Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হ্যামেলিনের বাঁশিঅলার প্রতি আবেদন || Humayun Azad

হ্যামেলিনের বাঁশিঅলার প্রতি আবেদন || Humayun Azad

ইঁদুরে ভরেছে রাজধানি, একথা বাস্তবিকই ঠিক।
আমাদের ঘর, বাড়ি, গলি, যুঁজি, অর্থাৎ চতুর্দিক
ইঁদুরের অধিকারে : টেবিলের ওপরে ও নিচে,
বইয়ের ভেতরে, বাক্সে, আলমারি, পেয়ালা, পিরিচে
ইঁদুরের বসবাস। কোনটি খেলনা কোনটি পুতুল
বুঝে উঠতে খেলনাপ্রিয় শিশুদেরও হয়ে যায় ভুল
আজকাল। একদা নারীদের শিরে ছিলো মনোলোভা
খোঁপা, সেখানে এখন শুধু ধেড়ে ইঁদুরের শোভা।
ট্রাউজার বা জ্যাকেটের অভ্যন্তর থেকে অতিকায়
ইঁদুর বেরিয়ে আসে; মেয়েদের ব্লাউজে, সায়ায়
ঢুকে থাকে ইঁদুরেরা। নিরূপায় সব–কে করবে সাহায্য
আমাদের রাজধানি আজ এক ইঁদুরসাম্রাজ্য।
আমাদের বস্তুলোক জুড়ে ইঁদুরেরই আধিপত্য;
স্বপ্নেও আমরা ইঁদুরই দেখি, এও যথার্থই সত্য।

শুধু ইঁদুরই বা কেননা, কতো না বিচিত্র জন্তু
ঘোরে চারদিকে, আর আমাদের স্নায়ু-পেশি-তন্তু
ছিঁড়ে ফেলে খুশিমতো। কতো বাঘ, খট্টাশ, গণ্ডার
প্রবল প্রতাপে চলে রাজপথে; আমরা যার যার
প্রাণ নিয়ে টিকে আছি কোনোমতে, যদিও অনেকে
ঘর থেকে বেরিয়েই নিরুদ্দেশ হয় রাস্তা থেকে।
পথে পথে অজগর; শহরে আমরা যারা আছি
ওইসব প্রাণীদের কৃপায়ই তো কোনো মতে বাঁচি।
এমনকি আমাদের গৃহপালিত সারমেয়গণ
প্রচণ্ড প্রতাপে করে আমাদেরই প্রত্যহ শাসন।
শুধু রাজধানি কেনো, আমাদের সংখ্যাহীন গ্রামে
শস্যক্ষেত্রে, আর কৃষকের ঘরে দলে দলে নামে
ইঁদুরবাহিনী। কৃষাণী ও কৃষককন্যার চুলে
নষ্ট শসার মতো দিনরাত সারি সারি ঝুলে
থাকে ইঁদুরেরা–কুমড়ো খেতে পাকা কুমড়োর বদলে
শুয়ে থাকে ইঁদুরেরা–সব কিছু তাদেরই দখলে।
চাষীদের জীবনে এখন ইঁদুরই সর্বময়,
এমনকি আকাশকেও বিশাল উঁদুর মনে হয়।
শুধু ইঁদুরই বা কেনো, আমাদের গ্রামেও এখন
ব্যতিক্রমহীন প্রাগৈতিহাসিক জন্তুর শাসন।

তবে ইঁদুর বা জন্তুরা প্রধান সমস্যা নয় আজ।
যাদের পায়ের তলে পড়ে আছে সমগ্র সমাজ,
সমস্যা তারাই। আজ আমাদের কোনো পৌরপতি
প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না কোনো; সত্য নাম্নী সতী
কলুষিত তাদেরই সহবাসে। তাদের নিশ্বাসে
দূষিত হচ্ছে আত্মা মানুষের; বিষাক্ত বাতাসে
কেঁপে উঠছে রাজধানি। তারা যে দূনীতিপরায়ণ
এটা বলাই যথেষ্ট নয়, তারা অশুভপ্রবণ।
তারা লিপ্ত নানাবিধ পাপে;–সমস্ত সত্যকে তারা
করেছে বর্জন, আর কল্যাণকে করেছে দেশছাড়া
বহু দিন। পৌরপতিদের পাপে পুষ্পের মুকুল,
ঝরে যায় ফোঁটার অনেক আগে, খেলার পুতুল
কেঁদে ওঠে শিশুদের কোলে; সেই জলভরা নদী
শুকোচ্ছে প্রত্যহ, একদা যা দেশে বইতে নিরবধি।
পৌরপিতাদের পাপে কমছে সূর্য ও চন্দ্রের আলো,
ধীরে ধীরে পবিত্র গ্রন্থের পাতা হয়ে যাচ্ছে কালো
তাদের নিশ্বাসে। আমাদের যতো বাগানের গাছে
ফলের বদলে নোংরা আবর্জনা সব ঝুলে আছে
দিকে দিকে। পৌরপিতাদের পাপে, মিথ্যাচারে ক্ষয়ে
যাচ্ছে মাটি, জ্ঞানের সমস্ত শিখা নিভছে বিদ্যালয়ে।
নষ্ট হচ্ছে তরুণেরা, সুনীতিকে করছে বর্জন,
তাদেরও প্রিয় আজ হত্যাকাণ্ড, হরণ, ধর্ষণ।
এ-সবেরই মূলে আছে আমাদের সব পৌরপতি,
পালন করে না যারা সত্য, আর কোনো প্রতিশ্রুতি।

আমরা তো নষ্ট হয়ে গেছি নষ্ট হঁদুরেরই মতো।
তবুও আশ্চর্য! আমাদের ঘরে আজো জন্মে শতো
শতো নিষ্পাপ পুষ্পের মতো শিশু, যাদের অম্লান
হাসিতে ঝিলিক দেয় সত্য, ঝরে শান্তি ও কল্যাণ।
তারাও তো নষ্ট হবে নষ্ট পৌরপিতাদের পাপে,
যেমন হয়েছি নষ্ট আমরা সামাজিক অভিশাপে।
বাঁশিঅলা তুমি একবার এসেছিলে হ্যামেলিনে,
এ-সংবাদ জানে সবে পৃথিবীতে–পেরু থেকে চীনে
জানি তুমি বেদনাকাতর, তবু আর একবার
এসো, এ-শহরে, করো আমাদের উজ্জ্বল উদ্ধার।
তুমি এসে শহরকে ইঁদুরের উৎপাত থেকে
উদ্ধার করবে, তা চাই না। কেননা ইঁদুর দেখে দেখে
সহ্য হয়ে গেছে আমাদের। তুমি পবিত্র বাঁশিতে
সুর তোলো, আমাদের শিশুগণ পবিত্র হাসিতে
বের হোক গৃহ থেকে। তোমার বাঁশির সুরে সুরে
তোমার সঙ্গে তারা চলে যাক দূর থেকে দূরে
কোনো উপত্যকা বা পাহাড়ের পবিত্র গুহায়
পৌরপিতাদের পাপ যেনো না লাগে তাদের আত্মায়।
শিশুদের শোকে কষ্ট পাবো, তবু সুখ পাবো বুকে
নষ্ট হয় নি তারা আমাদের মতন অসুখে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *