-পা পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি না যে। আর পালাব? চোর-ডাকাতের হাত থেকে পালানো যায়, পুলিশের হাত থেকেও হয়তো যায়, কিন্তু ভূতের পাল্লা থেকে? খপ করে ত্রিশ গজ লম্বা একখানা হাত বাড়িয়ে ঘাড়টি টেনে ধরবে।

হঠাৎ টপ-টপ-টপাৎ। মাথার ওপর কয়েক ফোঁটা ঠাণ্ডা জল পড়ল। তারপরেই বাইরে বিটকেল ছারাৎ ছারাৎ আওয়াজ। ঠিক মনে হল, কে যেন একটা লম্বা পাইপ দিয়ে জল ছুঁড়ছে।

শুধু মনে হওয়া নয়-ঘারাৎ করে কোত্থেকে একরাশ বিচ্ছিরি জল আমার নাকে মুখে এসে আছড়ে পড়ল।

–বাপরে, গেছি গেছি বলে আমি জানলা বন্ধ করে ফেললুম। সমানে সেই আওয়াজটা চলতে লাগল-মনে হল, সেই অথই অন্ধকারে পেত্নীর বাচ্চা আলকা গোলা নিয়ে গেলি খেলছে।

আমি বসে বসে রঘুপতি রাঘব-টাঘব গাইতে চেষ্টা করলুম। গলা দিয়ে গান বেরুল না, খালি বঁ-বুঁ করে এমন যাচ্ছেতাই আওয়াজ বেরুতে লাগল যে আঁতকে উঠে চুপ করে গেলুম।

ভয়ে কাঠ হয়ে কতক্ষণ বসে আছি জানি না, জলের সেই ছারছ্যারানি কখন থেমে গেছে তা-ও টের পাইনি। আচমকা–সেই কালিঢালা অন্ধকার আর সাদা কুয়াশার ভেতরে একা লাল আলো। বিশ্বাস করবিনি প্যালা, শুধুই একটা লাল আলো। ঠিক গাড়িটার দিকে এগিয়ে আসছে–জানলার কাঁচের মধ্য দিয়ে আমি স্পষ্ট দেখলাম। আমার মনে হল, একচোখা যেন একটা দৈত্য হাঁ করে চলে আসছে আমার দিকে।

এতক্ষণ চুপ করেই দিলুম, এইবার আমি বাপ্ রে মা-রে করে একটা আকাশফাটানো চিৎকার ছাড়লুম। আর লাল আলোটা যেন শূন্যের ভেতরে থমকে দাঁড়াল-তারপরেই ধাঁ করে কোন দিকে যেন মিলিয়ে গেল।

আমার আর চোখ মেলে চেয়ে থাকবার সাহস ছিল না। বেশ বুঝতে পারছিলুম, আজ এই ভুতুড়ে রেলগাড়ির কামরাতেই অপঘাতে আমার প্রাণটা যাবে। একবার গলায় হাত দিয়ে পৈতেটা খুঁজে দেখলুম–কিন্তু তাকে তো সেই সাত বছর আগে জামার সঙ্গে ধোপাবাড়িতে চালান করে দিয়েছি, এখন আর কোথায় পাওয়া যাবে।

বেশ বুঝতে পারলুম, আজ আমার বারোটা বেজে গেল। আমাকে নিয়ে এই ভুতুড়ে কামরাটা যে কোন নরকে গিয়ে হাজির হয়েছে জানি না, কিন্তু এরপর একটার পর একটা বিভীষিকা আসতে থাকবে, আমার রক্ত একদম জমাট বেঁধে যাবে, তারপরেই সোজা হার্টফেল। বাড়িতে মা বাবার কাছে আর পৌঁছুতে পারব না–এখন থেকেই সোজা ভূতের। দলে ভর্তি হয়ে যাব।

চোখ বুজে মনে মনে রাম রাম জপ করছি, এমন সময়—

বাজখাই গলায় কে বললে, ইউ রোগ!

আঁতকে লাফিয়ে উঠলুম। অন্ধকার জায়গায় কোত্থেকে ঝলমলে আলো। আর সেই আলোয় ইয়া ঢ্যাঙা এক সাহেব দাঁড়িয়ে। আবার বাজখাই স্বরে বললে, ইউ রোগ! তুম্ কোন্ হ্যাঁয়?

ওরে বাপরে সাহেব ভূত! আমার রাম নাম গিয়ে ব্রহ্মরঞ্জে পৌঁছুল। আবার একখানা মোক্ষম চিৎকার ছেড়ে আমি গাড়ির মেঝেতে চিৎপাত হয়ে পড়লুম। বিশ্বসংসার মুছে গেল!

এই পর্যন্ত বলে বলটুদা থামল। আমি আকুল হয়ে বললুম, তারপর?

–তারপর আর কী? ভীষণ যা-তা ব্যাপার।

—মানে?

–মানে আবার কী? কামরাটা খারাপ, জংশন স্টেশনেই সেই জন্যে ট্রেন থেকে কেটে নিয়ে শেডের মধ্যে ঢুকিয়েছিল আমাকে সুষ্ঠু। ঘুমের ঘোরে কিচ্ছু টের পাইনি আমি। জুত পেয়ে একটা কালো কুকুর আমার বিছানায় এসে উঠেছিল, গাড়ি ধোয়ার জল ছরছর করে আমার মুখে এসে পড়েছিল, লাল লণ্ঠন হাতে একটা কুলি এদিকে আসছিল, আমার চিৎকারে ভয় পেয়ে ডেকে এনেছিল ওদের ইন্সপেক্টারকে। আর তাকে দেখেই আমার দাঁতকপাটি লেগে গিয়েছিল।

আমি বললুম, অ্যাাঁ!

বলটুদা বললে, হ্যাঁ-হ্যাঁ। আমি তোদের টেনিদার মতো বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলি না, এ হল রিয়্যাল ভূতের ব্যাপার। আচ্ছা, এবারে বাড়ি যেতে পারিস।

এই বলে বলটুদা উঠে পড়ল। হনহন করে নিজেই হেঁটে চলে গেল আলেকজান্ডারের ভঙ্গিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress