চাকরির দরখাস্ত হাতে যে মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে সলজ্জ শরীরে
তাকে বসতেও বলা হয়নি
ক্ষমতার ধ্বজাধারী ব্যক্তিটি এমনই ব্যস্ত, চোখ ঘোরাচ্ছেন অনবরত
তাঁর আসলে পাঁচ সাতটা মাথা, বারো চোদ্দটা হাত
হৃদয় আধখানা
ঘর ভর্তি অনেক মানুষ, টাইপ রাইটারের শব্দ
বুক পকেটে টেলিফোন
টেবিলের ওপর বিমানের টিকিট, খালি পা, তাঁর জুতো পালিশ হচ্ছে
তিনি মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছেন না
ওর হাতের কাগজটা দেখারও দরকার নেই, তিনি জানেন—
চাকরি খোলামকুচি নয় যে যত ইচ্ছে বিলোনো যায়
তা ছাড়া রাশি রাশি সুপারিশের ধাক্কা
যাকে কিছু দিতে পারবেন না, তার সঙ্গে কথা বলারই বা দরকার কী
এমনিতেই মিথ্যে বলতে বলতে মুখে ফেনা উঠে যাচ্ছে
তিনি মাঝে মাঝে গোপনে কুঁচকি চুলকোচ্ছেন
আর লাল টেলিফোনে অনুবাদ করছেন হাসি ঠাট্টা
মেয়েটির ছিপছিপে তনুতে নীল শাড়ি, চুল খোলা
আভরণহীনা, চোখের কোণে শুকনো জলের দাগ
সে এক সময় বলল, আমি যাই?
কয়েক পলকের জন্য চোখাচোখি, তিনি চমকে উঠলেন
কে এই ছদ্মবেশিনী? যেন এক ঝলক যৌবনের দ্যুতি
চিরকালের মতন পরিত্যাগ করে যাচ্ছে তাঁকে
এই ব্যস্ততার পূতিগন্ধময় আবর্জনায় নির্বাসন দণ্ড আজীবন
তিনি হাঁটু গেড়ে আর্ত গলায় বলতে চাইলেন
যেও না, দাঁড়াও, আমি অকিঞ্চন, কৃপাজীবী
আমাকে দেবে তোমার করুণার এক কণা?
বলা হল না, পিছন ফিরে মেয়েটি চলে গেছে দরজার কাছে
বিপদ সঙ্কেতের মতন বেজে উঠল ঝনঝন শব্দে আবার টেলিফোন…