Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সেই অজানার খোঁজে || Ashutosh Mukhopadhyay » Page 11

সেই অজানার খোঁজে || Ashutosh Mukhopadhyay

ফেব্রুয়ারি শেষ হয়ে মার্চ গড়াতে চলেছে। বলা নেই কওয়া নেই সকাল দশটায় সুষমাকে নিয়ে পেটো কার্তিক আমার বাড়িতে এসে উপস্থিত। ওকে অবশ্য বলা ছিল, বউ নিয়ে একদিন যেন আমার বাড়িতে আসে। কিন্তু আসার খবরটা অবধূতের ওখান থেকে একটা ফোন করতে পারত, ডাকে একটা চিঠিও ফেলে দিতে পারত। নতুন বউটা প্রথম এলো, আমি তক্ষুণি বাজারে যাবার জন্য ব্যস্ত হলাম।

সেটা বুঝেই কার্তিক আমাকে চোখের একটু ইশারা করল। খানিক বাদে ওকে নিয়ে আমার ঘরে এসে বসতে বলল, আপনি আমাদের জন্য একটুও ব্যস্ত হবে না, ঘরে যা আছে তাই খাব… বাবা আর মাতাজী জানেন আপনি আমাদের অনেকবার করে ডেকেছেন বলেই আজ আসছি, কিন্তু আসলে দুশ্চিন্তায় পাগল হয়ে আমি আপনার কাছে ছুটে এসেছি— আমার মনে হয় বাবার সামনে বিপদ, আপনার এখানে বসে থাকা চলবে না।

সঙ্গে সঙ্গে আমারও ভিতরে উৎকণ্ঠার দাপাদাপি। কেন, কি হয়েছে?

—যে আত্মীয়কে পাঁচ বছর আগে বাবা জেলে পাঠিয়ে ছিলেন, সে হয়তো শিগগিরই ছাড়া পেতে চলেছে। মাকে ধরে পড়তে তিনিও বললেন কিছু দিনের মধ্যেই ছাড়া পাবে। সে বলে গিয়েছিল, জেল থেকে বেরুলে তার প্রথম কাজ হবে বাবাকে খুন করা —তা বাবা কিছু বলছেন?

—বলছেন না, তিনি যা করছেন দেখেই আমার হাত-পা ভিতরে সেঁধিয়ে গেছে।

—কি করছেন তিনি।

—গত কাল গিয়ে দেখি ভিতরের দাওয়ায় বসে বড় একটা পরিষ্কার ন্যাকড়া আর কি তেল দিয়ে ঘষে ঘষে একটা রিভলবার ঝকঝকে করে তুলছেন।…চামড়ার পাতের মতো খাপে রিভলবারের গোটা কতক গুলীও দেখলাম।

—রিভলবার! আমিও আঁতকে উঠলাম। —রিভলবার তিনি কোথায় পেলেন?

—কি করে জানব। ও সময়ে আমাকে দেখেই তো বিরক্ত। ধমক লাগালেন এ-রকম কাজের মন হলে ব্যবসার বারোটা বাজতে বেশি সময় লাগবে না।

আমি নির্বাক খানিক।—তোমার মাতাজীকেও চিন্তিত দেখলে?

—তেনাদের মুখ দেখে কিছু বোঝা যায়? তবু একটু গম্ভীরই মনে হলো। ভিতরের ভয় আর আবেগে কার্তিক অস্থির হয়ে উঠল। কাতর স্বরে বলল, বাবার বিরাট বিরাট অবস্থার সব ভক্ত আছেন, আমি তাঁদের সক্কলকে দেখেছি—কিন্তু আপনার মতো বন্ধু তাঁর একজনও নেই, আপনাকে তিনি কত শ্রদ্ধা করেন কত ভালোবাসেন সে কেবল আমিই অনুভব করতে পারি —আপনি সার তাঁর কাছে যান, কিছুদিন তাঁকে আগলে রাখুন, আমি এসে আপনাকে এ-রকম বলেছি জানলে আমাকে হয়তো জুতোপেটা করবেন—করুন—তবু আপনি যান সার, আমার মন বলছে বাবার সামনে ভয়ংকর বিপদ!

আমার বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পাওয়ার দাখিল। অবধূত রিভলবার প্রস্তুত রেখে আত্মরক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছেন এ কি কারো কল্পনা করতে পারার কথা! এই ল’ অ্যাণ্ড অর্ডারের যুগে খুন-জখম-হত্যা কিছু কম হচ্ছে না। কিন্তু সেটা যাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ অবধূতে তো তাদের কেউ নন। আত্মরক্ষার জন্য রিভলবার প্রস্তুত না রেখে তিনি আগে থাকতে পুলিশের সাহায্য নিচ্ছেন না কেন। পুলিশের হোমরাচোমরাদের মধ্যে অনেকে তাঁর ভক্ত এ-তো কার্তিকের বিয়ের সময় নিজের চোখেই দেখেছি। আগেও জানতাম। খাতিরের জোরেই পেটো কার্তিককে তিনি পুলিশের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছিলেন।

বউ নিয়ে কার্তিক বিকেলে চলে গেল। আমি পরদিন সকালে ট্রেনে রওনা হলাম। সঙ্গে ছোট সুটকেশে খান-কয়েক জামা-কাপড় আর কিছু প্রাত্যহিক প্রয়োজনের সরঞ্জাম। বাড়িতে বলে গেলাম, ফিরতে দিন-কতক দেরি হলে কিছু ভেবো না, অবধূতকে টানতে পারলে একটু পুরী ঘুরে আসার ইচ্ছে।

বাড়িতে এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়। অবধূতকে কেউ হত্যা করার জন্য আসতে পারে, আত্মরক্ষার জন্য তিনি রিভলবার নিয়ে প্রস্তুত হয়েছেন, আর তার মধ্যে আমি গিয়ে পড়ছি জানলে বাড়ির আত্মজনদের আহার-নিদ্ৰা ঘুচে যাবে।

অবধূত বাইরের বারান্দার চেয়ারে বসেছিলো, কল্যাণী ও-দিক ফিরে তাঁকে কি বলছেন। বাঁশের ছোট গেটের সামনে রিক্স দাড়াতে দুজনেই ফিরলেন। সুটকেশ হাতে আমাকে রিক্স থেকে নামতে দেখে দুজনেই বেশ অবাক। ওঁদের মুখ দেখে উল্টে আমারই অস্বস্তি এখন, কার্তিকটার পাল্লায় পড়ে আমি বড় বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়লাম কিনা কে জানে—কারণ দুজনের কারো মুখে উদ্বেগের ছায়ামাত্র নেই।

দাওয়ায় উঠতে অবধূতই প্রথম বলে উঠলেন, রিক্সায় চেপে সুটকেশ হাতে …কি ব্যাপার?

সপ্রতিভ জবাব দিলাম, ব্যাপার মতিভ্রম, হাওড়া স্টেশনে এসে দূরের যে-কোনো টিকিট কাটার বদলে কোন্নগরের টিকিট কেটে বসলাম… আশা যদি সঙ্গী পাই।

অবধূত আরো অবাক। কোথায় যাবেন ঠিক না করেই শুধু একটা সুটকেশ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন?

—পুরনো দিনের অভ্যাস ঝালানোর ঝোঁক চাপল, লেখা-পত্র নেই এখন, সকাল কাটে তো দুপুর কাটে না—কল্যাণী দেবী তো এখন রিটায়ারমেণ্টের পক্ষে, কিন্তু মুখে বললে তো হবে না, প্রমাণ চাই—চলুন তিনজনে মিলে দিন-কয়েক কোথাও থেকে ঘুরে আসি। কল্যাণীর আয়ত চোখে এখনো একটু বিস্ময়, চেয়ে আছেন। অবধূত গম্ভীর, বললেন, তিনজনে তো আর মেলা হয় না—আপনি ইচ্ছে করলে কল্যাণীকে নিয়ে যেতে পারেন, আমার আপত্তি নেই।

এমন স্থুল রসিকতায়ও কল্যাণীর মুখ লাল হতে দেখলাম না। আমার দিকেই চেয়েছিলেন, এবারে ফিরলেন, তুমি ওঁর কথা বিশ্বাস করছ? অবধূতের নির্লিপ্ত জবাব, আমি হাবাগোবা মানুষ, যে যা বোঝায় তাই বুঝি, তাই বিশ্বাস করি। তুমি যখন করো না, বেরিয়ে একটা রিক্স নিয়ে দোকান থেকে কান ধরে কার্তিককে এখানে নিয়ে এসে যা ব্যবস্থা করার করো। হেসে উঠলেন, আরে মশাই, মিথ্যে কথা বলার সময় যুধিষ্টিরেরও আপনার মতো ধরা-পড়া মুখ হতো কিনা সন্দেহ —আপনি দেখি তার থেকেও কাঁচা।

হাল ছেড়ে ধুপ করে সুটকেশটা মাটিতে ফেলে চেয়ার টেনে বসে বললাম, ঘাট হয়েছে, আর কোনোদিন চেষ্টা করব না—কেবল একটা কথা বিশ্বাস করতে পারেন, সেই কালীপুজোর রাতে আপনি আপনার কর্মের গাছে বিষ ফল কি অমৃত ফল ফলে দেখার অপেক্ষায় আছেন শোনার পর থেকে আমি অস্বস্তির মধ্যে আছি, কার্তিকের বিয়ের পর থেকে আপনাদের জন্য আমার অস্বস্তি আরো বেড়েছে, আর কাল কাতিকের মুখে যা শুনলাম, সমস্ত রাত আমার ঘুম হয়নি—তাই সত্যিই একটা দুরাশা নিয়ে বেলিয়ে পড়লাম যদি আপনাদের টেনে নিয়ে কোথাও বেরিয়ে পড়তে পারি। শুধু অবধূত নয়, কল্যাণীর মুখখানাও অপূর্ব কমনীয় মনে হলো। দুজনেই আমার দিকে চেয়ে আছেন। অবধূত আলতো সুরে বললেন, হ্যাঁ মশাই, এ-দেশের সব লেখকরাই কি আপনার মতো নাকি?

জবাব দিলাম, আমার থেকে ভালো ছেড়ে খারাপ নয়।

অবধূতের সখেদ মন্তব্য, এত দেখলাম, মানুষ আর কটা দেখলাম, কেউ দেবতা বলে কেউ ভণ্ড বলে, রক্ত-মাংসের মানুষ যে, কেউ ভাবে না। স্ত্রীর দিকে তাকালেন, রাগের বদলে কার্তিকদের বরং রাতে এসে এখানে খেতে বলো, ওই হারামজাদার দৌলতেই এঁকে দিন-কয়েকের জন্য কাছে পাওয়া গেল।

আমি তক্ষুণি জোরাল দাবি পেশ করে ফেললাম, আপনার কথার জালে পড়ে আমি আর চুপ করে থাকব না, কিছু করতে পারি না পারি আপনাদের ভালো মন্দের শরিক ভেবে আমাকে সব বলতে হবে।

শোনার মতো কিছু বলার থেকে অন্তরঙ্গ অতিথি অভ্যর্থনার উৎসাহই ভদ্রলোকের বড় হয়ে উঠল। আর এক প্রস্থ চা খেয়ে আমাকে নিয়েই বাজারে যাবার জন্য তৈরি হলেন। স্ত্রীকে বললেন, চান্স যখন পেয়েছ, ভদ্রলোককে একটু ভালো খাইয়ে দাইয়ে পুণ্যি করো—রাতে আমাদের বোতলের জন্য হাড়-ছাড়ানো চিলি মাংস চাই—

আমি জোর দিয়েই বাধা দিলাম, এ-সব নিয়ে এখন ব্যস্ত হবেন না, সব জানতে বুঝতে দিয়ে আগে আমাকে নিশ্চিন্ত করুন, তার আগে আমার কিছুই ভালো লাগবে না।

এবারে কল্যাণীই আগ বাড়িয়ে বললেন, আমাদের কোনো ক্ষতিই কেউ করবে না জেনে নিশ্চিন্ত থাকুন, তবু আপনি এলেন খুব ভালো হলো, আপনি ছাড়া যত লোকই আসুন না কেন উনি নিঃসঙ্গ, কটা দিন চুপ মেরে ছিলেন আজ আপনি আসতেই এত উৎসাহ কেন বুঝছেন না? প্রত্যেক বারই আপনি চলে যাবার পরে বলেন, সব্বাই তাদের ভাবনা আমাদের মাথায় চাপিয়ে দিয়ে যায়, আমাদের কথা ভাবতে কেবল ওই একজনই। যা করছেন করতে দিন—

বললাম, কিন্তু ভেবে করতে পারছি কি, করার সাধ্যই বা কতটুকু!

করার সাধ্য কারোই নেই, করতে চাওয়াটাই আসল। অবধূতকে বললেন, রাতের জন্য তাহলে যতটা পারো হাড় ছাড়ানো মাংস বেছে এনো।

হঠাৎ একটা কৌতুকের কথা মনে পড়ে যেতে অবধূতের দিকে চেয়ে বললাম, হাড়-ছাড়ানো মাংসয় কাজ কি, এক-সময় উনি হাড় চিবুতে ভালোবাসতেন শুনেছিলাম?

উনি বলতে কল্যাণী। অবধূত হা-হা করে হেসে উঠলেন।—সে-তো বিয়ের আগে! বিয়ের পর হাড়ের ওপর এমনি বীতশ্রদ্ধ যে মাংস খাওয়াই ছেড়ে দিয়ে বসলেন।

এটা আজই প্রথম জানলাম। কল্যাণী হেসে মন্তব্য করলেন, দুজনেরই দেখছি রসের দিনের মধ্যে ঘোরা-ফেরা করতে খুব ভালো লাগে।

খবর পেয়ে পেটো কার্তিক বিকেলের মধ্যে সুষমাকে সঙ্গে নিয়ে হাজির। অবধূত ঘুরিয়ে কার্তিককে এক হাত নিলেন। গম্ভীর মুখে সুষমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এখন ক’হাত শাড়ি পরো?

এতদিনে বাবার ধাত কিছুটা বুঝেছে হয়তো সুষমাও। সঠিক না বুঝেও হাসছে অল্প অল্প।

—বাজারে চৌদ্দ হাত শাড়ি পাওয়া যায় কিনা খোঁজ করো, এখন তো শুধু নিজে পরলেই হবে না, আর একজনকেও ঢেকেঢুকে নিরাপদে রাখতে হবে—ও একদিন বোমবাজি করে নিজের মুখ পুড়িয়েছে আঙুল উড়িয়েছে—সে-সব দিন ভুলে যাও।

কিন্তু যার উদ্দেশে বলা সে-ও ত্যাঁদড় কম নয়। নিরীহ মুখে আমার দিকে তাকালো।—বিপদ ভেবে আপনার কাছে ছোটা মানে মেয়েছেলের কাছে ছোটার সামিল বলছেন বাবা…।

—এই হারামজাদা! তোর কান দুটো ছিঁড়ে নিয়ে আসব আমি! ওঁর কথা বলছি না তোর বীরত্ব দেখে অবাক হচ্ছি?

রাত আটটা নাগাদ অবধূত আমাকে নিয়ে বসেছেন। দুজনের এক প্রস্থ করে গেলাস খালি হতে উনি দ্বিতীয়-প্রস্থ রেডি করে কার্তিক আর সুষমাকে খাবার তাড়া দেবার জন্য উঠে গেলেন। ওদের সাইকেল রিক্সার জন্য ছ’সাত মিনিট পথ হাঁটতে হবে, তার পরেও মাইল তিনেক দূরে বাড়ি। ছেলেমানুষ বউ নিয়ে বেশি রাত করা এইদিনে কারোরই পছন্দ নয়। দুপুরের ভারী খাওয়ার পর ড্রিংকের সঙ্গে চাট হিসেবে এখনো যা এসেছে আর আসবে তাতেই আমাদের রাতের আহার শেষ হবে এ-কথা কল্যাণীকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কার্তিক তাকে-তাকে ছিল বোধহয়। তার বাবা উঠে যেতেই তাড়াতাড়ি ঘরে এসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, কি বুঝছেন সার?

—কিছুই বুঝছি না, বহাল মেজাজে আছেন দেখছি।

—ওতে ভুলবেন না, উনি ওই-রকম সবকিছু ঝেড়ে ফেলতে ওস্তাদ, আমি বলছি সামনে খুব বিপদ।

কিন্তু তোমার মাতাজীও তো বলছেন নিশ্চিন্ত থাকতে, তাঁদের কোনো ক্ষতিই কেউ করতে পারবে না।

ঈষৎ অসহিষ্ণু সুরে কার্তিক বলল, মাতাজী তো বাবার থেকেও এক-ধাপ ওপর দিয়ে চলেন.. কেউ মাথার খুলি উড়িয়ে দিলেও সেটা ক্ষতি বলবেন না, বলবেন ভবিতব্য। আপনি সার এসে গেছেন যখন একটু বুঝেশুজে যেতে চেষ্টা করুন, আমি জানি শিগগিরই কিছু ঘটবে।

অবধূত ফিরে আসার আগেই সরে গেল।

ওরা খেয়ে-দেয়ে বিদায় হবার পর কথায় কথায় উনিই প্রসঙ্গান্তরে আসতে আমার সুবিধে হলো। হেসে বললেন, কার্তিকের মুখে রিভলবার সাফ করতে বসেছি শুনে ঘাবড়ে গিয়ে আপনি ধেয়ে-পেয়ে চলে এলেন?

—আপনার হাতে রিভলবার শুনলেও সেটা ঘাবড়ার কথা নয় বলছেন? জবাব না দিয়ে হাসতে লাগলেন।

তাগিদ দিলাম, বলুন এবার কি ব্যাপার…।

গেলাসে একটা ছোট চুমুক দিয়ে বললেন, ছোট-খাটো তো নয়, লম্বা ব্যাপার। কি ভাবলেন একটু, আমার মুখের ওপর চাউনি উৎশুক একটু।

—আচ্ছা, আপনি তো আমাকে নিয়ে দিন-কতকের জন্য কোথাও সরে যাবার মতলব ফেঁদেই এসেছিলেন…এ-দিকে যা ঘটার সম্ভাবনা তার এখনো সাত-আটদিন দেরি আছে, তাহলে চলুন আমাতে আপনাতে কয়েকটা দিন ঘুরেই আসি।

প্রস্তাব শুনে খুশি।—কল্যাণী যাবেন না?

হাঁক দিলেন, কল্যাণী! উনি আসতে গম্ভীরমুখে হুকুম করলেন, রাতের মধ্যেই যেটুকু পারো গোছগাছ করে নাও, কাল সকালেই আমরা কয়েক দিনের জন্য বেরিয়ে পড়ব—ইনি তোমাকে ছাড়া নড়তে রাজি নন, বয়েসকালে তোমাদের দেখা-সাক্ষাৎ হলে মুশকিলেই পড়তাম দেখছি—

অন্তরঙ্গ রসিকতা স্থুল হলেও তার ভিন্ন মাধুর্য। আমি গম্ভীর-মুখেই আর একটু ইন্ধন যোগালাম।-আপনার কথার আমি প্রতিবাদ করছি, আমার বিবেচনায় এঁর বয়েস-কাল এখনো গত হয় নি।

অবধূত হা-হা করে হেসে উঠলেন। হাসছেন কল্যাণীও।

—আ-হা, অবধূতের আক্ষেপ, যাঁরা তোমাকে মাতাজী-মাতাজী করেন তাঁরা যদি এঁর সরস বিবেচনার কথা শুনতেন!…তা কি করবে?

জবাবটা কল্যাণী আমার দিকে চেয়ে দিলেন, নিয়ে যেতে পারেন তো যান, বেশ কিছুদিন ধরে ভিতরটা ওঁর সত্যি সুস্থির নয়, আপনার সঙ্গে গেলে ভালোই থাকবেন।

—আমরা তো যাচ্ছিই, প্রশ্ন আপনাকে নিয়ে।

—উনি খুব ভালো করেই জানেন এখান থেকে আপাতত আমি এক পা-ও নড়ছি না—

অবধূতের গম্ভীর মন্তব্য, ‘আপাতত’, শব্দটা মার্ক করবেন।

কল্যাণী তাঁর দিকে ফিরলেন, কোথায় যাবে ঠিক করেছ?

অবধূত জবাব দিলেন, প্রথমে তারাপীঠ তারপর বক্রেশ্বর। আমার দিকে তাকালেন, আপত্তি নেই তো?

—একটুও না। কোথায় যাওয়া হবে শুনে আমি সত্যি মনে মনে খুশি কল্যাণীর পরের প্রশ্ন শুনে আমি ঈষৎ সচকিত। প্রশ্ন তাঁর স্বামীকে।—তপু ঠিক কবে জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছে খবর পেয়েছ? গেলাসে আবার একটা ছোট চুমুক দিয়ে অবধূত জবাব দিলেন, কাল মঙ্গলবার, তার পরের মঙ্গলবার সকালে।

—দুই একদিন আগেও তো ছাড়া পেতে পারে…?

—পারে। আমি দিন দুই আগেই ফিরব। হেসে আমার দিকে তাকালেন। স্ত্রীর কেমন দুশ্চিন্তা দেখুন আমার জন্য। তপু মানে তপন চ্যাটার্জী হলো একটি ছেলে যার প্রতিজ্ঞা পাঁচ বছর বাদে জেল থেকে বেরিয়ে প্রথম কাজ হবে আমার মতো নরাধমকে এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া—সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষার জন্য সে যদি আসে আসে কেন আসবেই—উনি তাই বলির পাঁঠার মতো আমাকে আগে থাকতে এনে প্রস্তুত রাখতে চাইছেন।

আমার চোখে শংকা উকিঝুঁকি দিয়েছিল কিনা জানি না। কল্যাণী হেসে বললেন, কেন ভদ্রলোককে মিছিমিছি ভাবাচ্ছ—

সঙ্গে সঙ্গে সায় দিয়ে অবধূত বললেন, হ্যাঁ, ভাবনার কি আছে, কার্তিকের মুখে তো শুনেছেন আমিও রিভলভার সাফ করে তাতে গুলি পুরে প্রস্তুত হয়ে আছি!

কল্যাণী হাসতে হাসতে চলে গেলেন! তক্ষুনি বুঝলাম এঁদের মনে কোনোরকম শংকার ছিটেফোটাও নেই।

…বোতলের তরল পদার্থ খুব একটা কাজ করল না, ঘুম আসতে দেরিই হয়ে গেল। বিছানায় শুয়ে আমি কিছু মনে করতে চেষ্টা করছিলাম। মাত্র মাস কয়েক আগে কিছুটা স্বেচ্ছায়ই খবরের কাগজের অফিসের চাকরি থেকে রিটায়ার করেছি। যতদিন ছিলাম, পদস্থ একজনই ছিলাম। প্রায় টানা তিরিশটা বছর সংবাদ-জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তাই কোনো বড় খবর স্মৃতির বাইরে চলে যাবার কথা নয়। এই রক্তক্ষয়ের যুগে যা মনে করতে চেষ্টা করছি তা অবশ্য খুব বড় খবর নয়। তবু যেন ধু-ধু মনে পড়ছে, বছর পাঁচ সাড়ে পাঁচ আগে কাগজে একটা খবর বেরিয়েছিল, কলকাতার কাছাকাছি কোনো জায়গার একজন গৃহী সাধক তাঁর আশ্রিত এক খুনীকে পুলিশের হাতে সঁপে দিয়েছিল যার বিরুদ্ধে শুধু ফার্স্ট ডিগ্রি মার্ডার নয়, মেয়ে অপহরণ ও ধর্ষণ, লুঠ আরসন আর নানারকম অ্যান্টিসোশ্যাল অ্যাকটিভিটিরও অভিযোগ ছিল।.. সন বা বছর মনে পড়ল না, ( পেটো কার্তিক অবশ্য বলেছিল সাতাত্তর সালের গোড়ার দিকের ঘটনা ) আর বিচারে অপরাধীর কি সাজা হয়েছিল তা-ও মনে পড়ল না। কেবল এটুকু শুধু মনে পড়ছে, যে মেয়েকে অ্যাবডাকশান আর রেপিং-এর চার্জ দেওয়া হয়েছে—সেই মেয়েই আসামীর অনুকূলে সাক্ষী দিয়েছিল এবং তাকে নির্দোষ প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিল।

পরদিন সকালের গাড়িতে আমরা রায়পুর হাটে। অবধূত আমাকে তাঁর শ্বশুরবাড়ি অর্থাৎ মোহিনী ভট্টচার্যের বাড়ি দেখালেন—যেখানে ছেলেবেলা থেকে কল্যাণী বড় হয়েছেন। বিয়ের পরও অনেকবার কল্যাণীকে নিয়ে শুধু এই এক জায়গাতেই এসেছেন শুনলাম। ভট্‌ট্চায, মশাই অনেককাল গত, তাই ওঁদের ওখানকার আকর্ষণও শেষ।

একটা হোটেলে দুপুরের খাওয়া সেরে সাইকেল রিক্সয় তারাপীঠ রওনা হলাম। মাইল তিনেক পথ। অপ্রশস্ত নদী দ্বারকার (দ্বারক) ব্রিজ পেরুলে মহাশ্মশানতারাপীঠ। অবধূত জিজ্ঞেস করলেন, আপনি রাতের জন্য হোটেলে বা ধর্মশালায় ঘর নেবেন একটা?

শেষ যখন এসেছিলাম এখানে হোটেল ছিল না। এখন হয়েছে দেখলাম। মস্ত ধর্মশালা অবশ্য আগেই ছিল। জিজ্ঞেস করলাম, এখানে কদিন থাকার ইচ্ছে আপনার?

তা তো জানি না, ভালো লাগলে দুই এক রাত থাকব, নয়তো চলে যাব। দুজনের দুটো সুটকেশ রাখার জন্যও ঘর একটা নিতেই হলো। হোটেলের ঘরই নিলাম। আমাকে ছেড়ে দিয়ে অবধূত তারামায়ের মন্দিরে উঠে গেছেন। হোটেলের খুপরি ঘরে হাত পা ছড়িয়ে খানিকক্ষণ শুয়ে রইলাম। এখানে এলে মনে একটা অকারণ ছাড়া ছাড়া ভাব আসে। ঘণ্টাখানেক বাদে মন্দিরের সামনে এসে দেখি একটা ছাপরা দোকানঘরের সামনে কাঁচা মাটির বাস্তার ওপর টুলে বসে অবধূত আয়েস করে ভাঁড়ের চা খাচ্ছেন। আমাকে দেখে দোকানীকে হুকুম করলেন, বাবুকে, এক ভাঁড় চা দে। আর একটা টুল দেখিয়ে বললেন, বসুন—

বসলাম। চার-দিক যেমন নোঙরা, যেমনি রাজ্যের মাছি খাবারের দোকানে ভনভন করছে, কিছু মুখে দিতে প্রবৃত্তি হয় না। সেটা বুঝেই হয়তো অবধূত বললেন, ফুটন্ত জল ভিন্ন চা হয় না মশাই, নির্ভয়ে খেয়ে নিন, এখানে নার্ভাস হয়েছেন কি পেট বিগড়েছে, মনে একটা তুরীয় ভাব এনে ফেলুন।

রাত্রি সাতটা সাড়ে সাতটার মধ্যে বেশ পরিতোষ সহকারে মাংস রুটি খেলেন, আমাকেও খাওয়ালেন। তারপর বললেন, এবারে আমি শ্মশানে বশিষ্ঠদেবের আশ্রমের চাতালে বসব… ওসব জায়গা আপনার ভালো লাগবে না, হোটেলে গিয়ে বিশ্রাম করুন বা ঘুমোন।

সঙ্গে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলাম, সমস্ত রাত ওখানেই থাকবেন? —তা বলতে পারি না।

আমরা শ্মশানে নেমে এলাম। নদীর পাড়টা আগাগোড়াই শ্মশান। তবু শব নিয়ে শব-বাহকরা বেশিরভাগ এ-দিকেই আসে। এই পরিবেশও যেমন নোঙরা তেমনি পীড়াদায়ক। হাড়-গোড়, শেয়ালে খাওয়া মৃতদেহের অংশ, আর শতচ্ছিন্ন কাঁথা ন্যাকড়া বা জীর্ণ তোষকের ছড়াছড়ি। একপ্রস্থ ঘুরে এসে আমাকে নিয়ে অবধুত চাতালে উঠে বসলেন। বললেন, এখানেই ছিল বশিষ্ঠদেবের সহস্রমুণ্ডীর আসন। বামাক্ষ্যাপাও এখানে বসেই তপস্যা করতেন। ওই আসনের ওপরই এই মন্দির তোলা হয়েছে। শুনি, অনেকে নাকি এই সহস্রমুণ্ডীর আসনে বেশিক্ষণ স্থির হয়ে বসতে পারে না। কিন্তু স্থির হয়ে বসার পক্ষে বড় অসুবিধে অন্য কারণ। মশার উৎপাত। অজস্র মশা মুহুর্মুহু ছেঁকে ধরছে। খানিক বাদে অবধূত হেসে বললেন আপনি হোটেলে চলে যান, বললাম তো আপনার অসুবিধে হবে—ঠাণ্ডা গলায় জবাব দিলাম, ছেলের অসুখের সময় একজনের নির্দেশে আমি পর-পর তিন-রাত এই চাতালের আসনে বসে কাটিয়েছি, জলাহার ফলাহারে থেকেছি।

অবধূত নির্বাক খানিক। তারপর বলে উঠলেন, দিলেন মশাই মনটা খারাপ করে, আপনার ছেলের কথা মনে হলেই আপনার স্ত্রীর মুখখানা আমার চোখে ভেসে ওঠে। আবার খানিক চুপ করে থেকে মন্তব্য করলেন আপনি ভিতরে ভিতরে মানুষটা বেশ শক্তই…।

বসে আছি। হঠাৎ অদূরে শ্মশানের এক-দিক থেকে একটু শোর-গোল ভেসে এলো। আবছা অন্ধকারে দুটো লোক ছুটে বেরিয়ে গেল। আরো জনাকয়েক না ছুটলেও হনহন করে এ-দিকেই আসছে।

অবধূত বললেন, চলুন দেখি কি ব্যাপার—

দুজনে নেমে এলাম। একজনকে থামিয়ে উনি জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে—

দুজন লোক, তাদের স্পষ্টই ভয়ার্ত মুখ। আরো তিনটি লোক দ্রুত এদিকে আসছে দেখলাম। দুজন জ্যান্ত মানুষ দেখে এই দু‘জন একটু যেন আশ্বস্ত হলো। তার ওপর অবধূতের পরনে আর গায়ে ঝকঝকে রক্তাম্বর। হাঁপাতে হাঁপাতে যা নিবেদন করল, তাজ্জব হবার মতোই। কারা একটা মৃতদেহ ফেলে রেখে সংকার না করেই চলে গেছে। হয়তো খুব গরিব, কাঠের খোঁজে গেছে। এরা একদল এসেছিল শিবা-ভোগ অর্থাৎ শেয়ালের ভোগ দিতে। দগ্ধ অর্ধ দগ্ধ, বা মৃতদেহের সামনে ভোগ দিতে পারলে সেটা সব থেকে প্রশস্ত। তাই সৎকার হয় নি এমন একটি মৃতদেহ দেখে খুশি হয়ে সেখানেই তারা শিবা-ভোগ সাজিয়েছিল। একটু বাদে তারা দূরে বসে অপেক্ষা করবে, শেয়ালের ভোজ খাওয়া দেখবে। কিন্তু তার আগেই তাজ্জব কাণ্ড, আপাদমস্তক কাপড়ে ঢাকা শব নড়ছে, একটা হাত বাড়াতে চেষ্টা করছে। তারা শুনেছিল, সৎকার হয় নি এমনি একটি মৃতদেহ নাকি ইদানীং খাবার চায়। ভয় পেয়ে কয়েকজন ছুটে পালিয়েছে। সাহস করে যারা দাঁড়িয়েছিল মৃতদেহকে আরো বেশি নড়াচড়া করতে দেখে তারাও পালাচ্ছে।

অবধূত বললেন, চলুন তো কি ব্যাপার দেখি—আপনার পকেটে টর্চ আছে তো?

টর্চ পকেটেই ছিল। দুজনে এগিয়ে চললাম। শ্মশান বাঁক নিয়ে বরাবর গেছে। গজ বিশেক গিয়েই দাঁড়িয়ে পড়লাম। সামনে আপাদ-মস্তক নোঙরা কাপড়ে ঢাকা দেওয়া একটা দেহই বটে। তার গজ কয়েক তফাতে শাল-পাতায় শিবা ভোগ রয়েছে। টর্চটা আমার হাত থেকে নিয়ে অবধুত ওই দেহের ওপর ফেললেন। দেহ নড়ছে। আবার একটা হাত আস্তে আস্তে চাদরের তলা থেকে বেরিয়ে আসতে লাগল। রুদ্ধ নিঃশ্বাসে চেয়ে আছি।

অবধূত হেসে উঠলেন।-বুঝেছি, ওরে ব্যাটা জ্যান্ত মড়া! উঠবিতো ওঠ নইলে জ্যান্ত চ্যালা-কাঠ দিয়ে এখানে তোকে পিটিয়ে মারব আমি! হাতটা আস্তে আস্তে ভিতরে ঢুকে গেল।

অবৃত প্রায় গর্জন করে উঠলেন, আর তিন সেকেণ্ড, তার পরেই আমি পিটতে শুরু করলাম, আমাকে চিনিস না!

অন্ধকার স্তব্ধ শ্মশানে তারপর একটা কাণ্ডই হলো। এক মূর্তি চাদর ফেলে শোয়া থেকে উঠে বসল। গালভর্তি দাড়ি। চোখ দুটো গর্তে। জীর্ণ, কংকালসার। জ্যান্ত দেখেও অস্বস্তি। টর্চের আলোয় তাকাতে অসুবিধে হচ্ছে, অবধূতের দিকে দু‘হাত বাড়িয়ে জোড় করল।

ধমকের সুরে অবধুত জিজ্ঞেস করলেন, মড়া সেজে পড়ে আছিস কেন শিবা-ভোগ খাবার লোভে?

করুণ জবাব এলো, হ্যাঁ বাবা, বড় গরিব—

—লোককে এ-রকম ভয় দেখিয়ে তুই এই কাণ্ড করিস?

—ভয় না দেখালে যে বাবা কেউ চলে যায় না, শিবা-ভোগ খাওয়া দেখার জন্য দূরে দাড়িয়ে থাকে—ওরা শেয়ালের ভোগ খাওয়া দেখে পুণ্যি করে, আমি জিয়ন মুনিষ খাতি পাই না—

অবধূত ওর মুখ থেকে সরিয়ে টর্চের আলোটা কলাপাতার ওপর ফেললেন। সেই আধ-সেদ্ধ মাংস-ভাত আরো কি-সবের চেহারা দেখেই গা ঘিনঘিন করে,উঠল। আর ওই খাবার জন্য লোকটার দুচোখ জ্বল জ্বল করছে। —উঠে আয়।

চাদরটা কাধে ফেলে আবার হাত জোড় করে লোকটা উঠে এলো।

—আয় আমার সঙ্গে।

লোকটা প্রায় ডুকরে উঠে অবধূতের পায়ে ধরতে এলো।—এই ইট্টিবার ছাড়িন দে বাবা, ধরিন দিলে উয়ারা মু-কে মাইর্যে লাশ ফেলি দিবে, ছাড়িন দে বাবা—

অবধূত থমকে তাকালেন তারপর লালজামার নিচে গোঁজা কাপড়ের থলে বার করে হাত ঢোকালেন। যা বেরুলো তার থেকে একটা পাঁচটাকার নোট তুলে তার দিকে বাড়ালেন।—নে ধর, পিটুনি খেয়ে মরাই বরাতে আছে তোর, ক’দিন লোককে ফাঁকি দিবি—আজ দোকান থেকে ভালো কিছু কিনে খেয়ে নেগে যা লোকটা টাকা নিল! ওর মুখ দেখে মনে হলো একসঙ্গে পাঁচটা টাকা কমই চোখে দেখেছে।

পরদিনই আমরা বক্কোমুনির থানে অর্থাৎ বক্রেশ্বর মহাশ্মাশানে। তখন বিকেল। খোঁজ নিয়ে মন্দিরের চাতাল থেকে অবধূত যে আধ-বয়সী লোকটিকে ধরে নিয়ে এলেন সে-ই হলো কংকালমালী ভৈরবের ডেরা দেখাশুনোর ভার নিয়ে আছে। কর্তাদের অর্থাৎ ভট্টচার্য মশাই আর তাঁর ভাইয়ের ছেলেদের ব্যবস্থা এটা। আজ এটা তাদের তীর্থক্ষেত্র। ফি সপ্তাহে রামপুর হাট থেকে তাদের কেউ না কেউ এখানে এসে ভৈরব বাবা আর ভৈরবী মায়ের পুজো দিয়ে যায়। লোকটার নাম যশোদাকান্ত। অবধূতকে দেখা-মাত্র চিনেছে এবং সাষ্টাঙ্গে প্রণিপাত করেছে। সাগ্রহে মাতাজীর খবর নিয়েছে। জোয়ান বয়সে দু‘বার কলকাতা গেছল আর মাতাজীর সঙ্গে দেখা করেছিল বলল। বড় দুঃখ ছিল একবারও বাবার সঙ্গে দেখা হয় নি। আমাদের নিয়ে সে ডেরার সামনে এসে দাঁড়াতে অবধূতের মুখের অদ্ভুত পরিবর্তন দেখলাম। গম্ভীর শুধু নন, তাঁর প্রাণমন যেন নিজের কাছে নেই। প্রথমে দাওয়ায় মাথা কপাল ঠেকিয়ে প্রণাম করলেন। তারপর দাওয়ায় উঠে সোজা উপুড় হয়ে শুয়ে মেঝেতে কপাল রেখে পড়ে রইলেন প্রায় মিনিট খানেক। উঠলেন। যশোদাকান্ত সামনের ঘরের শিকল নামাতে বাইরে পা রেখে আবারও ঘরের মেঝেতে উপুড় হলেন। এবারে মিনিট দুই।

পরিবেশ গুণ আর এখানকার অনেককিছু অবধূতের মুখে শোনা বলেও হতে পারে, এক অননুভূত ভাবের আবেগে আমিও নির্বাক। বিকেলের আলোয় তখনো টান ধরে নি। ঘরে ধূপ-ধুনো দেবার ব্যবস্থা দেখলাম। সামনের দেয়ালে জটাজুটধারী ত্রিশূল হাতে দীর্ঘাঙ্গ এক নগ্ন তান্ত্রিকের মস্ত ছবি টাঙানো। বলাবাহুল্য ইনিই কংকালমালী ভৈরব। শোনার সঙ্গে মেলে। দেখে মনে হবে এই পৃথিবীর ওপরেই ক্রুদ্ধ বীতশ্রদ্ধ। কিন্তু চোখদুটো ঝকঝকে। হাতখানেক দূরে অবধূতের পরম ইষ্ট ভৈরবী-মা অর্থাৎ কল্যাণীর মা মহামায়ার ছবি টাঙানো। দুজনের মাথার ওপরে মস্ত কালীর ছবি। অবধূত একে একে ছবির পায়ে কপাল ঠেকিয়ে প্রণাম করলেন। আমিও করলাম। তারপর দুজনকে ভালো করে দেখায় মন দিলাম। হ্যাঁ, এই ভৈরবী মা-ও অপূর্ব সুন্দরীই বটে। কিছুটা কল্যাণীরই মুখের আদল। কিন্তু বেশ-বাসের জন্য হোক, বা মাথার চুল চুড়ো করে বাঁধার জন্য হোক, আমার অন্তত মনে হলে। তুলনা করলে কল্যাণীকেই বেশী সুন্দরী বলতে হবে।

অবধূত একবার এঁকে দেখছেন একবার ওঁকে।

মনে পড়ল, বাইরে উগ্ররাগী এই কংকালমালী ভৈরবকে নাকি কল্যাণী শিব-ঠাকুর বলে ডাকতেন, আর তাই শুনে মহাভৈরব গ’ল যেতেন।… আঠারো উনিশ বছরের কল্যাণীর ভিতরে ঢোকার আগে জিজ্ঞেস করতেন, শিব-ঠাকুর, ঠিক-ঠাক মতো আছ? ভিতরে ঢুকব? … সঙ্গে সঙ্গে ভিতর থেকে খুশি-ঝরা দরাজ গলা শোনা যেত, আমি ঠিক-ঠাক মতোই আছি, তোর অসুবিধে হলে একটু দাড়া, বাছালটা কোমরে জড়িয়ে নিই।

…আর একবার কল্যাণী জন্মাষ্টমীর দিনে এই মহাতান্ত্রিককে ফুলের মুকুট চুড়ো আর বাঁশি দিয়ে সাজাতে এসেছিল, বলেছিল, আমার হাতে পড়ে তুমি আজ মূরলীধর হবে। কংকালমালী ভৈরব হা-হা হেসে বলেছিলেন, ঠিক আছে, সাজা—তারপর থেকে রাধিকা হয়ে আমার কোলে বসে আমার সঙ্গে বাঁশী ধরতে হবে—যা ডবকাখানা হয়েছিস—রাধিকাও এমন ছিল না। সাজানোর পরে বজ্র হুংকারে ডেকে উঠেছিলেন, অবধূত! এই শালা ভূত। অবধূত ভিতরে ঢুকে দেখেন ভৈরব-বাবাকে সত্যিই ফুল-সাজে সাজানো হয়েছে, ফুলের মালা, ফুলের বালা, ফুলের বাজুবন্ধ মাথায় শিখী-চূড়া, হাতে বাঁশী। বলে উঠেছিলেন, দ্যাখ, শালা, ভালো করে ছ্যাখ, রাধিকা বলল, ডেকে দেখাও, হিংসায় জ্বলে যাবে… ঠিক বলেছে, জ্বলছিস, হা-হা-হা—

…রাধিকা ( অর্থাৎ কল্যাণী ) কেন বলেছিল হিংসায় জ্বলে যাবে, অবধূত কল্পনাও করতে পারেন নি। ওই একজনের তাঁর জীবনে আসাটা আকাশ-কুসুম স্বপ্ন দেখার মতো, কিন্তু কল্যাণী তখন থেকেই এই ভবিতব্য অব ধারিত জানতেন। সবই অথূতের মুখে শোনা আমার, কিন্তু এই পরিবেশে এসে সেইসব শোনা স্মৃতি আমার কাছেই জ্যান্ত হয়ে উঠছে। অবধূতের স্থির ভাবাবেগ আঁচ করা কঠিন নয়।

যশোদাকান্ত জানান দিল, সন্ধ্যার আগে রোজ এসে সে ভৈরব বাবার এই ঘর আর দাওয়া পরিষ্কার করে, বাবার ঘরে প্রদীপ জ্বেলে ধূপ-ধুনো দিয়ে যায়। ঘরের কোণে দু‘খানা শিতলপাটিও গোটানো দেখলাম। এখনকার কর্তারা এসে বসেন বোধহয়। জলের কুঁজো গেলাসও আছে।

প্রায় আধ-ঘণ্টা বাদে বাইরে এসে অবধূত বললেন, বিয়ের আগে পর্যন্ত আমি এই দাওয়াতেই থাকতাম, এখানেই তিন রাত থাকব… আপনারতো অম্বুবিধে হবে।

জবাব দিলাম, আমি থাকার জন্য আপনার অসুবিধে না হলে আমার তাসুবিধে হবে না।

হাসলেন। খুশিও হলেন মনে হয়। যশোদাকান্তকে জিজ্ঞেস করলেন, হোটেল থেকে আমাদের দুজনের রাতের খাবার এখানে দিয়ে যেতে পারবে?

—যা বলবেন এনে দেব।

—ঠিক আছে, আমরা একটু ঘুরে আসি। তুমি তোমার কাজ সারো, আর রাত আটটা নাগাদ আমাদের খাবার দিয়ে যেও-বলা-টলার কিছু নেই, রুটির সঙ্গে মাছ মাংস তরকারি যা পাও নিয়ে আসবে। শিতলপাটি দুটো বাইরে পেতে রেখো, কুঁজোয় যেন জল থাকে।

কিছু টাকা ওর হাতে দিয়ে অবধূত আমাকে নিয়ে শ্মশানে বেড়াতে বেরুলেন। তাঁর গুরু কংকালমালী ভৈরব যেখানে বসতেন সেই জায়গাটা দেখালেন, সেখানেও কপাল ঠেকিয়ে প্রণাম করলেন।

সন্ধ্যায় লোকালয়ের দিকে এলেন। এ-দিক সেদিক হয়ে একটা নির্জন জায়গায় এসে দেখি সামনে একটা দিশি মদের দোকান। বেপরোয়ার মতো ঢুকে পড়ে দুটো সীল করা পাঁইট কিনলেন। বলাবাহুল্য নির্জলা দিশি।

বেরিয়ে এসে বললেন, ঘাবড়াচ্ছেন কেন, যে দেশের যা—খাসা জমবে দেখবেন।

ফিরে এসে দেখি বাইরের দাওয়ায় পাটি পেতে যশোদাকান্ত আমাদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। বলল, শেয়াল-টেয়াল এসে টেনে নিয়ে যাবে, তাই যেতে পারছিলাম না।

—ঠিক আছে।…ভালো কথা, আগে দুটো মাঝারি সাইজের ভাঁড়, এই ধর টাকা খানেকের ছোলা সেদ্ধ কয়েকটা কাঁচা-লঙ্কা কিছু আদা কুচি, একটা পাতি লেবু আর খানিকটা নুন দিয়ে যাবে।

মনে হলো উদ্দেশ্য বুঝেই লোকটা চলে গেল। আমি মন্তব্য করলাম, যে দেশের যা—

—না তো কি, তিনি এখন নিজের মেজাজে, এই জিনিসের ওপর দিয়েই দ্বারভাঙার কমলাগঙ্গার ধারে কাঁকুড়ঘাটির মহাশ্মাশানে আমার তিন-তিনটে বছর কেটেছে মশাই।

—কিন্তু অভিজ্ঞতার অভাবে আমি তো নার্ভাস হচ্ছি!

—সঙ্গদোষে সব ঠিক হয়ে যাবে। পাটিতে বসে বোতল দুটো সামনে রাখলেন। নিজের গায়ের জামা খুলতে খুলতে বললেন, জামা খুলে ফেলুন, গরম লাগছে—ঘরে হাত পাখাও আছে বোধহয়, যশোদাকান্ত আসুক—সত্যি বেশ গরম লাগছে। যে ঘরে ঢুকতে লোক ভয়ে কাঁপত, যশোদাকান্তর অপেক্ষায় না থেকে আমি অনায়াসে সেই ঘরে ঢুকে গেলাম। একটাই হাত পাখা আছে, সেটা এনে বসলাম।

সরঞ্জাম নিয়ে যশোদাকাস্ত আধঘণ্টার মধ্যেই ফিরল। অবধূত হুকুম করলেন ভাঁড় দুটো ভালো করে ধুয়ে দিয়ে যাও, আর জলের কুঁজোটাও বাইরে রেখে যাও।

যাবার আগে যশোদাকান্ত বলে গেল ঘণ্টা দেড়েক বাদে আমাদের রাতের খাবার দিয়ে যাবে, মাংসও পাওয়া যাবে।

অবধূত বললেন, ভেরি গুড—এসো।

দিশি জিনিসের গন্ধটা আমার ভালো লাগছে না। কিন্তু অবধূত দেখলাম নির্বিকার। স্কচ হুইস্কি আর মাংসের চাট যে পরিতৃপ্তি নিয়ে খান, এই দিশি বস্তু আদা-ছোলা কাঁচা লংকা আর নুন সহযোগে সেই পরিতৃপ্তি নিয়ে খেয়ে চলেছেন। অন্ধকার রাতের এই পরিবেশ বড় অদ্ভুত লাগছে আমার। অনেক দূরে একটা চিতা জ্বলছে। এ-দিক ও-দিক থেকে শেয়াল ডেকে উঠছে। দাওয়ায় একটা লণ্ঠন জ্বালিয়ে ঘরের দরজার সামনে রাখা হয়েছে। পুরনো দিনের কথাই বেশি বলছিলেন অবধূত। রোগীরা কতদূর পর্যন্ত লাইন করে দাড়াতো, ভৈরবী মা কোথায় কি ভাবে বসতেন, তাঁর চোখের দৃষ্টিই এমন এমন ছিল যে কত লোক ভাবত ওই চোখ দিয়েই মা অর্ধেক রোগ তুলে নিচ্ছেন। অবধূতকে নিয়ে কল্যাণী কত ভাবে তার মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করার ফিকির খুঁজে বেড়াতো, ইত্যাদি।

প্রথম পাঁইট শেষ হবার পর দ্বিতীয় বোতল খোলা হতে আমি জিজ্ঞেস করলাম, বিয়ের পর আর আপনি এখানে মোটে আসেন নি?

—গোড়ায় কল্যাণীকে নিয়ে বছরে দু‘একবার রামপুরহাট আসতাম, তখন দুই এক ঘণ্টার জন্য এখানেও ঘুরে যেতাম। শেষ এই দাওয়ায় বসে এক রাত কাটিয়েছি সেই একষট্টি সালে আরো বাইশ বছর আগে… আমার ছ’ বছরের ছোট বৈমাত্রেয় ভাই সুবীর—সুবুকে নিয়ে।

মনে পড়ল ঘর ছাড়ার সময়ে ওঁদের সংসারের বিমাতাটি ছিলেন কড়া স্কুল মাস্টার। তাঁর দুই ছেলে আর এক মেয়েকে কড়া শাসনে মানুষ করতেন, এঁটে উঠতে পারতেন না কেবল এই সতীনপো‘র সঙ্গে। তাঁর নালিশে বাবার হাতে এই ছেলেকে যথেষ্ট নির্যাতন ভোগ করতে হতো। কল্যাণীকে বিয়ে করে কোন্নগরে বসবাসের সময় ওই সংসারের সঙ্গে অবধূতের নিশ্চয়ই আবার যোগাযোগ হয়েছিল, নইলে বৈমাত্রেয় ভাইকে তিনি পেলেন কোথায়? উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার এই বৈমাত্রেয় ভাইয়েরও বুঝি এ লাইনে মন ছিল?

ভাঁড়ে একটা বড় চুমুক দিয়ে মুখে দু‘চারটে ছোলা ফেলে চিবুতে চিবুতে অবধূত জবাব দিলেন, তখন এক কল্যাণীর দিকে ছাড়া ভাইয়ের আর কোনো দিকে মন ছিল না, কল্যাণীর দিক থেকে ওর মন ফেরানোর চেষ্টাতেই এক রাতের জন্য এই ডেরায় তাকে ধরে নিয়ে এসেছিলাম।

আমি হাঁ করে চেয়ে রইলাম খানিক। তারপর নড়ে চড়ে সোজা হয়ে বসলাম। প্রশ্নটা আপানই বেরিয়ে এলো, বলেন কি… বাষট্টি সালে মানে তখনকার কত বয়েস?

—আমার চুয়াল্লিশ, ভাইয়ের আটতিরিশ আর কল্যাণীর পঁয়তিরিশ—ভাই অবশ্য সেটা কখনো বিশ্বাস করে নি, কল্যাণীর বয়েস ও কখনো কুড়ির বেশি ভাবে নি—বিয়ের সাত বছর বাদে প্রথম ও কল্যাণীকে দেখেছিল, তখনই নিজের মাকে বলেছিল, দাদা এত বড় তন্ত্রসাধক হয়েছে যে তার মেয়ের বয়সী একটা মেয়েকে বিয়ে করে এনেছে—পঁয়তিরিশেও একই রকম দেখে অবশ্য ওর ভুল কিছুটা ভেঙেছিল, কিন্তু মাথাটা সেই জন্যেই আরো বেশি বিগড়েছিল।

আবার ভাঁড়ে একটা চুমুক দিয়ে শরীরে ছোট একটু ঝংকার তুললেন। সেটা তরল পদার্থের কারণে হতে পারে, আবার অপ্রিয় স্মৃতির আলোড়নেও হতে পারে। গলার স্বরে খেদও স্পষ্ট একটু, যেমন কপাল, হতভাগা চোখ দিতে গেল কিনা কল্যাণীর দিকে, চেষ্টা করেও ফেরানো গেল না … যাবে কি করে তাকে পাবার অন্ধ আক্রোশে তখন যে কাঁধে শনি চেপে বসেছে ওর।

…প্রসঙ্গের শুরু এখান থেকে হতে পারে আমার কল্পনার মধ্যেও ছিল না। খুব ঢিমে তালে অতীতের ওপর থেকে একটা পর্দা সরে যেতে লাগল। একদিনে নয়, দূরের সেই চিত্র আমার চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠতে আরো তিন রাত কেটে গেল। তার কারণ রাত না হলে অবধূতকে ঠিক বলার মুডে পাওয়া যায় না। আবার রাত এগারোটা না বাজতে একলা তিনি শ্মশানে চলে যান। রাত এগারোটা অবশ্য এই পরিবেশে গভীর রাত্রি। কখন ফেরেন টের পাই না।…সকাল থেকে আমি রাতের এই দুই আড়াই ঘণ্টার অপেক্ষায় থাকি। নিজেই দুটো দিশি বোতল কিনে রাখি। যশোদাকান্ত আনুষঙ্গিক সব দিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর সব নিয়ে পাটি পেতে প্রস্তুত হয়ে দাওয়ায় বসি। অবধূত তাঁর খুশি মতো শুরু করেন আবার খুশি মতোই চুপ মেরে যান। তখন আর তাগিদ দিয়ে লাভ হয় না। আবার পরের সন্ধ্যার প্রতীক্ষা।

…এবারে আমি অবধূতের-জীবনের আর একটি অধ্যায় পাঠকের সামনে তুলে ধরতে পারি। সেই সঙ্গে দিব্যাঙ্গনা স্থির যৌবনা অধ্যাত্ম তেজের ঘরের মেয়ে কল্যাণীর শান্ত জীবনের আর একটি অনাবৃত দিকও। এঁদের একজনকে ছেড়ে আর একজন কত যে অসম্পূর্ণ সেটা এই মহাশ্মশানে কংকালমালী ভৈরবের ডেরার দাওয়ায় বসে যত অনুভব করেছি, ততো আর কখনো করি নি।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *