দ্বিশতবর্ষ পেরিয়েও তুমি চিরস্মরণীয়-
তাই আজও অম্লান আমাদের অন্তরে,
ভাষা ও দয়ার নিরিখে তুমি একমাত্র এসেছো নদী থেকে মহাসাগরে,
মেদিনীপুরের বীরসিংহের ছোট্ট শিশু এসেছিলে পিতার হাত ধরে;
বিস্ময় জাগে, মাইল ফলক দেখে কেউ ইংরাজি সংখ্যা শিখতে পারে?
দারিদ্রের সংসারে খাদ্যাভাব সত্ত্বেও ছিল না খেলায় কোনো অনীহা,
অশক্ত শরীরেও কাবাডি খেলায় তোমার ছিল আন্তরিক স্পৃহা,
এতৎসত্ত্বেও বিদ্যাভাসে কখনো পড়েনি পড়াশোনায় তার ছায়া;
শৈশবের কঠিন অভাবের দিনেও হতদরিদ্রদের জন্যও ছিল মায়া।
কোলকাতায় পাঠাভ্যাস ছিল ঘরের প্রদীপে বা পথের ল্যাম্পপোস্টের আলোয়,
শিখিয়ে গেছ অভাব কখনো অগ্রগতির বাধা নয়,ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়,
সংস্কৃত কলেজ থেকে বেদ,বেদান্ত,জ্যোতিষ,সাংখ্য শাস্ত্র- আদি শিক্ষায়-
শিক্ষিত হয়ে বসেছিলে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের হেড পণ্ডিতের আসনটায়।
সংস্কৃতে অগাধ পাণ্ডিত্য নিয়ে এসেছিলে সংস্কৃত কলেজে অধ্যক্ষের ভূমিকায়,
অবলীলায় সেখানে অর্জন করেছিলে অমরত্ব আর বিদ্যাসাগর পরিচয়,
প্রাচীনপন্থী ব্রাক্ষ্মণদের কৌলিন্যপ্রথার বিরুদ্ধে প্রথম জেহাদি উপস্থাপনায়-
সংস্কৃত পাঠে সবার অধিকার কায়েম করে ঘটিয়েছিলে সর্বধর্মসমন্বয়।
বিদ্যাতেই কি শুধু সাগর ছিলে,তোমার প্রতীক্ষায় থাকত সেদিন কতো অসহায়!
সর্বস্ব দিয়ে হতদরিদ্রদের করতে আন্তরিক সহায়তা- এ তথ্যও তো অজ্ঞাত নয়,
নিজের আর্থিক অনটনের দিনেও দীন দরিদ্রদের ভরিয়ে দিতে সহায়তায়;
তাই তো আজও দয়ার সাগর রূপে বিভূষিত তুমি এই বাংলায়।
অন্ধ সমাজে নারী স্বাধীনতা ও শিক্ষার দিশায় এনেছিলে তুমি নবজাগরণ,
যুগ যুগান্তের অসুস্থ সব নিয়ম ভেঙে করেছিলে বিধবা বিবাহ প্রচলন,
প্রাচ্যের গোঁড়া নীতিবাগীশ ব্রাক্ষ্মণ্যবাদীদের সাথে একাই করেছিলে আন্দোলন,
আজ তোমার শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নারী-জাগরণ তো তোমারই অবদান।
অদৃশ্য ঈশ্বর- তবু আজও বঙ্গহৃদয়ে আছে মহান ঈশ্বরের উপস্থিতি,
উপক্রমণিকা’এবং ‘ব্যাকরণ কৌমুদী’র সরল ব্যাখ্যায় জীবিত তোমার কীর্তি।
অমলের দল হবে না অচল,ঐক্য বাক্যে অবিচল থাকবে বাঙালির স্থিতি;
তোমার প্রদত্ত শিক্ষাকে আত্মস্থ করেই আরও দ্বিশতবর্ষ বাঁচাবো বঙ্গ সংস্কৃতি।
শুদ্ধ বঙ্গসন্তান অঙ্গীকারে
রাখবে এ সভ্যতা সংস্কৃতির রক্ষা-ভার,
জ্ঞানের শিখা প্রদীপ্ত হোক তোমার আশীষে কুশিক্ষার কাটুক আঁধার,
প্রাজ্ঞ বঙ্গ ব্যক্তিত্বের স্মরণে মননে তোমার সৃষ্টি চিরকাল থাকবে সাকার,
তাই আজীবন আমরা ভুলব না তোমার অমলিন দান হে বিদ্যাসাগর।।