Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কুসুমের গল্প || Sunil Gangopadhyay

কুসুমের গল্প || Sunil Gangopadhyay

মাদারিহাটের চা-বাগানের কম্পাউন্ডার বাবুর মেয়ে, তার ডাকনাম কুসুম
চেহারা এমন আহা মরি কিছু নয়
বয়েসের তুলনায় বড়সড়, নাকটা একটু চাপা
শ্রাবণের মেঘের মতন গায়ের রং
তার চোখ দুটিতে পাহাড়ের লুকোনো ঝর্নার চঞ্চলতা
গান জানে না, কবিতা পড়ে না, শুধু কী করে যেন একটা নাচ শিখেছে
ইস্কুলের অ্যানুয়াল ফাংশানে ক্লাস টেনের সেই কুসুম
আর দুটি মেয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে নাচতে নাচতে
তালে ভুল করল তিনবার
ফিক করে হেসে ফেলল লজ্জায়
কী আশ্চর্য, তবু উত্তরবঙ্গে বেড়াতে আসা
এই বাগানের মালিকের ছেলের বন্ধু উজ্জ্বল নামে যুবকটি
মুগ্ধ হয়ে গেল তাকে দেখে
নাচ নয়, কুসুমের হাসিটাই বেশি পছন্দ হয়েছিল তার
শুধু কম্পিউটার দক্ষ নয়, সম্প্রতি পিতৃবিয়োগের পর
সে হরিয়ানার একটি কারখানার উত্তরাধিকারী হয়েছে
আপত্তির তো প্রশ্নই ওঠে না, এ যে অভাবনীয় সৌভাগ্য
তিনমাসের মধ্যে বিয়ে, কুসুমকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হল
দিল্লির উপান্তে

কলেজে ভর্তি করানো হল কুসুমকে, তার উচ্চারণে
বড় বেশি ভুল
নাচ শিখতে পাঠানো হল সোনাল মানসিং-এর
কাছে সোনাল তাকে প্রত্যাখ্যান করলেন তিন সপ্তাহ বাদে
তার পায়ে ছন্দ নেই
দেখতে দেখতে কেটে গেল চার বছর
উজ্জ্বল চলে গেল অন্য বাগানের ফুলের দিকে
তারপর পশ্চিম গোলার্ধের স্বর্ণ মরীচিকার হাতছানিতে।
হরিয়ানার কারখানার কোয়ার্টারের দোতলায় থাকে কুসুম
এমনি কোনো অসুবিধে নেই, টিভির বেলায় কাটে সারাদিন
আর প্রায় সর্বক্ষণ আঙুলে চাটে তেঁতুলের আচার
সেইজন্যই সে চিঠি লিখতে পারে না
এক এক রাতে সে উঠে আসে ছাদে
এখানে চা-বাগানের সবুজ ঢেউ নেই
দিগন্তে নেই পাহাড়ের রেখা
শুধু শুকনো ঊষর প্রান্তর, ডাঙা জমি আর কারখানার চিমনি
মাদারিহাট থেকে বোঁটা ছিঁড়ে আনা কুসুম কিছুতেই শুকিয়ে
ঝরে যেতে রাজি নয়
সোনাল মানসিং যাই বলুন, সে এখনো একা একা নাচে
আকাশের নীচে
মাঝে মাঝে একটু আধটু তালভঙ্গ হয় হোক, কেউ তো দেখবে না
স্কুলের ফাংশনে আর যে-দুটি মেয়ে নেচেছিল তারা এখন
কোথায়, কে জানে
তাদের নাম অনসূয়া আর প্রিয়ংবদা নয়
কিন্তু কুসুমের বাবা-মা শখ করে তার ভালো নাম রেখেছিলেন
শকুন্তলা
নিজের তলপেটে হাত রাখে সে আনমনে
টের পায় একটু একটু নড়াচড়া
আসছে, একজন আসছে, সে খেলা করবে সিংহশিশুর সঙ্গে

এখনো অনেক কিছু ঘটবে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress