সেদিনের বন্ধু তুই
অনেকদিন পর ফোনটা তোর নাম ভেসে উঠল সুদীপ্ত। আনন্দে লাফিয়ে উঠে তোর ফোনটা ধরলাম।যেন সব যন্ত্রণার অবসান ঘটল সেদিন। আজ কত বছর হয়ে গেছে তুই বিদেশে গেছিস। মনে পড়ে সুদীপ্ত, কলেজ করা শেষ হলে, তুই দাঁড়িয়ে থাকতে আর.জি.কর এর রাস্তায়। দুজনে গা ঘেঁষে ঘেঁষে গল্প করতাম। কত রাস্তা যে এভাবে চলে যেতামহঠাৎ মনে পড়তো বাড়ি ফিরতে হবে। মাকে খুব ভয় পেতাম। শ্যামবাজারের গলিগুলো এখন দেখি, অনেক পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে সুদীপ্ত। তোর অফিসে অনেক কাজ থাকত, তবুও তুই আমাকে অনেকটা সময় দিতিস। আমার কলেজের অনার্সের নোটস লিখতে লিখতে হাত ব্যথা হয়ে যেত, অপূর্ব ছিলে তোর হাতের লেখা। কত লেখা লিখে দিয়েছিলিস। আজও নোটস গুলো সযত্নে রেখে দিয়েছি। মাঝেমধ্যে তোকে দেখবার জন্য তোর অফিস রুমে ঢুকতাম, তোর কলিগদের কাছে অবশ্য তোকে টিপ্পনী শুনতে হয়েছে। তাতে কি, আমরা যে খুব ভালো বন্ধু। বিয়ে করা, কি সংসার করার কথা কখনো মনে হয়নি। শুধুমাত্র বন্ধুত্বের টানে একে অপরের কাছে ছুটতাম। কলেজ স্ট্রিটে ইউনিভার্সিটির পাশে চায়ের দোকানে চা খাওয়া , বইপাড়া ঘোরা,কলেজ স্কোয়ারেএকটু বসাএটাই আমাদের খুব সুখ ছিল। মাঝে মধ্যে আমার সাথে হাসি তামাশা করতিস। সৌমিত্র কথা নিয়ে আমাকে রোজ বলতিস, কবে তোরা পেট পুজোটা করাবি? আর কদিন অপেক্ষা কর, রেজাল্ট আউট হোক হোকতোকে খাইয়ে দেব। তারপর কতদিন গিয়েছি শুধু এক কাপ চা খেতে। তুই বারবার বলতিস আরো কিছু খা। এইভাবে কলেজের দিনগুলো কেটে গেল। ফাইনাল রেজাল্ট আউট হলো, আমাদের বিয়ের যখন ডেট ফিক্সড, হঠাৎ করে তোকে অফিস থেকে বাইরে পাঠিয়ে দিল। আসতে পারলি না আমাদের বিয়েতে। খুব মিস করেছি তোকে জানিস। মাঝে ল্যান্ডফোনে তুই একবার ফোন করে তোর ফোন নম্বরটা দিয়েছিলিস। আমাদের উইশ জানাতে ফোনটা করেছিলিস। ওই নম্বরে কয়েকবার ফোন করেছিলাম, আর তোকে পাইনি। শ্যামবাজারের দাঁড়ালেই আজও তোর আমার বন্ধুত্বের দিনগুলো হাতছানি দিয়ে ডাকে। খুব ভালো লাগছে সুদীপ্ত অনেকদিন পর তোর গলার স্বর টা পেলাম। হ্যাঁ ভালো আছি। তোর ছেলে মেয়ে, স্ত্রী কেমন আছে? আজ আমার একাকীত্ব জীবনে একটু উইশ করিস আমি যেন আনন্দের দিনগুলো কাটিয়ে চলে যেতে পারি। ভালো থাকিস তোরা।