স্বর্গীয় আনন্দ
বিশ সালে বাইশে মার্চের পর থেকে প্রতিটি মানুষের দিন কাটেছে অজানা ভাইরাস আতঙ্কে।আরো কতদিন চলবে ঈশ্বর জানেন।তবে এখন মানুষের অনাক্রম্যতা শক্তি(Immunity Power)তৈরী হচ্ছে।আন্টিবডি ও তৈরী হচ্ছে।প্রতিষেধক বাজারে বেড়িয়ে গেলে নিশ্চয় *একটু খুশির জোয়ার আসবে সকলের মনে।
মহালয়ের পর থেকে বেশ পূজো পূজো ভাব লাগে।এবার সারা পৃথিবীতে ভাইরাস আক্রমণে থমথমে ভাব।তবুও উৎসবের আমেজ আকাশে বাতাসে।
কোলকাতার শ্রীভূমি থেকে শুরু করে মোটামুটি সব বড় প্যান্ডেলে লোকজনরা যাতায়াত শুরু করেছে।তা দেখে অনেকের মনে *একটু খুশির জোয়ার দেখা যাচ্ছে।তবে সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।নিজে বাঁচুন সবাইকে বাঁচান।অনেকেই তাই ঠাকুরের প্যান্ডেল দেখতে বেড়িয়ে পড়েছেন।
আমি ও শরতের নীলাকাশে পেঁজা মেঘ দেখতে দেখতে রাস্তা দিয়ে অন্যমনস্ক ভাবে হাঁটছিলাম…হঠাৎ কানে এলো শোরগোল।মার মার।এগিয়ে গিয়ে দেখি…
একটি বছর তেরো ছেলেকে সবাই খুব মারছে।ছেলেটি বলছে আমি চুরি করি নি।
আমিতো রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছি।
এই হলো বর্তমান সমাজ।সবাই মিলে নিরীহ,গরীবদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।তারপর সন্দেহজনককে আধমরা করে দেয়।পরে কেউ যদি ব্যাপারটার জন্য এগিয়ে যান..তাহলে শুনতে পাবেন …
আপনি বাচ্চার কে হন ?
..একদল হা হা করে হেসে বলে গাং লিডার হবে হয়ত।
ভীড় সরে গেলে আমি এগিয়ে যায় বাচ্চাটির কাছে।সারা শরীরে মারের চিহ্ন।সামনে পড়ে আছে একটি বস্তা…বস্তার ভিতরে উঁকি দিচ্ছে বেশ কয়েকটি তোবরানো বোতল।
দেখলেই মনে হচ্ছে।বেশ কয়েকদিন অভুক্ত।আমি কাছে গিয়ে আমার বোতল থেকে জল বার করে..ওর চোখে মুখে জল ছিটিয়ে দিতেই …আমাকে মারবেন না।আমি তিনদিন খায় নি।তারমধ্যে অসহ্য ..গা ব্যথা করছে কাকীমা।
বললাম কি চুরি করেছিস?
একটি পাউরুটি খেয়ে দাম দিতে পারিনি।বললাম বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করে তোমার পাউরুটির দাম দিয়ে দেব।তাও শুনল না।
জিজ্ঞেস করলাম তোর বাড়ি কোথায়?
আমার বাড়ি স্টেশনে।আর পুলিশের গুতো খেলে রেললাইনের ধারে।
সারাদিন বোতল কুড়ায়।তারপর ঐগুলো বেঁচে একটা বান কিনে খায়।
তারপর জিজ্ঞেস করি ভাত কতদিন খাস নি?
না কাকিমা রোজ খায় তো!
এইযে বললি বান খাস।
ঐ বানটাকে কল্পনায় ভেবে নি ভাত খাচ্ছি,তোমাদের বিরিয়ানি খাচ্ছি।এক এক দিন মাংস,ইলিশ সব খায় তো কাকিমা।
আমি বললাম মিছি মিছি মনকে স্বান্তনা দিস।হ্যাঁ গো কাকিমা ,ভালো ভালো খাবার ভেবে বাসি,পচা সব খাবার খায়…আর মনে যেন *একটু খুশির জোয়ার আসে।এই ভাবে বেঁচে আছি ।
জানো কাকিমা আমার হয়ত বাড়ি ঘর,বাবা ,মা কাকু ,জেঠু সব ছিল।আমি যখন এতটুকু আমার বাবা ,মা গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায়।এক বুড়ো বাবা আমাকে চুরি করে আনে।তারপর বুড়া মরে যায়।আমি স্টেশনে ,রেললাইনের ধারে বোতল কুড়ায়।
পথশিশুদের কদিন আগে এক বাবু এসে হলুদ ভাত খাওয়ায়।আমাদেরকে জামা দেয়।
জানো আমাদের বয়সী সব ছেলেগুলো যা টাকা পায় আঠা খায়।কি সব নেশা করে।খালি পেটে নেশা করে ঘুমায়।তাইজন্য পথশিশুদের দেখলে টাকা দেয় না।বলে ভাগ কুত্তার ছানা।টাকা দিলে তো ছাইপাশ গিলবি।
ওর সাথে গল্পের সময় আমার ব্যাগের টিফিন ওকে খেতে দিই।
জানো কাকিমা…কি একটা রোগ হয়েছে…তারজন্য ট্রেন চলে না।মুখে রুমাল বেঁধে রাখতে হয়।লোক বার হয় না।একটাও বোতল পায় না।
দুর্গাপূজায় আনন্দ করিস।
হ্যাঁ তো পথশিশুদের দুগ্গোপূজাতে খুব আনন্দ।মন্ডপে মন্ডপে ঘুরি।কত জামা…শাড়ি পায়।
শাড়ি পাস কি করে?
ঐ বলি মায়ের জন্য।
তারপর শাড়ি কি করিস।
বিছানা বানায়।
জানো এবার আমাদের টোকাই দের নিয়ে এক দিদি ছোট সিনেমা বানাচ্ছে।
“পথশিশুদের দুগ্গোপূজো”
জানো আমি কার্তিক হব।
বলেছে চারদিন টানা সরস্বতী,লক্ষী,গনেশ,অসুর,দুর্গা সাজতে হবে।
দুবেলা খাবার পাবো।
একটা গান তুলেছি শুনবে কাকিমা
এক মন/কাশবন/দুলছে যে সারি/কবে ঢাক দেবে ডাক দিন গুনছি তো তারি/শিউলি মাখা গন্ধ/আগমনীর সুর/কুমোরটূলির গন্ধ ছড়াল/
বলো বলো দুগ্গা এলো
বলো বলো দুগ্গা এলো….
কাকিমা তুমি আসবে… টোকাইদের মধ্যে জ্যান্ত দুগ্গার আটচালা দেখতে।
তুমি খুব ভালো ।তোমাকে একটা শাড়ি দেব…পূজায় পাবো।এতদিন তো মিথ্যা কথা বলে শাড়ি নিতাম।এবার তো সত্যি মা পেলাম।
গল্প করতে করতে ছেলেটি বলল আসি মা।আমি বললাম করোনার সময়…দুশ টাকা নে…আমি এখানে থাকি না….আমিও তোর মতো কুড়াতে এসেছিলাম।
কেন জানি না বালকটির মুখে মা ডাক শুনে আমার মনে *একটু খুশির জোয়ার এসেছিল।
আমি ওকে যেই বললাম আমিও কুড়াতে এসেছি…বালক বলল আমায়..
“ও তোমার ঝোলা কোথায়” ?
তুমিও বোতল কুড়াও!!
ও তো বোতল কুড়ানো ছাড়া আর তো কোন কাজ জানে না।
আমি বললাম বালককে আজ গল্প কুড়ালাম।এক টোকাই এর জীবনের গল্প।আসি রে ।আমার যদি তোকে নিয়ে যাবার ক্ষমতা থাকত…নিয়ে যেতাম রে।