আমার বাবার ঠাকুরদাদা এক শুক্কুরবারে
হঠাৎ যেন বদলে গেলেন বসে নদীর ধারে।
আমার বাবার ঠাকুরদাদা দারুণ স্বাস্থ্যবান
একটি ধামা মুড়ির সঙ্গে দশটা লঙ্কা খান।
গায়ের রংটি কালো হলেও রাগলে পরেই লাল
তন্ত্র মন্ত্র জানেন অনেক, নাচান কঙ্কাল!
সেই তিনি এক দুপুরবেলা ঝামরে মাথার চুল
বললেন, ওঃ, জীবনখানাই মস্ত বড় ভুল!
একই বাড়ি, একই উঠোন, মানুষজনও চেনা
প্রত্যেকদিন সব-কিছু এক, আর তো ভাল্লাগে না!
শুয়ে শুয়ে দেয়াল দেখা, দেয়াল নয়তো খাঁচা
খাইদাই আর বগল বাজাই, এর নাম কি বাঁচা?
এই না বলে নৌকো খুলে জোয়ার-জলে ভেসে
আমার বাবার ঠাকুরদাদা গেলেন নিরুদ্দেশে।
কোথায় গেলেন, কোথায় গেলেন, কেউ জানে না আর,
সবাই বলে গেছেন তিনি তিন সাগরের পার!
নতুন কোনো দ্বীপের মধ্যে বানিয়ে নিলেন দেশ
তিনিই রাজা, তিনিই প্রজা, একলা আছেন বেশ।
কেউ বা বলে গেছেন তিনি কিউবা, হনুলুলু
এখন নতুন নাম হয়েছে কার্ভালো কোভুলু!
এক পাদ্রি ছবি দেখেই বললেন, কে ইনি?
সুবিখ্যাত ভূপর্যটক বিলক্ষণ চিনি!
রাশিয়াতেই দেখেছি শেষ, মাথায় পাগড়ি বাঁধা
লেনিন-সাহেব আদর করে ডাকেন ‘ঠাকুরদাদা’!
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে যখন পৃথিবী খান খান
তিনিই হিটলারের গোঁফে মেরেছিলেন টান!
বৃদ্ধ তিনি হননি মোটেই মন্ত্র-তন্ত্র বলে
অমর হয়ে আজও ঘোরেন সারা ভূমণ্ডলে।
এমনটিও হতেই পারে হঠাৎ মনের সাধে
তিনিই প্রথম পা দিয়েছেন মঙ্গলে আর চাঁদে!
স্বপ্নে আমি দেখেছি সেই আজব মানুষটিকে
কেমন যেন অবাক চোখে তাকান আমার দিকে
ফিসফিসিয়ে বলেন, ওরে ঘরবন্দী থোকা
আরাম করে ব্যারাম করিস, এমন তোরা বোকা?
সারা জীবন কাটিয়ে যাবি নরম বিছানায়?
এই দুনিয়া দেখবি যদি আমার সঙ্গে আয়!
লাফিয়ে উঠি, কেউ নেই তো, শুধুই অন্ধকার,
বাতাসে তবু ফিসফিসানি শুনি বারংবার।
সেদিন থেকে বনে-পাহাড়ে নানান নদীর বাঁকে
পায়ের তলায় সর্ষে আমার, খুঁজে বেড়াই তাঁকে।