Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সাবধান || Rana Chatterjee

সাবধান || Rana Chatterjee

বলি ও বৌমা এত করে বলছে যখন মেয়েটা,ওকে তুমি বরং রান্নার কাজে জোগাড়ে হিসেবে রেখেই দাও বুঝলে!বাড়ির বয়স্কা দয়ালু মানুষটার কথায় কিছুটা যেন আশ্বস্ত হয়ে অভুক্ত,শীর্ণকায় ময়লা চেহারার মেয়েটার খানিক প্রাণ এলো।অন্যদিকে সংসারের কাজ করতে করতে শাড়ির আঁচলে ঘাম মুছে হাজির হয়ে বৌমা বললেন,”কিন্তু মা, চিনি না জানিনা এমন একজন অপরিচিতাকে ঘরে ঢোকানো কি ঠিক হবে !আপনার ছেলে শুনলে যদি রেগে যায়! কি হতে পরে আশঙ্খার কথাটা আস্তে করে কানে ভাসিয়ে দিলো  রুপমা শাশুড়ি মাকে।

সে ঠিক আছে বৌমা, বাবান এসে রাগারাগি যদি করে তুমি আমার নাম বলো। আমি দেখছি কিভাবে সামলে নেওয়া যায়।তুমি বেচারিকে আগে তোমার কোনো পোষাক পারলে দিও।এর পর হেঁকে বললেন,আয় ভেতরে ,যা হাত পা ধুয়ে বারান্দায়। আর শোন মেয়ে,খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই,যা বোস বৌমনি খাবার আনছে। চুপ না থেকে আবার হাঁক দিলেন ঘরের ভেতরে!শুনছো বৌমা ওকে দুটি গরম ভাত দাও তো।

খানিকটা চোখে তন্দ্রা আসতে মিনিট কুড়ি ঝিমিয়ে অনুরাধা দেবী বাতের ব্যথায় খুঁড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে এলো।ও মেয়ে খেয়েছিস তো!আয় এদিকে ,এমন করে রাগ দেখিয়ে ঘর কেউ ছাড়ে নাকি!চারিদিকে কি সব দিনকাল পড়েছে বলতো! বড়সড়ো বিপদ ঘটলে তখন কি হতো!মাথা নিচু করে চুপ করে শুনছিল মেয়েটা।সে মনে মনে ভাবছে যাক মানুষগুলোর সহৃদয় মন সে আপাতত জয় করে ফেলেছে।

তখন সবে নিস্তব্ধ গরম কালের জনশূন্য দুপুর,ঘড়িতে আড়াইটে বাজছে। শাশুড়ি বৌমা খাবারের পাট চুকিয়ে বিশ্রাম নিতে নিজের ঘরে ছিল।তখনই কান্না গলায় দরজা চাপড়ে ক্রমাগত সাহায্য চাইতে হাজির শীর্ণকায়, দুখী মুখের মেয়েটা। একনাগাড়ে অনুরোধ করছিল কাঁদতে কাঁদতে। নিজের কপালের দোষ দিয়ে খাবার ও আশ্রয় চাইছিল সে। আহ থাম বাপু,কি হয়েছে তোর?ওভাবে কাঁদলে আমার বাড়ির যে অকল্যাণ হবে!এরপর বাড়ির গিন্নি মা, নিজের বৌমাকে ডাকলেন। মেয়েটা বাইরে থেকে তখনো বলছিল দয়া করে আশ্রয় আর খাবার দিন,ওর
মাতাল বাবা নাকি জোর করে বিয়ের দেওয়ার নামে বেচে দেবে তাই ও লুকিয়ে ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে! জানালার ভেতর থেকে ওকে কুড়ি টাকা দিতেও কিছুতেই নড়েনি মেয়েটা!এই ঘরে একবার এন্ট্রি নিতে পারলে যে তার কেল্লাফতে সেটা ভালই বুঝে অভিনয় করছিল মেয়েটা।ওর মন বলেছে আহা দুর্গা প্রতিমার মতো যার এই বয়সেও  এমন রূপ,মুখে স্নেহ মায়া মমতার ঢল, তাঁর মন অন্তত বেশ নরম ও উদার হবেই!

আজ এক সপ্তাহ পার।নিজের আন্তরিকতার গুণে বেশ মানিয়ে নিয়েছে মেয়েটা এই বাড়িতে।বড্ড মায়ায় জড়িয়েছে দত্ত পরিবারের প্রতিটি মেম্বারকে। এ বাড়িতে নতুন নাম হয়েছে তার ঝুমা।দাদাবাবু সকালে অফিস বেরিয়ে গেলেই ঝুমা ,শাশুড়ি বৌমার সুন্দর বোঝাপড়া,অনাবিল গল্প মন দিয়ে শোনে।মাঝে মধ্যে উদাস হয় ঝুমা,কারণ সেও যে চায় একটা সুস্থ স্বাভাবিক জীবন,যেটা হয়তো আর সম্ভব নয়।তাই বারংবার তার মধ্যে একটা মানসিক সংঘাত চলছে ইদানিং।

সেদিন রাত সাড়ে তিনটে ,ভারী বুটের আওয়াজ তুলে এক দল পুলিশ দত্ত বাড়ির দরজা ধাক্কা দিতেই সবাই তো ঘুম চোখে হকচকিয়ে উঠেছে!পুলিশরা কাকে যেন খুঁজতে,গোটা ঘর তন্নতন্ন করে দিচ্ছিল।এই যে পেয়েছি স্যার,চুলের মুঠি ধরে এক মহিলা কনস্টেবল ঝুমাকে টেনে হিঁচড়ে গলাধাক্কা দিয়ে গাড়ীতে তুললো দেখে সবাই রীতিমতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।পরের দিন খবর কাগজে শিরোনাম বের হলো শহরে এক সম্ভ্রান্ত বাড়িতে গা ঢাকা দেওয়া মহিলা জঙ্গি গ্রেপ্তার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress