এসো, এবার সবাই নিজের নিজের দরজায় ঢুকে যাই
একজন রাত জেগে বসে রইল বাইরে
এসো, সকাল হয়েছে, কত রকম লাইনে দাঁড়াতে হবে
একজন সরে গেল আড়ালে
এসো, এবার একসঙ্গে হাত বজ্রমুষ্টি করি
শুধু একজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না
সেই একজনের জন্য এত ব্যাকুলতা, এত চোখ-ছোটাছুটি
সে কোথায়, সে কেন অদৃশ্য হয়ে গেল
যেন সব কিছু থেমে যাবে
তাকে আগে চাই, ধরে আনন, সবার সামনে দাঁড় করাও
অথবা কাঠগড়ায়
নইলে যে কারুর ঘুম আসছে না, সব লাইন শুনশান
একজন নেই, তাই কারুরই কাজে মন নেই
হঠাৎ বৃষ্টি নেমে পায়রার দঙ্গলের মতন সবকিছু ছত্রভঙ্গ
আকাশ-বাতাস, গলি-খুঁজি তাকে লুকোতে পারবে?
অথচ কোনও চেনা বাড়িতে সে নেই, সমস্ত অচেনা বাড়ির
জানলা খোলা
উল্টো-সোজা মানুষেরা হাত তুলে বলছে
আমি নই, আমি নই
কেউ তার মুখ মনে রাখেনি, এমনই মনে-না-রাখার মতন মুখ
কেউ তার নাম মনে রাখেনি, এমনই মনে-না-রাখার মতন নাম
যদিও সে ছিল চায়ের দোকানে, পার্কে, তোমার আমার
পাশে পাশে, কখনও একটু থেমে, জুতোর ফিতে বাঁধতে
দেরি করে
সে কোথায় পালাল, তাকে না পেলে যে সবকিছু ব্যর্থ!
সে এখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে এক ধু ধু দিকশূন্যপুরের
দিকে
কোন্ দিক সে জানে না, তবু ওই দিকেই যেন তাকে যেতে
হবে
গাছের ছায়া হাতছানি দিচ্ছে তাকে
দু’ একবার থমকে গিয়ে, নষ্টচন্দ্রের শৈশবের চোখে তাকিয়েও
সে থামছে না
তার ভয়বোধ নেই, তবু সে হারিয়ে যাচ্ছে
বিশ্বাসের সংঘাত নেই, তবু সে নিঃসঙ্গ
সে অনেকের হাত ধরেছে, কিন্তু পায়ে পা মেলাতে পারেনি
সে মিলিয়ে যাচ্ছে অনেক দূরে
খাল পেরুবার ছোট্ট একটা সাঁকো
তার নীচে খুব মায়াময় একটুকরো আকাশ
বাঁশঝাড়ের সরসর শব্দে আবহমানের বাল্যকাল
টনটনে দুঃখময় ভালোবাসার মতন
একটা নদীর বাঁক
বাতাস ওড়াচ্ছে কাশফুল, অথবা কাশফুল
উড়তে চাইছে বাতাসে
যেমন একদলা মাটি পুতুল হতে চেয়েছিল
পুতুলটাও হঠাৎ ফিরে যেতে চায় মাটি-জন্মে
ফল ফিরে যেতে চায় ফুলে, নর্তকী ফিরে যেতে চায়
মাতৃগর্ভে
ইস্কুলমাস্টাররা ছাত্রজীবনে, পিতার ছবি
তার সন্তানের মুখে
সে কোথায় ফিরে যেতে চায়, তালকানা, বর্ণকানা
জন্মান্ধের মতন?
যেখানেই যাক না, ছেড়ে দাও না ওকে
একজনই তো মোটে, এলেবেলে, কিছু না
ও তো আলাদা কণ্ঠস্বর তোলেনি
ফিসফিসিয়ে ও বলেনি কিছু
সন্ধে কিংবা রাত্রিভভার, কিছুতেই কিছু যায় আসে না
ওকে মন থেকে হেঁটে ফেলে দাও
তলোয়ারের মতন বিদ্যুৎ অথবা যুঁই সমারোহের মতন
জ্যোৎস্না
এসো, আমরা এইসব দেখি, শুরু হোক কর্মযজ্ঞ
মাঠের মধ্য দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে একজন মানুষ
চরমতম একলা, তার পায়ে বোধহয় কাঁটা বিঁধেছে
সে হাঁটছে, একবারও পেছন ফিরে না তাকিয়ে
তবু কেন হাজার হাজার নারী-পুরুষ হ্যাংলার মতন
চেয়ে আছে তার দিকে
সুদূরে প্রায় মিলিয়ে যাওয়া বিন্দুটি থেকে ফেরাতে পারছে না,
দৃষ্টি
কেন বাতাস এত দীর্ঘশ্বাসময়
কেন আর সব কিছু থেমে আছে?