সমকালের দৃষ্টিতে মহাভারত কথা
গত ৩১ মে আকাদেমিতে অনুষ্ঠিত হল চন্ডীতলা প্রম্পটার প্রযোজিত নাটক ‘ ইরাবান গাথা ‘ । নবম শতকের মহাভারতের তামিল অনুবাদে ‘ কালাপ্পালি ‘ নামক একটি প্রথার উল্লেখ পাওয়া যায়।প্রথা অনুযায়ী কোনো বীর যদি দেবী কালীকার সামনে নিজেকে বলি দেয় তাহলে যুদ্ধে সেই পক্ষের জয় অবধারিত।এই প্রথা মেনেই পান্ডব পক্ষের বিজয় লাভের জন্য কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে দেবী কালীকার চরণে আত্মবলি দিয়েছিল কনিষ্ঠ কৌন্তেয় অর্জুন ও নাগকন্যা উলূপীর ক্ষেত্রজ সন্তান ইরাবান। যদিও যৌবনের যাবতীয় রঙ ,রস উপভোগ করে তবেই সে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে সম্মত হয়। কিন্তু ইরাবানকে বিবাহ করতে ইচ্ছুক কোনো পাত্রী পাওয়া যায় না। কারণ, কোনো কন্যাই নিশ্চিত অকাল বৈধব্য বরণ করতে রাজি হননি। তাহলে উপায় ? অগত্যা শ্রীকৃষ্ণ নারী রূপ ধারণ করেন, নাম হয় মোহিনী।ইরাবানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ফুলশয্যার রাতে শয্যায় ইরাবান যেন নিজেকে উজাড় করে দেয়। মোহিনীর শরীরকে আলিঙ্গন করে। কিন্তু একি ? ইরাবান মোহিনীর রক্তিম বস্ত্রের আড়ালে দেখতে পায় পীতাম্বর। কটিদেশের চন্দ্রহারের ফাঁকে দেখে মোহন বাঁশি ! ফুলশয্যার পরদিন ইরাবানের বলি হয়। তামিল মহাভারতের এই আখ্যান যেন সমকালের দৃষ্টিতে উপস্থাপন করা হয়েছে নাটকে। বর্তমান যুবসমাজ মোহিনী মায়ার যেন আচ্ছন্ন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আই টি সেল থেকে যেন সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিষ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। দিশাহীন যুবসমাজ যেন নিজেরাই নিজেদের বলি দিতে উদ্যত হচ্ছে। অসীম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রশক্তি কি শ্রীকৃষ্ণ বৈধব্য ছলনা চক্রে পরাজিত হবে ? সময় যতই গড়িয়েছে নাটকের স্বাভাবিক গতি সামান্য ব্যাহত হয়েছে। নাটকের সংলাপ আরও প্রাণবন্ত হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। তবে নাটকের কুশীলবরা প্রায় প্রত্যেকেই মঞ্চে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন। শ্রীকৃষ্ণের ভুমিকায় রঞ্জন বোস, ইরাবানের ভূমিকায় কৌস্তুভ মজুমদার এবং উলূপীর ভূমিকায় কল্পনা বরুয়ার প্রাণবন্ত অভিনয় মনে দাগ কাটে। অর্জুনের ভূমিকায় কৃষ্ণেন্দু ভট্টাচার্য মানানসই। নাটক রাকেশ ঘোষ। সঙ্গীত অভিজিৎ আচার্য্য। ধ্বনি প্রক্ষেপণ সৃজিত মন্ডল।