Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সম্পাদক সমীপেষু || Shamsur Rahman

সম্পাদক সমীপেষু || Shamsur Rahman

আমরা বাগান চাই আমরা ক’জন অকপট,
শান্তিবাদী ক্লান্ত নাগরিক এমন বাগান চাই
যেখানে ফুলের কাছে সহজে পারবো যেতে, ঘাসে
চিৎ হয়ে শুয়ে দিব্যি পা দুটো নাড়বো অকারণ
মাঝে মাঝে। কী কী ফুল থাকবে বাগানে তার সুদীর্ঘ তালিকা
বলোতো পাঠাতে পারি পৌর সমিতির কাছে। ভদ্রমহোদয়,

আমরা বাগান চাই, আমরা ক’জন হতচ্ছাড়া,
যারা মাঝরাস্তা দিয়ে ভাগ্যের ছ্যাকড়া গাড়ি হাঁকাতে হাঁকাতে
বড়ো বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি সম্প্রতি, আমরাই
শহরে বাগান চাই লিরিকের প্রসন্নতা-ছাওয়া;
এবং বিশ্বেস করো আছে আজো চাওয়ার সাহস।


চেতনপুরে ফুলের চারায় ধরলো নতুন কলি;
ছেঁড়া জামায়, জুতোর গর্তে করছি স্বপ্ন জড়ো।
স্বপ্ন-আভায় স্বর্গ হলো চেনা ময়লা গলি,
হিংসুটে সব মত্ত পথিক সরো তোমরা সরো।
আমরা কিছু দুর্বিনীত বাগান বাগান বলে
কান করেছি ঝালাপালা মানী-গুণীর বটে।
ফুলবাগানের অলীক মালী শুনছি সে কোন্‌ ছলে
মস্ত বাগান সাজিয়ে দেবে, দৈবে কতোই ঘটে!

শিল্পকর্মে আস্থা ছিল বলেই ক্ষুধার দাঁতে
দীর্ণ হয়ে ক্লিন্ন প্রাণে পোড়াই আতশবাজি।
ঘুমাক তারা ঘুমাক সুখে নিদ্রা এলে রাতে,
ঝুলিয়ে কাঁধে মরা পাখি আমরা ঘুরতে রাজি।


এমন বাগান চাই যেখানে গেলেই নির্বিবাদে
লতাপাতা জড়ানো ঘোড়ার মূর্তি দেখে অচিরাৎ
ভুলবো দুঃসহ শোক, বস্তুত বাগানে এসে কোনো কোনো দিন-
বুধবার, শুক্রবার, কিংবা রবিবার, হোক না যে কোন দিন,
খুঁজবো অদৃশ্য আরোহীকে লোহার ঘোড়ার পিঠে!
দেখবো বেঞ্চিতে বসে অচেনা কে লোক চুরুটটা
ফুঁকে ফুঁকে ইতস্তত স্মৃতির খোলামকুচি ছড়াচ্ছে প্রচুর।
বুঝি নিঃসঙ্গতা কালো সহোদর তার!

আমাদের রমণীর মুখে ফুলের স্তবকগুলি
মেলুক আরক্ত ডানা, আমাদের শিশুদের মুখে
দয়ালু বাতাস দিক চুমু ঘন ঘন, ফুলবাগানের ডাল
মাতাল কবিকে দিক কবিতার পংক্তি উপহার।

এবং সেসব ডালে বিষ পিঁপাড়েরা কখনো সদলবলে
বাঁধতে না পারে যেন বাসা; যদি বাঁধে
তাহলে কি করে যাবো বাগানের পথে? কী করে ছেলেরা ডাল
বেয়ে বেয়ে কেবলি হারিয়ে যাবে পাতার জঙ্গলে?

ভদ্রমহোদয়! বারো মাস তের পার্বণ-কাতর
লাজুক আত্মাকে বসতিতে যথাযথ
রাখার প্রয়াসে নিত্য উচাটন আমরা কখনো
গুহাকে করিনি ঘর, রাখিনি পানীয় করোটিতে,
আঁকিনি স্বর্গের নক্সা বাঘছালে, তুকতাক মন্ত্রের প্রাচীন
কোনো পুঁথি ছিল না সম্মুখে সর্বক্ষণ। হল্‌দে
পুঁথির তুলোট পাতা আকাঙ্ক্ষার শবটাকে কখনো পারে কি
দিতে চাপা? একদিন লক্ষ্যে পৌছে যাবো নিরাপদে
আমরা তেমন কেউ নই; দূরে ও নিকটে
প্রকৃতই লক্ষ্য কিছু আছে কিনা সেও তো জানি না।
নানান ফুলের গাছে সুশীতল জল দেবো বলে
দু’বেলা অসীম ধৈর্যে ঝারি হাতে সবাই প্রস্তুত,
অথচ বাগানই নেই, কোথাও বাগান নেই আজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *