স্কুল জীবনের ডাইরি
গল্প শুরু করার আগে কয়েকটা কথা বলে রাখা দরকার Epistolary Novel বা পত্রক্ত উপন্যাস আমাদের বাংলা সাহিত্যে তেমন জনপ্রিয় নয়। পত্রক্ত উপন্যাস লেখার ধরন সাধারণ উপন্যাসের চেয়ে ভীষণ আলাদা। এটি সাধারণত লেখা হয় একাধিক চিঠিপত্র, সংবাদ পত্র, ও অন্যান্য দলিলের ওপর নির্ভর করে। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে আমি এটাকে একটু নবিকরণ করলাম। তাহলে শুরু করা যাক।
প্রিয় বন্ধু উদয়, আশা করি তুই খুব ভালো আছিস। তোর সঙ্গে যোগাযোগ নেই বহুদিন হল আসলে কি বলতো নতুন কোম্পানিটা খোলার কাজে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে তোর পূর্বের ইমেইল গুলোরও কোন রিপ্লাই দিতে পারিনি। কিন্তু আজ আর না পেরে তোকে লিখতে বসলাম তোর আমাদের স্কুলের তাপস জোয়ারদার স্যার এর কথা মনে আছে? জানিনা তুই ওনাকে কতটা মনে রেখেছিস কিন্তু আমি ওই চোরের ব্যাথাটা কোনদিনও ভুলতে পারবো না যেটা আমার জীবন বদলে দিয়েছে।
দুদিন আগে কলকাতা গিয়েছিলাম বিশেষ কাজে সেখানে রাস্তায় তাদের সঙ্গে দেখা। আমি ওনাকে দেখে চিনতে না পারলেও উনি কিন্তু আমাকে ঠিকই চিনে গিয়েছিলেন। না চিনতে পারাটাই স্বাভাবিক কারণ যে সূর্যের প্রবল তাপে একসময় গোটা স্কুল থরথর করে কাঁপতো আজ তিনিই নিস্তেজ। ভাবলাম ব্যাপারটা তোকে না জানালেই নয় তাই লিখতে বসলাম। জানি তুইও খুব ব্যস্ত তাই ফোন করে আর ডিস্টার্ব করলাম না। ইতি তোর প্রিয় বন্ধু অমন।
১৮ ই আগস্ট ২০২২: খুব ব্যস্ত থাকায় স্কুলে যেতে পারিনি তবে শুনলাম স্কুল থেকে একটা মারাত্মক ঘটনা হয়েছে। অমনকে স্কুলে ফোন দিয়ে যাওয়ার জন্য তাপস স্যার GST সহকারে প্রবল বেত্রাঘাত করেছেন। তবে যে যাই বলুক মানুষটার গুরুত্ব যে আমার জীবনে ঠিক কতখানি তা বোঝাবার জন্য এই লাইনগুলোই যথেষ্ট,”There are darkness in life and there are lights. And you are one of the lights, the light of all lights..” তার সঙ্গে কথা স্কুল জীবনের মুহূর্ত গুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হলো ৪ঠা আগস্ট, ২০১৯ এর ঘটনা।
৪ঠা আগস্ট, ২০১৯: আজ স্কুলে একটা নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা হলো নতুনভাবে ইন্সপায়ার্ড হলাম। টিফিন তখন সবই শেষ হয়েছে আমি এবং আমার কয়েকজন বন্ধু ক্লাসের দিকে যাচ্ছি হঠাৎ এক শোরগোলের শব্দে মুখ পেছনে ফিরিয়েই দেখি দুটো বড় দাদা মারামারি করছে এবং তাদেরকে ঘিরে বাকি ছাত্ররা ফাইট দেখছে। হঠাৎ দেখি স্যার উপস্থিত হয়েছেন এবং নিঃশব্দে তাদের কীর্তিকলাপ লক্ষ্য করে চলেছেন। তার বড় বড় চোখ দুটো যে রক্ত জবার ন্যায় লাল বর্ণ ধারণ করেছিল তা তার চশমার পুরু কাঁচের মধ্যে দিয়েও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল। তার এই বিভীষিকাময় মূর্তির দর্শন মাত্রই জনসংখ্যা অর্ধেকে পরিণত হলো। যারা থাকে দেখতে পাইনি তাদের উদ্দেশ্যে তিনি একটা শিস দিয়ে উঠলেন ফলে মুহূর্তের মধ্যে মাঠ ফাঁকা! বলাই বাহুল্য আমার মত বাকিরাও তাকে ভয় এবং শ্রদ্ধা উভয়ই একই অনুপাতে করতো।
মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড অমন, তোর ইমেইলটা পড়েছি। শুধু ভালো লাগলো যে জীবনে উন্নতি করছিস। আমিও ভালোই আছি রে। একটা নতুন বই লিখছি স্কুল জীবনের ডায়েরী। আর হ্যাঁ স্যার কিন্তু আমি ভুলিনি। তুমি আমার ইন্সপিরেশন ছিলেন এবং থাকবেন আজও মনে পড়ে দিনটার কথা তারিখ ছিল ১৭ই জানুয়ারি, ২০২৩ যেদিন উনি আমাদের স্কুলটা ছেড়ে চলে গেলেন।