চৌধুরীদের সামিয়ানা
বাইরে সেদিন হলো আনা ;
সবাই বলে এ উহারে—“ব্যাপারটা কি, ব্যাপারটা কি ?
চৌধুরীদের ছোট মেয়ের বিয়ে নাকি !”
কেউ বা বলে —-“হয়তো নাতির অন্নপ্রাশন—
হচ্ছে বিপুল তাই আয়োজন |”
বল্লে কেহ ফিস্ ফিসিয়ে মিহিন সুরে,—-
“চৌধুরীদের মেজ ছেলে হয়তো আজি
আস্ ছে ফিরে বিদেশ ঘুরে |”
কৌতূহলে স্কুলের ছেলে জুটল সবাই দলে দলে,
এ উহারে ডেকে বলে—-
“যাত্রা হবে রাত্রে আজি আসতে হবে সন্ধ্যাবেলা !”
আশে পাশে জম্ লো বহুলোকের মেলা |
হাটের লোকে , ঘাটের মাঝি , ইষ্টিশানের যতেক কুলী
কাজ কর্ম্ম সকল ভুলি’
সবাই হলো সেথায় জড়ো |
যতেক জোয়ান , ছোট বড় |
সবার মুখে একই কথা, হদ্দ ভেবে সবাই তারা,—–
সবাই হোলো ভেবে সারা |
ভীড়ের মাঝে দাঁড়িয়েছিল পাড়ার প্রচীন দীনু বুড়ো—-
নিতাই এসে বল্লে তাঁরে, “ ব্যাপার কিহে বুঝ্ ছো খুড়ো?”
বল্লে আরো হেসে নিতাই
“ —- — অনেক দিনের পরে এবার পড়বে পেটে মন্ডা মিঠাই,
সুঁট্ কে ভায়া আছি মরে’,
ছা-পোষা লোক , জুটবে বেশী কেমন করে’ !”
ও দিকেতে লাগায় বাজি গদাই এবং পাড়ার হেবো—
বল্লে —“ যে ঠিক্ বল্ বে তারে পাঁচটি টাকা ইনাম দেব |”
গদাই বলে—“ চৌধুরী- বৌ ভাঙ্গবে ব্রত রাত্রে আজি |”
বল্লে হেবো —“মানতে আমি একটুও তা নইক রাজী |”
“ আসবে আজি জমিদারের জামাই”
ভীড়ের থেকে চেঁচিয়ে বলে রামাই |
এমন সময় তর্ তরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে এক্কেবারে
চৌধুরীদের নায়েব মশাই নেমে এলেন বাইরে দ্বারে |
সবাই বলে নিশেষ ফেলে —“ এবার সকল যাবে জানা
আজ্ কে কেন বার হোল এই বিরাট বিপুল সামিয়ানা |”
সাহস করে’ এগিয়ে তখন বল্লে গাঁয়ের নন্দ-গোঁসাই—
“সামিয়ানা বাইরে কেন, ব্যাপারটা কি নায়েব মশাই |”
কাষ্ঠ হেসে যষ্টি ঠুকে বল্লে তখন নায়েব মশাই—-
—“ উই ধরেছে সামিয়ানায়, — বাইরে রোদে দিয়েছি তাই |”