Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সেদিন এ ধরণীর || Sedin E Dharani by Jibanananda Das

সেদিন এ ধরণীর || Sedin E Dharani by Jibanananda Das

সেদিন এ ধরণীর
সবুজ দ্বীপের ছায়া-উতরোল তরঙ্গের ভিড়
মোর চোখে জেগে জেগে ধীরে ধীরে হোল অপহত,-
কুয়াশায় ঝ’রে- পড়া আতসের মতো!
দিকে দিকে ডুবে গেল কোলাহল,-
সহসা উজানজলে ভাঁটা গেল ভাসি!
অতিদূর আকাশের মুখখানা আসি
বুকে মোর তুলে গেল যেন হাহাকার
সেই দিন মোর অভিসার
মৃত্তিকার শূন্য- পেয়ালার ব্যথা একাকারে ভেঙে
বকের পাখার মতো শাদা লঘু মেঘে
ভেসেছিল আতুর,- উদাসী!
বনের ছায়ার নিচে ভাসে কার ভিজে চোখ
কাঁদে কার বারোঁয়ার বাঁশি
সেদিন শুনিনি তাহা,-
ক্ষুধাতুর দুটি আঁখি তুলে
অতিদূর তারকার কামনায় তরী মোর দিয়েছিনু খুলে!
আমার এ শিরা-উপশিরা
চকিতে ছিঁড়িয়া গেল ধরণীর নাড়ীর বন্ধন,-
শুনেছিনু কান পেতে জননীর স্থবির ক্রন্দন,
মোর তরে পিছুডাক মাটি-মা,- তোমার!
ডেকেছিল ভিজে ঘাস,-হেমন্তের হিম মাস, জোনাকির ঝাড়!
আমারে ডাকিয়াছিল আলেয়ার লাল মাঠ-শ্মশানের খেয়াঘাট আসি!
কঙ্কালের রাশি,
দাউদাউ চিতা,-
কত পূর্বজাতকের পিতামহ-পিতা,
সর্বনাশ ব্যসন-বাসনা,
কত মৃত গোক্ষুরার ফণা,
কত তিথি,- কত যে অতিথি,
কত শত যোনিচক্রস্মৃতি
করেছিল উতলা আমারে!
আধো আলো-আধেক আঁধারে
মোর সাথে মোর পিছে এল তারা ছুটে!
মাটির বাঁটের চুমা শিহরি উঠিল মোর ঠোঁটে,-রোমপুটে!
ধূ ধূ মাঠ,-ধানক্ষেত,-কাশফুল,-বুনোহাঁস,-বালুকার চর
বকের ছানার মতো যেন মোর বুকের উপর
এলোমেলো ডানা মেলে মোর সাথে চলিল নাচিয়া!
-মাঝপথে থেমে গেল তারা সব,
শকুনের মতো শূন্যে পাখা বিথারিয়া
দূরে,- দূরে,- আরো দূরে,-আরো দূরে চলিলাম উড়ে,
নিঃসহায় মানুষের শিশু একা,- অনন্তের শুক্ল অন্তঃপুরে
অসীমের আঁচলের তলে!
স্ফীত সমুদ্রের মতো আনন্দের আর্ত কোলাহলে
উঠিলাম উথলিয়া দুরন্ত সৈকতে,
দূর ছায়াপথে!
পৃথিবীর প্রেত চোখ বুঝি
সহসা উঠিল ভাসি তারকা-দর্পণে মোর অপহৃত আননের প্রতিবিম্ব খুঁজি!
ভ্রূণ-ভ্রষ্ট সন্তানের তরে
মাটি-মা ছুটিয়া এল বুকফাটা মিনতির ভরে,-
সঙ্গে নিয়ে বোবা শিশু-বৃদ্ধ মৃত পিতা
সূতিকা-আলয় আর শ্মশানের চিতা।
মোর পাশে দাঁড়াল সে গর্ভিণীর ক্ষোভে,
মোর দুটি শিশু আঁখি-তারকার লোভে
কাঁদিয়া উঠিল তার পীনস্তন,- জননীর প্রাণ।
জরায়ুর ডিম্বে তার জন্মিয়াছে যে ঈপ্সিত- বাঞ্ছিত সন্তান
তার তরে কালে কালে পেতেছে সে শৈবালবিছানা,- শালতমালের ছায়া।
এনেছে সে নব নব ঋতুরাগ,-পউষনিশির মেঘে ফাগুনের ফাগুয়ার মায়া!
তার তারে বৈতরণীতীরে সে যে ঢালিয়াছে গঙ্গার গাগরী,
মৃত্যুর অঙ্গার মথি স্তন তার বারবার ভিজা রসে
উঠিয়াছে ভরি।
উঠিয়াছে দূর্বাধানে শোভি,
মানবের তরে সে যে এনেছে মানবী!
মশলা-দরাজ এই মাটিটার ঝাঁঝ যে রে,-
কেন তবে দুদণ্ডের অশ্রু-অমানিশা
দূর আকাশের তরে বুকে তোর তুলে যায় নেশাখোর মক্ষিকার তৃষা!
নয়ন মুদিনু ধীরে,- শেষ আলো নিভে গেল পলাতকা নীলিমার পারে,
সদ্য প্রসূতির মতো অন্ধকার বসুন্ধরা আবরি আমারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress