সম্পর্ক
অপূর্ব ছেলেবেলা থেকে গান কে আপন করে নিয়েছে। পড়াশোনায় খুব ভাল ছিল। তথাপি গ্রাজুয়েশন পড়ার সময় গানটাকে জীবনের মূলমন্ত্র বলে বেছে নিল। শান্তিনিকেতনে আশ্রমিক হয়ে বেশ কয়েকটি বছর কেটেছে। বোলপুরে জীবনটা সম্পূর্ণ আলাদা। একটা রাবীন্দ্রিক পরিমণ্ডলে বড় হওয়া। বিভিন্ন উৎসব ,গুরুজনদের আগমন, খুব সুন্দর জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। অপূর্বর মা ওর সম্মতি নিয়ে সম্বন্ধ দেখতে ব্যস্ত। কোলকাতার মেয়ে সৌমিতা। লেখাপড়ায় খুব ভালো। স্কটিশ থেকে পাশ করেছে। বাবা মায়ের এক সন্তান।, বাংলার অধ্যাপিকা। অপূর্ব একটি জব করে, তবে গান তার ধ্যান-জ্ঞান । প্রচুর গান রেকর্ডিং করেছে। রাস্তা দিয়ে যখন যায়, ওর গান শুনতে পায়। এছাড়া রেডিওতে ওর গান বাজে। শুভ পরিণয় সম্পন্ন হল। কিছুদিন আনন্দের পর নিজের নিজের কাজে মনোযোগ দিল। একটা বছর আনন্দে কাটলো। ২০২০ অতিমারীতে সমস্ত অনুষ্ঠান বাতিল। শুধু অপূর্বর নয়, সকল শিল্পী ,কলাকুশলী, বিবাহ র সাথে যুক্ত সমস্ত অনুষ্ঠান সব বন্ধ। প্রায় দেড় বছর মানুষ এক অসহায় অবস্থার মধ্যে কাটাল। ফেসবুকে লাইভ করে মানুষকে কিছুটা মনোরঞ্জনের চেষ্টা। আর নিজে ভালো থাকা। প্রতিটি মানুষ অসহায়। লকডাউন উঠলে অনুষ্ঠানের চেষ্টা করা হলে আবার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রথম বার থেকে দ্বিতীয়বারে মৃত্যুসংখ্যা হু হু করে বেড়ে গেল। তাই আবার নতুনভাবে গৃহবন্দী। সৌমিতা বাড়িতে হাঁপিয়ে উঠছিল। অপূর্বর কোন রোজগার নেই। প্রত্যেক মাসে একটা বিরাট খরচ। এতদিন রোজগার করেছে ,বাবা মা দুজনেই চাকরি করায় ওর কোন টাকা খরচ হতো না। আজ সে অবাক হয়ে যাচ্ছে। সংসারের প্রতিটা বিষয়ে তার দরকার হয়ে পড়েছে। অপূর্ব অনেক চেষ্টা করেছিল কিছু অনুষ্ঠানের। কিন্তু কোন অনুষ্ঠান হচ্ছে না। নিজেদের মধ্যে একটা অশান্তি দানা বাঁধছে অপূর্ব আর ওর মা বুঝতে পেরেছিল। লকডাউনে কিছু করার উপায় ছিল না। আনন্দ হাসি সংসার থেকে বিদায় নিল। সৌমিতা বেশিটাই বাপের বাড়ি চলে যায়। অপূর্ব একজন বড় মাপের আর্টিস্ট। চারিদিকে খুব প্রশংসা। তবুও অর্থনৈতিক দিক ভীষণ ভাবে দুর্বল করে দিল। প্রথমে সম্পর্কের মধ্যে ফাটল, ধীরে ধীরে সম্পর্কটা শেষ। অপূর্ব খুব ভালোবাসে সৌমিতাকে। তাই কোনো দোষারোপ করে নি। বরং নিজের দুর্বল তার কথা মনে করে বারবার লজ্জা পেয়েছে। এছাড়া অপূর্ব অনুধাবন করল সৌমিতাএকজন অধ্যাপিকা। ও বাবা মায়ের এক মেয়ে, ওকে এভাবে কষ্ট দিয়ে আটকে রাখা ঠিক নয় তাই বন্ধনটা খুলে দিল। ওদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। অপূর্ব এখন আরো বেশি করে গানে সময় দেয়। সৌমিতা নিজে পছন্দ করে একজন অধ্যাপক কে বিয়ে করেছে। সুখের জীবন। সৌমিতা কৌশিক কে নিয়ে অনেক জায়গায় ঘুরে এসেছে। এতো সুখের মাঝে অপূর্বর কথা কিছু মনে নেই। আজ বহুদিন পর সৌমিতা ওর পরিবার নিয়ে শান্তিনিকেতন এসেছে। ওরা যে হোটেলে ছিল তার পাশের একটা বাংলোতে অপূর্ব থাকে। বিকেলে ওরা হাঁটছে, বাড়িটার সামনে জটলা দেখে ওরা কিছু জিজ্ঞাসা না করে চলে গেল। ফেরার পথে দুজনকে দেখে জিজ্ঞাসা করল আচ্ছা এখানে ভিড় ছিল কেন। একজন তরুণ উত্তর দিল, আমার স্যার খুব অসুস্থ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরের দুটো দিন থেকে ফিরবার সময় ওরা বুঝলো ভদ্র লোক আর বেঁচে নেই। কৌতূহলবশত ভদ্রলোককে দেখার চেষ্টা করল। হঠাৎ করে ও চমকে উঠল। এ তো অপূর্ব। একি চেহারা হয়েছে? তবে কি ও খাওয়া-দাওয়া করত না? সমস্ত পুরোনো দিন গুলো মনে পড়ল। কৌশিক কে জানালো ও আরেকটা দিন থাকতে চায়। নিরিবিলিতে হয়ত স্মৃতিরোমন্থন করবে।