বৈদেহী বিচিত্র আজি সংকুচিত শিশিরসন্ধ্যায়
প্রচারিল আচম্বিতে অধরার অহেতু আকূতি :
অস্তগামী সবিতার মেঘমুক্ত মাঙ্গলিক দ্যুতি
অনিত্যের দায়ভাগ রেখে গেল রজনীগন্ধায়।।
ধূমায়িত রিক্ত মাঠ, গিরিতট হেমন্তলোহিত,
তরুণতরুণীশূন্য বনবীথি চ্যুত পত্রে ঢাকা,
শৈবালিত স্তব্ধ হ্রদ,নিশাক্রান্ত বিষন্ন বলাকা
ম্লান চেতনারে মোর অকস্মাৎ করেছে মোহিত ।।
নীরব, নশ্বর যারা, অবজ্ঞেয়, অকিঞ্চন যত,
রুচির মায়ায় যেন বিকশিত তাদের মহিমা ;
আমার সঙ্কীর্ণ আত্মা, লঙ্ঘি আজ দর্শনের সীমা,
ছুটেছে দক্ষিনাপথে যাযাবর বিহঙ্গের মতো ।।
সহসা বিস্ময়মৌন উচ্চকন্ঠ বিতর্ক, বিচার,
প্রাণের প্রত্যেক ছিদ্রে পরিপূর্ণ বাঁশরীর সুর :
জানি মুগ্ধ মুহূর্তের অবশেষ নৈরাশে নিষ্ঠুর ;
তবু জীবনের জয় ভাষা মাগে অধরে আমার ।।
যারা ছিল একদিন ; কথা দিয়ে, চ’লে গেছে যারা ;
যাদের আগমবার্তা মিছে ব’লে বুঝেছি নিশ্চয় ;
স্বয়ম্ভূ সংগীতে আজ তাদের চপল পরিচয়
আকস্মিক দুরাশায় থেকে থেকে করিবে ইশারা ।।
ফুটিবে গীতায় মোর দুঃস্থ হাসি, সুখের ক্রন্দন,
দৈনিক দীনতা-দুষ্ট বাঁচিবার উল্লাস কেবল,
নিমেষের আত্মবোধ, নিমেষের অধৈর্য অবল,
অখণ্ড নির্বাণ-ভরা রমণীর তড়িৎ চুম্বন ।।
মোদের ক্ষণিক প্রেম স্থান পাবে ক্ষণিকের গানে,
স্থান পাবে, হে ক্ষণিকা, শ্লথনীবি যৌবন তোমার :
বক্ষের যুগল স্বর্গে ক্ষণতরে দিলে অধিকার ;
আজি আর ফিরিব না শাশ্বতের নিষ্ফল সন্ধানে ।।