Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

ছুঁচোর ছেলে বুঁচো

আমাদের সহরে বড়মানুষদের মধ্যে অনেকের অর্‌গুণ নাই, বর্‌গুণ আছে। “ভাল কত্তে পারবো মন্দ করবো, কি দিবি তা দে”! যে ভাষা আছে, এঁরা তারই সার্থকতা করেছেন—বাবুরা পরের ঝক্‌ড়া টাকা দিয়ে কিনে, ‘গায়ে মানে না আপনি মোড়ল’ হতে চান—অনেকে আড়ি তুলতেও এই পেশা আশ্রয় করেচেন! যদি এমন পেশাদার না থাকতো, তা হলে শিবকেষ্টোর কে কি কত্তে পাত্তো? তিনি কেবল ভাজকে ও ভাইপোকে ঠকিয়ে বিষয়টি আপনি নিতে চেষ্টা করছিলেন বৈ তো নয়। আমাদের কলকেতা সহরের অনেক বড়মানুষ যে, স্ত্রীকে ডাক্তার দিয়ে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেও গায়ে ফুঁ দিয়ে গাড়ী ঘোড়া চড়ে বেড়াচ্ছেন, কৈ, আইন তার কাছে কল্কে পায় না কেন? শিবকেষ্টো যেমন জাল করেছিলেন, বোধ হয় সহরের অনেক বড়মানুষের ঘরে ও রকম কত পার হয়ে গ্যাছে ও নিত্যি কত হচ্ছে! সহরের একটি কাশ্মীরী মুখখু বড় মানুষ আক্ষেপ করে বলছিলেন যে, “সহরে আমার মত কত ব্যাটাই আছে, কেবল আমিই ধরা পড়েছিলাম।” শিবকেষ্টোর বিষয়েও ঠিক তাই।

জষ্টিস ওয়েলস

শিবকেষ্টোর মোকদ্দমার মুখে জষ্টিস ওয়েলস নতুন ইণ্ডেণ্ট হন। তাঁর সংস্কার ছিল, বাঙ্গালীদের মধ্যে প্রায় সকলেই মিথ্যাবাদী ও জালবাজ; সুতরাং মোকদ্দমা করবার সময়ে যখন চার পা তুলে বক্তৃতা কত্তেন, তখন প্রায়ই বলতেন, “বাঙ্গালীরা মিথ্যাবাদী ও বর্বরের জাতি!” এতে বাঙ্গালীরা অবশ্যই বলতে পারেন, “শতকরা দশ জন মিথ্যাবাদী বা বব্বলে হল যে আশী নব্বই জনও মিথ্যাবাদী হবেন, এমন কোন কথা নাই।” চার দিকে অসন্তোষের গুজগাজ পড়ে গেল, বড় দলের মোড়লেরা হাতে কাগজ পেলেন, ‘তেঁই ঘোঁটের’ যত মাথালো মাথালো জায়গায় ঘোঁট পড়ে গেল; শেষে অনেক কষ্টে একটি সভা করে সার চার্লস কাষ্ঠ মহাশয়ের নিকট দরখাস্ত করাই এক প্রকার স্থির হলো। কিন্তু সভা কোথায় হয়, বাঙ্গালীদের তো এক পদও সাধারণের স্থান নাই; টাউনহল সাহেবদের, নিমতলার ছাতখোলা হল গবর্মেন্টের, কাশী মিত্তিরের ঘাটে হল নাই; প্রসন্নকুমার ঠাকুর বাবুর ঘাটের চাঁদনীতে হতে পারে, কিন্তু ঠাকুর বাবুর পাঁচজন সাহেব সুবোর সঙ্গে আলাপ আছে, সুতরাং তাও পাওয়া কঠিন। শেষে রাজা রাধাকান্তের নবরত্নের নাট-মন্দিরই প্রশস্ত বলে সিদ্ধান্ত হলো। কাগজে বিজ্ঞাপন বেরুলো, “অমুক দিন রাজা রাধাকান্ত বাহাদুরের নবরত্নের নাটমন্দিরে ওয়েলস জজের মুখরোগের চিকিৎসা করবার জন্যে সভা করা হবে। ঔষধ সাগরে রয়েছে।”

সহরের অনেক বড় মানুষ—তাঁরা যে বাঙ্গালীর ছেলে, ইটি স্বীকার কত্তে লজ্জিত হন; বাবু চুনোগলির আনড্রু পিদ্রুসের পৌত্তর বল্লে তারা বড় খুশী হন। সুতরাং যাহাতে বাঙ্গালীর শ্রীবৃদ্ধি হয়, মান বাড়ে, সে সকল কাজ থেকে দূরে থাকেন। তদ্বিপরীত নিয়তই স্বজাতির অমঙ্গল চেষ্টা করে থাকেন। রাজা রাধাকান্তের নাটমন্দির ওয়েলসের বিপক্ষে বাঙ্গালীরা সভা করবেন শুনে তারা বড়ই দুঃখিত হলেন; খানা খাবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সময় মনে পড়ে গেল; যাতে ঐ রকম সভা না হয়, কায়মনে তাই চেষ্টা কর্ত্তে লাগলেন। রাজা বাহাদুরের কাছে সুপারিশ পড়লো, রাজা বাহাদুর সত্যব্রত, একবার কথা দিয়েছেন, সুতরাং উঁচুদলের সুপারিশ হলেও সহসা রাজী হলেন না। সুপারিশওয়ালারা জোয়ারের গুয়ের মত সাগরের প্রবল তরঙ্গে ভেসে চল্লো। নিরূপিত দিনে সভা হলো, সহরের লোক রৈ রৈ করে ভেঙ্গে পড়লো, নবরত্নের ভিতরের বিগ্রহ ও নাটমন্দিরের সামনের যোড় হস্ত-করা পাথরের গড়ুরেরও আহ্লাদের সীমা রহিল না। বাঙ্গালীদের যে কথঞ্চিৎ সাহস জন্মেছে, এই সভাতে তার কিছু প্রমাণ পাওয়া গেল। একবল সুপারিশওয়ালা বাবুরা ও সহরের সোণার বেণে বড়মানুষের এই সভায় আসেন নাই; সুপারিশওয়ালাদের থোঁতা মুখ ভোঁতা হয়ে গেল! বেণে বাবুরা কোন কাজেই মেশেন না, সুতরাং তাঁদের কথাই নাই। ওয়েলস হুজুকের অনেক অংশে শেষ হলো দশ লক্ষ লোকে সই করে এক দরখাস্ত কাষ্ঠ সাহেবের কাছে প্রদান কল্লেন; সেই অবধি ওয়েলসও ব্রেক হলেন।

টেকচাঁদের পিসি

টেকচাঁদ ঠাকুরের টেপী পিসি ওয়েলসের মুখরোগের তরে মিটিং করা হয়েছে শুনে বল্লেন, “ও মা, আজ কাল সবই ইংরিজি কেতা! আমরা হলে মুড়োমুড়ি নারকেলমুড়ি ও ঠনঠনের নিমকীতে দোরস্ত কত্তেম!” নারকেলমুড়ি বড় উত্তম, ওষুধ, হলওয়েলের বাবা! আমাদের সহরের অনেক বড়মানুষ ও দুই এক জেলার ধিরাজ মহারাজা বাহাদুর নিয়তই রোগভোগ করে থাকেন। দার্জিলিং, সিম্লে, সপাটু, ভাগলপুর ও রাণীগঞ্জে গিয়েও শোধরাতে পারেন না; আর তাদের অনুরোধ করি, নারিকেলমুড়ি ও ঠনঠনের নিমকীটাও ট্রাই করুন! ইমিজিয়েট রিলিফ।

পাদ্রি লং ও নীলদর্পণ

নীলকর হাঙ্গামা উঠলো; শোনা গেল, কৃষ্ণনগর, পাবনা, রাজসাই প্রভৃতি নীলজেলার রেয়োতেরা ক্ষেপেছে। কে তাদের ক্ষ্যাপালে? কি উলুই চণ্ডী? না শ্যামচাঁদ? তবে–‘ম্যাজিষ্ট্রেট ইডেনের ইস্তাহারে’ ‘ইণ্ডিগো-কমিশনে’ ‘হরিশে’ ‘লংএ’ ‘ছোট আদালতে’ ‘কন্টাক্টরিতে’ অবশেষে গ্রান্টের রিজাইনমেন্টে রোগ সারতে পারেন? না! কেবল শ্যামচাঁদিরা সল্লে!

নীলকর সাহেবের দ্বিতীয় রিভোলিউসন হবে বিবেচনা করে (ঠাকুঘরে কে? না আমি কলা খাইনি) গভর্ণমেণ্ট তোপ ও গোরা সাহায্য চেয়ে পাঠালেন! রেজিমেণ্টকে রেজিমেণ্ট গোরা, গণ্‌, বোট ও এম্পেশিয়াল কমিশনর চল্লো;–মফস্বলের জেলে আর নিরপরাধীর জায়গা হয় না, কাগজে হুলথুল পড়ে গেল ও আণ্টর ব্রেড অবতার হয়ে পড়লেন।

প্রজার দুরবস্থা শুনতে ইণ্ডিগো-কমিশন বসলো, ভারতবর্ষীয় খুড়ীর চমকা ভেঙ্গে গেল। (খুড়ী একটু আফিম খান।) বাঙ্গালীর হয়ে ভারতবর্ষীয় খুড়ীর একজন খুড়ো কমিশনর হলেন। কমিশনে কেঁচো খুঁড়তে খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়লো। সেই সাপের বিষে নীলদর্পণ জন্মালো; তার দারুণ নীলকর-দল হন্নে হয়ে উঠলেন—ছাইগাদা, কচুবন, ও ফ্যানগোঁজলা ছেড়ে দিয়ে ঠাকুর-ঘরে, গিরজেয়, প্যালেসে ও প্রেসে ত্যাগ কল্লেন! শেষে ঐ দলের একটা বড় হঙ্গেরিয়ান হাউণ্ড পাদরী লং সাহেবকে কামড়ে দিলে।

প্যায়দারা পর্যন্ত ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট হয়ে মফস্বলে চল্লেন। তুমুল কাণ্ড বেধে উঠলো। বাদাবুনে বাঘ (প্ল্যানটারস এসোসিয়েসন) বেগতিক দেখে নাম বদলে ল্যাণ্ডহোল্ডারস এসোসিয়েশন তুলসীবনে ঢুকলেন। হরিশ মলেন। লংএর মেয়াদ হলো। ওয়েলস্ ধমক খেলেন। গ্রাণ্ট রিজাইন দিলেন—তবু হুকুক মিটলো না। প্রকৃত বাঁদুরে হাঙ্গমে বাজারে নানা রকম গান উঠলো; চাষার ছেলেরা লাঙ্গল ধরে, মূলো মুড়ি খেতে খেতে —

গান
সুর—“হাঃ শালার গরু; তাল টিটকিরি ও ল্যাজমলা।”
উঠলো সে সুখ, ঘটলো অসুখ মনে, এত দিনে।
মহারাণীর পুণ্যে মোরা ছিলাম সুখে এই স্থানে।।
উঠলো খামার ভিটে ধান, গেল মানী লোকের মন,
হ্যানো সোনার বাংলা গান, পোড়ালে নীল হনুমানে।।

গাইতে লাগলো। নীরকরেরা এর উত্তরে ক্যাটল্‌ট্রেসপস বিল পাস করে, কেউ কোন কোন ছোট আদালতের উকীল জজদের শ্যামপীন খাইয়ে ও ঘরঘ্যাঁস করে, কেউ বা খাজনা বাজিয়ে, খেউরে জিতে কথঞ্চিৎ গায়ের জ্বালা নিবারণ কল্লেন।

নীলবানুরে লঙ্কাকাণ্ডের পালা শেষ হয়ে গেল, মোড়লেরা জিরেন পেলেন; ভারতবর্ষীয় খুড়ী এক মৌতাত চড়িয়ে আরাম কত্তে লাগলেন। কোন কোন আশাসোটাওয়ালা খেতাবী খুড়ো, অনুরেরী চৌকিদারী, তথা ছেলেপুলের আসেসরী ও ডেপুটী ম্যাজেষ্ট্ররীর জন্য সাদা দেবতার উদ্দেশ্যে কঠোর তপস্যায় নিযুক্ত হলেন। তথাস্তু!!

শ্যামচাঁদের অসহ্য টরচরে ভূত পালায়, প্রজারা খেপে উঠবে কোন কথা! মিউটীনি ও ক্লার্ক অ্যাকটের সভাতে তো শ্রীবৃদ্ধিকারীরা চটেই ছিলেন; নীলবানুরে হাঙ্গামে সেইটি বদ্ধমূল হয়ে পড়লো। বড় ঘরে সতীশ হলে, বড় বৌ ও ছোট বৌকে তুষ্ট কর্ত্তে কৰ্ত্তা ও গিন্নীর যেমন হাড় ভাজা ভাজা হয়ে যায়; শ্রীবৃদ্ধিকারী, সুইপিং ক্লাস ও নেটীভ কমিউনিটীকে তুষ্ট কত্তে গিয়ে, ইণ্ডিয়া ও বেঙ্গল গবর্ণমেণ্ট ও সেই রকম অবস্থায় পড়লেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress