হারিয়ে গেছি আমি
ছেলেবেলায় স্কুলের পথে সবাই যখন গল্পে ব্যস্ত, আমাদের আরেক বন্ধু একটু আলাদা ভাবে ঠাকুমার সাথে রিক্সায় করে স্কুলে আসতো। রঞ্জনা ডেকে উঠল- এই কাকলি…. রিক্সাটা হুস করে চলে গেল। দীপা বলল, ওর খুব অহংকার। কারুর সাথে মেশে না। ক্লাসে পৌঁছিয়ে রঞ্জনা ওকে খুব বাজে ভাবে বলল,”এই কাকলি তোর কিসের অহংকার? তোকে ডাকলেও কথা বলিস না কেন?”…. কাকলির মধ্যে আমিত্ব টা কোন অহংকার ছিল না। ও কিছুটা বাড়ির কারণে অভ্যাসের দাস এ পরিণত হয়েছিল। ও ঠাকু মা বা পিসি পালা করে আসতো। একটা শান্ত গোলগাল ধবধবে ফর্সা মেয়ে কাকলি। পড়াশোনায় খুব ভালো। খুব ধীরে কথা বলে। আমরা যখন অষ্টম শ্রেণীতে, আমাদের রোল নম্বর ১২পর্যন্ত স্পেশাল ক্লাস হত। দুর্ভাগ্যবশত আমি ওই ক্লাসে পড়তাম। এক বছর অনেক বন্ধুর সাথে বিচ্ছেদ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে। নাইনে উঠে আবার সকলকে পেয়েছিলাম। ফার্স্ট গার্ল থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত আমাদের স্পেশাল ক্লাসের স্টুডেন্ট ছিল। এই কজনের ক্লাস করতে ভালো লাগে নাকি? কয়েকজনের মধ্যেই আমিত্বটা একটু বেশি ছিল। একটা অহমিকা কয়েকজনকে ঘিরে রেখেছিল। আমিও হারিয়ে গিয়েছিলাম একটা গণ্ডির মধ্যে। সমস্ত বন্ধুদের থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন। কয়েকজনকে বারবার ডাকলেও সাড়া দিত না। ভাল ছাত্রীর অহমিকার বর্ম তাদের গায়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ছোট বয়সে এমন অহংকারে সেদিন আমিও হারিয়ে গিয়ে নতুন ভাবে আবার বাঁচার চেষ্টা করছিলাম।