আমাদের বাড়ি থেকে একটু পশ্চিমে, বেঁকে আসা খালের ওপরে
একটি কাঠের সাঁকো ছিলো; সুন্দর, যদিও নড়োবড়ো, খ’সে প’ড়ে
গিয়েছিলো কয়েকটি কাঠ; আমাদের হাঁটার সময় কেঁপে
কেঁপে উঠতো ঢেউ হয়ে, ওটি পেরোনোর কালে সাবধানে মেপে
মেপে পা ফেলতাম, কখনো ছুটতাম। প্রত্যেক বিকেলে
আমি একবার গিয়ে দাঁড়াতাম সাঁকোর ওপর, একেকবার হেলে
তাকাতাম নিচের জল ও মাটির দিকে; সাঁকো পার হয়ে যেতে
ইচ্ছে করতো না, দাঁড়িয়ে থাকতেই ভালো লাগতো, দূর ধানক্ষেতে
সবুজ ও সোনার দিকে তাকিয়ে থাকতাম, সন্ধ্যা হয়ে এলে
ফিরতাম বাড়ির দিকে; মনে হতো কাকে যেনো ফেলে
যাচ্ছি, আমাকে ডাকছে সে, তার ডাক শুনতে শুনতে, আড়িয়ল বিলে
সন্ধ্যা নামা দেখতে দেখতে এসে বসতাম পড়ার টেবিলে।
ওই সাঁকো পার হয়ে বহু দিন গেছি বেশ দূরে; কখনো ভাগ্যকূলে,
কখনো কামারগাঁও, ফিরে এসেছি আবার; সব কিছু ভুলে
দাঁড়িয়ে থেকেছি তার ভাঙা থাম ধ’রে; মনে মনে
বলেছি অনেক কথা তার সঙ্গে, জ্যৈষ্ঠ আষাঢ়ের আশ্চর্য প্লাবনে
যখন দুলতে থাকতো, তখনও দাঁড়িয়েছি গিয়ে
সাঁকোর ওপর; দেখেছি প্রবল জল, ঘিরে, চারদিক দিয়ে
বয়ে যাচ্ছে; একদিন ওই নড়োবড়ো সাঁকো পার হয়ে বহু দূরে
চ’লে যাই, ভুলে যাই তাকে; লন্ডন এডিনবরা ফার্থ নিউইয়র্ক ঘুরে
বহু ব্রিজ দেখি; তারা আসামান্য, দীর্ঘ, শক্ত, বিস্ময়কর;
তবু আজ সন্ধ্যাবেলা একটি সাঁকো, নড়োবড়ো, কাঁপছে দেখি বুকের ভেতর।