Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সমূদ্র  মন্থন || Purabi Dutta

সমূদ্র  মন্থন || Purabi Dutta

সমূদ্র মন্থন (পুরাণ  কথা,বিজ্ঞান ও বেদ)

বহু  ব্যবহৃত “মন্থন”  শব্দটি তাৎপর্যপূর্ণ। অনেক আগে গত শতাব্দীর  সত্তর দশকের শেষভাগে — জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ১৯৭৭, “মন্থন ” নামে এক মুভি, (based on white revolution of India) দেখেছিলাম   শ্যাম বেনেগালের পরিচালিত,আর  অসাধারণ  অভিনয় প্রতিভার “স্মিতা পাতিল” ও “গিরীশ  কারনাড” এর— সেখানে মন্থন  কথাটির দ্বৈত অর্থের ইঙ্গিত  ছিল— সাধারণত  মন্থন  বললেই মনে হয় দুধ বা দই দই থেকে মাখন নিষ্কাসন। হ্যাঁ, ঠিক  এই অর্থেই পুরাণ এ সমূদ্র মন্থন  হয়েছিল। এক অবিশ্বাস্য  অবৈজ্ঞানিক “মন্থন” ই তা বটে। আজব ব্যাপার  আজব আয়োজন আজব সব বস্তুদের উঠে আসার মহা সমারোহ হয়েছিল । কি ঘটেছিল আর কেনই  বা সমূদ্রকে মন্থন  করার প্রয়োজন  হলো? বলা বাহুল্য, সমূদ্র  মন্থন এর উদ্দেশ্য ও সদিচ্ছাও ছিল স্বয়ং ভগবান হরির।

কারণ কূলগুরু শুক্রাচার্যের অনুগ্রহপুস্ট ও “মৃত সঞ্জীবনী বিদ্যা” প্রয়োগে অসুরেরা ক্রমশই  অতি শক্তিশালী এবং অমর হয়ে উঠছিল। এ ব্যাপারে সব দেবতারা চিন্তিত।

সূর্যোদয়ের দ্যুতিসম্পন্ন  ভগবান শ্রীহরি, দেবতাদের উপদেশ দিলেন , অতি বলবান দৈত্য  দানবদের সাথে সন্ধি করে তাদের সাহায্যে ক্ষীরোদ সাগর মন্থন  করে “অমৃত” তুলে আনো, যে অমৃত ভক্ষণ করলে মরণকে জয় করা যাবে। প্রয়োজন স্বার্থে কার্যসিদ্ধির জন্য শত্রুর  সাথেও মিত্রতা স্থাপন করতে হয়। ভগবান আরও  বলেন, সমুদ্রের তলদেশ থেকে প্রচুর লোভ্য দ্রব্য  উঠে আসবে যা অত্যন্ত  উপযোগীও, কিন্ত  তা লাভ করবার জন্য  কামনা বাসনা করবে না, অসুরেরা নিতে চাইলে দিয়ে দেবে, অযথা ক্রোধদ্বারা কখনও  কার্যসিদ্ধি হয় না। আর কালকূট গরলও  উঠে আসবে, সে বিষয়ে সাবধান,  সে বিষ আসবে বাসুকিরাজের গলা থেকে। অথচ তিন মাথাওয়ালা বাসুকিরাজ ছাড়া এ মন্থনে অন্য কোন রজ্জুর বিকল্প  নেই।

তাই আসুরিক শক্তির ব্যবহার,  মন্দার পর্বত খুঁটি ও বাসুকিরাজকে রজ্জু করে এ মন্থন  করতে হবে। কথামতো , মিত্রতা করে ও অমৃতের লোভ দেখিয়ে দেবতারা অসুরদের এ কাজে রাজী করালেন। অমৃত মন্থনে স্বয়ং শ্রীহরিও সহায় হলেন, তিনি ত্রিমুখীসর্পের মুখের দিকে বসলেন, তা দেখে অসুরেরা ভাবলেন এ পৌরুষের কাজ, অতএব তারা লেজের দিক ধরবেন না, তখন হাস্যমুখে ভগবান সর্পের লেজের মুখেই বসলেন অসুরদের সাথে, বাকি দেবতারা  সর্পের  মুখের দিকে। সর্পরাজ বাসুকি সমূদ্রস্থিত মন্দার পর্বতে কয়েক পাক পেঁচিয়ে নিতেই শ্রী হরি পর্বতের শিখরে অধিষ্ঠিত হলেন।

মন্থনের শুরুতেই জলস্থিত মৎস্য,মকর, কচ্ছপ, সর্প,তিমি,জলহস্তী, কুম্ভীর, তিমিঙ্গিল  ইত্যাদি ভেসে উঠে সর্বত্র জলরাশি আলোরণ করতে লাগল।

অমৃত উত্থিত হবার পূর্বেই কালকূট হলাহল উৎপাটিত  হলো, এতে চিন্তিত হয়ে পড়লেন দেবতারা, মর্তে পতিত হলে সমূহ বিপদ, দেবাদিদেব  মহাদেব দু-হাত পেতে ধরে সে কালকূট  বিষ ভক্ষণ না করে নিজ গলায় ধরে রাখলেন। মুহূর্তেই  বিষের প্রভাবে শিবের কণ্ঠ হলো নীল বর্ণ। তাই শিবের এক নাম “নীলকণ্ঠ”। কিন্ত  কিছু কালকূট বিষ আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে পড়ল মর্তে, কিছু দানব তা গলাধ্বকরন করে আর কিছু মর্তে স্থিত বৃশ্চিক, সর্প, অন্যান্য  বিষধর প্রাণী ও কিছু ওষধি বৃক্ষ।

তারপর  মন্থন  করতে করতে , উঠে আসতে লাগল বিচিত্র নানাবিধ  মূল্যবান  ও উৎকৃষ্ট  তৃণগুল্ম, বৃক্ষ,  পশু, দেবদেবী, অপ্সরীরা, ধনরত্ন, শেষে অমৃত।

প্রথমেই এলো “তুলসী”, “কল্পবৃক্ষ”, ও “পারিজাত”।অসুরদের বিন্দুমাত্র  এসব নেবার আগ্রহ দেখা গেল না, তুলসী এলো মর্তে, সাথে পারিজাত কৃষ্ণের উদ্যানে পরে তা অলোকধামে ইন্দ্রর বাগানে আনয়ন করা হয়, কল্পবৃক্ষও স্থান পেলো দেবরাজ ইন্দ্রের উদ্যানে। তিনটি পশু উঠে এলো শ্বেতশুভ্র “ঐরাবত” , “সুরভিধেনু ” ও শ্বেতবর্ণ ঘোড়া, “উচ্চৈঃশ্রবা “। ঐরাবতের সাথে আটটি দিগ্ হস্তী ও অভ্রুম নামে আটটি দিগ্ হস্তীনিও উত্থিত  হলো। অসুররাজ দাবী করলেন উচ্চৈঃশ্রবাকে , সুরভিধেনু ও ঐরাবত রইল ইন্দ্রর হেফাজতে। এরপর উঠে এলেন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রবিদ্ মহাবৈদ্য ” ধ্বন্বন্তরি” রইলেন তিনি দেবতাদের চিকিৎসক  হিসাবে। উঠে এলেন শ্রীমতী “লক্ষ্মী দেবী”, নারায়নকে তিনি বরণ করলেন। নারায়নের পাশে থাকলেন লক্ষ্মীদেবী। উঠে এলেন অনেক “অপ্সরীরা”, ইন্দ্রের সভায় তারা স্থান পেলো। এরপর এলো “ধনরত্নরাজি” , অসুরেরা দ্বিধা না করে সত্ত্বর সে সব নিয়ে নিলেন। মহাদ্যুতি সম্পন্ন পদ্মরাগ মণি “কৌস্তুভ” ঝলসে উঠে এলো, স্বয়ং ভগবান নারায়ন সে রত্ন বক্ষে ধারণ করলেন। এরপর উঠে এলেন কমলনয়না দেবকন্যা “বারুণী” হাতে তার বরুনদেবের ভোগ্য,অন্নময় সুরা। ভগবানের আদেশে বারুণীকে অর্পণ করা হলো অসুরদের কাছে। অবশেষে কাঙ্খিত দ্রব্য অমৃত ভোগ্য উঠে এলে, মুহূর্তেই  ভগবান নারায়ন স্বয়ং  লাস্য মোহিনী নারী মূর্তির বেশে সে অমৃত  কলস কোলে এসে দাঁড়ালেন  অসুর ও দেবেদের মাঝে, সুরাসুরেরা সকলেই সে মোহিনী রূপে মুগ্ধ, সে নারীর বশীকরণ মন্ত্রে  তারা হয়ে উঠলেন বশীভূত।

মোহিনীমূর্তির প্রণয়পাশে আবদ্ধ অসুরেরা সে নারীর প্রতি অতি অনুগত হয়ে পড়লেন। মোহিনী সকলকে শ্রেণীবদ্ধভাবে বসতে বললেন ও তিনি যেমন পরিবেশন করবেন তাই কিন্তু  মেনে নিতে হবে। ছলনা করে মোহিনী, অসুরদের অমৃত দানে বঞ্চিত  করেন। অসুরেরা অঙ্গীকারবদ্ধ  বলে প্রতিবাদ  করতে পারলেন না। কিন্তু ধূর্ত  রাহু ও কেতু ছদ্মবেশে দেবতাদের পংক্তিতে  বসেছিলেন। সে চাতুরী  চন্দ্র  ও সূর্য  ধরে ফেলে প্রকাশ করে দেন, তাতে তীক্ষ্ণ  চক্র দ্বারা স্বয়ং নারায়ন তাদের মস্তক ছেদন করেন , গলা থেকে অমৃত তাদের উদরে পৌছল না। ফলে রাহু, কেতুর মস্তক শুধু জীবিত রইল, ধড় মৃত হলো। প্রতিহিংসায় সুযোগ  পেলেই কোন কোন  অমাবস্যা ,পুর্ণিমায় জীবিত রাহুর  কাটা মাথা চন্দ্র  সূর্য  গিলে খায়, কিন্তু  গলা দিয়ে চন্দ্র  সূর্য  আবার বেড়িয়ে আসে, যা কলিযুগে বিজ্ঞান  বলে, “সৃর্য বা চন্দ্র  গ্রহণ”। সুপরিকল্পিতভাবে ,  অসুরদের সাথে মহা চাতুরী করে, দেবতারা অমৃত ভক্ষনে হলেন অমর।

নৈতিকতার  প্রশ্ন ত উঠে আসেই—- শত্রুদমনে, প্রেমে ও রণে, ছলনার ছন্দ দ্বন্দ্ব  চিরকালীন।

গল্পটি পড়তে এবং কল্পনায় প্রত্যক্ষ করতে
নিঃসন্দেহে ভালো লাগে, কিন্ত বাস্তবতা ও বৈজ্ঞানিক  চিন্তাধারায় সম্ভাবনার প্রশ্নে ধাক্কা  খায়, একটাই সান্ত্বনা,  বিজ্ঞান  ত শেষ কথা এখনও  বলে নি, এবং বিজ্ঞানশাস্ত্রে শেষ কথা বলেও কিছু যে নেই, অতএব……..

সমূদ্র মন্থন  না হয়ে যদি কোন গুপ্ত  শহর উদ্ধার হতো তাহলে কি মেনে নেওয়া যেতো? কে দেবে উত্তর?

ব্যাঙ্কক( থাইল্যান্ড) শহরের এক বিমান বন্দরে (International Airport, ‘ Suvarnabhumi’) এক বিশাল স্থাপত্য  আছে— “সমূদ্র  মন্থন”— পুরাণের সেই অভাবনীয় দৃশ্যের। থাইল্যান্ড ( মার্চ, ২০১৯) ভ্রমণকালে এ স্থাপত্য  দর্শনের সৌভাগ্য  আমার  হয়েছিল, সত্যিই  খুব সুন্দর, আমার সামান্য  মোবাইল  ক্যামেরায় তোলা ছবিতে কিছু আভাস ধরে রাখা আছে।

বিজ্ঞান  কি বলবে এ আজগুবি গল্প? সমূদ্রে উত্থিত  বৃক্ষ,  মানুষ কি জলে স্থলে  উভয়স্থানে  বিরাজমান  ছিল। সে সত্যসন্ধান  কি কোন একদিন  উদ্ঘাটিত হবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress