পূজার আগে হঠাৎ এই
গণেশ গেলোই পাল্টে
ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে
বাস গেলো প্রায় উল্টে!
পাশের সিটের নব্যবাবু
বর্ষাফলার মতন
ছিটকে গিয়ে ভাঙলো মাথা
কী করি তার কথন?
এই গণেশের হালটি তখন
পিং পং বল সম
উড়লো ছাতে, বাউন্স করে
দরজাতে ঠোক মম
তারপরেতেও কুমড়ো সম
গড়গড়গড়গড়
ব্যথার চোটেই আঁধার চোখে
আমায় তুলে ধর!
চারচোখ মোর দুচোখ হলো
খোয়া বাকি দুই
আমি ভাবি এমন বেদন
কখন হরি শুই!
নড়েচড়ে উঠতে ত্রাহি
মধুসূদন ডাকে
দমটা সে প্রায় বেরোয় বটে
হায় বলি গো কাকে?
জ্ঞান হলে সে চোখ মেলে গো
কেবলই গোঙানি
ভাবছি আছি বেঁচে? না কি
মরেই গেছি আমি?
কোলাহল সে তুমুল, দেখি
পুলিশ আসে যায়
লাশটা পাশের,কে জানে কার?
কোন সে পরিচয়?
ছিটকে গেলেও পার্স আমার
মোবাইলটি অক্ষত
জ্বলছে দেখি আলোটা, নয়
অক্ষম আমার মত
উঠতে গিয়ে ব্যথায় চেঁচাই
কোথায় কে কোন ছেলে?
হাড়গুলো যে চূর্ণ আমার
নাও না হাসপাতালে!
ক্রন্দন রোল, বাড়ছে তখন
বাসের যাত্রীগণ
হয়তো কারো হাত ভেঙেছে
পা, মাথা বা মন!
আমি তখন হঠাৎ দেখি
আমায় পাঁজাকোলে
পুলিশমামা আমার বপু
নিলেন কোলে তুলে!
হাত দেখিয়ে অ্যাপক্যাব এক
করিয়ে দিয়ে দাঁড়
কোনমতে ফেললো সে যে
জ্যান্ত লাশ আমার
বসলো সে ড্রাইভারের পাশে
লাল কাপড়ের ফ্ল্যাগ
“ইমার্জেন্সি পেশেন্ট আছে”
সেই লাগালো ট্যাগ!
আর.জি. করে পৌঁছে দেখি
কোনো স্ট্রেচার নেই
হুইলচেয়ারও কাছে তো নেই
মদ্দা কথা এই!
তবু ট্রমা কেয়ার বলে
নিলো সে এক বেডে –
একে তো এই বিষম ব্যথা
চিন্তা আমার হেডে!
গিন্নি কানে মুঠোফোনে
খবর দিতেই কেউ
উল্টোদিকে পত্নি কাঁদেন
হায় শুনি ভেউ ভেউ!
কোনমতে ফোনে চেঁচাই
“কাঁদছো কেন হাবা?
দিব্যি বটে আছি বেঁচে
হওনি গো বিধবা! “
যেই না বলা সামলে নিলেন
দিব্য বলে ” বাজে
ফালতু কথা বলার স্বভাব
এমন সময় সাজে? “
স্বস্তির শ্বাস নিলাম আমি
বুঝে তারই দশা –
সেও বুঝেছে হইনি আমি
চাপড় খাওয়া মশা!
অন্যদিকে খাটে বসে
বসবো শোবো কী?
নড়নচড়ন আশা আমার
ভষ্মে ঢালা ঘী!
বুদ্ধিহীন দুই আর. এম.ও হায়
পুরোই ঘেমে নেয়ে
কাগজ সে এক ধরিয়ে হাতে
রইলো বটে চেয়ে!
ইশারায় জিজ্ঞেস করি
“করবো আমি কী? “
বললে -“ওদিক জমা করুন
সেটাও বোঝেন নি? “
আমি ভাবি, এ কি গেরো?
নড়তে যে না পারে-
নির্বোধরা পাশের বাড়ি
বলছে যেতে তারে?
আমহার্স্ট স্ট্রিটের ও.সি তখন
অ্যাক্সিডেন্ট এ কেইসে
সামাল দিতে এলেন যাতে
যান না হা কেউ ফেঁসে!
এমন রামের গোত্তা খেলাম
পুলিশ হলো “বাবা”
মন ছোটে চার্চ – গুরুদোয়ারা
মক্কা – গয়া – কাবাহ্
“বাবাই, বাছা, সোনাই আমার”
তারেই বলি ডেকে –
“এ স্লিপ জমা দেবার কথায়
গেছি ভোদাই ঠেকে! “
আমার কথায় নরম হলো
পুলিশ আপিসার
কঠিন লোহার মন গলে জল
জলটি চোখে তার !
বললে ” বাবা চিন্তা তো নেই
আছি যখন আমি
আটকে দেবো ওয়ার্ড বয় ও
আর. এম. ওর ছ্যাবলামি! “
দিলেন ধমক, “আহাম্মোক এ!
সেন্স কোথায় গেলো?
কাকাবাবুর এহেন দশা –
প্রাণ প্রায় বেরোলো!”
“এমন লোকে বলছো ডেকে
ফর্ম ফিলাপ তরে
পেশেন্টকেই হবে যেতে
পাশেরই কাউন্টারে? “
কনোস্টেবোল দিলেন করে
মোতোয়ান মোর তরে
আমি ভাবি প্রাণটা বাঁচাই
হায় গো কেমন করে?
পুলিশই সব ফর্মালিটির
করলো বাধা পার
করালো সে এক্স রে বডির
সি.টি স্ক্যানও আর!
সব মিটতে, ডাক্তার এক
দিলো ইনজেকশন
সেখান হবে, সিঁড়দাঁড়া বা
কোমরের জাংশান!
ডিসচার্জটা লিখে দিতেই
গিন্নি এলেন স্পটে
সঙ্গে তারই বোনেরই দুই
পুত্র সাথে বটে!
কোনমতে অ্যাপক্যাবে
ফিরে বটে গৃহে
ভাবলাম বেশ, “কেমন ফাঁড়া
কাটালাম তো? কী হে? “
আমার পূজার খাওয়া দাওয়া?
নিত্যি নতুন ওষুধ
খেতে হলো সাথ গিলে তার
জল অথবা ঘী – দুধ!
নতুন জামা?সে ব্যন্ডেজ গো
বন্ডেজে বেড সোজা
ওষুধ গিলে টান শুয়ে রও
চললো এটাই রোজ হা!
পূজার ভ্রমণ ” রাজ্যে “হলে
রিক্সাওয়ালা শ্যফার
আর “ভিন রাজ্যে “ওলা উবের
তাও চড়েছি দেদার!
নিজেরই সে রাজ্য মানে
কাছের দাওয়াখানা
আর ভিন রাজ্য? সেটাই হলো
হাসপাতালে হানা!
এই তো কবির রোজনামচা
কাব্যি ফিকির পুজো
একটু বটে হলেও সোজা
আজও আমি কুঁজো!