সুখী গৃহকোণ
কাল রাতের থেকেই যা বৃষ্টি শুরু হয়েছে,টানা বৃষ্টিতে পথে ঘাটে জল জমে গেছে।এখন এই এক হয়েছে। নিম্নচাপ আর নিম্নচাপ। এক নিম্নচাপ কাটতে না কাটতেই আর এক নিম্নচাপ হাজির। এখন আকাশ দেখে বোঝার উপায় নেই শরৎকাল না বর্ষাকাল! ঘুম থেকে উঠেই বৃষ্টিস্নাত সকাল দেখে মনটা দোটানায় রয়েছে। যদিও একটা ভালো সাইজের ইলিশ মাছ পাওয়া গেছে সেটা দিয়ে খিচুড়ি আঃ, একদম জমে যাবে, কিন্ত শরতের আকাশে এরকম মেঘের ঘনঘটা, টানা বৃষ্টি এসব দেখলে মনটা ব্যাজার হয়ে যায়। তার মধ্যে এই বৃষ্টি মাথায় করে যদি অফিস যেতে হয় তাহলে তো কথাই নেই। ঘুম থেকে উঠেই ভাবছি কি উপায়ে অফিসটা ছুটি নেওয়া যায়।
ফোনটা হাতে নিয়ে বস্ কে ফোন করব কিনা ভাবছি এর মধ্যে দেখি বসের ফোন-
– সান্যালবাবু আজকে অফিসে ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে অফিস ছুটি করার কথা কিন্তু ভুলেও ভাববেন না।
– ধুৎতর!এই বস্’টা কি অন্তর্যামী! সবে ভাবছিলাম আজকে ছুটি নিয়ে জমিয়ে খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ ভাজা খাবো। সকালেই তো মাছ-ওয়ালা ছেলেটা একটা বড় সাইজের পদ্মার ইলিশ বাড়িতে দিয়ে গেছে, কোথায় সেটা দিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজ সারবো, তা না, দিলো সব রস ভঙ্গ করে।
মনে মনে বসের সব রকম অনিষ্ট কামনা করে অফিসের জন্য রেডি হতে লাগলাম। গিন্নী দেখে বলল-
– কি গো তুমি যে বললে বৃষ্টি পড়ছে আজ অফিস যাবে না? তাহলে আবার রেডি হচ্ছ যে?
– কি বলি বল! ওই বাঁদর বস্’টা আজকেই মিটিং ডেকেছে। আরে বাবা তুই তো একটা দামী গাড়ি হাঁকিয়ে আসবি; বলি এই মানুষগুলো যাবে কি করে,যারা বাসে ট্রামে অফিস যায়? একটু তো বিবেচনা থাকা উচিৎ না কি?
সান্যালবাবু রাগে গজ গজ করতে করতে অফিসের জন্য রেডি হতে লাগলেন।
-কই গো খিচুড়ি আর মাছ ভাজা হয়েছে?আমার তো অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। শুনলে না বস আজকে মিটিং ডেকেছে!
– খিচুড়ি তো এখনো হয়নি; সবে বসিয়েছি। আর মাছ টা তো এখনো ধোয়া হয়নি।
– সকাল থেকে কি করো? দুটো রান্না তাও সময় মতো করতে পারো না?
– তুমি তো আমাকে সকালে বললে, অফিস যাবে না, দুপুরবেলা গরম গরম খিচুড়ি আর মাছ ভাজা খাবে। তাইতো আমি একটু দেরি করে রান্না শুরু করেছি। তুমি তোমার বসের রাগ আমার উপর মেটাচ্ছ?
সন্যালবাবুর স্ত্রী রাগ করে রান্নাঘরে চলে গেল।
একটু পরে একবাটি চিঁড়ে, দুধ, কলা নিয়ে এসে বলল- -নাও এটা খেয়ে অফিস চলে যাও। বাড়ি এসে রাতে খিচুড়ি আর মাছ ভাজা খেও।
– সন্যালবাবু ওই খাবার দেখে তেলে বেগুন জ্বলে গেলেন; গিন্নিকে রাগ দেখিয়ে বললেন দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পুষেছি, ও সব তুমি খাও, আমি খাবো না।মুখে রক্ত তুলে আমি খেটে পয়সা উপার্জন করব আর আমার বেলা চিঁড়ে, দুধ, কলা?
সান্যাল বাবু রাগে গজগজ করতে করতে বাড়ি থেকে বেরোতে বেরোতে শুনতে পেলেন গিন্নী বলছে-
– হ্যাঁ আমিই তো কাল সাপ উনি রোজগার করেন বলে ওনার খুব মেজাজ না! আমাকে যা না তাই বলা! এই আমি আজ বাপের বাড়ি চল্লাম, আমি আর এখানে ফিরে আসবো না। সারাদিন রান্নাঘরে ওনার ভালোমন্দ রান্না করে খাওয়াই তাতেও বাবুর মন ওঠে না! এবার দেখি কে করে খাওয়ায়!
সন্যালবাবু মনে মনে প্রমাদ গুনলেন, এখন যদি গিন্নী রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যায় তাহলে ওকে অনেক সাধ্য-সাধনা করে ফিরিয়ে আনতে হবে।রাগ ভাঙাতে অনেকগুলো গাঁটের কড়ি খসাতে হবে। সোনা-গয়না বা নেহাত একটা শাড়ি না নিয়ে কিছুতেই তার মান ভাঙবে না কিন্তু এখনতো উপায়ও নেই অফিসে বড্ড দেরি হয়ে যাচ্ছে। তবু সান্যালবাবু একটু মেকআপ দেওয়ার চেষ্টা করলেন-
– আরে আমি তোমাকে কি কাল সাপ বলতে পারি! যা বলেছি ওই হতচ্ছাড়া বসের উপর রাগ করে। লক্ষ্মীটি রাগ করো না। তুমি এমন করে রাগ করলে আজকে মিটিংয়ে গিয়ে সব কিছু ভুল হয়ে যাবে,তখন তো চাকরিটা ও চলে যেতে পারে! তুমি হলে গিয়ে আমার ঘরের লক্ষ্মী;তুমি কখনো কাল সাপ হতে পার?
বলে বউয়ের গালে একটা আলতো চুমু খেয়ে নিলেন।
ব্যাস সব রাগ গোলে জল।
গিন্নী অদূরে গলায় বলল
– তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে। আজ যা বৃষ্টি ছাতা নিতে ভুলো না। রাত্রে জমিয়ে খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ ভাজা খাওয়া হবে।
সন্যালবাবু শান্তির নিশ্বাস ফেলে ছাতা মাথায় অফিসের দিকে রওনা হলেন।।