দিনশেষ হয়ে এল , আঁধারিল ধরণী ,
আর বেয়ে কাজ নাই তরণী ।
‘ হ্যাঁগো এ কাদের দেশে
বিদেশী নামিনু এসে ‘
তাহারে শুধানু হেসে যেমনি —
অমনি কথা না বলি
ভরা ঘট ছলছলি
নতমুখে গেল চলি তরুণী ।
এ ঘাটে বাঁধিব মোর তরণী ।
নামিছে নীরব ছায়া ঘনবনশয়নে ,
এ দেশ লেগেছে ভালো নয়নে ।
স্থির জলে নাহি সাড়া ,
পাতাগুলি গতিহারা ,
পাখি যত ঘুমে সারা কাননে —
শুধু এ সোনার সাঁঝে
বিজনে পথের মাঝে
কলস কাঁদিয়া বাজে কাঁকনে ।
এ দেশ লেগেছে ভালো নয়নে ।
ঝলিছে মেঘের আলো কনকের ত্রিশূলে ,
দেউটি জ্বলিছে দূরে দেউলে ।
শ্বেত পাথরেতে গড়া
পথখানি ছায়া-করা
ছেয়ে গেছে ঝরে-পড়া বকুলে ।
সারি সারি নিকেতন ,
বেড়া-দেওয়া উপবন ,
দেখে পথিকের মন আকুলে ।
দেউটি জ্বলিছে দূরে দেউলে ।
রাজার প্রাসাদ হতে অতিদূর বাতাসে
ভাসিছে পূরবীগীতি আকাশে ।
ধরণী সমুখপানে
চলে গেছে কোন্খানে ,
পরান কেন কে জানে উদাসে ।
ভালো নাহি লাগে আর
আসা-যাওয়া বারবার
বহুদূর দুরাশার প্রবাসে ।
পূরবী রাগিণী বাজে আকাশে ।
কাননে প্রাসাদচূড়ে নেমে আসে রজনী ,
আর বেয়ে কাজ নাই তরণী ।
যদি কোথা খুঁজে পাই
মাথা রাখিবার ঠাঁই
বেচাকেনা ফেলে যাই এখনি —
যেখানে পথের বাঁকে
গেল চলি নত আঁখে
ভরা ঘট লয়ে কাঁখে তরুণী ।
এই ঘাটে বাঁধো মোর তরণী ।