পড়িতেছিলাম গ্রন্থ বসিয়া একেলা
সঙ্গীহীন প্রবাসের শূন্য সন্ধ্যাবেলা
করিবারে পরিপূর্ণ । পণ্ডিতের লেখা
সমালোচনার তত্ত্ব ; পড়ে হয় শেখা
সৌন্দর্য কাহারে বলে — আছে কী কী বীজ
কবিত্বকলায় ; শেলি , গেটে , কোল্রীজ
কার কোন্ শ্রেণী । পড়ি পড়ি বহুক্ষণ
তাপিয়া উঠিল শির , শ্রান্ত হল মন ,
মনে হল সব মিথ্যা , কবিত্ব কল্পনা
সৌন্দর্য সুরুচি রস সকলি জল্পনা
লিপিবণিকের — অন্ধ গ্রন্থকীটগণ
বহু বর্ষ ধরি শুধু করিছে রচন
শব্দমরীচিকাজাল , আকাশের ‘ পরে
অকর্ম আলস্যাবেশে দুলিবার তরে
দীর্ঘ রাত্রিদিন ।
অবশেষে শ্রান্তি মানি
তন্দ্রাতুর চোখে , বন্ধ করি গ্রন্থখানি
ঘড়িতে দেখিনু চাহি দ্বিপ্রহর রাতি ,
চমকি আসন ছাড়ি নিবাইনু বাতি ।
যেমন নিবিল আলো , উচ্ছ্বসিত স্রোতে
মুক্ত দ্বারে , বাতায়নে , চতুর্দিক হতে
চকিতে পড়িল কক্ষে বক্ষে চক্ষে আসি
ত্রিভুবনবিপ্লাবিনী মৌন সুধাহাসি ।
হে সুন্দরী , হে প্রেয়সী , হে পূর্ণপূর্ণিমা ,
অনন্তের অন্তরশায়িনী , নাহি সীমা
তব রহস্যের । এ কী মিষ্ট পরিহাসে
সংশয়ীর শুষ্ক চিত্ত সৌন্দর্য-উচ্ছ্বাসে
মুহূর্তে ডুবালে । কখন দুয়ারে এসে
মুখানি বাড়ায়ে , অভিসারিকার বেশে
আছিলে দাঁড়ায়ে , এক প্রান্তে , সুররানী ,
সুদূর নক্ষত্র হতে সাথে করে আনি
বিশ্বভরা নীরবতা । আমি গৃহকোণে
তর্কজালবিজড়িত ঘন বাক্যবনে
শুষ্কপত্রপরিকীর্ণ অক্ষরের পথে
একাকী ভ্রমিতেছিনু শূন্য মনোরথে
তোমারি সন্ধানে । উদ্ভ্রান্ত এ ভকতেরে
এতক্ষণ ঘুরাইলে ছলনার ফেরে ।
কী জানি কেমন করে লুকায়ে দাঁড়ালে
একটি ক্ষণিক ক্ষুদ্র দীপের আড়ালে
হে বিশ্বব্যাপিনী লক্ষ্মী । মুগ্ধ কর্ণপুটে
গ্রন্থ হইতে গুটিকত বৃথা বাক্য উঠে
আচ্ছন্ন করিয়াছিল , কেমনে না জানি ,
লোকলোকান্তরপূর্ণ তব মৌনবাণী ।