Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » স্কন্দ পুরাণ || Prithviraj Sen » Page 2

স্কন্দ পুরাণ || Prithviraj Sen

দক্ষযজ্ঞে সতী দেহত্যাগ করার পর মহাদেব পাগলের মত সর্বত্র ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। একসময়ে তিনি উলঙ্গ সন্ন্যাসীর বেশে দারুবনে প্রবেশ করলেন। ঋষিদের আশ্রমের পাশ দিয়ে গেলেন।

সেই সময় মুনিঋষিরা কেউ আশ্রমে ছিলেন না। ঋষি পত্নীরা শিবকে এভাবে দেখে পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, কে এই অপূর্ব দর্শন সন্ন্যাসী ভিক্ষুকরূপে এখানে এসেছেন? এঁকে ভিক্ষা দান করা উচিত। তখন তারা ভালো অশ্বাদি তার উদ্দেশে দান করলেন। তাঁদের মধ্যে কেউ লজ্জা ত্যাগ করে বললেন– কে আপনি, ভিক্ষুক বেশে এখানে এসেছেন?

শিব বললেন– আমি ঈশ্বর, বর্তমানে সতীর সঙ্গে আমার বিচ্ছেদ হয়েছে, তাই আমি দিগম্বর হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। সতী ছাড়া কোন রমণীতেই আমার রুচি নেই।

তারপর মহেশ্বর বহু ভিক্ষা গ্রহণ করে পাত্র পূর্ণ করে কৈলাসের পথে অগ্রসর হলে, সকল ঋষি পত্নীগণ মোহমুগ্ধ হয়ে তাঁরই পেছনে পেছনে চলতে লাগলেন; পতি পুত্র-গৃহকার্যাদির কথা ভুলেই গেলেন।

এমন সময় মুনি ঋষিগণ নিজ নিজ আশ্রমে ফিরে এসে দেখলেন আশ্রমে তাদের পত্নীগণ নেই। চারদিকে খোঁজ করে দেখতে পেলেন; তাঁরা সকলে শিবের পিছু নিয়েছেন খুব রেগে গেলেন ঋষিগণ। অভিশাপ দিলেন–তুমি দেবাদিদেব মহাদেব হয়ে আমাদের পত্নীগণকে হরণ করলেন, কাজেই তুমি ক্লীব হও।

মুনিগণ এমন শাপ দিলেন সঙ্গে সঙ্গেই শিবের লিঙ্গ মাটিতে পড়ে গেল। তারপর সেই লিঙ্গ বাড়তে লাগল। অল্প সময়ের মধ্যে সপ্তপাতাল, সমগ্র পৃথিবী এবং অন্তরীক্ষের সকল স্থানে সেটি বেড়ে চলল, তখন জগতের সব কিছুই সেই লিঙ্গে বিলীন হয়ে গেল। তখন মুনি ঋষিগণ তার নাম ‘লিঙ্গ’ রাখলেন। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, ইন্দ্র, বায়ু, অগ্নি লোকপাল সকলে সেই বর্ধিত লিঙ্গ দেখে অবাক হলেন। বিস্মিত হয়ে ভাবতে লাগলেন–এই লিঙ্গের বিস্তার কত? এর শেষই বা কোথায়?

তারপর ব্রহ্মা সেই লিঙ্গের ঊর্ধ্বসীমা দেখার জন্য আর বিষ্ণু নিম্ন সীমা জানার জন্য চললেন। কিন্তু বহুদিন ধরে চেষ্টা করেও উভয়ে সেই লিঙ্গের শেষ দেখতে পেলেন না। তখন উভয়েই ফিরে এলেন। ফিরে আসার সময় ব্রহ্মা মেরুপৃষ্ঠে নামলেন, সেখানে সুরভীর সঙ্গে তাঁর দেখা হল। সেই সুরভী তখন কেতকী গাছের নীচে দাঁড়িয়েছিল।

ব্রহ্মা সুরভীকে জিজ্ঞাসা করলেন- হে সুরভী, শিবের লিঙ্গ ত্রিভুবন বিস্তার করছে। তুমি কি দেখেছ? সেই লিঙ্গের ঊর্ব সীমা দেখবার জন্য আমি গিয়েছিলাম। কিন্তু বহু খোঁজ করেও দেখতে পেলাম না। তাই ফিরে যাচ্ছি। দেবতারা আমাকে জিজ্ঞাসা করলে, আমি কি উত্তর দেব? এখন আমি যদি মিথ্যা কথা বলি, তারা বিশ্বাস করবে না। তাই তোমাকে অনুরোধ করছি– তুমি যদি মিথ্যা সাক্ষ্য দাও, তাহলে আমার সম্মান বাড়ে।

ব্রহ্মার কথায় সুরভী রাজি হলেন, সেই সঙ্গে কেতকীও। ব্রহ্মা তখন আনন্দে দেবতাদের কাছে গিয়ে বললেন– আমি লিঙ্গের উপর তল দেখে এসেছি। অপূর্ব সেই লিঙ্গের মস্তক। সেই লিঙ্গ বিশাল, বিমল, সুদৃশ্য। কিন্তু সেই লিঙ্গ ছাড়া আর কোনো কিছু আছে বলে মনে হয় না।

ব্রহ্মার কথা শুনে দেবতাগণ স্তম্ভিত। এদিকে পাতাল থেকে ফিরে এলেন বিষ্ণু। বললেন–অনেক জায়গা ঘুরলেন অতল, বিতল, সুতল, অনাতল, মহাতল, রসাতল, এমনকি পাতালেও গেলাম, তারপরে স্থান শূন্য বলে মনে হল আমার। কিন্তু সেই লিঙ্গের মূল মধ্য কিংবা শেষ কিছুই দেখতে পেলাম না। এখন আমি বুঝতে পেরেছি মহাদেবই লিঙ্গরূপী, তিনিই এই জগৎ ধারণ করে আছেন, তারই প্রসাদে দেবতা ও ঋষিগণের সৃষ্টি!

বিষ্ণুর মুখে লিঙ্গের কথা শুনে দেবতারা সেই তথ্যকেই সত্য বলে স্বীকার করলেন। তখন বিষ্ণু হাসতে হাসতে ব্রহ্মাকে বললেন– হে ব্রহ্মা, আপনি যদি লিঙ্গের মস্তক দেখে থাকেন তাহলে এই ব্যাপারে কেউ কি সত্য সাক্ষী দিতে পারবে? বিষ্ণুর জিজ্ঞাসার উত্তরে ব্রহ্মা ব্যগ্রভাবে বললেন– এ ব্যাপারে আমার সাক্ষী আছে সুরভী আর কেতকী।

তখন দেবতাগণ সত্য উদ্ঘাটনের জন্য সুরভী ও কেতকীকে ডাক দিলেন। তারা মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে বললেন, ব্রহ্মাদেব লিঙ্গের মস্তক দেখেছেন এবং কেতকী ফুলের দ্বারা লিঙ্গের পূজাও সম্পন্ন করেছেন।

সহসা সেখানে আকাশবাণী হল- হে দেবগণ, সুরভী ও কেতকী যা বলল, সব মিথ্যা কথা। ব্রহ্মা কখনই লিঙ্গের মস্তক দেখেনি। এই লিঙ্গের আদি বা অন্ত নেই।

তখন দেবতাগণ সুরভীকে অভিশাপ দিলেন– হে সুরভী, তুমি যে মুখে মিথ্যা কথা বলেছ, সেই মুখ সর্বদা অপবিত্র থাকবে, আর হে কেতকী, তোমার ফুল সুগন্ধ, কিন্তু আজ থেকে তোমাকে দিয়ে আর কেউ শিব পূজা করবে না।

তারপর সেই আকাশবাণী ব্ৰহ্মাকে উদ্দেশ্য করে বললেন– হে ব্রহ্মদেব, তুমি কিসের জন্য মিথ্যা কথা বললে? এই অপরাধে কেউ তোমার পূজা করবে না।

দেবতাগণ সেই আকাশবাণী শুনে মনে করলেন স্বয়ং শিবই এই অভিশাপবাণী উচ্চারণ করলেন, তারপর সকলে তাঁর স্তব-স্তুতি করলেন এবং ভক্তিভরে লিঙ্গ পূজা করলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *