Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হে প্রিয় বাল্য বন্ধুগণ || Nitish Burman

হে প্রিয় বাল্য বন্ধুগণ || Nitish Burman

হে বাল্য বন্ধুগণ কেমন আছ?
তোমরা সবাই আজ দূরে দূরে
দেখছ না সময় কীরকম অস্থির !
একা একা হাঁটি দীর্ঘ পথ
প্রহর দিন কাল হেঁটেই চলি
অন্ধকার পথে উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে হেঁটে চলি
পাংশুটে জ্যোৎস্নার ভেতর হেঁটে চলি
মাঝি মল্লার সাথে ক্লান্তিময় পথে হেঁটে চলি,
তোমরাও কি হাঁটছ অবিরাম, অথচ দেখা নেই
বুকের ভেতর এক কষ্টবোধ কখনো কি জেগে
ওঠে বিস্মিত স্মৃতির আড়ালে ?
হয়ত বা পাশাপাশি হাঁটছ বহুকাল অথচ
ভুলে গেছ তাকাতে ফেলে আসা সময়টার দিকে ,
অপরিচিত দৃশ্যাবলির ভিড়ে আজ
আমরা নিজের ছায়াকেই অস্বীকার করি,
ফেলে আসা অস্তিত্বের ক্লান্তিময় ধুলো আমাদের চোখে মুখে,
তাইত এসময় বড়ো অস্থির !
তথাপিও মনে পড়ে সেই দিন
সেই সময় , সেই বাল্যজীবন , সেই বাল্যবন্ধুগণ …
গতবছর দীনবন্ধু চলে গেল না ফেরার দেশে
ওর স্কুলের হাস্যময় মুখখানা খুব ভেসে ওঠে,
নিমীলিত আঁখি,স্মিত কন্ঠের আলাপচারিতা
আজ আকাশ বাতাসের নিভৃত কোণে হয়ত
নীরব নিথর।কখনও তাই এক অসহায় বোধ
নিজেকে খুব তাড়া করে, তোমাদেরও করে কি?
আমরা কি আজ ভুল স্বপ্নের পথে হাঁটছি ?
আজ কোথায় আমাদের সখ্যতা ,
চিঠির বাক্সে আজ আর কেউ চিঠি ফেলে না,
জন্মদিনের শুভেচ্ছা কার্ড নিয়ে আজ আর কোনো ডাকপিয়ন এসে হাত বাড়ায় না,
একটা চিঠির অপেক্ষার মুহূর্তকাল সবাই ভুলে গেছি ,
ভুলে গেছি ঘুড়ি ওড়ানো কিংবা অলস গোধূলিতে
স্কুল মাঠে বৃত্তাকার হয়ে বসে স্বপ্ন বোনার দিনগুলো ;
দীপু স্বপ্ন দেখত বড়ো ফুটবলার হবে,
মনে পড়ে চাঁদা তুলে আমরা সবাই ওর
বুট কিনে দিয়েছিলাম,
তারপর কোথায় হারিয়ে গেল চোরাবালির স্রোতে জানিনা, ওর খোঁজ নিইনি বহুদিন,
আরো মনে পড়ে ছোট্ট চেহারার সুদেবকে,
জীবনে কখনও রাগতে দেখিনি ওকে,
স্কুলের সব দৌড়েই ওর ফার্স্ট প্রাইজ বাঁধা ছিল,
শুনেছি এখনও সংসার করেনি, জীবন যুদ্ধে অনবরত দৌড়ে চলেছে,ওর সাথে দেখা নেই বহুকাল,
আরো মনে পড়ে রুণু, ঝুনুর কথা,
রুণুকে টুকটুকি বলে ডাকত স্কুলের হেডস্যর, অভাবী সংসারে বিয়ের ভাল সম্বন্ধ এলে যা হয়,
মাধ্যমিকে পড়ার সময় রুণুর বিয়ে হয়ে গেল,
তারপর ওকে আর দেখিনি কোনোদিন
কোনো খোঁজও রাখিনি, আসলে স্বপ্ন গড়ার লক্ষ্যে আমরা সবাই প্রতিনিয়ত বাতাসের গায় সিঁড়ি
ভাসিয়ে দূরে সরিয়ে ফেলছি
নিজেদেরকেই নিজেদের কাছ থেকে,
সেদিন রুণুর মেয়ের মৃত্যুর খবরে বিচলিত হলাম ,
শুনলাম বিয়ের এক সপ্তাহ পর পথ দুর্ঘটনায় মেয়েটা মারা গেল,
সেদিন স্কুলের ওর সেই নিষ্পাপ মুখখানা ভেসে ওঠে
আর ভীষণ ভাবে তাড়া করে আমাদের স্বার্থপরতা,
এক অপরাধ বোধ,
এক সময় ছিল আমরা সবাই একে অপরের পাশে
সামর্থ না থাকলেও আগলে দাঁড়াতাম
একে অপরের বেদনায় ব্যথিত হতাম ,
আমরা কি সবাই আজ ভুল পথে হাঁটছি?
হে প্রিয় বাল্যবন্ধুগণ
কোথায় আজ শপথের প্রতিশ্রুতি
কোথায় দাঁড়িয়ে বেহিসেবি বাল্যবেলা উঁকি মারে
কারো বাগানের শ্যামলিম শস্যকণায়
কোথায় হারিয়েছে নদীর কূলগুলো,
কোথায় মিলিয়েছে নীল দিগন্তের অসীম সীমারেখা ,
ঝরা পাতার মর্মর ধ্বনির ‘পর কে জাগে নিশীথে একা ?
কোথায় চৈত্রের ভর দুপুরে বাবলার বনে বনে ঘুরে বেড়ায়
দুরন্ত কৈশোর
কে খোঁজে শীতল ছায়া পল্লবিত শাখার তলে ,
ভেষজ লতার মত জড়ানো বন্ধুত্বের
স্পর্শকাতর দিনগুলো
আজ স্বপ্নের মত ফেরি করে বেড়ায় পৌঢ়ত্ব,
বন্ধু এসময় বাড়িয়ে দেবে কি হাত, হাতের বাঁধন হবে কি আগের মতই শক্ত সবল
হে প্রিয় বাল্য বন্ধুসব,
সেই ফেলে আসা স্বপ্নগুলো কখনো কি তাড়া করে ?
কখনো ধূসর জীবনের ছেঁড়া পান্ডুলিপির পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে
না বলা কথাগুলো হারিয়ে যায় ধুলোঝড়ে ,
তবুও কিছু স্মৃতিময় দিনগুলো অজান্তেই এসে
দাঁড়ায় মুখোমুখি , একে একে ভেসে ওঠে
স্কুলবাড়ি, খেলার মাঠ,বৈরাগী দিঘি , বানাইখালির বিল, দুর্গাবাড়ির চন্ডীমন্ডপ, ভোগেশ্বরীর শীতল জলরাশি, শহীদ মিনার ,কামাখ্যামেলার সেই সারি বদ্ধ গরুগাড়ি
আরো অনেক কিছু, বেহিসেবি স্মৃতির পর্দার আড়ালে
উঁকি মারে সব মুখ, ইচ্ছে হয় সহাস্যে এক এক করে নাম ধরে ডেকে উঠি
আবার চেনা ছন্দে সবাই একে একে এসে হাত ধরি,
হাতে মুঠো করে ধরি হারিয়ে যাওয়া অমূল্য সময়টাকে,
হে প্রিয় বাল্যবন্ধুগণ
সবাই এস একবার , সব বাঁধাকে উপেক্ষা করে
এস প্রাণ খুলে হাসি, অট্টহাস্যে ভরিয়ে তুলি আকাশ বাতাস
মিশে যাক সমস্ত পাপ,তাপ, ক্লান্তি,গ্লানি , বিভেদ
সাফল্য আর অসফলতা আজ একাকার হয়ে মিশে যাক সীমাবদ্ধ গন্ডীর বাইরে,
এস টিফিনের একটা সিঙাড়া সবাই ভাগ করে খাই
এস ধূলি ধূসর মাঠের ‘পর কিছুটা সময়
সবাই নিজের মত কাটাই
নিজের মত করে একটু বাঁচি !

7 thoughts on “হে প্রিয় বাল্য বন্ধুগণ || Nitish Burman”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress