Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সেই টিফিনবক্স || Saswati Das

সেই টিফিনবক্স || Saswati Das

সেই টিফিনবক্স

পরিতোষ স্যার দেখলেন দরজার কোনায় একটা টিফিন বক্স পড়ে রয়েছে। টিফিনবক্সটা উঠিয়ে উনি দেখেন খালি টিফিন বক্সের গায়ে তখনও লেগে রয়েছে ডিম পাউরুটির টুকরো। আজকে স্কুলের টিফিন পিরিয়ডের একটু আগে ক্লাস সেভেনের একটি মেয়ে টিচার্স রুমে এসে নালিশ করে যায় রুমা টিফিনবক্স লুকিয়ে রেখেছে, দিচ্ছে না।
পরিতোষ স্যার ক্লাসে এসে রুমাকে জিজ্ঞেস করলেন-
– রুমা সত্যি করে বলো তুমি কি ওর টিফিনবক্স লুকিয়েছে?
– না স্যার, আমি সত্যি বলছি। আমি জানি না।
– দেখো মিথ্যে কথা বললে কিন্তু শাস্তি পাবে।
– না স্যার আমি নিই নি।
পরিতোষ স্যার তখন মেয়েটিকে বললেন
– ও তো বলছে ও নেয় নি। তুমি কি করে জানলে ও তোমার টিফিনবক্স লুকিয়েছে?
– স্যার ও রোজ আমাদের থেকে টিফিন চেয়ে খায়। ও কোনোদিন টিফিন আনে না। আজকে আমার মা ডিম পাউরুটি টিফিনে দিয়েছিলো। তাহলে আমার টিফিনবক্স আর কে নেবে ও ছাড়া?
– দেখো তুমি যখন ওকে নিতে দেখো নি তাহলে তুমি এ কথা বলছ কেন যে, ওই নিয়েছে? না দেখে কারো নামে দোষ দিতে নেই।
– রুমা কাঁদো কাঁদো মুখে বলল আমি এখন কি খাবো? আমার মা খুব বকবে।
পরিতোষ স্যার মেয়েদের বলে গেলেন তোমরা সবাই তোমাদের থেকে একটু করে টিফিন ওকে দিও।
স্যার চলে যাওয়ার পর সব মেয়েরা রুমাকে ছেঁকে ধরলো
– বল তুই রুমার টিফিনবক্স নিয়েছিস কি না? দেখতো ও কাঁদছে। তোর মা তোকে টিফিন বানিয়ে দিতে পারে না? তুই কেন রোজ আমাদের থেকে টিফিন চেয়ে চেয়ে খাস? লোভা কোথাকার!
রুমা মুখ নিচু করে বাইরে চলে গেল।
এর পর টিফিন পিরিয়ড শেষ হলে আবার ক্লাস চলতে থাকলো, কিন্তু রুমার সঙ্গে আর কেউ কোনো কথা বলল না।
ছুটির ঘন্টা পড়তেই সবাই শোরগোল করে ব্যাগ পিঠে নিয়ে বাড়ির দিকে যেতে লাগলো। পরিতোষ স্যার লক্ষ্য করলেন রুমা সবার শেষে বের হলো। কিন্তু উনি মুখে কিছু বললেন না। ক্লাসরুম ফাঁকা হয়ে গেলে উনি ক্লাসে ঢুকলেন চারিদিক তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগলেন।
– হ্যাঁ ওই তো দরজার কোনায় ওটা পড়ে আছে। উনি কাছে এগিয়ে গেলেন। দেখলেন তখনও ওটাতে ডিম পাউরুটির টুকরো লেগে আছে। তাহলে রুমা সত্যিই টিফিনটা চুরি করে ছিলো।
দুপুরবেলা ওর মুখ দেখেও উনি সে রকমই আন্দাজ করেছিলেন।কিন্তু মুখে কিছু বলেন নি, পাছে রুমাকে সবাই আরো হেনস্থা করে সেই কারণে।
পরিতোষ স্যার স্কুলের অফিসরুমে ফিরে এলেন। রেজিস্টার খাতা দেখে রুমার বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে ঠিক করলেন, বাড়ি ফেরার পথে একবার ওদের বাড়ি হয়ে ফিরবেন।
তখন সন্ধে নেমেছে, উনি রুমার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালেন। বাড়ি বললে একটু বেশি বলা হবে, টালির চাল দেওয়া ব্যাড়ার কোনো রকম একটু মাথা গোঁজার স্থান। সামনে ছোটো একটু বারান্দা মতো জায়গায় প্লাস্টিক দিয়ে ঘেরা। পরিতোষ স্যার বাইরে থেকে রুমার নাম ধরে ডাকলেন।
রুমা বাইরে বেরিয়ে পরিতোষ স্যার কে দেখে থতমত খেয়ে গেল। কোনো রকমে ঢোক গিলে বলল-
– স্যার আপনি ? অমাদের বাড়িতে? স্যার আমি সত্যি কথা বলছি, টিফিনবক্সটা আমিই চুরি করেছিলাম। আমার খুব খিদে পেয়েছিলো। আর কোনোদিন হবে না স্যার, বাড়িতে মাকে বলবেন না। তাহলে আমার পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
– না না আমি কাউকে কিছু বলবো না। তোমার বাবা কি করেন? আমার বাবা নেই স্যার, অনেক দিন আগে আমাদের তিন ভাই বোন আর আমার মাকে ফেলে বাবা আর একটা বিয়ে করে চলে যায়। আর কোনো খোঁজ নেয় নি। মা একটা বাড়িতে রান্নার কাজ করে। ভাই ক্লাস ফাইবে পড়ে আর ছোট বোনটাকে এখনো স্কুলে ভর্তি করে নি। আমার মা খুব কষ্ট করে আমাদের লেখাপড়া শেখাচ্ছে। মা যদি শুনতে পায় আমি চুরি করেছি, তাহলে আমার স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেবে।
– না আমি কিছু বলবো না, তোমার ভয় নেই। এই নাও এই টাকাটা রাখো। স্কুলে যাওয়ার সময় টিফিন কিনে নিয়ে যাবে। আর কারো জিনিস না বলে নেবে না। তুমি শুধু মন দিয়ে লেখাপড়া করে যাও।তোমার মা এতো কষ্ট করে তোমাদের পড়াচ্ছেন তোমরা ওর এই পরিশ্রমের মূল্য দিও। আর হ্যাঁ বই ,খাতা, যা প্রয়োজন হয় নিঃসংকোচে আমাকে বলবে, কেমন। এই কথা কেউ কোনো দিন জানতে পারবে না।এটা শুধু তোমার আর আমার মধ্যে থাকবে। কিন্তু বিনিময়ে তুমি আমাকে এই প্রতিশ্রুতি দাও যে, তুমি মন দিয়ে লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হবে। আর কোনোদিন অন্যের জিনিস না বলে স্পর্শ করবে না।
– আমি কথা দিচ্ছি স্যর আমি কোনদিন কারো জিনিস না বলে নেবো না। আমি পড়ব স্যর আপনি আমার পাশে থাকলে আমি ঠিক পারবো। আমার বাবার কথা আমার সে ভাবে মনে পড়ে না, আমার বাবা যে কাজটা করে নি সেই কাজটা আপনি করলেন। আমি পারবো স্যার, আমি নিশ্চই পারবো।
এর পর কেটে গেছে অনেক গুলো বছর। রুমা স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডিও পেরিয়ে গেছে সসম্মানে। না পরিতোষ স্যার কে আর কোনো দিন রুমা কে বকতে হয় নি। ও পরিতোষ স্যারকে দেওয়া কথা রেখে ছিলো। ও এখন একটা স্কুলে সহশিক্ষিকা পদে যোগদান করেছে। পরিতোষ স্যারও অবসর নিয়েছেন বেশ কয়েক বছর হলো। কিন্তু রুমা স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে নি আজও। আজ শিক্ষক দিবসে রুমা এসেছে তার প্রিয় স্যারকে সম্মান জানাতে।পরিতোষ স্যারের মতো মানুষ আজও পৃথিবীতে আছে বলেই পৃথিবীটা আজও এতো সুন্দর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress