সুখের সংসার
‘এই তো যেন সেদিন’ আঁতুড়ঘরে দাইমার চিৎকার কর্তা মা শীঘ্রই গরম জল দিন। আপনাদের ঘরে উল্টো ভাবে ছেলে আসছে।তারপর গলায় পৈতে জড়িয়ে বাবুর আবির্ভাব! কান্নাকাটির বালায় নেয়।যেন পৃথিবীটা খুব চেনা।তারপর শিশুর বাবা ডঃ শ্রেয়মের আবির্ভাব। উনি দাইমাকে ধন্যবাদ জানান।যে বাচ্চার পা আগে নামে মা ও বাচ্চার জীবন সংশয়ের সম্ভাবনা থাকে। বাচ্চার বাবা ডাক্তার তবুও তার জন্ম হয় দাইমার হাতে।ঝড় বৃষ্টির জন্য ডাক্তারবাবুকে বাড়ির লোকেরা যোগাযোগ করতে পারেনি।
ডাক্তার ছেলেকে উল্টিয়ে দিতে কি কান্না!!
আজো সেই কান্না মৌসুমীর স্টেপিসে অনুরণন করে। স্বাভাবিক নিয়মে শিশুর ক্রমবিকাশ ঘটে।
মা – বাবার একমাত্র সন্তান প্রিয়ম খুব আদরে স্বাভাবিক ভাবে বড় হয়।যতটা পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারে, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অনেক সময় ভুল করে বসে।বাবা তাই ছেলেকে বলত জন্মের সময় আসার তাড়া ছিল তাই বোধ হয় তাড়াহুড়ো পড়াশোনাতে।
ওই প্রিয়ম বাবা – মাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারত না।সব কিছু মাকে ভাগ দিয়ে খেত।এরপর বাবার মতো ডাক্তার হয়।এম.এস করবার সময় প্রিয়মের বাবা হঠাৎ ডঃ শ্রেয়ম হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।
প্রিয়মের মা মৌসুমী একা হয়ে যান। সারাদিন স্কুলে সময় কেটে যায়। সন্ধ্যার থেকে সময় কিছুতেই কাটত না। কান্নাকাটি করতেন।প্রিয়ম তাই নিজের পছন্দের বান্ধবীকে বিয়ে করে। বাড়িতে সদস্য বাড়লে মায়ের ভালো লাগবে। কিন্তু বৌমা স্নিগ্ধা ও ডাক্তার।এখন দুজনেই সর্বক্ষণ ব্যস্ত।ওরা ভাবতে থাকে মাকে কিভাবে ভালো রাখবে। তাছাড়া মায়ের তো সামনের মাসে স্কুলের শিক্ষকতা জীবনের অবসান হবে।তারপর কি করবেন!!
বাবা কেন যে চলে গেল!মা তো এবার ডিপ্রেসানে চলে যাবে!!
স্নিগ্ধা এরমধ্যে ভেবে এক দারুণ ব্যবস্হা করে ফেলে।মাকে জোড় করে মেসোর সরলাশ্রমে পাঠিয়ে দেবে।
যেখানে অবলা নারীরা থাকে।হাতের কাজ করে।গান,নাচ, আবৃত্তি করে হৈহৈ করে জীবন কাটায়।তারপর কি করে মাকে কৌশলে পাঠাবে তার ছক কষে বরকে জানায়।বর খুব খুশি।প্রিয়ম বলে
স্নিগ্ধাকে মা রাজী হবেনা। স্নিগ্ধা বলে কোথায় যাচ্ছি কিছুতেই বলব না ।প্রথমে মলে যাব।তারপর সরলাশ্রমে কৌশলে ছেড়ে দিয়ে আসব।
দেখতে দেখতে দিন এগিয়ে যায়। মৌসুমী অবসর নেন শিক্ষকতা জীবন থেকে।এরপর খুব চুপচাপ হয়ে যান। কাজের মাসীর সাথে খিটমিট করে অকারণে।
ওরা হাসপাতালের কাজ শেষ করে ফেরে রাত নয়টায়।তখন মা গ্যাকগ্যাক করে শব্দে খবর শুনছেন। ছেলে বৌকে দেখে ও দেখেন না। স্নিগ্ধা গলা জড়িয়ে মাকে আদর করে।তারপর দুজনের কত গল্প শুরু হয়।
ডিনার করেও শ্বাশুড়ি বৌমার গল্প চলে।প্রিয়ম ভাবে সারাদিন ডাক্তারি করে কি করে স্নিগ্ধা শক্তি পায়। পরদিন শপিং মলে স্নিগ্ধা শ্বাশুড়িকে নিয়ে কিছু শাড়ি কিনে প্রায় জোর করে সরলাশ্রমে কাজ আছে বলে নিয়ে যায়।ওখানে প্রায় ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে আসে।মা ঘুরে ঘুরে দেখো। একটা পরিষ্কার ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে। আমাদের কাজ আছে। চিন্তা করো না আসব। বৌমা আমার মোবাইল ছাড়া সঙ্গে কিছু নেই। তোমাদের আমি বোঝা হয়ে গেছিলাম। এইভাবে রেখে দিয়ে চলে গেলে।তোমরা ভাবছ আমি একা বাড়ি ফিরতে পারব না।ইস তোমাকে মেয়ের মতো ভালো বেসেছিলাম!
“এই তো যেন সেদিন’ প্রিয়ম জন্মাল…সেই কান্না স্টেপিসে স্কুলের ছুটির ঘন্টার মতো বাজতে থাকে।
নিজের মনে বলতে থাকে আরে আমার স্বামী ডাক্তার ছিলেন ও আমি শিক্ষিকা। তাকেও বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিলি। সারাদিন সব অবলা,বৃদ্ধাদের সঙ্গে কাটিয়ে মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছিল মৌসুমীর। হঠাৎ একজন এসে বলে মাসীমা আপনার ছেলে বৌমা নিতে
এসেছেন।হৈহৈ করে
স্নিগ্ধার আগমন।মা কেমন কাটলো সারাদিন??
কাল পরশু আমাদের ছুটি আবার পরশু এসো।
শ্বাশুড়ি ডাক্তার বৌমা র কান টেনে বলে আমি সারাদিন থাকব না এখানে।না মা .. তোমার ছেলে বৌমা থাকতে তুমি একেবারে থাকবে কেন!
খুশি মতো আসবে ও যাবে। এবার থেকে নিজে একা আসবে যাবার সময় আমরা নিয়ে যাব। দরকার পড়লে কোনদিন থেকে যেতে পারো। ভাবছি তোমাকে এখানে আবৃত্তির দিদিমনি করে নিতে বলব।
সবাই মাকে টানাটানি করছে দিদি আজকে থেকে যাও।মা স্নিগ্ধাকে বলে আজ থেকে যাব।কাল বিকেলে গাড়ি পাঠিয়ে দিও। স্নিগ্ধা বলে না মা কাল আবার এসো। তোমার প্রেসারের ওষুধ তো কাল সকালে খেতে হবে। এবার থেকে রোজ চলে এসো। এই সরলাশ্রমের দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে।এই সরলাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা আমার ছোট মেসো। স্নিগ্ধা প্রিয়মকে বলে দেখো মা গান গাইছে।প্রিয়ম মাকে বলে গাড়ি চালাচ্ছি একটু জোড়ে গান করো।
“তোরা যে যা বলিস ভাই আমার সোনার হরিণ চাই”
সত্যি মায়ের ডিপ্রেসান কেটে গিয়ে ছিল।নিজেই ছটফট করেন কতক্ষণে সরলাশ্রমে যাবেন।সবার সাথে আনন্দে কাটাবেন।ঘরে ঘরে এরকম মিষ্টি সম্পর্ক গড়ে উঠুক বৌমা ও শ্বাশুড়ির।